Recent Tube

সত্যের মাপকাঠি কি ও কে: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।







 
সত্যের মাপকাঠি কি ও কে:
---------------------------------------


(১) 'মিয়ারে হক' বা 'সত্যের মাপকাঠি কি ও কে - তা জানার আগে জানতে হবে হক বা সত্য কি? এ বিষয়ে সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক ইমাম ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন,
الحق الذي لاشك فيه و لا مرية و لا ليس فيه و لا إختلاف فيه بل هو كله حق يصدق بعضه بعضا و لا يضاد شئ منه شيئا أخر- 
"হক বা সত্য এমন বিষয় যার মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই, কোনো সংশয় ও বৈপরীত্য নেই বরং যার সবটুকুই হক তথা সত্য। যার এক অংশ অপার অংশের সত্যায়ন করে, যার এক অংশ অপর অংশের সাংঘর্ষিক বা বিরোধী নয়, তাই হক।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ২/৫৫৯)

(২) মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি কি? এ বিষয়ে আল্লামা মুফতি ইউসুফ (রাহঃ) বলেন, "ঐ মত, কথা, কাজ যা যাচাই-বাছায়ের যোগ্য নয় যার মধ্যে হক বা সত্যের দিক সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট, যার বিশুদ্ধতা নিশ্চিত, যার মধ্যে ভুল হবার কোনো অবকাশ নেই; কেবল সেই কথা কাজই 'মিয়ারে হক' বা 'সত্যের মাপকাঠি' হতে পারে এবং তানকীদ বা যাচাই-বাছায়ের ঊর্ধে হতে পারে।" (ইলমী জায়েজাহ ১/২০৩)

সাহাবাগণ (রা) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
وَعَسَىٰ أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَنْ تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ.
"হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর (সত্য ও সঠিক বিষয়) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।" (সূরা বাকারাঃ ২/২১৬) সুতরাং সাহাবাগণ (রা) এর প্রত্যক কথা ও কর্মে হক বা সত্যের দিক সুস্পষ্ট নয়।

(৩) এ সত্য নিয়ে আগমণ করেছেন নবী রাসূলগণ, না কি সাহাবাগণ? এ বিষয়ে হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন,
فإن الذي جاؤوا به هو الحق الذي ليس وراءه حق-
"নবীগণ যা নিয়ে এসেছেন, তাই হক তথা সত্য, এ সত্য বহির্ভূত আর কোনো সত্য নেই।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৩৩২) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিজেই বলেন, 
أَنِّي رَسُولُ اللَّهِ حَقًّا وَأَنِّي جِئْتُكُمْ بِحَقٍّ فَأَسْلِمُوا.
"নিশ্চয় আমি আল্লাহর রাসূল সত্য, আমি তোমাদের নিকট 'হক' সত্য নিয়ে এসেছি। সুতরাং তোমরা (এ সত্যের প্রতি) আত্মসমার্পণ কর (অর্থাৎ ঈমান এনে সত্যের অনুসরণ কর)।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৩৯১১; মুসনাদে আহমদ হাঃ ১২৭৯৩)

(৪) মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি রাসূলুল্লাহ (সাঃ), না কি সাহাবাগণ (রা) - মাওলানা আবুল কালাম আযাদ (রাহঃ) এ বিষয়ে বলেন, "ওহী প্রাপ্ত রাসূল (সাঃ)-ই শরীয়তের দৃষ্টিতে মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি। সাহাবায়ে কেরামের যে মর্যাদা অর্জিত হয়েছে তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অনুসরণের দরুণ অর্জিত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁরা যথাসাধ্য নবী কারীম (সাঃ) এর কথা ও কাজের অনুসরণ করেছেন। এ জন্য তাঁদের ব্যক্তিত্বও আমাদের জন্য সম্মান উপযোগী। তবে সর্বাবস্থায় মূল ব্যক্তিত্ব ওহী প্রাপ্ত নবীর জন্যই স্বীকৃত, অন্য কারো জন্য নয়। এ জন্য ইমাম মালিক (রাহঃ) নবী কারীম (সাঃ) এর কবরের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন:
ما من أحد إلا ومأخوذ من كلامه ومردود عليه إلا صاحب هذه الروضة-
'এ কবরবাসী ছাড়া আর কোন ব্যক্তি নেই, যার সকল কথা গ্রহণীয় বর্জনীয়'।" (কিতাবুল মীযান ১/৬৪; মালফুজাতে আযাদ, পৃঃ ১১০)

(৫) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) কি সাহাবীদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলে সাব্যস্ত করেছেন? এর সুস্পষ্ট জবাব হল- না। বরং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সত্যের মাপকাঠি মেনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করা পর্যন্ত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনীত সত্য বিধানের অনুসরণ না করা পর্যন্ত কেউ মু'মিন হতে পারবে না, সাহাবীর মর্যাদা অর্জন করা তো দূরের কথা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا.
"অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।" (সূরা নিসাঃ ৪/৬৫)

আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, 
"لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يَكُونَ هَوَاهُ تَبَعًا لِمَا جِئْتُ بِهِ". حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ، رَوَيْنَاهُ فِي كِتَابِ "الْحُجَّةِ" بِإِسْنَادٍ صَحِيحٍ.
"তোমাদের মধ্যে কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মনের প্রবৃদ্ধি আমার আনিত সত্য বিধানের অধীন না হবে।" (কিতাবুস সুন্নাহ হাঃ ১৫, মিশকাত হাঃ ১৬৭, আরবাঈন হাঃ ৪১; ইমাম নববী তাঁর আরবাঈন গ্রন্থে বলেন, এটি সহীহ হাদীস। আমি কিতাবুল হুজ্জাতে এ হাদীসটি সহীহ সনদসহ বর্ণনা করেছি। গৃহীত: নির্বাচিত হাদীস, পৃঃ ৩৯)

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু আসিম (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সম্বোধন করে বলেন,
َأَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمْ اللَّهُ بِي -
"আমি কি তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট পাইনি? অতঃপর আল্লাহ তা'য়ালা আমার দ্বারা তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন।" (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৩৩০; সহীহ মুসলিম হাঃ ১০৬১; মুসনাদে আহমদ হাঃ ১৩২৪৩, ১৬০৩৫)

(৬) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাথে সাহাবাগণ (রা) কে কি সত্যের মাপকাঠি মানা যাবে? এর পরিষ্কার জবাব হল- রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাথে সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি মানা তো দূরের কথা, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা বা মতামতকে সাহাবা বা অন্য কোন সাধারণ ব্যক্তির মত গণ্য করা হারাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا ۚ قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذًا ۚ فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ.
তোমরা রাসূল (সাঃ) এর আহবানকে একে অপরের আহবানের মত গণ্য করা না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে (রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মতাদর্শ থেকে) সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা (জাহান্নামেরর) যন্ত্রণাদায়ক আযাবে আপতিত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে।" (সূরা নূরাঃ ২৪/৬৩)
ইমামুল মুফাসসিরীন হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহঃ) অত্র আয়াতের তাফসীরে বলেন, "যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে- এখানে তাঁর আদেশ বলতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পথ,  তাঁর কর্মপদ্ধতি, তাঁর তরিকা, তাঁর সুন্নাহ ও শরীয়াহ উদ্দেশ্য। সুতরাং সমস্ত কথা ও কাজকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা ও কাজ দ্বারা পরিমাপ করতে হবে, ওজন করতে হবে। ফলে যা তাঁর মুতাবিক হবে তা গ্রহণযোগ্য হবে আর যা কিছু তাঁর বিপরীত হবে তা তার বক্তা ও কর্তার উপরে ছুড়ে মারা হবে, সে যাইহোক না কেন! যেমন- বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থের রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন: 
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ.
'যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করবে যে ব্যাপারে আমার কোনো আদেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত।' ( সহীহ মুসলিম হাঃ ১৭১৮, সহীহ বুখারী হাঃ ২৬৯৭, মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২৪৬০৪, ২৪৯৪৪, ২৫৬৫৯, আবূ দাউদ হাঃ ৪৬০৬, ইবনু মাজাহ হাঃ ১৪)  সুতরাং ঐ ব্যক্তিকে ভয় করা ও সর্তক হওয়া উচিত যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর শরীয়তের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিধানের বিরোধীতা করে।" (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪২৯)

(৭) সাহাবাগণ (রা) কি নিজেদের, না কি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে সত্যের মাপকাঠি মানতেন? এর জবাবে বলব, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ব্যতীত সাহাবাগণ আর কাউকেই সত্যের মাপকাঠি হিসাবে গণ্য করতেন না ও মানতেন না। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, 
ْنِوَكُنَّا ضُلَّالًا فَهَدَانَا اللَّهُ بِهِ فَبِهِ نَقْتَدِي.
"আমরা ছিলাম পথভ্রষ্ট। আল্লাহ তা'য়ালা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মাধ্যমে আমাদের হেদায়াত করেছেন। কাজেই আমরা কেবল তাঁরই অনুসরণ করি।" (মুসনাদে আহমদ হাঃ ৫৬৬৫, ৫৭২৩)

আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا.
"হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের আমীরের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।" (সূরা নিসাঃ ৪/৫৯)

এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ)-এর শর্তহীন ভাবে আনুগত্য করতে হবে। আর অন্যদের আনুগত্য হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আনুগত্যের অনুকূলে, শর্তসাপেক্ষে; তিনি আমীর হোক বা সাহাবী। সাহাবাগণ কখনোই কোন সাহাবীকে সত্যের মাপকাঠি মানতেন না, যদিও সেই সাহাবী তাঁদের আমীর নিযুক্ত হন তবুও। খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত আলী (রা) বলেন,
ﺑَﻌَﺚَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺳَﺮِﻳَّﺔً ﻭَﺍﺳْﺘَﻌْﻤَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭَﺟُﻼً ﻣِﻦَ ﺍﻷَﻧْﺼَﺎﺭِ ﻭَﺃَﻣَﺮَﻫُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﻳُﻄِﻴﻌُﻮﺍ ﻓَﺄَﻏْﻀَﺒُﻮﻩُ ﻓِﻰ ﺷَﻰْﺀٍ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺍﺟْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻰ ﺣَﻄَﺒًﺎ . ﻓَﺠَﻤَﻌُﻮﺍ ﻟَﻪُ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻭْﻗِﺪُﻭﺍ ﻧَﺎﺭًﺍ . ﻓَﺄَﻭْﻗَﺪُﻭﺍ ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻟَﻢْ ﻳَﺄْﻣُﺮْﻛُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺃَﻥْ ﺗَﺴْﻤَﻌُﻮﺍ ﻟِﻰ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻮﺍ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺑَﻠَﻰ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺎﺩْﺧُﻠُﻮﻫَﺎ . ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻨَﻈَﺮَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻓَﺮَﺭْﻧَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ﻓَﻜَﺎﻧُﻮﺍ ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻭَﺳَﻜَﻦَ ﻏَﻀَﺒُﻪُ ﻭَﻃُﻔِﺌَﺖِ ﺍﻟﻨَّﺎﺭُ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺭَﺟَﻌُﻮﺍ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺫَﻟِﻚَ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻰِّ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻮْ ﺩَﺧَﻠُﻮﻫَﺎ ﻣَﺎ ﺧَﺮَﺟُﻮﺍ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟﻄَّﺎﻋَﺔُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ-
“রাসূলুল্লাহ (সা:) একটি সেনাদল যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করলেন। এক আনসারী ব্যক্তিকে তাদের সেনাপতি/আমীর নিযুক্ত করলেন এবং সাহাবীদেরকে তার কথা শুনা ও মানার জন্য নির্দেশ দিলেন। অতপর তাদের কোন আচরণে সেনাপতি রাগ করলেন। তিনি সকলকে লাকড়ি জমা করতে বললেনসকলে লাকড়ি জমা করলো এরপর আগুন জ্বালাতে বললেন। সকলে আগুন জ্বালালো। তারপর সেনাপতি বললো রাসূলুল্লাহ (সা:) কি তোমাদেরকে আমার আনুগত্য করার এবং আমার কথা শুনা ও মানার নির্দেশ দেন নাই? সকলেই বললো, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে তোমরা সকলেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়। সাহাবীগণ একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলেন এবং বললেন, আমরাতো আগুন থেকে বাঁচার জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে এসেছি। এ অবস্থায় কিছুক্ষন পর তার রাগ ঠান্ডা হলো এবং আগুনও নিভে গেল। যখন সাহাবারা মদীনায় প্রত্যাবর্তণ করলেন তখন বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা:) এর কাছে উপস্থাপন করা হলো। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন ‘তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজের'।” (সহীহ বুখারী হাঃ ৪৩৪০, ৭১৪৫; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৪০, নাসায়ী হাঃ ৪২০৫, আবু দাউদ হাঃ ২৬২৫, আহমদ হাঃ ৬২৩, ৭২৬, ১০২১) 

এ হাদীস থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, সাহাবাগণ (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া অন্য কোন সাহাবী (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড মনে করতেন না। তাই তাঁরা তাঁদের আমীরের নির্দেশ শরীয়ত সম্মত নয় ভেবে আনুগত্য করেননি। এবং এই সিদ্ধান্ত কতটুকু হক বা সঠিক হয়েছে তা জানার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা) এর নিটক বিষয়টি উপস্থাপন করেন। আর রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেও সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি সাব্যস্ত করে বলেননি, তোমরা তো সবাই সত্যের মাপকাঠি যার কাছে যেটা ভালো লাগে তাই সেটাই করবে, তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে! বরং তিনি সাহাবাগণ (রা) কে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড সাব্যস্ত না করে বলেনঃ "তারা যদি আমীরের কথা মতো আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে তারা আর কখনোই তা থেকে বের হতে পারতো না। প্রকৃতপক্ষে আনুগত্য কেবল ন্যায় এবং সৎ কাজের।"

সুুতরাং 'সাহাবাগণ (রা) সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড' এ কথা না সাহাবাগণ (রা) মনে করতেন, আর না রাসূলুল্লাহ (সা) তাদের সত্যের মাপকাঠি হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। সাহাবাগণ (রা) যদি সত্যের মাপকাঠি হতেন, তাহলে তারা রাসূলুল্লাহ (সা) এর কাছে তাঁদের মতামত পরিমাপ করতে, নির্ভুল সমাধান নিতে যেতেন না। সুুতরাং সত্যের মাপকাঠি সাহাবাগণ (রা) নন, যদিও তাঁরা সত্যবাদী, সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত। আর রাসূলুল্লাহ (সা) ছাড়া অন্য কোন উম্মাতকে সত্যের মাপকাঠি বা মানদন্ড বলে দাবী করার অর্থই হলো তাঁদের রিসালাতের আসনে বসিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর রিসালাতের সাথে দুশমনি করা, যা সুস্পষ্ট কুফুরী।

Post a Comment

0 Comments