Recent Tube

ইসলামী বিপ্লবের পথ- প্রেক্ষিত বাংলাদেশ। মাহিম চৌধুরী-।



ইসলামী বিপ্লবের পথ- প্রেক্ষিত বাংলাদেশ,
-- -----------------মাহিম চৌধুরী-------------------

খেলাফত প্রতিষ্টিত হয় মূলতঃ গোটা উম্মাহর উপরে । কোন একক দেশ বা জাতিগোষ্ঠীর উপরে নয় । সেই ক্ষেত্রে পূর্ব শর্ত হলো সারা দুনিয়ার মুসলমানদেরকে এক খলিফার নেতৃত্বে আসতে হবে ।
 
দুনিয়ার দেশে দেশে ইক্বামাতে দ্বীনের যে প্রচেষ্টা চলছে তা মূলতঃ নিজেদের ভূখন্ডের মধ্যে । তবে সকলের চূড়ান্ত  লক্ষ খেলাফতের দিকে ফিরে যাওয়া । হাদীস বলছে আরেকবার এই পৃথিবীতে খিলাফাত প্রতিষ্টিত হবে । তবে সেটা কবে হবে একমাত্র আল্লাহ পাক জানেন ।

সেই কাংখিত খিলাফাত আসার আগ পর্যন্ত মুসলমানদের নিজেদের ভূখন্ডে আত্মসম্মান নিয়ে শান্তি,স্বস্তি এবং নিরাপত্তার সাথে কি বেঁচে থাকার কোন প্রয়োজন নেই?। মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আল্লাহর বিধান কার্যকর করা কি জরুরী নয়? । যদি জরুরী মনে না করেন তাহলে আপনার জন্য আমার এ নিবন্ধ নয়। আর যদি জরুরী মনে করেন অথচ নির্বাচনকে হারাম মনে করেন তবে আপনাকে বিকল্প পদ্ধতি উপস্থাপন করতে হবে । খিলাফাত আনতে আনতে গেলে কোন না কোন পথ ধরে আপনাকে হাঁটতে হবে। কেউ হয়তো বলবেন গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন করবেন । সেই ক্ষেত্রে এক বাক্যে দেশের জনগণ একমত হতে হবে অতঃপর তাগুতকে অপসারণের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুুত থাকতে হবে । রক্তপাত ছাড়া গণবিপ্লব করা যায়না । সেই ক্ষেত্রে আপনার  ভৌগলিক অবস্থান যাচাই করতে হবে । বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান কি গণবিপ্লবের অনুকোলে ? ।  তিন দিকে ভারত।  যারা আপনার সাথে বন্ধুত্বের প্রশ্নে উত্তীর্ণ নয় । আরেকদিকে সাগর । আপনি সাহাবীদের যোগে অবস্থান করছেননা না যে, দরীয়া আপনার কথা শুনবে । মুসা (আ) এর লাঠিও আপনার কাছে নেই যে লাঠির আঘাতে বারোটা রাস্তা তৈরী করে দেবে । সূতরাং, পথ একটাই নির্বাচনের মাধ্যমে গণরায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের মূল ধারার সাথে মিশে ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্টার চেষ্টা করা । 
গণতন্ত্র বর্তমান যুগে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার রাজপথ । এ পথ দিয়ে যেমন ভালো মানুষ যেতে পারবে তেমনি খারাপ মানুষ ও যেতে পারবে । রাস্তার কেউ সদ্ব্যবহার ও করতে পারে অসৎ ব্যবহার ও করতে পারে। অপব্যবহার ও করতে পারে । এতে রাস্তার কোন দোষ নেই ।  
মাইকে যেমন আপনি কোরআনের সূর ছড়িয়ে দিতে পারেন আবার ওপেন কনসার্টের সূরও ছড়িয়ে দিতে পারেন। এতে দোষ মাইকের নয় বরং ব্যবহারকারীর। 

কোরআন সুন্নাহ বিরুধী কিছু  হলে, রাসূলের (স) শানে বেয়াদবি হলে দু'ই চারটা প্রতিবাদ মিছিল করলাম আর তা করেই দায়িত্ব শেষ হয়ে গেলো?
আবার এই প্রতিবাদ মিছিল করাটাও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ! আপনি মিছিল করে যে দাবী পেশ করেন সে দাবী কার কাছে করেন? ।

ওয়াজ মাহফিল, সীরাত মাহফিল,তাফসীর মাহফিল ইত্যাদির জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া। এটাইতো গণতন্ত্রের একটি প্রক্রিয়া । 
এই যে আমরা ব্লাসফেমী আইনের জন্য মিছিল করি, খতমে নবুয়্যতের পক্ষে কাদিয়ানীদের বিপক্ষে মিছিল করি  এটা কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয় ? ।

কি বলবেন অবশ্যই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি।
প্রকৃত কথা হলো, দেশ,দেশের প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থার সাথে  সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে যে দেশে যে পদ্ধতি অবলম্বন করলে জাতিকে দিক নির্দেশনা দেওয়া যাবে সেখানে সে পদ্ধতিই অবলম্বন করতে হবে । 

♦গণতন্ত্র ও সাম্প্রতিক ভাবনা

আমি সামনে যাবো। রাস্তায় কোমর পানি ভর্তি খাল। যে খালে কিছুটা ময়লাও আছে । আমাকে সে খাল পাড়ি দিতেই হবে। অথচ এখানে দরকার ছিলো একটা কালভার্ডের । কিন্তুু তা নেই । 
আমাকে খুব তাড়াতাড়ি পাড়ি দিতে হবে সন্ধ্যা নামছে । কিছুক্ষণ পরেই ঘুটঘুটে অমানিশার চাদরে ঢেকে যাবে দেশ । 
এখন আমি নাজাস নাজাস বলে চিৎকার দেবো?নাকি   এই মুহুর্তের জন্য উত্তম মনে করে  কিছুটা ময়লাযুক্ত পানিতে নেমে হলে ওপারে আমাকে যেতে হবে । 

তাহলে এই অথর্ব চিৎকার দিয়ে  বিভ্রান্তি সৃষ্টি কেন? ।  

আমার নামাজের ওয়াক্ত যায়। অথচ যেদিকে তাকাচ্ছি সেদিকেই ময়লা । এমন অবস্থায় এ ময়লাযুক্ত জায়গাই আমার জায়নামাজ। নামাজ আমাকে পড়তেই হবে ।

আমি যেখানে যে অবস্থায় আছি সেটাকে মেনে নিয়ে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্টার সংগ্রাম আমাকে করতেই হবে । কারণ সেটি নামাজ রোজার মতই ফরজ।।

♦ইসলামী গণতন্ত্র (Islamic democracy)

গণতন্ত্র মূলতঃ একটি প্রক্রিয়ার নাম । যা পরিবর্তন,পরিবর্ধন এবং সংযোজনশীল। চলমান গণতান্ত্রিক কাঠামো বজায় রাখার পাশাপাশি পাবলিক নীতিতে আমরা ইসলামী আইন প্রয়োগ করতে পারি ।

আধুনিক বিশ্বে বহু আগে থেকেই  ইসলামী গণতন্ত্রের একটি প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে । যে প্রক্রিয়ার তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। 
প্রথমত, নেতারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবেন । 
দ্বিতীয়ত, সবাই শরীয়া আইনের অধীন – (নেতা সহ)। 
তৃতীয়ত, নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই 'শুরা' অনুশীলন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে, যা নবী মুহাম্মদ (স) এর রাজনৈতিক  অনুশীলনের একটি বিশেষ রূপ।

গণতন্ত্রের অতিমাত্রায় বিরুধীতার সুযোগে চরমপন্থা উসকে যেতে পারে
================♦================
আধুনিক গণতন্ত্রের যে অংশটুকু ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক সেটি হলো ''জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস ''।
ইসলাম বলে সার্বভৌম ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ।
কিন্তুু গণতন্ত্রের ধারণার মধ্যে আইনের শাসন,জবাবদিহিমূলক সরকার ব্যাবস্থা ইত্যাদি বক্তব্যের সাথে প্রকৃতপক্ষে  ইসলামের কোন বিরুধ নেই । বরং ইসলামের কাছ থেকেই আধুনিক গণতন্ত্র ধার করা । ইসলামপূর্ব যুগে গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এবং পরবর্তীেতে রাজতান্ত্রীক গোলামীর সাথেই মানুষ পরিচিত ছিল বেশী ।
নেতা মুনিব নয় বরং জনগণের সেবক । একমাত্র ইসলামই তা উপস্থাপন করেছে সর্বাগ্রে ।
আজকের যুগে মানুষ উপরোক্ত বিষয়টিকে গণতন্ত্র শব্দের মাধ্যমেই চিনে ।

তাছাড়া গণতন্ত্র কোন আদর্শের নাম নয় । এটি একটি সিস্টেমের নাম । যা সদা পরিবর্তনশীল ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন গণতন্ত্রের উপাদান হিসেবে মানবাধিকার, আইনের শাসন,মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুষ্ঠু নির্বাচন,প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে উল্লেখ করেছেন । এবার বলেন এই বিষয়গুলোর মধ্যে কোনটি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক? ।

 তাছাড়া গণতন্ত্রকে কোন ইসলামী শক্তি আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেননি । বরং গণতান্ত্রিক সিস্টেম বা পন্থায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আল্লাহওয়ালারা যদি ক্ষমতাসীন হন তাহলে তাঁরা কোরআন সুন্নাহভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্টিত করবেন । এটাই মূলতঃ ইসলামী দলগুলোর উদ্দেশ্য । সূতরাং, আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্টিত করার উদ্দেশ্যে ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অবশ্যই জিহাদের আওতায় পড়বে । যেহেতু এটি দ্বীন প্রতিষ্টার একটি নির্মোহ প্রচেষ্টা । তবে এটাকে চূড়ান্ত জিহাদ বলে ঘোষণাও দেওয়া যাবেনা । 

এসব বিষয় নিয়ে মৌলিক চিন্তায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক পন্থাকে গ্রহণ না করে আল্লাহর বিধানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইম্প্লিমেন্ট করার বর্তমান বিশ্বে বিকল্প পদ্ধতি কি সেটা বলতে হবে ।

বিকল্প কোন পথ পদ্ধতি উপস্থাপন না করে যদি গণতন্ত্র হারাম বলি তাহলে ইসলামী শক্তির সামনে একটাই পথ খোলা থাকে সেটা হলো চরমপন্থা অবলম্বন ।

আজকে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে  কোরআন বিরুধী কোন আইন পাশ করতে গেলে সেখানে যদি ইসলামের পক্ষে সংসদ সদস্যরা থাকেন তাহলে তারা সেই বিলকে প্রটেক্ট করতে পারবেন । সেই সুযোগ রয়েছে ।

সূতরাং, গণতন্ত্রের অতিমাত্রায় বিরুধীতা যে কোন মুহুর্তে স্বশস্ত্র সংগ্রামের নামে চরমপন্থাকে উসকে দিতে পারে ।

সর্বোপরি বাংলাদেশের মাটি ইসলামের জন্য উর্বর রয়েছে । ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে আবির্ভূত হতে পারলে গণতান্ত্রিক পন্থায়ও এদেশে আল্লাহর বিধানকে প্রতিষ্টিত করা সম্ভব বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ।

Post a Comment

0 Comments