Recent Tube

আব্বার সাথে সাক্ষাতের এই মুহূর্তটা আমার কাছে কত যে দামী- তা বোঝানোর ভাষা তো আমার জানা নেই। মাসুদ সাঈদী।


আব্বার সাথে সাক্ষাতের এই মুহূর্তটা আমার কাছে কত যে দামী- তা বোঝানোর ভাষা তো আমার জানা নেই।


আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর (হাফিজাহুল্লাহ) সাথে দেখা করে কাশিমপুর কারাগার থেকে ফিরছি। সাক্ষাতের আগে বরাবরের মতো আবেদন জমা দিয়ে এক ঘন্টারও বেশী সময় বসে থাকতে হয়েছে। এভাবে বসিয়ে রেখে আমাদেরকে কষ্ট দিয়ে ওরা যে কি আনন্দ পায়, তা গত ১৩ বছরেও বুঝতে পারলাম না!

দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে সাক্ষাতের ডাক এলে আব্বার সাথে সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত রুমে ঢুকেই আব্বাকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে লম্বা করে একটা চুমু দিয়েছি। বিশ্বাস করুন! ঐ কপালে চুমু দেয়ার পর আমার সমস্ত শরীরে এক শিহরণ বয়ে গেছে। আমার শরীর এক ধরনের প্রশান্তিতে ভরে গেছে। আহা! কতো পবিত্র ঐ কপাল! আলহামদুলিল্লাহ।

আমার সাথে আব্বার সাক্ষাত হলো ২ মাস পর। গত মাসের সাক্ষাতে আমি ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব ও পরে কাতার সফরে থাকার কারনে আমার সাথে আব্বার দেখা হয়নি। তাই পরিবারের অন্য সকল সদস্যদের থেকে আব্বার সাথে আমার সাক্ষাতের অস্থিরতা একটু বেশী-ই ছিল।

আব্বার সাথে সাক্ষাতের এই মুহূর্তটা আমার কাছে কত যে দামী- তা বোঝানোর ভাষা তো আমার জানা নেই।

আমরা সাক্ষাতের সময় পাই মাত্র ৩০ মিনিট। সাক্ষাতের বেশীরভাগ সময়ই আমাদের কেটে যায় আব্বার নসিহত শুনে। আমরা তন্ময় হয়ে আব্বার পবিত্র মুখ নি:সৃত কথাগুলি শুনতে থাকি। মনে হয় যেন আরো শুনি, আরো শুনি, আরো শুনি। শোনার এ সময়টুকুন যেন কভু শেষ না হয়! 

আল্লাহ তায়ালা নবী রাসূলগণকেও পরীক্ষা করতে ছাড়েন নাই৷ আর আমরা তো নবী রাসুলগণের পায়ের ধুলার ধুলাও না। তাই যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আব্বা আমাদেরকে ঈমান ও ধৈর্যের সাথে দ্বীনের উপর অবিচল থাকার জন্য নসিহত করলেন। নামাজ রোজার মতোই ইসলামী আন্দোলন করা ফরজ। আব্বা আমাদেরকে এবং সকলকেই এই আন্দোলনের একজন কর্মী হয়ে জীবন গঠন ও এর মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নসিহত করলেন। সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর  জা°লিমের জুলুম দেখে পেরেশান না হয়ে সেটাকে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঈমানের পরীক্ষা মেনে নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার দয়া ও করুণার উপর ভরসা করে চেষ্টা সাধনা করার জন্য আব্বা আনাদেরকে নসিহত করলেন। 

আব্বা অনেক কথা বললেন, কিন্তু নিজের শরীরের কথা কিছুই বললেন না। চোখ দেখে প্রশ্ন করে জানতে পারলাম, কয়েকদিন যাবত আব্বার ঘুমের কষ্ট হচ্ছে। কখনো কখনো রাতে সামান্য ঘুম হয়, আবার কোনো কোনো রাতে মোটেও ঘুম হচ্ছেনা। সুগার অনেক বাড়তি। আর হাঁটু কোমড়ের ব্যাথা! সে কথা আর কি বলবো?

আমার আব্বার বয়স এখন ৮৩। আব্বা গত ৪৯ বছরের ডায়াবেটিক পেশেন্ট। আব্বার হার্টে ৫টি রিং বসানো আছে। এছাড়া আব্বা দীর্ঘদিন যাবৎ আর্থাইটিস রোগেও আক্রান্ত। বিগত ৭ বছরের মধ্যেও কারাগার কর্তৃপক্ষ আব্বার হাঁটু কিংবা কোমড়ের অথবা ডায়াবেটিস কিংবা হার্টের সামান্য চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেনি। গত ৭ বছরে আমরা বহুবার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আব্বাকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দেয়ার জন্য বহু আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ইদানিং আব্বা শারীরিকভাবে বেশ কষ্টে আছেন। যে কারনে আব্বা একনাগাড়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না এমনকি তিনি দাঁড়িয়ে নামাজও আদায় করতে পারছেন না। হাঁটু ও কোমড়ের তীব্র ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন আব্বা। 

সন্তান হয়ে পিতার সামান্য চিকিৎসাটুকুন করাতে পারছিনা!! কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসে। হায়! এ কষ্টের কথাগুলো আমরা কার কাছে বলবো?

আব্বার শারিরীক সুস্থতার জন্য তিনি আপনাদের সকলের কাছে বিশেষ দোয়া চেয়েছেন।

আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাঁকে সুস্থ রাখেন, ভাল রাখেন। তার নেক হায়াত দারাজ করেন। তাকে যেন আবারো আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ওয়াল জালাল কোরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দেন।

পুনশ্চঃ আমাকে যারা আব্বার কাছে আপনাদের সালাম পৌঁছাতে বলেছিলেন আমি আপনাদের প্রত্যেকের সালাম আব্বার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আব্বা আপনাদেরকেও সালাম জানিয়েছেন, দোয়া চেয়েছেন।

Masood Sayedee - মাসুদ সাঈদী

Post a Comment

0 Comments