Recent Tube

ক্ষমতা থাকলে অনেক চাটুকার কুকুরেরও পা চাটে,সম্পাদনা : আব্দুল আখের খন্দকার।



ক্ষমতা থাকলে অনেক চাটুকার কুকুরেরও পা চাটে,


পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর প্রেমিকা ছিলেন পদ্মজা নাইডু। জওহরলাল তার সাথে লিভ টুগেদার করতেন। পদ্মজা ভেবেছিলেন কমলার মৃত্যুর পর জওহরলাল তাকে বিয়ে করবেন কিন্তু তার আশায় গুঁড়েবালি। এক সময় তাঁর বিয়ের বয়স শেষ হয়ে যায়। সে না পায় সংসার, না পায় সন্তান । জওহরলাল যদি কোনো সাধারণ ব্যক্তি হতেন তাহলে না হয় পদ্মজা 'বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ' এর মামলা করতে পারতেন। কিন্তু তাঁর মতো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা শুধু অসম্ভব নয়, অকল্পনীয়ও বটে।

মানুষের ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যাত পদ্মজা একসময় কুকুর, বিড়াল পুষতে শুরু করেন। পদ্মজা যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হয়ে কলকাতার রাজভবনে আসেন, তখন তার সাথে এসেছিল একটি বিড়াল ও চারটি এলসেশিয়ান কুকুর। তার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় ছিল মার্কো। কলকাতার রাজভবনে মার্কো যেদিন মারা যায়, সেদিন পুরো রাজভবনে নেমে এসেছিল বিষাদের ছায়া। কার্পেটের টুকরো কেটে, সদ্য কেনা তুলো বিছিয়ে খাটিয়ায় কাঁধে চড়িয়ে মার্কোকে রাজভবনের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে ছায়া ঘেরা ছোট পুকুর পাড়ে শ্ৰীমতী পদ্মজা নাইডুর সম্মুখে তার অশ্রুসজল চাপা কান্নার মধ্যে সমাধিস্থ করা হয়। সে এক এলাহী কান্ড!

রাজভবনের প্রায় সকল কর্মচারীর চোখেই সেদিন জল। ঘন ঘন টেলিফোনও এলো রাজভবনের টেলিফোনে। পদ্মজার শোক ভোলানোর জন্যে কলকাতার হোমরা চোমরা ব্যক্তিরা ছুটে এলেন সান্ত্বনা দিতে। মার্কোর মৃত্যু শোকে তৎকালীন সেক্রেটারীর আদেশে কলকাতার রাজভবনের কর্মচারীদের আধাবেলা ছুটি হয়ে যায়। পদ্মজা কবিতা লিখতেন। মার্কোর সমাধির শ্বেত পাথরের ওপর পদ্মজার নিজের লেখা কবিতা খোদাই করা হয়।

১৯৬১ সালের ৭ জুন পদ্মজা দুই মাসের জন্য বিলেত বেড়াতে যান। সে সময় হঠাৎই তার আরেকটি কুকুর মারা যায়। মনিবহীন সেই মৃত কুকুরটিকে লেজে দড়ি বেঁধে রাজভবনের মাঠ দিয়ে টেনে মার্কোর পাশে সমাধিস্থ করা হয়। তার মৃতদেহ কেউ খাটিয়ায় বহন করেনি, কেউ সামান্যতম শোক প্রকাশও করেনি। রাজ্যপাল পদ্মজা নেই, কে তার কুকুরকে সম্মান দেখাবে! কে পদ্মজাকে দেখিয়ে দেখিয়ে কেঁদে কেঁদে বলবে- ম্যাডাম, মার্কো ইজ গোয়িং, মার্কো ইজ নো মোর। কে কুকুরের শব কাঁধে বইবে? 

ছোট্ট এই একটিমাত্র ঘটনা প্রমাণ করে ক্ষমতা থাকলে অনেক চাটুকার কুকুরেরও পা চাটে, অনেকেই সম্মুখে সমব্যথী হওয়ার নিখুঁত অভিনয় করে। ক্ষমতা বা সম্মুখ অবস্থানে থেকে কখনো প্রকৃত হিতৈষীকে চেনা যায় না। প্রকৃত হিতৈষীকে চিনতে হয় অক্ষমতা ও আড়ালে থেকে। 

-সংগৃহীত

Post a Comment

0 Comments