Recent Tube

যে কারণে জামায়াতে ইসলামী সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম কায়েম করার পূর্বে অন্তর বা কলবে ইসলাম কায়েমের গুরুত্ব দেয়ঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


যে কারণে জামায়াতে ইসলামী সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম কায়েম করার পূর্বে অন্তর বা কলবে ইসলাম কায়েমের গুরুত্ব দেয়ঃ
-------------------------------------------------------------
আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার কথা বললে একশ্রেণির হুজুরেরা জামায়াতে ইসলামী'র নেতা কর্মীদের সাথে মসকারা করে বলেন, আগে সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম কায়েম করেন, যাদের বডিতে ইসলাম কায়েম নেই তারা কি করে দেশে ইসলাম কায়েম করবে?

কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম কায়েম করার আগে অন্তর বা কলবে ইসলাম কায়েমের গুরুত্ব প্রদান করে। কারণ এটাই ইসলামের শিক্ষা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ.
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চেহারা-সুরাত ও ধন-সম্পদের প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং তিনি তোমাদের (আমল) কার্যকলাপ ও অন্তরের দিকে লক্ষ্য রাখেন। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৫৬৪; ইবনে মাজাহ হাঃ ৪১৪৩; মুসনাদে আহমদ হাঃ ৭৭৬৮; ১০৫৭৭; রিয়াযুস স্বালিহীন হাঃ ০৮; মিশকাত হাঃ ৫০৮৩)

পবিত্র কুরআনে বারংবার বলা হয়েছে, 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ................ 
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করে চল, (তাকওয়া অর্জন কর, মুত্তাকী হও)......। (সূরা বাকারা ২/২৭৮; ইমরান ৩/১০২; মায়িদা ৫/৩৫; তাওবা ৯/১১৯; আহযাব ৩৩/৭০; হাদীদ ৫৭/২৮; হাশর ৫৯/১৮)

আর তাকওয়া বা 'আল্লাহ ভয়' লেবাস সুরতে থাকে না, তাকওয়া থাকে কলবে। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন:  
التَّقْوَى هَاهُنَا، وَيُشِيرُ إلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّات. وفي رواية التَّقْوَى هَاهُنَا التَّقْوَى هَاهُنَا يَقُولُ أَيْ فِي الْقَلْبِ.
তাকওয়া হচ্ছে- এখানে, তিনি নিজের বুকের দিকে তিনবার ইশারা করেন। অপর বর্ণনায়: তাকওয়া এখানে, তাকওয়া এখানে, এ কথা বলে তিনি কলব তথা অন্তরের দিকে ইশারা করেছেন। (সহীহ মুসলিম হাঃ ২৫৬৪; জামে তিরমিযী হাঃ ১৯২৭; মুসনাদে আহমদ হাঃ ৭৬৭০, ৮৫০৫, ১১৯৭৩, ১৫৫৮৯, ১৬২০৮, ১৬১৮৮, ২২৭০২, ২২৭১৮; আরবাঈন হাঃ ৩৫)

সাধারণত কওমি আলেম সমাজ সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম কায়েমের খুব গুরুত্ব দেয়। তাদের দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা, পাগড়ী তথা বাহ্যিক চেহারা সুরত দেখলে মনে হবে যে, জান্নাত থেকে পালিয়ে আসা দুনিয়ার বুকে সবচেয়ে বড় মুত্তাকী ব্যক্তি। কিন্তু বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, তাদের কতিপয় হুজুরদের কার্যকলাপ এত নিকৃষ্ট, হয়তো তা দেখে শয়তানও লজ্জা পায়। দাঁড়ি, টুপি, জুব্বা, পাগড়ী পরিধান করেই তারা পরকীয়া, অন্যের বউ ভেগে নিয়ে অবৈধ সংসার করা, জারজ সন্তান জন্ম দেয়া, ছাত্র বলাৎকার, ছাত্রী ধর্ষণ সহ বিভিন্ন রকমের অনৈতিক ও ভয়ঙ্কর পাপ কাজে লিপ্ত থাকে। কারণ তাদের সাড়ে তিন হাত বডিতে তথাকথিত ইসলাম কায়েম থাকলেও, তাদের অন্তরে প্রকৃত ইসলাম কায়েম নেই। ঢাকা সাভারে মহিলা কওমি মাদরাসার বড় হুজুর এরশাদুল্লাহর ঘটনায় বলা যাক। এই হুজুর! বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ও ব্ল্যাকমেইল করে ছাত্রীদের ধারাবাহিক ভাবে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। অথচ তার সাড়ে তিন হাত বডিতে ইসলাম! কিন্তু অন্তরে প্রকৃত ইসলাম কায়েম নেই। যদি কারো অন্তরে প্রকৃত ইসলাম কায়েম থাকে তাহলে সে এমন ভয়ঙ্কর পাপের কাজ ক্রমগতভাবে করতে পারে না। 

এ জন্যই আমি জামায়াতে ইসলামী পছন্দ করি‌। তারা‌ সাড়ে‌ তিন হাত‌ বডিতে‌ ইসলাম কায়েমের চেয়ে কয়েক‌ ইঞ্চি‌ হৃদয়ে ইসলাম কায়েমের‌ গুরুত্ব বেশি দেয়‌। যার কারণে দেখা যায়, শার্ট প্যান্ট‌ পড়েও‌ জামায়াতের কর্মীরা‌ জুব্বা ও পাগড়ী ওয়ালাদের‌ চেয়ে বেশি তাকওয়াবান‌।

বিঃদ্রঃ এখানে টুপি, দাঁড়ি, জুব্বা, পাগড়ীকে অসম্মান করা হয়নি। বরং যারা টুপি, দাঁড়ি, জুব্বা, পাগড়ীর বাহাদুরি দেখিয়ে ভয়ংকর পাপের কাজ করে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাতকে অসম্মান করছে, তাদের কথা বলা হচ্ছে।
------------------------- 
লেখক:  প্রবন্ধ লেখক, শিক্ষক গবেষক ও অনলাইন একটিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments