Recent Tube

মাওলানা হাসান জামীল সাহেবের তাহযীব পরিপন্থী বক্তব্যের উপর কওমী আলেম শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসরুর আকুনী হাফি. এর অনুভূতি-


মাওলানা হাসান জামীল সাহেবের তাহযীব পরিপন্থী বক্তব্যের উপর কওমী আলেম শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসরুর আকুনী হাফি. এর অনুভূতি-

মুতাকাল্লিম মুনশী!
আমি কারও বয়ান শুনিনা, কোনো মাহফিলে যাওয়া সময়ের অপচয় মনে করি। হ্যাঁ আমার শিক্ষাগুরু, কাজী মু'তাসিম বিল্লাহ, ফরীদ উদ্দীন মাসউদ, নুর হোসেন কাশেমী, উবায়দুল্লাহ ফারুক, আমার মুর্শিদ ড, মুশতাক আহমেদ দাঃ বাঃ এই মাপের পরিপক্ষ দেওবন্দের সূর্যসন্তানদের কনফারেন্স লাউঞ্জে যাই, ভালো লাগে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করি, বিশেষ করে এফ, বি, তে লেখালেখির কারণে, কিতাব ঘাঁটা ঘাঁটি করি এই সুবাদে মোবাইল নিত্য সঙ্গী। ভিডিও দেখা, অডিও শুনা আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দেয়। পারিনা,,, কিতাব পড়ি ও সার্চ করি। হঠাৎ আপনার বক্তব্যের চুম্বক অংশ শুনে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলতে মন চাইছিলো। কিন্তু মোবাইলতো জড় পদার্থ। মূল রক্তে মাংসের মানুষটি  কি বলে? মতিভ্রম ঘটেছে নিশ্চই, না হয় এভাবে কি কেউ নাঙ্গা হামলা চালায়? সাহাবাদের জীবন চিত্রে? আপনার শেষ হরফ পর্যন্ত শুনেছি। শুধু সাহাবাদের মহব্বতে। আগা গুড়া শুনে কলম ধরলাম। 

আমাদের আইটি ভূবনের তরুণদের বলছি; আমাদের গুরুভক্তি-শ্রদ্ধার সীমারেখা নির্নয় করা জরুরি। আমার প্রিয় ব্যক্তির মতিভ্রম হলে, একটি ভুল মতবাদকে নিষ্কলুশ করার জন্য আমরা অনেক ফাঁকফোকর খুঁজি। প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের উপর অযাচিত এক ডের অভিযুগ বখশে দিই। ঠিক একই ভুল আমার অঙ্গন ছাড়া বহিরঙ্গনের কেউ করলে খড়গ হস্ত হয়ে তার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করি। 

উদীয়মান দায়ী!
আপনাকে চৌকষ থাকতে হবে, পরিমাণ ও পরিমাপ স্হির করে কথা বলতে হবে। জাগতিক দুনিয়ার লোক, লম্ফ জম্ফ করে, হুমকি ধমকি দেয়। আমিত্যের তরবারি দিয়ে যাকে ইচ্ছে মস্তক খণ্ডিত করে। আপনি তা করতে পারেননা। জাগতিক বক্তারা বলেঃ যেমন, আরে আমি তাকে তোয়াক্কা করিনা, তাকে হিসেব করার টাইম নাই, আরে শুনো আমি - আমি, আমি অমুকের ভাইপু, আমার কথায় এ দেশে সূর্য অস্তমিত হয়, ইত্যাদি। আমাদের দাওয়তি মাঠ যা ছিলো বিনয় ও সংবেদনশীল আজ তা অহংকারের অগ্নিমূর্তির রূপ পরিগ্রহ করেছে। আরে আমি, আমার, এই সেই, আরে বলেননা কিছু হলে আমার হবে। আস্তাগফিরুল্লাহ। শ্রুতা থেকে জুরপূর্রবক স্বীকৃতি আদায় করে নিচ্ছে, আবার অল্টারনেট হিসেবে আল্লাহর গজবের জিম্মা নিজের গায়ে মেখে শ্রুতাদের শান্ত করছেন,,,। আসুন বিষয়টি এনালাইসেস করি। 

আমাদের ভাষা ও রুচিবোধ মার্জিত হতে আর কেমন সময় লাগতে পারে? সত্যি বলতে, প্লীজ বিলীভমী! আমি কীবোর্ড পুশ করতেই পারছিনা, কী লেখবো, কোন হরফ দিয়ে শুরু করবো, সেই ভাব, ভাষারীতি আমি খুঁজে পাচ্ছিনা। একজন আলেমের কথা বলছি? না এরকম নয়। সাধারণ জ্ঞানহীন,অজপাড়া গাঁয়ের কোনো মানুষ নিজের আমলের সাথে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাঃ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে যাকে আফজালুল বাশার, উত্তম মানব বলা হয়, ) আমলের তুলনা করবে ? এ ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করার দুঃসাহস দেখাতে পারেনা। ভাবতে অবাক লাগে! আমাদের ভাষারীতি, শব্দচয়ন, পরিশীলিত ও পরিমার্জিত হতে আর কত দেরী ? একজন সুস্থ, সুন্দর, সতেজ, বুদ্ধিদীপ্ত, আলেম কীভাবে নিজের অশুচী আমলের সাথে সিদ্দিকে আকবর রাঃ শুচীতাপূর্ণ আমলের তুলনা করতে পারে? অধমের কথা শুনে আইটি দুনিয়ার দেয়াল থেকে যৌথ ধাক্কায় আমাকে কপোক্ষাত করবেননা। আপনার মনে যে যে কথা উদগ্রীব ভাবে উদিত হয়েছে তা হলো! আপনি আমাকে ম্যানশন করে বলছেন যে, আমি পুরোপুরি বক্তব্য শুনিনি বা উপলব্ধি করতে পারিনি। এমন বলা স্বাভাবিক, তবে বরেণ্য পাঠক! মনে রাখবেন, ষাটের কোঠায় পা রাখা বৃদ্ধকে দাম্পত্য জীবনের ম্যাচ খেলা শেখাবেননা। এ স্বর্ণসীড়ি মাড়িয়ে আজ তিনি আপনাদেরকে বলছেন; এ সব কেবল বক্তব্য নয় বরং তাদের লালিত চিন্তা। একজন  'গালী' শীয়া, সাহাবা বিদ্ধেষী, মানহাজী ও হারকাতিদের নগ্ন বিস্ফোরণ। 

ছিলেন কাপড়ের ব্যাবসায়ী, দেউলিয়া হয়ে, মাওলানা মামুনুল হক সাহেবের হাত ধরে, শুরু করলেন ওয়াজের ব্যাবসা।এবার দাম্ভিকতার সাথে নিজের আমলকে কম্প্রেয়ার করেতে লাগলেন,সিদ্দিকে আকবর রাঃ সাথে? হজ্জ কয়বার করেছেন আপনি জানেননা। বলুনতো! বাপের টাকা দিয়ে কয়বার হজ্জ করেছেন? মাওলানা মামুনের খবর কয়দিন নিয়েছেন? কারান্তরীণদের নিয়ে আপনার কীপদক্ষেপ? মুহুর্তে বর্ণ বদলকরে দিব্বি মাঠ গরম  করছেন। উদরপূর্তির কাজে গভীর নিমগ্ন রয়েছেন। বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন জ্ঞানের তাজাদীপ্ত নূড়ি কুঁড়াতে আমি কত দেশ সফর করেছি ,বলতে পারবনা, হিসাব ছেড়ে দিয়েছি। আহ্ জ্ঞানের জন্য যদি দেশদেশান্তরে ছড়িয়ে পড়তেন, আর বলতেন কত বার ইরাক, বসরা, কুফা, হামাত, নাওয়া, নাসা, বুখারা, সমরকান্দ, তাবরিয, সিজিস্তান, সফর করেছি মনে নেই আহ্ কি যে ভালো লাগতো। নেই সেই মানুষগুলো। 

মূলতঃ কাকে কি বলবো? আমরাইতো তেল দিয়ে দিয়ে বাড়িয়েছি। অদূরদর্শিতার কুফল। আমাদের অঙ্গন কেন এমন হলো যে সবাই নতুন বক্তা খুঁজে? আর এই বাজার আমাদের সিলেটে সম্প্রতি খুবই তুঙ্গে। খাওয়াছ ও আওয়াম সবাই এই মরণব্যধীতে আক্রান্ত। সিলেটের মার্কেটের কদর বক্তাদের কাছেও ঈর্ষণীয়। একজন বক্তার, পড়ালেখা কি পরিমাণ, কার সান্নিধ্যে ছিলেন? কার মাশওয়ারায় চলেন? তাঁর চেতনা কি? কে তার আদর্শের নিখুঁত রূপকার? কার রূপকথার গল্প বলে সে চলে? নিশি রাতের আমল কী? "রুহবানুললাইল ও ফুরসানুননাহার" এর চিত্র কতটুকু চিত্রিত হয়েছে তার জীবন পাতায় ? আমার রূপকথার রাজা 'ফিকরে নানুতুভী' আমি কি সেই প্রাণপুরুষকে বক্তা হিসেবে নির্বাচিত করেছি? না না না। অলীপুরী, আব্দুল মালেক সাহেব, আবু তাহের মিসবাহ সহ অনেক বর্ষীয়ান প্রাণসত্তা আজও মুরব্বি মেনে চলেন। একটি চব্বিশ চাকার তেলের লরী, সে গোটা শহরে পেট্রোল পাম্পগুলোতে তেল বিতরণ করে। দিন শেষে সে আবার নিজের জন্য পেট্রোল সংগ্রহ করে। এটিই ধরার নীতি। দেখুন সে কার জলাধার থেকে আত্তার খোরাক যোগায়? সে নিজেই রোগাক্রান্ত আপনাকে প্রতিষেধক দেবে কি? আমি সিলেটের অনেক আলেমদের বলেছি, সেই অনেক আগে । প্রফেশনাল গ্রাফিক্স বক্তাদের সম্পর্কে, কেউ মৌলিক উত্তর দিতে পারেননি। গা বাঁচিয়ে রাখার মতোই চলছে। একজন বক্তার পেটের পরিধি কতটুকু? সে কতটুকু ডাইযেস্ট করতে পারবে এ বিষয়টি লক্ষণীয়। সে কার ফিকির লালন করে? আপনি দাওয়াত করলেন আপনার মাক্তাবায়ে ফিকির কি? আমরা 'মা আনা আলাইহি ওয়া আসহাবী' এর ফিকির নিয়ে চলি। ফিকরে নানূতূভী ও রশিদী নিয়ে চলি যাদেরকে উন্মাদের মতো দাওয়াত করি তাদের ভেতরে কি সেই ফিকির আছে? আদৌ শুনেছেন? 

আপনি যদি এক হাজার বার লাইভে এসে আপনার কথার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় তুলে ধরেন তা ধরতে পারেন কিন্তু সবাই মনে রাখবেন এই লাইভে লাভ হবে। কিন্তু নীতি আদর্শের ভিত্ত রচিত হবেনা। সাহাবায়ে কেরামের শানে ও মানে কি শব্দ চয়নের প্রয়োজন এটি নির্ভর করে আপনার ঈমান ও সাহাবাদের ভালোবাসার মানদণ্ডের উপর। প্রমের টান যে রকমের, শব্দ চয়ন সে রকমের। মুখতাসারুল মা'য়ানী, দুরুসূল বালাগাত, আলবালাগাতুল ওয়াযেহা, এই গুলো আমাদের দরসে নেজামির পাঠ্য। কার কাছে আপনার অধ্যায়ন জানিনা তবে 'আসালীবুল কালাম ও মুতাকাল্লিম এর উপর আপনার চর্চা শূন্যের কোঠায়। 'তা'রিফ বি সূরাতিযযম ও যম বিসূরাতিততা'রিফ" এসব কোথায় কীভাবে প্রযোজ্য আপনার মননে নেই। বালুরাশি যে ভাবে পানি চুষে ঠিক সেই ভাবে আপনার আত্মগরিমা, অহমিকা আপনাকে চুষে চুষে এমন করেছে যে আত্মশ্লাগার কারণে কথার খেই হারিয়ে ফেলেছেন।

বড় ছোটকে ও সমবয়স্কদের বেলায় 'তা'রিফ বিসূরাতিযযম' করা যায় তবে সময় সাপেক্ষে। বড়দের বেলায় এমন করলে এটাকে কৌতুক ও ব্যাঙ্গকরা বুঝায়। নবী সাহাবিদের বেলায় ঈমান চলে যাওয়ার ভয় রয়েছে। আপনার বক্তব্যের সারমর্ম আপনার ভাষায় যদি প্রকাশ করি তাহলে একে বারে সাবলীল ভাবে এটি বেরিয়ে আসবে যে আপনি সাহাবাদের শানে প্রশংসা করেছেন। বলেছেন আবুবকর সিদ্দিক রাঃ পায়ের ধুলোর সমান ও আপনি নন। আমার ব্যাখ্যার সাথে আপনি ও একমত হবেন তবে 'ধুলোর সমান' এই কথা বলতে গিয়ে যে নগ্নতা, দাম্ভিকতা ও ব্যাঙ্গ করেছেন , সেখানেই কাজের কাজ যা হওয়ার হয়ে গেছে। মিশনারিরা এভাবেই বলে। এটি মনোবিজ্ঞানীদের একটি থিওরি। 

"কাল্লিমুননাসি আ'লা কাদরি উকুলিহিম" আপনার শ্রুতাগণ, রাযী গাজালী নয় যে আপনার ফিলসী 'সাফসাফা' বুঝে উঠতে পারবে। আপনার কথার মূল উদ্দেশ্য হলো! আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর বৈশিষ্ট্য এটাই যে উনি সাহাবী, বস। বাকি তাঁর কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। আমল আখলাক তেলাওয়াত তাহাজ্জুদ হজ্জ উমরা মোটকথা সার্বিক আমলে আমি (আনফুন ফিল মা ও ইস্তুন ফিসসামা) অনেক আগে আছি। 

পূর্বের যুগে সাহাবা বিদ্বেষী এ ভাবেই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে শব্দের মাইর প্যাচে কামান দাগিয়েছে, কাম উদ্ধার করেছে। আসুন, বড়দের সংসর্গ গ্রহণ করি, নিজে আত্মশুদ্ধি অর্জন করি। সংযমী হই।

26-07-23
আব্দুল্লাহ্ মাসরূর আকুনী
গাজীপুর ঢাকা।

Post a Comment

0 Comments