Recent Tube

ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় কেউই চিরস্থায়ী নয়! সম্পাদনায়: জয়নাল আবেদীন।



 ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় কেউই চিরস্থায়ী নয়! 
-------------------------

 মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আখেরাত বা পরকাল। দুনিয়া হচ্ছে পরকালের সঞ্চয় জমানোর স্থান। এ স্থানে মানুষ সুনির্দিষ্ট সময় অবস্থান করে উত্তম আমল ও আখলাকের মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করে। আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন, "আর এ দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং নিশ্চয়ই আখিরাতের নিবাসই হল প্রকৃত জীবন, যদি তারা জানত”। --- [ সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৪ ]


 মুমিনদের আসল বাসস্থান হল জান্নাত। দুনিয়া হল আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। যদি কেউ আখিরাতের কথা ভূলে দুনিয়া অর্জনের পিছনে লেগে থাকে ,তাহলে বুঝতে হবে তার অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। দুনিয়ার প্রতি মোহব্বত ততটুকু করতে হবে; যতটুকু করলে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে যথেষ্ট হবে। কারণ দুনিয়া হলো মানুষের প্রয়োজন পূরণের স্থান মাত্র। প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "দুনিয়া মুমিনের জন্য জেলখানা এবং কাফিরের জন্য জান্নাত।’
 ---- [মুসলিম : ২৯৫৬, তিরমিজি  : ২৩২৪, ইবন মাজাহ ৪১১৩, আহমদ ৮০৯০, ২৭৪৯১, ৯৯১৬]

 আখিরাতের সম্বল সংগ্রহে মানুষকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা দুনিয়াতে একটা সময় বেঁধে দিয়েছেন। কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। ভাল-মন্দ সংমিশ্রণ করে বিবেক বা জ্ঞানের পরীক্ষায় ফেলেছেন। দুনিয়ার কাজ-কারবার, স্ত্রী-পুত্র, বন্ধু-বান্ধব, ধন-সম্পদ, রং-তামাশা ও সংসার দিয়েছেন। আবার এ জীবন-সংসারকে সুন্দর ও সুচারুরূপে পরিচালনা করার জন্য বিধান দিয়েছেন। অন্তরে দুনিয়ার প্রেম-মোহব্বত খুব বেশি দিয়েছেন। এর সবই মানুষের জন্য পরীক্ষাগার। দুনিয়ার এ পরীক্ষাগারে মানুষের জীবনাচারই প্রকৃত উদ্দেশ্য নয়; বরং মানব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল আখেরাত বা পরকাল। যেখানে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। তাই দুনিয়ার এ নির্ধারিত ক্ষণস্থায়ী জীবনের মোহে পড়ে পরকালের পাথেয় সংগ্রহ থেকে উদাসীন হওয়া যাবে না।

 দুনিয়ার জীবনের প্রেম-মোহ যেন মানুষকে গাফেল করে না ফেলে এজন্য আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা পবিত্র ক্বুরআনে  সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, 
‘তোমরা জেনে রেখ, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্বপ্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছু নয়। এর উপমা হলো ‘বৃষ্টি’, যার দ্বারা উৎপন্ন শস্য ভাণ্ডার কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও। অবশেষে তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। দুনিয়ার জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। 
--- [ সূরাহ হাদিদ , আয়াত : ২০ ]

"কতদিন থাকবো এই ক্ষনস্থায়ী বাসস্থানে" এ চিন্তা  কয়জনইবা করেন!? কতো ব্যস্ততা আমাদেরকে ঘিরে ধরেছে অথচ আমরা প্রতিদিন একটু একটু করে মৃত্যুপথে যাত্রা করছি।  অপেক্ষায় থাকি সবকিছুর, শুধুমাত্র মৃত্যু ছাড়া! ছুটে চলা এই দুনিয়ার জীবন কত দিনের জানেন? 
ঐ শুনুন মহান আল্লাহর বাণী,

 আমাদের রব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন, 'পৃথিবীতে কয় বছর তোমরা অবস্থান করেছিলে? তারা বলবেঃ আমরা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করেছি, অতএব তুমি গণনাকারীদের জিজ্ঞেস কর । তিনি বলবেনঃ তোমরা অল্প সময়ই অবস্থান করেছিলে, তোমরা যদি জানতে ! -- [ সূরাহ মু'মিনূন : ১১২-১১৪ ]

 মহান আল্লাহ আরো বলেন, "যেদিন তারা তা দেখবে সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা (পৃথিবীতে) এক সন্ধ্যা বা এক সকালের বেশী অবস্থান করেনি।"
--- [ সূরাহ নাযিয়াত, আয়াত  : ৪৬  ]

 মহান আল্লাহ আরো বলেন, “তারা কি এই উদ্দেশ্যে যমীনে ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন হৃদয় ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুত: চক্ষু তো অন্ধ হয় না, বরং বক্ষস্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।“ 
--- [ সূরাহ হাজ্জ, আয়াত  : ৪৬ ]

 উপরিউক্ত আয়াতসমূহ দ্বারা একথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, অনন্তকালের আখিরাত বা পরকালের জীবনের তুলনায় এই দুনিয়ার জীবন অতি-অল্প সময় মাত্র। তারপরও এ জীবনকে চাকচিক্যময় করতে  কতো কিছুই না করছি!? গড়ে ৬০/৭০ বছরের জিন্দেগীতে কর্মমুখর, কর্মক্লান্ত, ছুটন্ত অবসরহীন জীবনটা কেটে গেল চরম পেরেশানীতে অথচ সেই পরকালের তুলনায় এই লম্বা সময়ের হিসাব মাত্র এক সকাল বা সন্ধ্যা  অথবা একদিন বা দিনের একাংশ মাত্র! এ হিসেব মিলানোর সময়টুকুইবা পান কয়জনে? প্রিয়নবী মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, 
"জান্নাতে যাবে প্রতি হাজারে একজন" তারমানে হল, 

 নয়শত নিরানব্বই জনই ওই অনন্তকালের দাউ দাউ করা প্রজ্বলিত অনলে জ্বলবে।  উফফ! সে কি অসহায় জীবন! তারপরও গাফেল থেকে যাবেন!? 

 আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে  চিরস্থায়ী আখিরাতের জন্য ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াকে আমলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাঁর বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে অতিবাহিত করার তাওফীক্ব দান করুন।  [ আমীন ]
.

Post a Comment

0 Comments