Recent Tube

সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া কর্তৃক ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ ও আমাদের জবাবঃ (পর্ব ০২) মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া কর্তৃক ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ ও আমাদের জবাবঃ 
(পর্ব ০২) 
----------------------------------------------------------------

 সূরা নিসার ৫৮ ও ৫৯ নং আয়াত পেশ করে সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া বলেন, 'জনগণের দায়িত্ব শাসকের আনুগত্য করা আর শাসকের দায়িত্ব আমানতের হক আদায় করা। এখানেই আল্লাহ রাজনীতি শেষ দিয়েছেন।...' 

 আমাদের জবাবঃ 
 এখানে মাদখালী শায়েখ মহান আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছেন। কেননা, আল্লাহ তা'য়ালা এখানেই রাজনীতি শেষ করে দেননি। শাসকের দায়িত্ব আমানতের হক আদায় করা এবং ইনসাফ ভিত্তিক বিচার ও শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা। আর এটা তখনই সম্ভব, যখন আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার ও শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা হবে। আল্লাহর বিধান বর্জন করে মানবরচিত কুফুরী বিধান প্রতিষ্ঠা করলে তা কখনোই ইনসাফ ভিত্তিক হবে না। এ জন্যই মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ.
আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা বিচার-ফয়সালা করবে না, তারাই জালিম। (সূরা মায়িদা ৫/৪৫)

 তাই শাসকের ফরজ দায়িত্ব হল, কুরআনের বিধানের আলোকে বিচার শাসন পরিচালনা করা। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মদিনায় গিয়ে রাষ্ট্র গঠন করার পর আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে বলেন,
ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﻨَﺎ ﺇِﻟَﻴْﻚَ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏَ ﺑِﺎﻟْﺤَﻖِّ ﻟِﺘَﺤْﻜُﻢَ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﺭَﺍﻙَ ﺍﻟﻠَّﻪُ. 
“(হে নবী) আমি ন্যায় ও সত্যসহ তোমার কাছে এই কিতাব নাযিল করেছি যাতে আল্লাহ তোমাকে যে আলো দেখিয়েছেন তার সাহায্যে তুমি মানুষের মধ্যে বিচার-শাসন ফায়সালা করো।” (সূরা নিসা ৪/১০৫)

 ♦ এখন প্রশ্ন হল, শাসক যদি তার দায়িত্ব পালন না করে, সে ক্ষেত্রেও তার আনুগত্য করতে হবে কি না? এ বিষয়ে কি ইসলামে রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা নেই? আসুন, তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (ﷺ) থেকে জেনে নেয়। 

 ♥ আল্লাহ তা'য়ালা আরো বলেন, 
وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ.
আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে বিচার ফয়সালা করে না, তারাই কাফির। (সূরা মায়িদা ৫/৪৪)

 ♥ হযরত উবাদা ইবনু সামিত (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেনঃ 
دَعَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ فَقَالَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةً عَلَيْنَا وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنْ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ.
মহানাবী (ﷺ) আমাদের (বায়আতের জন্য) আহবান করলেন। আমরা তার কাছে বায়আত করলাম। এরপর তিনি (উবাদা) বললেনঃ আমাদের থেকে যে ওয়াদা তিনি গ্রহণ করেছিলেন তাতে ছিল যে, আমরা আমাদের সুখে-দুঃখে, বেদনায় ও আনন্দে এবং আমাদের উপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিলেও পূর্ণাঙ্গরুপে শোনা ও মানার উপর বায়আত করলাম। আরও (বায়আত করলাম) যে আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংঘর্ষ-বিদ্রোহে লিপ্ত হব না। কিন্তু যদি এমন স্পষ্ট কুফুরী দেখ, যে বিষয়ে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে বিদ্রোহ করবে। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাঃ ৭০৫৫, ৭০৫৬; আধুনিক প্রকাশনী হাঃ ৬৫৬৫; ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাঃ ৬৫৭৮; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারত, হাঃ ১৭০৯; ইসলামিক ফাউন্ডেশন হাঃ ৪৬১৯, ইসলামিক সেন্টার হাঃ ৪৬২০; মুসনাদে আহমদ হাঃ ২২১৭১)

 অর্থাৎ কোন মুসলিম শাসক যদি সুস্পষ্ট ভাবে কুফুরী করে (যেমন- আল্লাহর বিধান বর্জন করে কুফুরী মতবাদ কায়েম করে, হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসাবে রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে) তাহলে সে শাসক ক্ষমতায় থাকার অধিকার হারায়। এমন শাসকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং তাকে অপসারণ করা মুসলিম উম্মাহর উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। 

 ♥ ইমাম কাযী ইয়ায (রাহঃ) বলেন, 
فلو طرأ عليه كفر وتغيير للشرع أو بدعة -يعني بدعة مكفرة -خرج من حكم الولاية وسقطت طاعته ووجب على المسلمين القيام عليه وخلعه”. 
যদি শাসকের ওপর আপতিত হয় কোনো কুফর বা শরীয়াত পরিবর্তন বা বিদআতে মুকাফফিরা, তাহলে সে শাসক কর্তৃত্বের বিধান থেকে বেরিয়ে যায়, তার আনুগত্য বাতিল হয়ে যায় এবং মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও তাকে অপসারণ করা। (শারহু সহীহ মুসলিম লিন-নবাবী, ১২/২২৯)

 ♥ ইমাম সাফাকুসী (রাহঃ) বলেন, 
أجمعوا على أن الخليفة إذا دعا إلى كفر أو بدعة يثار عليه
ইমামগণ একমত হয়েছেন যে, শাসক যদি কুফরের দিকে ডাকে বা বিদআতের দিকে ডাকে, তাহলে তার ওপর আক্রমণ করা হবে। (ইরশাদুস সারী বিশারহি সহীহুল বুখারী ১০/২১৭) 

 ♥ ইমাম ইবন হাজার আসকালানী (রাহঃ) বলেন, 
ينعزل بالكفر إجماعاً فيجب على كل مسلم القيام في ذلك.
কুফরে জড়িত হলে শাসকের অপসারিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। তখন সকল মুসলিমের ওপর ওয়াজিব এ ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। (ফাতহুল বারী, ১৩/১৩৩)

 ♥ এমনকি মুসলিম শাসক যদি সালাত আদায় না করে অথবা রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত কায়েম না রাখে তাহলে তাকেও অপসারণ করতে হবে। হযরত উন্মু সালামা (রাঃ), আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) ও আউফ বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ  
سَتَكُونُ أُمَرَاءُ فَتَعْرِفُونَ وَتُنْكِرُونَ فَمَنْ عَرَفَ بَرِئَ وَمَنْ أَنْكَرَ سَلِمَ وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ قَالُوا أَفَلَا نُقَاتِلُهُمْ قَالَ لَا مَا صَلَّوْا. وفى رواية ﻣَﺎ ﺃَﻗَﺎﻣُﻮْﺍ ﻓِﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓ.
"শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে এমন কিছু ব্যক্তি শাসক হবে যাদের কতগুলো কাজ তোমরা পছন্দ করবে এবং কতগুলো কাজ অপছন্দ করবে। যে লোক তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে, আর যে লোক তাকে ঘৃণা করবে সেও দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু যে লোক তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে এবং তার অনুসরণ করবে সে অন্যায়ের অংশীদার বলে গণ্য হবে। প্রশ্ন করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করব না? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জবাব দেনঃ না, যতদিন তারা সালাত আদায় করতে থাকবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, যতদিন তারা তোমাদের মধ্যে সালাত কায়েম রাখবে।" (সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৫৪, ১৮৫৫; জামে তিরমিযী হাঃ ২২৬৫; আবু দাউদ হাঃ ৪৭৬০; মুসনাদে আহমদ হাঃ ১০৮৪০, ১০৮৪৭, ২৩৪৬১, ২৫৯৮৯, ২৬০৩৭, ২৬০৬৬; সুনান দারেমী হাঃ ২৭৯৭)

 ♥ ইমাম কাযী ইয়ায (রাহঃ) বলেন, 
أجمع العلماء على أن الإمامة لا تنعقد لكافر، وعلى أنه لو طرأ عليه الكفر انعزل، وكذا لو ترك إقامة الصلوات، والدعاء إليها.
আলিমগণ একমত হয়েছেন যে, কাফিরের জন্য ইমামত বা নেতৃত্ব অনুষ্ঠিত/সম্পন্ন হবে না। এ ব্যাপারেও একমত যে, তার ওপর কুফর আপতিত হলে অপসারণ করা হবে। একই বিধান হবে তিনি যদি সালাত প্রতিষ্ঠা ও সালাতের দিকে দাওয়াত দেওয়া ছেড়ে দেন। (শারহু সহীহ মুসলিম লিন-নবাবী ১২/২২৯)

 ♥ ইমাম কুরতুবী (রাহঃ) বলেন, 
“وكذلك لو ترك -أي الحاكم -إقامة قاعدة من قواعد الدين، كإقامة الصلاة وصوم رمضان، وإقامة الحدود، ومنع من ذلك، وكذلك لو أباح شرب الخمر، والزنى، ولم يمنع منهما لا يختلف في وجوب خلعه. 
অনুরূপভাবে যদি শাসক দ্বীনের কোনো মূলনীতি/ভিত্তি ছেড়ে দেয়, যেমন—সালাত প্রতিষ্ঠা করা, রমাযানের রোজা, শরয়ী দণ্ডবিধি কায়েম করা এবং তা থেকে বাধা দেয়, অনুরূপভাবে যদি মদপান ও ব্যভিচারকে বৈধতা দেয় এবং উভয় থেকে বাধা না দেয়, তাহলে তাকে অপসারণ করা ওয়াজিবের ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। (আল-মুফহিম লিমা আশকালা মিন তালখীসি কিতাবি মুসলিম ৩/৪১৫)

 কুরআন, হাদীস ও মুজতাহিদ ইমামদের কাওল দ্বারা প্রমাণিত যে, শাসক যদি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার ও শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা না করে অর্থাৎ তার দায়িত্ব পালন না করে বরং হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল হিসাবে রাষ্ট্রে বাস্তবায়ন করে শরীয়ত পরিবর্তন করে বা অন্য কোনো ভাবে সুস্পষ্ট কুফুরী করে তাহলে শাসকের আনুগত্য করা যাবে না। তখন তাকে অপসারণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। একইভাবে যদি শাসক দ্বীনের কোনো মূলনীতি ছেড়ে দেয়, যেমন—সালাত প্রতিষ্ঠা করা, রমাযানের রোজা, শরয়ী দণ্ডবিধি কায়েম করা এবং তা থেকে বাধা দেয়, অনুরূপভাবে যদি মদপান ও ব্যভিচারের মত হারাম কাজোর বৈধতা দেয় এবং হারাম কাজে বাধা না দেয়, তাহলে তাকে অপসারণ করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে ইমামদের কোনো মতভেদ নেই বরং ইজমা হয়েছে। কিন্তু আফসোস! সেকুলার শাসকের দালালী করতে গিয়ে সেকুলার সালাফি মাদখালী শায়েখ আবু বকর যাকারিয়া এই ওয়াজিব ও ইজমাকে অস্বীকার করেছেন।

Post a Comment

0 Comments