Recent Tube

ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহর ‘ইসলামী আকীদাঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।।


ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহর ‘ইসলামী আকীদাঃ
---------------------------------------------------------------
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহর ‘ইসলামী আকীদা’ বইকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অভিযোগ ভিন্ন ভিন্ন হলেও সব অভিযোগ বা প্রায় অভিযোগের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর সিফাত কেন্দ্রিক তার নব্য সালাফি আকীদা প্রচার। তার আকীদা হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহয় আল্লাহর যে যে সিফাত বর্ণিত হয়েছে তা আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করতে হবে, তাওয়িল তথা ব্যাখ্যা করা যাবে না। অর্থাৎ আল্লাহর সিফাত সংক্রান্ত আলোচনায় তিনি সিফাতগুলোকে 'সরল', 'স্বাভাবিক', 'প্রকৃত' ইত্যাদি অর্থে গ্রহণ করতে বলেছেন। তিনি সব ধরনের তাওয়িলকে সামগ্রিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। তাওয়িলকে মুতাযিলী, জাহমী, কাদারী ও অন্যান্য বিভ্রান্ত ফিরকার মতাদর্শ বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাওয়িল করাকে সিফাত অস্বীকার করা বলে গণ্য করেছেন। অথচ বাস্তব কথা হলো, সালাফে সালেহীন তাওয়িল সামগ্রিকভাবে নাকচ করেননি। বরং যেখানে তাওয়িল করার সুযোগ আছে কিংবা জরুরী হয়ে পড়ে, সেখানে তারা তায়িল করেছেন। উদাহরণস্বরূপ দেখুনঃ

০১. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. ও দাহহাক রহ. আল্লাহ তাআলার ‘আসা’ (ﺍﻹﺗﻴﺎﻥ)-এর তাওয়িল করেছেন—তাঁর ‘নির্দেশ’ আসবে। (তাফসীরে কুরতুবী: ৭/১২৯) 

০২. হাসান বসরী রহ. তাঁর ‘আগমন’ (ﺍﻟﻤﺠﻴﺊ)-কে তাওয়িল করেছেন— তাঁর আদেশ ও সিদ্ধান্তের আগমন হবে। (তাফসীরে বাগাবী ৪/৪৫৪) 

০৩. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. ও আরও অনেকে ‘কুরসি’কে তাওয়িল করেছেন ‘ইলম’ বলে; আবর কেউ রাজত্ব ও কর্তৃত্ব বলে। (তাফসীরে ইবনু আবি হাতিম : ২/৪৯০) 

০৪. ইবনু আব্বাস রা., মুজাহিদ ও দাহহাক রহ. পায়ের গোছা (ﺳﺎﻕ)-কে তাওয়িল করেছেন অবস্থার বিভীষিকা ও প্রচণ্ডতা বলে। (তাফসীরে তাবারী, ইবনু আবি হাতিম প্রভৃতি) 

০৫. ইবনু আব্বাস রা.-সহ আরও অনেকে হাতসমূহ (ﺃﻳﺪ )-কে তাওয়িল করেছেন ‘শক্তি’ দ্বারা। (তাফসীরে তাবারী : ১১/৪৭২) 

০৬. আ‘মাশ রহ. দ্রুত চলা (ﻫﺮﻭﻟﺔ)-কে তাওয়িল করেছেন ক্ষমা ও রহমত দ্বারা। (জামে তিরমিযী : ৫/৫৮১) 

০৭. আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক রহ. ‘আল্লাহর পার্শ্ব’ (ﻛﻨﻒ)-কে তাওয়িল করেছেন 'আশ্রয়’ দ্বারা। (খালকু আফআলিল ইবাদ, বুখারী : ৭৮) 

০৮. ইমাম মালিক রহ. ‘আল্লাহর নেমে আসা’ (ﻧﺰﻭﻝ)-কে তাওয়িল করেছেন ‘নির্দেশ ও রহমত নাজিল হওয়া’ দ্বারা। (আত-তামহিদ : ৭/১৪৩; সিয়ার : ৮/১০৫) 

০৯. হাসান বসরী ও নজর ইবনু শুমায়ল রহ. ‘আল্লাহর পা’ (ﻗﺪﻡ)-কে তাওয়িল করেছেন ‘পূর্বে যাদের ব্যাপারে ইলম রয়েছে’ বলে। (আসমা-সিফাত, বায়হাকি : ৩৫২; দাফউ শুবাহিত তাশবিহ : ৮১) 

১০. ইবনু হিব্বান রহ. একই শব্দের তাওয়িল করেছেন ‘স্থান’ দ্বারা। (সহীহ ইবনু হিব্বান : ১/৫০২) 

১১. সুফয়ান ইবনু উয়ায়না রহ. ‘রহমানের পদক্ষেপ (ﻭﻃﺄﺓ)-কে তাওয়িল করেছেন বিজয় ও সাহায্য দ্বারা। (তাওয়িলু মুখতালিফিল হাদিস, ইবনু কুতায়বা : ২১৩) 

১২. মুজাহিদ ও শাফিয়ি রহ. ‘যেদিকে মুখ ফেরাও না কেন, সেদিকেই আল্লাহর চেহারা রয়েছে’ (ﻓﺜﻢ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻠﻪ)-কে তাওয়িল করেছেন—সেদিকেই আল্লাহর কিবলা রয়েছে। (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়া) এছাড়াও আবু উবায়দ কাসিম ইবনু সাল্লাম থেকেও তাওয়িল বর্ণিত রয়েছে। (লিসানুল আরব : ১/২০৬)

তাদেরকে সিফাত অস্বীকারকারী মুতাযিলী, জাহমী, কাদারী বলে আখ্যায়িত করবেন? তথাপি কথা হলো, কিছু তাওয়িল তো এতটাই অপরিহার্য যে, কেউ যদি তা না করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। এসব ক্ষেত্রে ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ.-ও তাওয়িল করেছেন। বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে বর্ণিত যে সকল সিফাত বাহ্যিক অর্থে আল্লাহ তাআলার জন্য দোষ-ত্রুটি অপরিহার্য করে, সেগুলোকে আবশ্যিকভাবে তাওয়িল করতে হবে। যেমন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, يا ابن آدم مرضت فلم تعدني ‘বান্দা আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি’। (সহীহ মুসলিম : ৪/১৯৯০, হাঃ ৬৫৫৬; সহীহ ইবনু হিব্বান : ১/৫০৩) কুরআনে এসেছে, نسوا الله فنسيهم ‘তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে। তাই তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন।’ (সূরা তাওবা : ০৯/৬৭) إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ. নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, ...। (সূরা আহযাব : ৩৩/৫৭) 

এখন কি এসকল আয়াতের আলোকে অথর্ব অক্ষরবাদীরা দাবি করে বসবে যে, অসুস্থ হওয়া, ভুলে যাওয়া এবং কষ্ট পাওয়া আল্লাহ তাআলার সিফাত (গুণ)? তিনি অসুস্থ হন, তবে আমাদের অসুস্থতার মতো নয়; তিনি ভুলে যান, তবে আমাদের ভুলে যাওয়ার মতো নয়; তিনি কষ্ট পান, তবে আমাদের কষ্ট পাওয়ার মতো নয়। (নাউজুবিল্লাহ) 

ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহ. লেখেন :
 ﺃﻣﺎ ﻗﻮﻟﻪ: (ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻧَﻨﺴَﺎﻛُﻢْ ﻛَﻤَﺎ ﻧَﺴِﻴﺘُﻢْ ﻟِﻘَﺎﺀَ ﻳَﻮْﻣِﻜُﻢْ ﻫَﺬَﺍ) ﻳﻘﻮﻝ : ﻧﺘﺮﻛﻜﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻨﺎﺭ } ﻛَﻤَﺎ ﻧَﺴِﻴﺘُﻢْ { ﻛﻤﺎ ﺗﺮﻛﺘﻢ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﻟﻠﻘﺎﺀ ﻳﻮﻣﻜﻢ ﻫﺬﺍ . 
কুরআনের আয়াত—‘আজ আমি তোমাদেরকে সেভাবে ভুলে যাব, যেভাবে তোমরা এই দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিলে’। এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামে ছেড়ে দেবো, যেভাবে তোমরা এই দিনের সাক্ষাতের জন্য আমল করা ছেড়ে দিয়েছিলে। (আর-রাদ্দু আলায যানাদিকা : ১৭)
 ﻭﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺁﻳﺔ ﺃﺧﺮﻯ :} ﺇِﻧَّﺎ ﻣَﻌَﻜُﻢْ ﻣُﺴْﺘَﻤِﻌُﻮﻥَ {ﺃﻣﺎ ﻗﻮﻟﻪ :} ﺇِﻧَّﺎ ﻣَﻌَﻜُﻢْ { ﻓﻬﺬﺍ ﻓﻲ ﻣﺠﺎﺯ ﺍﻟﻠﻐﺔ، ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻠﺮﺟﻞ : ﺇﻧﺎ ﺳﻨﺠﺮﻱ ﻋﻠﻴﻚ ﺭﺯﻗًﺎ، ﺇﻧﺎ ﺳﻨﻔﻌﻞ ﺑﻚ ﻛﺬﺍ. ﻭﺃﻣﺎ ﻗﻮﻟﻪ:} ﺇِﻧَّﻨِﻲ ﻣَﻌَﻜُﻤَﺎ ﺃَﺳْﻤَﻊُ ﻭَﺃَﺭَﻯ { ﻓﻬﻮ ﺟﺎﺋﺰ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻐﺔ، ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﺍﻟﻮﺍﺣﺪ ﻟﻠﺮﺟﻞ: ﺳﺄﺟﺮﻱ ﻋﻠﻴﻚ ﺭﺯﻗﺎً، ﺃﻭ ﺳﺄﻓﻌﻞ ﺑﻚ ﺧﻴﺮًﺍ .
আল্লাহ তাআলা অপর এক আয়াতে বলেন—‘আমি তোমাদের সঙ্গে শুনব।’ ‘আমি তোমাদের সঙ্গে’ এটা ভাষার রূপক ব্যবহার। এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে বলে, আমি তোমার ওপর রিজিক জারি করব। আমি তোমাকে এরূপ এরূপ করব। আরেক আয়াত—‘আমি তোমাদের দুজনের সঙ্গে থেকে শুনব ও দেখব’। এটা ভাষাতত্ত্ব অনুসারে বৈধ। এক ব্যক্তি আরেক ব্যক্তিকে বলে, আমি তোমার ওপর রিজিক জারি করব। আমি তোমার সঙ্গে ভালো আচরণ করব। (প্রাগুক্ত : ১৯)
 
এখন ইমাম আহমদ রহ.- সহ যারাই তাওয়িল বা রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন তাঁরা কি আহলুস সুন্নাহ থেকে খারিজ হয়ে সিফাত অস্বীকারকারী মুতাযিলী, জাহমী, কাদারী বলে সাব্যস্ত হবেন?

Post a Comment

0 Comments