‘আবুল আলা’ নামের ব্যাপারে সংশয় নিরসন:
কিছু মানুষ ‘আবুল আলা’ নামটির ব্যাপারে আপত্তি করে থাকে। তারা বলে থাকে, “আলা আল্লাহর নাম। সুতরাং ‘আবুল আলা’ অর্থ হয়, আল্লাহর পিতা। (নাউযুবিল্লাহ)। সুতরাং ‘আবুল আলা’ না বলে ‘আব্দুল আলা’ (আল্লাহর বান্দা) বলতে হবে।”
নিম্নে এই সংশয় নিরসন এবং এ বিষয়ে সঠিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হল:
‘আবুল আলা’ নামটি ভারত উপমহাদেশে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি নাম। কিন্তু আরবি ভাষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকার কারণে কিছু মানুষ উপরোক্ত বিভ্রান্তি মূলক ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করে থাকে। ফলে মানুষ এ নাম নিয়ে মহা বিড়ম্বনায় পড়ে যায় এবং নাম পরিবর্তনের জন্য অস্থির হয়ে যায়। অথচ এ নামটিতে শরিয়ত বিরোধী বা আপত্তিকর কিছু নেই। কারণ ‘আবুল আলা’ শব্দটির সঠিক আরবি উচ্চারণ হবে: أبو العلاء (আবুল আলা)। এর অর্থ: সুউচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, সম্মানের অধিকারী।
যেমন আমাদের দেশে আলাউদ্দিন (علاء الدين) নামে বহু মানুষের নাম রয়েছে। এখানেও ‘আলা’ শব্দের অর্থ: উচ্চ মার্যাদা বা সম্মান। অর্থাৎ উভয় নামের মধ্যে ‘আলা’ শব্দটি একই অর্থ বোধক।
◆ একজন বিখ্যাত আরবি কবি, সাহিত্যক ও নাহবি (ব্যাকরণ বিদ)-এর নাম: আবুল আলা আল মাআররি (أبو العلاء المعري)। [পুরো নাম: আহমদ বিন আব্দুল্লাহ আল মায়াররি-সিরিয়া]
সুতরাং শরিয়তের দৃষ্টিতে ‘আবুল আলা’ নামে কোন আপত্তি নেই।
◆ তবে কারও নাম হিসেবে আরবি أبو الأعلى (আবুল আ’লা) লেখা বা উচ্চারণ করা জায়েজ নাই। কেননা “আল আ’লা” হলো, মহান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেন,
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى
“আপনি আপনার সর্বোচ্চ পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন।” [সূরা আ’লা: ১]
আমরা সেজদার তাসবিহ হিসেবে পাঠ করে থাকি: سبحان ربي الأعلى (সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা) অর্থ: “আমি আমার সর্বোচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি।”
◆ সুতরাং কেউ যদি এ নামটি আরবিতে أبو الأعلى “আবুল আ’লা” লিখে বা উচ্চারণ করে তাহলে তা জায়েজ হবে না। যেমন: পাকিস্তানের একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম উর্দু বা আরবিতে أبو الأعلى লেখা হয়। যা নিঃসন্দেহে ভুল। বরং এ ক্ষেত্রে عبد الأعلى ‘আব্দুল আ’লা’ (সুউচ্চ আল্লাহর বান্দা) লেখা আবশ্যক।
আসলে বাংলা ভাষী মানুষেরা 'আবুল আ'লা' উচ্চারণ করে না বরং সাধারণভাবে 'আবুল আলা' উচ্চারণ করে থাকে। তাই ‘আবুল আলা’ (أبو العلاء)-ই ধরতে হবে; “আবুল 'আ'লা” (أبو الأعلى) নয়। তাহলে এ নামে আর আপত্তি থাকবে না ইনশাআল্লাহ।
মোটকথা, শব্দের বানান ও উচ্চারণ ভেদে অর্থের পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। আল্লাহু আলাম।
-------------------------
- আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
#abdullahilhadi
0 Comments