Recent Tube

কওমীর শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে বা রাখতে হলে নেসাব দীর্ঘ রাখতেই হবে। মিজান হারুন।




কওমীর শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে বা রাখতে হলে নেসাব দীর্ঘ রাখতেই হবে। 


★★★ বেফাকের নতুন নেসাব নিয়ে নানান কথা হচ্ছে। কিছু অযাচিত সমালোচনাও চোখে পড়ছে। প্রায় এক যুগের বেশি সময় দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন পরিবেশে অধ্যয়নের সুবাদে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। 

★★★ কেউ কেউ বলছেন, এতে দাওরা শেষ করতে সময় আরও বেশি লাগবে। ছাত্র-ছাত্রীরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে। যারা এটা বলছেন, তারা মুদ্রার অপর পাশে দৃষ্টি দিচ্ছেন না। ৫/৭ বছরের দাওরা অথবা শর্ট কোর্স আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। যার কিছু পূর্বাভাষ ইতোমধ্যে ছড়িয়েছে। দীনী শিক্ষা ও জাগতিক শিক্ষার মাঝে দূরত্ব তৈরি হওয়াতে, সমন্বয় না হওয়াতে ছেলেদের মাঝে হতাশা বেড়েছে। সেটা কীভাবে? বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশের সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যূনতম সময়সীমা ১০ থেকে ১২ বছর। এরপর রয়েছে উচ্চশিক্ষা। কওমী মাদরাসাগুলো সেই শিক্ষা ৫ কিংবা ৭ বছর করে ফেললে অন্যদের সঙ্গে সমন্বয় হবে না। কওমীর সার্টিফিকেট দিয়ে দেশের অন্যান্য শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রবেশ করা সম্ভব হবে না। বিদেশেও এসব সার্টিফিকেট মূল্যায়িত হবে না বা এখনও হচ্ছে না। ফলে মাস্টার্স স্রেফ নামকা ওয়াস্তেই রয়ে গেছে ও থাকবে। নেসাব এমন রেখে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে মুআদালা করতে গেলেও গৃহীত হবে না। ফলে কওমীর শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে বা রাখতে হলে নেসাব দীর্ঘ রাখতেই হবে। উচ্চশিক্ষা কিংবা চাকুরির সুযোগ নিতে গেলেও অন্যান্য শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় দরকার হবে। আমাদের সরাসরি সরকারি বেতন বা হস্তক্ষেপ দরকার নেই, সেটা আলিয়ার পরিণতি তৈরি করবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা থেকে অন্য শিক্ষায় স্থানান্তর হওয়ার প্রক্রিয়াটা সহজ করতে হবে। দীন ও জীবনের প্রয়োজনেই সেটা দরকার হবে। বেফাক সেটাই সম্ভবত করছে এবং সেটা খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। বরং কেবল কাফিয়া নয়; উপরের দিকে হেদায়া জামায়াত ফিরিয়ে আনা এবং দাওরা হাদীস দুই বছর করাসহ কয়েকটি বছর বাড়াতে হবে। সময় বাড়লেও সেটা করতে হবে। এজন্য বেফাকের সমালোচনা না করে তাদের দূরদর্শিতার জন্য সাধুবাদ দেয়া দরকার। 

★ তবে এটা অস্বীকার করা সম্ভব নয় যে, দাওরা পর্যন্ত দীর্ঘ সিলেবাস অনেকের জন্যই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। সেটার দরকারও নেই। পৃথিবীর কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় শেষ পর্যন্ত পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। বরং প্রত্যেকে যার যার সুযোগ ও সামর্থ্য মতো পড়বে। দরকার যেটা তা হলো,  প্রত্যেক নির্দিষ্ট স্তরের উপযোগী কাজের সুযোগ থাকবে। এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স, মাস্টার্স, পিএচইডি প্রত্যেকটা শিক্ষার স্বতন্ত্র ধাপ এবং প্রত্যেক ধাপে চাকুরির ব্যবস্থা রয়েছে। বরং অধিকাংশ চাকুরির ক্ষেত্রেই উচ্চধাপগুলো মৌলিক শর্ত নয়; অতিরিক্ত। একই কথা দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিলের ক্ষেত্রেও। স্রেফ আমাদের মাদরাসাগুলোতেই দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। একজন ছাত্রের মেধা কিংবা বৈষয়িক সুযোগ থাকুক না থাকুক, তাকে শেষ করতেই হবে। দীর্ঘ এক যুগ পড়ার পরেও যদি শেষের এক দু'টো ক্লাস না পড়ে, তবে তার জীবন অর্থহীন। তাকে কোথাও কাজে লাগানো যাবে না। তাই সবাই শেষ করছে। এই শেষ করতে গিয়ে কেবল শেষই হচ্ছে। হাজার হাজার মাওলানা-মুফতির ভিড়ে ভালোভাবে আরবী পড়তে ও বুঝতে সক্ষম কিংবা যোগ্য আলিম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা খুবই ক্ষতিকর। পড়াশোনা স্তরভিত্তিক হওয়া জরুরি। স্তরভিত্তিক কাজের সুযোগ দেয়াও জরুরি। জগতের সবাইকেই মাস্টার্স পাস করতে হবে এটা সঠিক কথা নয়। মাদরাসা বোর্ডগুলোকে এই দিকে দ্রুত নজর দিতে হবে। 

★ এবার আসি আমাদের করণীয় নিয়ে। সিলেবাস দীর্ঘ হোক কিংবা সংক্ষিপ্ত এটা যতোটা গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে  সহস্র গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কী পড়ছি এবং কীভাবে পড়ছি সেটা। সহজ কথায়, সিলেবাস সংশোধন। অর্থহীন, অনুপকারী কিংবা স্বল্প উপকারী বইগুলো সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, প্রায়োগিক ও জীবনমুখী সিলেবাস তৈরি করতে হবে। এটা করতে পারলে ছাত্ররা যেই স্তর পর্যন্ত পড়ুক, সময় কম কিংবা বেশি লাগুক, পড়াশোনা স্বার্থক হবে। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আদিযুগের ভঙ্গুর, স্রেফ তত্ত্বনির্ভর, মেয়াদোত্তীর্ণ, অবাস্তব সিলেবাস আঁকড়ে ধরে ক্লাস যতোই ভাঙাগড়া হোক, সময় যতোই বাড়ানো কিংবা কমানো হোক ততোটা ফলপ্রসূ হবে না। আমাদের মনে রাখা দরকার, দেওবন্দিয়্যাত ইত্তেবায়ে সুন্নাত ও আকাবির-আউলিয়ার আদর্শ ধারণের নাম। কোনো বিশেষ পাঠ্যবইয়ের মাঝে দেওবন্দিয়্যাতকে সীমাবদ্ধ মনে করা সঠিক নয়। যারা মিরকাত, শরহে জামী, সুল্লাম, মুখতাসারুল মাআনী কিংবা মাকাবাতে হারীরীর ওপর দেওবন্দিয়্যাতকে নির্ভরশীল মনে করেন, তারা মাসলাকে আকাবির সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেন না। ফলে দেশ, সময়, দীন ও জীবনের চাহিদা মোতাবেক সিলেবাস গঠন/সংশোধন বেফাকের মূল দায়িত্ব। বেফাক সেটা না করলে ব্যক্তিগতভাবেও করা যেতে পারে। কেউ না করুক আমি করবো ইনশাআল্লাহ। কারণ আমি বিশ্বাস করি, এটা আমাদের উলামাদের বুদ্ধিবৃদ্ধিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নেতৃত্বের ভবিষ্য‌ৎ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।

Post a Comment

0 Comments