Recent Tube

ফিতরা দিতে হবে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে। টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়া সুন্নাত নয়। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।



🟢ফিতরা দিতে হবে খাদ্যদ্রব্য দিয়ে।
🔴 টাকা দিয়ে ফিতরা দেওয়া সুন্নাত নয়।
------------------◆◈◆------------------
প্রশ্ন:
যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে টাকা দেওয়া সুন্নত না কি খাদ্যদ্রব্য?

 উত্তর: 
 হাদিসে ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য প্রদানের কথাই বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দিনার-দিরহামের প্রচলন ছিল কিন্তু তারা কখনো খাদ্যদ্রব্য ছাড়া দিনার-দিরহাম বা অন্য কিছু দ্বারা ফিতরা প্রদান করেছেন বলে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।

 কী কী জিনিস দ্বারা এবং কত পরিমাণ ফিতরা দেওয়া সুন্নত?

 এর উত্তর সহীহ হাদিসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যার, ফল কথা হল: খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর কিংবা প্রধান খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া সুন্নত, মূল্য দ্বারা নয়। আর এক জন ব্যক্তিকে এক সা’ ফিতরা দিতে হবে, যার পরিমাণ সাধারণ মানুষের চার পূর্ণ অঞ্জলি সমান। [ফাতাওয়া মাসায়েল, মাওলানা আব্দুল্লাহেল কাফী, পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৩] কেজির ওজনে তা আড়াই কিলোর কম নয়।

 ▪ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
فَرَضَ رَسولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِن تَمْرٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ علَى العَبْدِ والحُرِّ، والذَّكَرِ والأُنْثَى، والصَّغِيرِ والكَبِيرِ مِنَ المُسْلِمِينَ، وأَمَرَ بهَا أنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إلى الصَّلَاةِ

 ‘‘ আল্লাহর রাসুল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক ’সা কিংবা এক ’সা যব ফরজ করেছেন মুসলিম দাস, স্বাধীন ব্যক্তি, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড়র প্রতি। আর তা লোকদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদিস নম্বর ১৫০৩/ মুসলিম নম্বর ২২৭৫]

 উক্ত হাদিসে দুটি খাদ্য দ্রব্যের নাম পাওয়া গেল যা, দ্বারা নবীর যুগে ফিতরা দেওয়া হত। একটি হচ্ছে খেজুর অপরটি যব। এবার নিম্নে আর একটি হাদিস পাঠ করুন।

 ▪ আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন,
- كُنَّا نُخْرِجُ زَكَاةَ الفِطْرِ صَاعًا مِن طَعَامٍ، أوْ صَاعًا مِن شَعِيرٍ، أوْ صَاعًا مِن تَمْرٍ، أوْ صَاعًا مِن أقِطٍ، أوْ صَاعًا مِن زَبِيبٍ

 ‘‘আমরা-নবীজীর যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা’ খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ খেজুর কিংবা এক সা’ পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ’’ [বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]

 এই হাদিসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল, কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবীজীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া রা.এর খেলাফত কালে অনেকে গম দ্বারা ফিতরা দিতেন। [বুখারী হাদিস নম্বর ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১ ]

 তাই আমরা যদি সুন্নত অনুসরণ করতে চাই তাহলে আমাদের সমাজের প্রচলিত প্রধান খাদ্যদ্রব্য তথা চাল দ্বারা ফিতরা দেওয়া কর্তব্য। ফিতরার মুল্য দ্বারা অথবা সেটাকা দিয়ে পোশাক, চিনি, তেল, মসলা, শেমাই, গোস্ত ইত্যাদি কিনে দেওয়া সুন্নত পরিপন্থী।

তবে একান্ত জরুরি অবস্থায় টাকা দ্বারা ফিতরা দেওয়া যেতে পারে বলে, অনেক আলেম মন্তব্য করেছেন। যেমন: রোগীর চিকিৎসার জন্য জন্য এই মুর্হতে টাকা প্রয়োজন। চাল দিলে সেটা বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করতে গেলে রোগীর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে...বা এ জাতীয় পরিস্থিতে ফিতরার মূল্য দিলেও আদায় হয়ে যাবে। কারণ এখানে বিশেষ পরিস্থিতে মুল্য দ্বারা ফিতরা প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং আমাদের কতর্ব্য খাদ্যদ্রব্য দেওয়া। কেউ যদি তা নিতে না চায় তাহলে এমন ব্যক্তিকে দেওয়া উচিৎ যে তা গ্রহণ করবে।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের হানাফী সামাজ থেকে খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার সুন্নতটি প্রায় উঠে যাওয়ার কারণে তারা প্রতি বছর টাকা নির্ধারণ করে থাকেন আর গরীবরাও টাকা ছাড়া অন্য কিছু নিতে চায় না। তবে আল হামদুলিল্লাহ অধিকাংশ আহলে হাদিস সমাজে খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার সুন্নতটি এখনো প্রচলিত রয়েছে।
সৌদি আবরেও এখনো ফিতরা হিসেবে চাল দেওয়ার সুন্নতটি চালু আছে। এখানে চেরিটেবল সোসাইটিগুলোতে চাল ও টাকা উভয়টি নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে টাকা দ্বারা চাল কিনে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়। 
আল্লাহু আলাম। 
------------------◆◈◆------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments