Recent Tube

জামায়াতের ভুল ধরতে গিয়ে আলী হাসান উসামা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং তাঁর রিসালাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছেঃ পর্ব ০১ সম্পাদনায়:মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

জামায়াতের ভুল ধরতে গিয়ে আলী হাসান উসামা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং তাঁর রিসালাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছেঃ পর্ব ০১
----------------------------------------------------
উসামার অভিযোগঃ
'ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান' না বলে 'কুরআন ও সুন্নাহই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান' বলার রহস্য কী? ইসলামি শরিয়াহর উৎস কি স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহ? তাহলে ইজমা ও কিয়াসের কী হবে? অন্তত সাহাবিগণের ইজমা ও কিয়াস বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান তো দূরের কথা, ইসলামি রাজনীতি ও অর্থনীতির রূপরেখাই বা কীভাবে দেখাবে? স্বাভাবিকভাবে প্রচলিত বাক্য এড়িয়ে ইসলামকে স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহয় সীমাবদ্ধ করার পেছনে আসলে কী যুক্তি কার্যকর রয়েছে?
 
❤ আমাদের জবাবঃ ০১
হযরত মিকদাম বিন মা'দী কারিব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْقُرْآنَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ.
জেনে রেখো! আমাকে কুরআন প্রদান করা হয়েছে এবং তার সাথে অনুরূপ (সুন্নাহ) প্রদান করা হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৬৭২২; আবু দাউদ হাঃ ৪৬০৪; মিশকাত হাঃ ১৬৩; সহীহুল জামে হাঃ ২৬৩৪)

কুরআনুর কারীমেও বারংবার বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসুল (ﷺ) কে দুটি বিষয় প্রদান করেছেন। ১. কিতাব ২. হিকমাহ। (সূরা বাকারা ২/১২৯, ১৫১, ২৩১; আলি ইমরান ৩/১৬৪; নিসা ৪/১১৩; আহযাব ৩৩/৩৪; জুমু'আ ৬২/০২) কিতাব হচ্ছে আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন আর হিকমাহ হলো, ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত অতিরিক্ত প্রায়োগিক জ্ঞান তথা সুন্নাহ, যা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নিজের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। পবিত্র কুরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অন্যতম দায়িত্ব ছিল, وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ তথা লোকদের কিতাব ও হিকমত অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেয়া। (সূরা বাকারা ২/১২৯; আলি ইমরান ৩/১৬৪; জুমু'আ ৬২/০২)

প্রশ্ন হল, সাহাবীগণের ইজমা ও কিয়াস তো পরে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন লোকদের কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দিতেন তখন কি সাহাবায়ে কেরাম ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান পাননি? অথচ দশম হিজরী বিদায় হজ্জের দিন আল্লাহ তা'য়ালা আয়াত নাযিল করে বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلٰمَ دِينًا 
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। (সূরা মায়িদা ৫/০৩)
এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, আল্লাহ তা'য়ালা এ উম্মতের জীবন বিধানকে পূর্ণতা দান করেছেন, যার ফলে তারা অন্য বিধানের মুখাপেক্ষী নয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর) 

তাহলে আলী হাসান উসামা কি কুরআনকে চ্যালেঞ্জ করে এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর রিসালাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে না?

❤️ আমাদের জবাবঃ ০২
নিঃসন্দেহে শরীয়াহর প্রধান উৎস আল্লাহর কিতাব কুরআন এবং আল্লাহর রাসুল (ﷺ) এর সুন্নাহ। তবে ইজমা ও কিয়াসকে জামায়াত অস্বীকার করে না।
আমাদের প্রশ্ন হল, ইজমা ও কিয়াস কি কুরআন সুন্নাহর বহির্ভূত বিষয়? উসামার মত উম্মাদ ছাড়া তো কেউ এমন কথা বলতে পারে না। ইজমা সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা কুরআনে বলেন, 
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
হিদায়াত স্পষ্ট হওয়ার পরে যে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ স.-এর সাথে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়ে এবং  মুমিনদের (সম্মিলিত) পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে আমি তাকে সে দিকেই ফিরিয়ে দিব যে দিকে সে ফিরেছে। আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব; তা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা। (সূরা নিসা ৪/১১৫)
এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম বাইযাবী লেখেন,
والآية تدل على حرمة مخالفة الإِجماع، لأنه سبحانه وتعالى رتب الوعيد الشديد على المشاقة واتباع غير سبيل المؤمنين،
এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইজমার বিরোধিতা করা হারাম। কেননা, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ধমক দিয়েছেন দুটি কারণে। ১. রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি ২. মুমিনদের পথ ছেড়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ। (তাফসীরে বাইযাবী)

ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বলেন, 
আল্লাহর বাণী فَاعْتَبِرُوا يا أُولِي الْأَبْصارِ (সূরা হাশর ৫৯/০২) থেকে আহরিত প্রথম মাসআলা: জেনে রাখ, «الْمَحْصُولُ مِنْ أُصُولِ الْفِقْهِ» নামক কিতাবে আমরা এ আয়াত থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছি যে, কিয়াস শরীআতের দলীল। মুফাসসিরগণ বলেন: فَاعْتَبِرُوا শব্দের ক্রিয়ামূল الِاعْتِبَارُ এর অর্থ হলো, কোন বস্তুর মূল উৎস এবং (তার বিধান) প্রমাণের ধরণের প্রতি লক্ষ্য করে অনুরূপ আরও বিধান বের করা। (তাফসীরে কাবীর)। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) নিজেও কিয়াসকে সমর্থন করেছেন (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২২০০৭, আবু দাউদ হাঃ ৩৫৫৩, ৩৫৫৪, জামে তিরমিযী হাঃ ১৩৩১, ১৩৩২)

ইজমা ও কিয়াস শরীআতের দলীল এবং তা প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার্য। এ বিষয়টিকে আমরা একটু বাস্তবতার নীরিখে লক্ষ্য করতে পারি যে, কুরআন সুন্নাহ  কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষেরই পরিপূর্ণ জীবন বিধান। যেহেতু আল্লাহ তা'য়ালা নিজে তাঁর কালামে পাকে ইরেশাদ করেছেন: وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ আমি আপনার প্রতি কুরআন নাজিল করেছি প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট বিবরণ দিয়ে”। (সূরা নাহল ৮৯) সাথে সাথে তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কেও নির্দেশ দিয়েছেন কুরআনের বাণী মানুষকে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে। ইরশাদ হচ্ছে: وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ “আমি আপনার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি যেন মানুষের জন্যে যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনি তাদেরকে তা বুঝিয়ে দেন।” (সূরা নাহল: ৪৪) এ আয়াতের নির্দেশ মোতাবেক রাসুলুল্লাহ (ﷺ)  তাঁর কথা, কাজ ও সমর্থনের মাধ্যমে উম্মাতকে কুরআন বুঝিয়েছেন। অতএব, এ কথা সবাইকেই বিশ্বাস করতে হবে যে, কিয়ামত পর্যন্ত আগত মানুষের সমাধান দিতে কুরআন সুন্নাহ-ই যথেষ্ট। এমনকি আমরা ইজমা ও কিয়াসকে দলীল হিসেবে বিশ্বাস করি তাও কুরআন সুন্নাহর ভিত্তিতে। নিত্য নতুন যেসব বিষয় আমাদের সামনে আসছে সেগুলোর সমাধান কুরআন সুন্নাহতে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কুরআন সুন্নাহতে এর সমাধান নেই - বিষয়টি তা নয়। বরং কোন কোন সমস্যার সমাধান কুরআন সুন্নাহয় স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আবার কোন কোন সমস্যার সমাধান নীতিমালা আকারে পেশ করা হয়েছে। আর কুরআন সুন্নাহর সেই নীতিমালা থেকেই ইজমা ও কিয়াস গৃহীত হয়।

❤️ আমাদের জবাবঃ ০৩
আলী হাসান উসামার প্রশ্ন হল, ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান' না বলে 'কুরআন ও সুন্নাহই একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান' বলার রহস্য কী? ইসলামি শরিয়াহর উৎস কি স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহ? তাহলে ইজমা ও কিয়াসের কী হবে? এভাবে বলার কারণ কি? জবাব হলো, এটা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ভাষা। তিনি বলেন, 
 تَرَكْتُ فِيكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللَّهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهِ.
"আমি তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় রেখে গেলাম। তোমরা যতদিন এ দুটোকে আঁকড়ে ধরবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো - ১. আল্লাহর কিতাব (কুরআন) ২. তাঁর নবী (ﷺ) এর সুন্নাহ।" (মুয়াত্তা মালিক হাঃ ১৬৬১; মুসনাদে বাযযার হাঃ ৮৯৯৩; মুস্তাদরাক হকীম হাঃ ৩১৮; দারাকুতনী হাঃ ৪৬০৬; মিশকাত হাঃ ১৮৬; সহীহুত তারগীব হাঃ ৩৬)

এবার উসামা ও তার ভক্তরা কি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বলবে, তাহলে ইজমা ও কিয়াসের কী হবে? এভাবে প্রশ্ন করা কি আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কে চ্যালেঞ্জ করা এবং তাঁর রিসালাত নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করা নয়?
------------------------- 
লেখক: প্রবন্ধ লেখক কলামিস্ট ইতিহাস গবেষক শিক্ষক ও অনলাইন একটিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments