Recent Tube

আমরা কেন জামায়াত করি? ------------------------- আপনি কি শিরকের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন? মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।




আপনি কি শিরকের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন?
-----------------------------------------------------
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন আসমান, জমিন, দিন, রাত, চাঁদ, সূর্য, তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে বলেন এগুলো তাঁর নির্দেশের অনুগত। এরপর তিনি তাগিদ দিয়ে বলেনঃ
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
জেনে রাখ, সৃষ্টি যার (আল্লাহর) এবং বিধানও তাঁরই। বরকতময় আল্লাহ তা'য়ালা সমগ্র সৃষ্টি জগতের রব। (সূরা আ'রাফ ৭/৫৪)

 🫶 এখানে الْخَلْقُ শব্দের অর্থ সৃষ্টি করা এবং َالْأَمْرُ শব্দের অর্থ আদেশ, নির্দেশ ও হুকুম করা । বাক্যের অর্থ এই যে, সৃষ্টিকর্তা হওয়া এবং বিধানদাতা হওয়া আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। যেমনিভাবে তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন তেমনিভাবে বিধান তথা নির্দেশ দানের অধিকারও তাঁর। (তাফসীরে সা'দী) বিধান দানের এ অধিকার আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আছে বলে মনে করা বা আল্লাহর বিধানের বিপরীতে অন্য কারো বিধান স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নেওয়াই হলো ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِّﻦ ﺩُﻭﻥِ ﭐﻟﻠَّﻪ আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে 'রব' হিসাবে মেনে নেওয়া। কেননা, আল্লাহর উলুহিয়্যাত ও রবুবিয়্যাত তথা তওহীদের একটি বিশেষ দিক তাঁর 'হাকামিয়্যাত' বা আইন ও বিধান রচনার অধিকার ও ক্ষমতা। আল্লাহ তা'য়ালার মহান নামগুলির অন্যতম 'আল-হাকাম' অর্থাৎ বিচারক বা বিধানদাতা। যিনি প্রতিপালক (রব) তাঁরই অধিকার তাঁর প্রতিপালিত সৃষ্টির জন্য বিধান প্রদান করার। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﺇِﻥِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢُ ﺇِﻻَّ ﻟِﻠّﻪِ
“আইন রচনা করার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই।”- (সূরা আন’আম ৬/৫৭, সূরা ইউসুফ ১২/৪০ ও ৬৭)।

 ❤️ আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের উপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন জারি করার অধিকার নেই। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
ﻣَﺎ ﻟَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻧِﻪِ ﻣِﻦْ ﻭَﻟِﻲٍّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻙُ ﻓِﻲ ﺣُﻜْﻤِﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ
তিনি (আল্লাহ) ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক, (আইনদাতা) নেই। তাঁর আইনে তিনি কাউকে শরীক করেন না। (সূরা কাহফ ১৮/২৬)
সুতরাং কোন মুসলিম আল্লাহর আইনের বিপরীত কিংবা পরিপন্থী কোন আইন বা বিধান তৈরী করতে পারে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম আল্লাহর আইনের মোকাবিলায় কোন মানব রচিত আইন মেনে চলতে পারে পারে না। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺣُﻜْﻤﺎً ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ .
“(যারা আল্লাহর আইন হতে বিচ্যুত হয়) তারা কি জাহেলী আইন কামনা করে? অথচ আল্লাহর প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে তাদের নিকট আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম আইন রচনাকারী আর কে হতে পারে?”- (সূরা মায়িদা ৫/৫০)

 🫶 ধর্মীয় জীবনসহ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় তথা জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে একমাত্র হাকাম বা বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করা তাওহীদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর উলুহিয়্যাতের দাবী যে, বান্দা তাঁর হুকুমের আনুগত্য করবে, তাঁর মর্জি পূরণ করবে। কারণ তিনি আমাদের বিধানদাতা। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
أَفَغَيْرَ اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًا.
(বল) আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিধানদাতা মানব? অথচ তিনিই তোমাদের নিকট বিস্তারিত কিতাব নাযিল করেছেন। (সূরা আন'আম ৬/১১৪)

 ❤️ যারা স্বেচ্ছায় আল্লাহর বিধান জীবনের সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করবে বা করার চেষ্টা করবে তারা আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী এবং তাঁর দাস হিসেবে গণ্য হবে। আর যারা আল্লাহর বিধান বর্জন করে অন্য কোনো আল্লাহদ্রোহীর বিধান মেনে নেবে তারা সেই আল্লাহদ্রোহীকে রব ও ইলাহ হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ সে কাফির বলে গণ্য হবে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) বলেন, 
لا ريب أن من لم يعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله على رسوله فهو كافر. 
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুল (ﷺ) এর উপর (বিধান স্বরূপ) যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করাকে যে ব্যক্তি ওয়াজিব মনে করে না, সে কাফির। (মিনহাজুস সুন্নাহ, পৃঃ ৪৯)

 তাই রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা মুসলিমদের উপর ফরজ। আর এটি সাধারণ কোনো ফরজ নয় বরং তাওহীদের অংশ। যে তাওহীদের প্রতি ঈমান আনায়ন করা মানুষের জন্য সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বড় ফরজ। শায়খ ইবনে উসাইমীন রাহঃ বলেনঃ
"আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা একদিক থেকে তা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত, অপরদিকে তা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহকে একমাত্র আইনদাতা হিসাবে না মানলে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতে শিরক করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ্‌র আইনকে না মেনে অন্য কারো আইনে বিচার-ফয়সালা করলে তাতে তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের বিচার-ফয়সালা মনে-প্রাণে মেনে নেয়াও তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। সুতরাং এ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আইনদাতা হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেয়া এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা তাওহীদের অংশ।" (মাজমু ফাতাওয়া ২/১৪০-১৪৪ ও রাসাইলে ইবন উসাইমীন ৬/১৫৮-১৬২)

 🫶 কুরআন সুন্নাহ দ্বারা এ বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার থাকা সত্ত্বেও দেখা যায়, আমাদের দেশে যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করে তাদের অধিকাংশই রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করতে রাজি নয়। তারা ইসলামী রাজনীতির পরিবর্তে অনৈসলামিক (সেকুলার) রাজনীতি করে। যার ফলে দেশে যেমন ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হচ্ছে না, তেমনি ভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর আইনও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কুরআন সুন্নাহ যেখানে যাবতীয় আইনের মূল উৎস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার কথা, সেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিজেই আইনের উৎস হিসেবে হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবরচিত সংবিধানের আইনকে আল্লাহর আইনের উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। বিচারকার্য আল্লাহর বিধান অনুযায়ী পরিচালিত না করে মানবরচিত কুফুরী বিধান অনুযায়ী করছে। এভাবে তারা আল্লাহর সৃষ্টি জীব হওয়া সত্ত্বেও নিজেদেরকে স্রষ্ট্রার বিধানে হস্তক্ষেপ করছে। আর দেশের সাধারণ মানুষ তাদের রবের আসনে বসিয়ে শিরকে আকবরে লিপ্ত হচ্ছে।

 এহেন শিরকের গুনাহ থেকে কেবল তারাই মুক্তি পেতে পারে, যারা আল্লাহর বিধান ও আইনকে কোনো প্রকার অবজ্ঞা না করে সর্বকালে তা বাস্তবায়নের যোগ্য বলে বিশ্বাস করে এবং তা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ও তদবীর করে। কিন্তু যারা শুধু সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও বক্তৃতায় দাঁড়িয়ে ইসলামী বিধানের মৌখিক প্রশংসা করে এবং শুধুমাত্র সমস্যাদির কথা ভেবে তা রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন করা ও সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকে তারা শিরকের গুনাহ থেকে বাঁচতে পারলেও কোনো অবস্থাতেই কবীরা গুনাহ ও আল্লাহর আযাব থেকে নিজদের রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
আর তোমরা সেই ফিতনা-বিপর্যয়কে ভয় কর যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু জালিমদের উপরই আপতিত হবে না (বরং তোমাদের উপরও আপতিত হবে)। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। (সূরা আনফাল ০৮/২৫)

 ❤️ মুসলিম উম্মাহর ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে, আল্লাহ ভীরু ও যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেয়া, যারা জাহেলী বিধান অপসরণ করে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী দেশ শাসন ও বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। কিন্তু নিজে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করবো না, আবার যারা করতে চায় তাদের সাহায্য সহযোগিতাও করবো না, এমন মুনাফিকী চরিত্র কোনো মুসলিম ব্যক্তির কাশ্মীনকালেও হতে পারে না।

 জামায়াতে ইসলামী জাহেলী বিধান অপসরণ করে সার্বিকভাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করার জন্য গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বাঞ্ছিত সংশোধন আনয়নের উদ্দেশ্যে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সরকার পরিবর্তন এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ ও আল্লাহ ভীরু নেতৃত্ব কায়েমের আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাই আমরাও শিরক ও নিফাকী থেকে রক্ষা পেতে এবং আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াতে ইসলামীতে শামিল হয়েছি এবং জামায়াতের কার্মী হয়ে ইকামাতে দ্বীনের দায়িত্ব পালনে চেষ্টা করছি। 

 আসুন! আমরা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশে সুবিচার পূর্ণ ইসলামী শাসন কায়েম করে রাষ্ট্র থেকে সকল প্রকার শিরক-কুফুর, জুলুম-নির্যাতন, শোষণ-দুর্নীতি ও অবিচারের অবসান ঘটিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাই কে ইকামাতে দ্বীনের জন্য কবুল করুন। (আমিন!)

Post a Comment

0 Comments