Recent Tube

ইকামাতে দ্বীনের দুশমনদের ভ্রান্ত অভিযোগ ও আমাদের জবাবঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



ইকামাতে দ্বীনের দুশমনদের ভ্রান্ত অভিযোগ ও আমাদের জবাবঃ 
-----------------------------------------------------------------
মাদখালী আহলে হাদীস ও কাওমী দেওবন্দীদের মধ্যে দা-কুড়াল সম্পর্ক। কিন্তু ইকামাতে দ্বীনের বিরুদ্ধে তারা এক ও অভিন্ন। (তবে তাদের সবাই ইকামাতে দ্বীনের দুশমন নয়)। দেখুন, তাদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপঃ

০১. রাষ্ট্র কায়েম ইসলামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নয়। তাই আল্লাহ তা'য়ালা খিলাফত বা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে কোনো নির্দেশ দেননি। 

২. খিলাফত প্রদান করা সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছাধীন। ঈমাম ও নেক আমলের শর্ত পূরণ করলে আল্লাহ খিলাফত দেবেন। কিন্তু যারা খিলাফত কায়েম করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে তারা নিজেদের দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণ করেছে (নাউজুবিল্লাহ)

❤️ আমাদের জবাবঃ ০১
ইসলামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) প্রেরণ, কুরআন নাজিল ও জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ এসবের মধ্যেই ইসলামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বিদ্যমান রয়েছে। 

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) কে প্রেরণের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, 
هُوَ الَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِالْهُدٰى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ.
তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি একে সকল (বাতিল) দ্বীনের উপর বিজয়ী করেন। (সূরা তাওবা ৯/৩৩; ফাতাহ ৪৮/২৮; সফ ৬১/০৯)

হাদীসে জিহাদকে ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া বলা হয়েছে। আর সেই জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّه. 
যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করার উদ্দেশ্য সংগ্রাম করে, সেই আল্লাহর পথে জিহাদ করে। (সহীহ বুখারী ১২৩, ২৮১০; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৯০৪; তিরমিযী হাঃ ১৬৪৬; নাসায়ী হাঃ ৩১৩৬; আবু দাউদ হাঃ ২৫১৭; ইবনে মাজাহ হাঃ ২৭৮৩; আহমদ হাঃ ১৮৯৯৯, ১৯০৪৯, ১৯০৯৯)

পবিত্র কুরআন নাজিলের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
إِنَّآ أَنزَلْنَآ إِلَيْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَآ أَرٰىكَ اللَّهُ.
নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে শাসন-ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন' (সূরা নিসা ৪/১০৫)। পবিত্র কুরআনে আরো বর্ণিত হয়েছে, 
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ ۖ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُصِيبَهُمْ بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ. أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ ۚ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ حُكْمًا لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ.
আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে শাসন-ফায়সালা করো এবং তাদের প্রবৃত্তির (অর্থাৎ মানব রচিত মতবাদের) অনুসরণ করো না। আর তাদের থেকে সতর্ক থাক যে, আল্লাহ যা (বিধান স্বরূপ) অবতীর্ণ করেছেন, তার কিছু থেকে তারা তোমাকে বিচ্যুত করবে। অতঃপর যদি তারা (আল্লাহর বিধান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখ যে, আল্লাহ তো কেবল তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণেই (জাহান্নামের) আযাব দিতে চান। আর মানুষের অনেকেই ফাসিক। তারা কি জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়, আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম? (সূরা মায়িদা ৫/৪৯-৫০)

যেহেতু রাষ্ট্র ক্ষমতা ছাড়া আল্লাহর আইন অনুযায়ী শাসন-ফায়সালা করা এবং আল্লাহর বিধান বিজয়ী সম্ভব নয়, তাই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে আল্লাহ তা'য়ালা নির্দেশ দিয়ে বলেন,
وَقُلْ رَبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَلْ لِي مِنْ لَدُنْكَ سُلْطَانًا نَصِيرًا.
আর (হে নবী) বল, ‘হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করাও উত্তমভাবে এবং বের কর উত্তমভাবে। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান কর’। (সূরা বানী ইসলাঈল ১৭/৮০)
এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) বলেন, 'আল্লাহ তা'য়ালা নির্দেশ দিচ্ছেন যে, বিজয় লাভ ও সাহায্যের জন্য আমার নিকট প্রার্থনা কর। এই প্রার্থনার কারণে আল্লাহ তা'য়ালা পারস্য ও রোম রাষ্ট্র বিজয় এবং সম্মান প্রদানের ওয়াদা করেন। এটাতো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতেই পেরেছিলেন যে,
 أن لا طاقة له بهذا الأمر إلا بسلطان، فسأل سلطانا نصيرا لكتاب الله، ولحدود الله، ولفرائض الله، ولإقامة دين الله-
রাষ্ট্রীয় বিজয় লাভ ছাড়া দ্বীনের প্রসার ও শক্তিলাভ সম্ভবপর নয়। এ জন্যই তিনি আল্লাহর নিকট সাহায্য ও রাষ্ট্রীয় বিজয় কামনা করেছিলেন, যাতে তিনি আল্লাহর কিতাব, আল্লাহর আইন, আল্লাহর ফরজসমূহ এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।' (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

এবার বলেন, রাষ্ট্রে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নয়, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করার কোনো প্রয়োজন নেই, এমন কথা কোনো মুমিন ব্যক্তি কি বলতে পারে? শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহঃ) বলেন, 
لا ريب أن من لم يعتقد وجوب الحكم بما أنزل الله على رسوله فهو كافر. 
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ্‌ তাঁর রাসুল (ﷺ) এর উপর (বিধান স্বরূপ) যা নাযিল করেছেন সে অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করাকে যে ব্যক্তি ওয়াজিব মনে করে না, সে কাফির। (মিনহাজুস সুন্নাহ, পৃঃ ৪৯)

❤️ আমাদের জবাবঃ ০২
মাদখালী ধর্মাবলম্বীদের ও সেকুলার কাওমী দেওবন্দীদের আকিদা হল, আল্লাহ নিজেই যেহেতু খিলাফত দেবেন; তাই খিলাফত কায়েমের জন্য চেষ্টা-সংগ্রাম করা গোমড়াহী ও কুফুরী। কিন্তু মুসলিম উম্মাহর আকিদা হল, শুধু খিলাফতই নয় বরং সকল নিয়ামতই আল্লাহর দান। উদাহরণ হিসেবে সন্তানের কথায় ধরুন; পবিত্র কুরআনে এসেছে,
لِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ. أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا ۖ وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ قَدِيرٌ.
আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। (আশ শুরা ৪২/৪৯-৫০)

কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, ছেলে মেয়ে আল্লাহ দান করেন।  এখন প্রশ্ন হল, সন্তান নেওয়ার জন্য বিয়ে করা এবং স্ত্রী সহবাস করা কি কুফুরী হবে? বা এতে কি 'আল্লাহ সন্তান দান করেন' এ কথা অস্বীকার করা হবে? বস্তুতঃ সবকিছু আল্লাহর দান হলেও কোনো কিছুই আল্লাহ তা'য়ালা কারো হাতে তুলে দেবেন না। বরং তা পাওয়ার জন্য চেষ্টা-সংগ্রাম করতে হবে। যেমন কুরআনে এসেছে, 
إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ.
নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করে। (সূরা রাদ ১৩/১১)

তাছাড়া, খিলাফত প্রদানের শর্ত হিসাবে আল্লাহ তা'য়ালা ঈমান ও নেক আমলের কথা বলেছেন। আমার প্রশ্ন হল, আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে খিলাফত কায়েমের প্রচেষ্টা করা কি নেক আমল নয়? আসলে ইকামাতে দ্বীনের দুশমনেরা ঈমানও বুঝে না ও নেক আমল বুঝে না। যার কারণে তারা সেকুলার শাসকের কুফুরী শাসনের আনুগত্য করে তাদের সেকুলার প্রভুদের রবের আসনে বসিয়ে শিরকে আকবরে লিপ্ত হয়েছে। আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা শুধু নেক আমলই নয় বরং এটা তাওহীদের সাথে অংশ। শায়খ ইবনে উসাইমীন (রাহঃ) বলেন,
আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা একদিক থেকে তা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত, অপরদিকে তা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহকে একমাত্র আইনদাতা হিসাবে না মানলে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতে শিরক করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ্‌র আইনকে না মেনে অন্য কারো আইনে বিচার-ফয়সালা করলে তাতে তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের বিচার-ফয়সালা মনে-প্রাণে মেনে নেয়াও তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। সুতরাং এ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আইনদাতা হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেয়া এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা তাওহীদের অংশ। (মাজমু ফাতাওয়া ও রাসাইলে ইবন উসাইমীন ২/১৪০-১৪৪ ও ৬/১৫৮-১৬২)

Post a Comment

0 Comments