Recent Tube

আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে জালিমের প্রতি কঠোর হুমকি [পর্ব: ১] । আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল



আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে জালিমের প্রতি কঠোর হুমকি [পর্ব: ১]

নিম্নে আমরা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে জালিমদের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পক্ষ থেকে যে হুমকি ও করুণ পরিণতির কথা বলা হয়েছে সে ব্যাপারে কতিপয় আয়াত ও হাদিস উপস্থাপন করব ইনশাআল্লাহ।

 ❂ ১. আল্লাহ জালিমদের কার্যক্রমের ব্যাপারে অসচেতন নন:

আল্লাহ তাআলা বলেন,
 
وَ لَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا یَعۡمَلُ الظّٰلِمُوۡنَ اِنَّمَا یُؤَخِّرُهُمۡ لِیَوۡمٍ تَشۡخَصُ فِیۡهِ الۡاَبۡصَارُ مُهۡطِعِیۡنَ مُقۡنِعِیۡ رُءُوۡسِهِمۡ لَا یَرۡتَدُّ اِلَیۡهِمۡ طَرۡفُهُمۡ وَ اَفۡـِٕدَتُهُمۡ هَوَآءٌ

“তুমি কখনও মনে করো না যে, জালিমরা যা করছে সে বিষয়ে মহান আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদের অবকাশ দেন, যেদিন সব চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ভীত-বিহ্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে, আতঙ্কে তাদের নিজেদের দিকেও ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (ভয়ানক) উদাস।” [সুরা ইবরাহিম: ৪২ ও ৪৩]

 ❂ ২. জাহান্নামের আজাব দেখার পর প্রতিটি জালিম সারা পৃথিবীর সব সম্পদ দিয়ে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তির প্রত্যাশা করবে:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ ۗ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ ۖ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

“জাহান্নামের আজাব দেখার পর প্রত্যেক জালিমের (কা*ফে*র-মু/শ/রি/কের) কাছে যদি সমগ্র পৃথিবীতে যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদ আছে তা থাকতো তাহলে সে নিজের মুক্তির বিনিময়ে সে সবকিছু দিতে চাইতো। আর গোপনে গোপনে অনুতাপ করত। বস্তুত: তাদের জন্য সিদ্ধান্ত হবে ন্যায়সঙ্গত। তাদের উপর অবিচার করা হবে না।” [সূরা ইউনুস: ৫৪]

❂ ৩. জালিমের জন্য আখিরাতে কঠোর শাস্তির হুমকি:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَن يَظْلِم مِّنكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيرًا ‎

“তোমাদের মধ্যে যে জুলুম (শিরক) করবে আমি তাকে গুরুতর শাস্তি আস্বাদন করাব।” [সূরা ফুরকান: ১৯]

তিনি আরও বলেন,

وَ سَیَعۡلَمُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَیَّ مُنۡقَلَبٍ یَّنۡقَلِبُوۡنَ 

 “অচিরেই জালিমরা (মু/শ/রি/করা) জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল কোথায় হবে।” [সুরা শুআরা: ২২৭]

তিনি আরও বলেন,

 وَعَنَتِ الۡوُجُوۡهُ لِلۡحَیِّ الۡقَیُّوۡمِ ؕ وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ حَمَلَ ظُلۡمًا 

“ আর (কিয়ামতের দিন) চিরঞ্জীব, চির প্রতিষ্ঠিত মহান সত্তার সামনে সকলেই অবনত হবে। আর সে অবশ্যই ব্যর্থ হবে যে (সে দিন) জুলুম (শিরক) নিয়ে হাজির হবে” [সূরা ত্বা-হা: ১১১]

❂ ৪. জালিমের জন্য জাহান্নামের শাস্তির এক ভয়ানক চিত্র:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا ۚ وَإِن يَسْتَغِيثُوا يُغَاثُوا بِمَاءٍ كَالْمُهْلِ يَشْوِي الْوُجُوهَ ۚ بِئْسَ الشَّرَابُ وَسَاءَتْ مُرْتَفَقًا ‎

”‘আমি জালিমদের জন্য (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক/দের জন্য) প্রস্তুত করে রেখেছি আগুন, যার বেষ্টনী তাদের পরিবেষ্টন করে রাখবে, তারা পানীয় চাইলে তাদের দেয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, এটি কত নিকৃষ্ট পানীয়, জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়।” [সুরা কাহফ: ২৯]

 ❂ ৫. কিয়ামতের দিন অভিশপ্ত জালিমের কোনও ওজর-আপত্তি শোনা হবে না:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَوْمَ لَا يَنفَعُ الظَّالِمِينَ مَعْذِرَتُهُمْ ۖ وَلَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ

“সে দিন জালেমদের (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক/দের) ওজর-আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্যে থাকবে অভিশাপ এবং তাদের জন্যে থাকবে মন্দ গৃহ (জাহান্নাম)।” [সূরা মুমিন/গাফির: ৫২]

❂ ৬. দুনিয়াতে জালিমের ধ্বংসাত্মক পরিণতি:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَكَمْ قَصَمْنَا مِن قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَالِمَةً وَأَنشَأْنَا بَعْدَهَا قَوْمًا آخَرِينَ

“আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল জালিম (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক) এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি।” [সূরা আম্বিয়া: ১১]

তিনি আরও বলেন,

وَتِلْكَ الْقُرَىٰ أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِم مَّوْعِدًا 

“এসব জনপদও তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা জালেম হয়ে গিয়েছিল (অর্থাৎ তারা আল্লাহ ও তার রসুলকে অস্বীকার করেছিলো) এবং আমি তাদের ধ্বংসের জন্যে একটি প্রতিশ্রুত সময় নির্দিষ্ট করেছিলাম।” [কাহাফ: ৫৯]

তিনি আরও বলেন,

 وَكَذَٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَىٰ وَهِيَ ظَالِمَةٌ ۚ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ 

“এমনই ছিল তোমার রবের ধরপাকড়, যখন তিনি ধরেছিলেন ওই জালিম বসতিগুলোকে (যারা আল্লাহ ও নবি-রসুলদেরকে অবিশ্বাস করেছিলো)। নিশ্চয়ই তার ধরা অনেক কঠিন যন্ত্রণাময়।” [সুরা হুদ: ১০২]

❂ ৭. দুনিয়ার জালিমের ধ্বংসাত্মক পরিণতির করুণ চিত্র:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِيَ ظَالِمَةٌ فَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَبِئْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَّشِيدٍ ‎

“আমি কত জনপদ ধ্বংস করেছি এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল জালিম (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক)। এই সব জনপদ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছে ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদ ধ্বংস হয়েছে।” [সূরা হজ: ৪৫]

❂ ৮. জালিমকে আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

“আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে (জুলুম-নির্যাতনকারীদেরকে) ভালবাসেন না।” [সূরা আলে ইমরান: ৫৭ ও ১৪০]

❂ ৯. জালিমকে আল্লাহর হেদায়েত থেকে বঞ্চিত:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ 

“আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।”  [ বাকারা, ২৫৮, সূরা আলে ইমরান: ৮৬, তওবা: ১৯ ও ১০৯, সফ: ৭, জুমা: ৫]

❂ ১০. জালিম আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিশপ্ত:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ

“আল্লাহর অভিসম্পাত জালেমদের উপর (অর্থাৎ ঐ সকল লোকদের উপর যারা ইমানের উপর কুফরিকে প্রাধান্য দিয়েছে)।” [সূরা আরাফ: ৪৪]

তিনি আরও বলেন,

أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ

“শুনে রাখ, জালেমদের উপর (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক ও মু/না/ফি/ক/দের উপর) আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।” [সূরা হুদ: ১৮]

❂ ১১. কিয়ামতের দিন জালিমের পক্ষে কোনও সাহায্যকারী দাঁড়াবে না:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

 وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ ‎

”জালিমদের (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক/দের) জন্য কোনও সাহায্যকারী নেই।” [সুরা আলে ইমরান: ১৯২]

❂ ১২. কিয়ামতের দিন জালিমের পক্ষে কোনও সাহায্যকারী ও শুপারিশকারী থাকবে না:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ ‎

 “জালিমদের ( (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক/দের) কোনও বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই, যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে।” [সুরা মুমিন/গাফের: ১৮]

❂ ১৩. কিয়ামতের দিন জালিমের পক্ষে কোনও অভিভাবক ও সাহায্যকারী এসে দাঁড়াবে না:

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَالظَّالِمُونَ مَا لَهُمْ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

“আর জালেমদের (কা*ফে*র-মু/শ/রি/ক/দের) কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী নেই।” [সূরা শূরা: ৮]

❂ ১৪. জুলুম থেকে মুক্তির জন্য দুআ শিক্ষা:

رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِيۡنَ

“হে আমাদের রব, আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের (পাপিষ্ঠদের) অন্তর্ভুক্ত করবেন না।” [সুরা আরাফ: ৪৭]
(পরবর্তী পর্বে জুলুম বিষয়ে হাদিস পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ)
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments