হাফিজ মাওলানা আবু সাঈদ চৌধুরী প্রখর মেধাবী একজন আলিম ও দ্বীনের দা’য়ী। তাঁর পাণ্ডিত্যের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে ব্রিটেনের বুদ্ধিজীবী মহলের। তিনি ইসলামিক শরীয়াহ কাউন্সিল, ব্রিটেন-এর বর্তমান চেয়ারম্যান, দাওয়াতুল ইসলাম ব্রিটেন-এর সাবেক আমীর, ইষ্ট লন্ডন মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতীব, সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসা, বিশ্বনাথ-এর প্রাক্তন মুহাদ্দিস। মিডিয়াবিমূখ, নিভৃতচারী এই জ্ঞানতাপস বিগত জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। বয়োবৃদ্ধ এ জ্ঞানতাপসের সাথে খোলামেলা অনেক আলাপ করেছি। দীর্ঘ দিনের আগ্রহ থেকে তাঁকে জানার চেষ্টা করেছি। আগ্রহীদের জন্য সংক্ষিপ্ত আলাপটুকু প্রকাশ করলাম।— সরওয়ার ফারুকী
আসসালামুআলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?
উত্তরঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। বসো।
প্রশ্নঃ আপনার সাথে মুক্তমনে কিছুক্ষণ আলাপ করব, কসুরি ক্ষমা করবেন।
উত্তর ঃ হ্যাঁ, বলো।
প্রশ্নঃ আপনার জন্ম?
উত্তরঃ আমার জন্ম ১৯৪৬ সালে। পাকিস্তান সৃষ্টির কয়েকমাস আগে।
প্রশ্নঃ আপনার পরিবার ও বাল্যজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তরঃ আমাদের বংশধরগণ ভারতের কাছাড় থেকে আসেন, আমি ৫/৬ পুরুষের নাম বলতে পারি। পূর্বধারা অনেকটা এভাবে; আমার আব্বা আলহাজ আজিজুর রহমান>আলহাজ আব্দুল ওহহাব>আলহাজ রজব আলী>লাল মিয়া>চান চৌধুরী। চান চৌধুরী ভারতের কাছাড় থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেন। তারা হিন্দু বংশ থেকে মুসলমান হয়েছিলেন, তাই স্থানীয় মানুষের সাথে মিল রেখে চলতে গিয়ে আর চৌধুরী ব্যবহার করেন নি। আলহাজ রজব আলী চৌধুরীর পর আর কেউ চৌধুরী ব্যবহার করেন নি। আমাদের বাড়ি ছিল অনেক বড়, ১৮ কিয়ার জমি ছিল বাড়ির মধ্যে, এখনও ১২ কিয়ার আছে।
প্রশ্নঃ আপনার আম্মা ও নানাবাড়ি?
উত্তরঃ আমার আম্মার নাম জুবায়দা খানম। নানা আশরফ আলী, তিনি শাহ ইয়াকুব বদরপুরির মুরিদ ছিলেন। নানাবাড়ি জুলাই গ্রামে। আমার এক মামা এবং মা-খালা ছিলেন চারজন, কেউই বেঁচে নেই।
প্রশ্নঃ আপনার ছাত্রজীবন সম্পর্কে যদি বলতেন।
উত্তরঃ আমাদের বাড়িতে মসজিদ আছে, ছোটবেলায় মসজিদের মক্তবে কুরআন পড়েছি, মক্তবেই কালিমাহ, গুলেস্তা-বুস্তা পড়েছি। ১৯৫১ সালে সড়কের বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ১৯৫৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সড়কের বাজার মাদ্রাসায় ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলাম, তখন এটা ছিল জুনিয়র হাই স্কুল। এরপর আমার বড় চাচা ফয়জুর রহমান আমাকে সড়কের বাজার আহমদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন, তিনি ছিলেন ইবরাহিম তশ্নার ছাত্র। তশ্না সাহেব আমাদের এলাকায় থেকেছেন বহু বছর, সড়কের বাজার মাদ্রাসা পাকাকরণ হয়েছে তাঁর হাতে। আমরা তাঁকে দেখিনি, চাচার মুখে শুনেছি। তশ্নার অনেক বাংলা কবিতা আছে, ছোটবেলায় ওসব পড়তাম। বড় চাচা কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাস্টক্লাস প্রাপ্ত ছাত্র ছিলেন। এ মাদ্রাসার উন্নয়নে আমাদের পরিবারের অনেক অবদান আছে। বড় চাচা ফয়জুর রহমান একটানা মুহতামিম ছিলেন ৫৮ বছর। তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস পান। সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসায় তার শিক্ষকতার সুযোগ হয়েছিল, কিন্তু আমার দাদা আলহাজ আব্দুল ওহাব তাকে নিজের এলাকার মাদ্রাসায় খেদমত করবার জন্য সিলেট আলিয়ায় যেতে দেননি। দাদা বলেছেন, এ মাদ্রাসা আমাদের, এটা তুমি পরিচালনা কর। বাবার আদেশ মানতে গিয়ে তিনি কোথাও যাননি, একটানা প্রায় ৫৮ বছর এ মাদরাসার খেদমত করেন, তিনিই ছিলেন সব। একাধারে মাদরাসার মুহতামিম, জুনিয়র হাই স্কুলের সেক্রেটারি, বাজারের সেক্রেটারি, পোস্ট অফিসের মাস্টার এবং এলাকার অন্যতম সালিশব্যক্তি। তিনি সাধারণত ফতোয়া দিতেন না, তবে ফরাইজের উপর বিশেষজ্ঞ ছিলেন। দূরদূরান্ত থেকে ফরাইজের বিষয়ে তার কাছে মানুষজন আসতেন।
আমি আহমদিয়া মাদরাসায় পড়েছি ছাফেলা ছুয়ম ও চারম। কারণ, ছাফেলা আউয়াল ও দুয়ম মসজিদে পড়া হয়েছে। ছাফেলা ছুয়ম ও চারম পড়ার পরে আমি দাখিলা আউয়াল, দুয়ম, ছুয়ম, চারহম পড়েছি। তখন দাখিলের নাম ছিল দাখিলা। দাখিলা চারহম শেষের পর ১৯৬০ সালে চরিপাড়া মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা দেই, কারণ সড়কের বাজার মাদ্রাসায় তখন দাখিলের অনুমতি ছিল না। দাখিল পরীক্ষায় আমি ইস্ট পাকিস্তানের মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করি। দাখিলার পরে আলিম আউয়াল, আলিম দুয়ম, আলিম ছুয়ম, আলিম চারহম পরীক্ষা দিয়েছি চরিপাড়া মাদ্রাসা থেকেই। আলিম পরীক্ষায় স্কলারশিপ পাই, তবে কততম ছিলাম তা মনে আসছে না। এরপর আসি সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায়। সিলেট আলিয়ায় ১৯৬৫ থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত পড়েছি। এখান থেকে ফাজিল পরীক্ষায় ইস্ট পাকিস্তান মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ডে ২য় স্থান অর্জন করি। ফাজিল পরীক্ষার পরে ছিল রমজান মাসের অবসর, তখন রমজানের সুযোগে কুরআন হিফজ সম্পন্ন করি। ছয় পারা আমার আগের মুখস্থ ছিল, বাকী চব্বিশ পারা সে বছর রমজানে হিফজ করি। ৬৮ সালের কামিল পরীক্ষায় ইস্ট পাকিস্তান মাদ্রাসা এডুকেশন বোর্ড থেকে ফাস্টক্লাস ফার্স্ট হই। তখন মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতাম, পাশ্ববর্তী মদন মোহন কলেজে ইন্টারমেডিয়েট নাইট-ব্যচে ক্লাস করতাম, কিন্তু ফাইনাল দিতে পারিনি। কারণ, ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় মিনিমাম পার্সেন্ট ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারিনি। মদন মোহন কলেজ থেকে পরীক্ষা দিতে না পারায় পরবর্তীতে কুমিল্লা নওয়াব ফয়জুন্নেসা কলেজ থেকে ১৯৬৯ এ ইন্টারমেডিয়েট দেই, এবং স্কলারশিপ সহ ফাস্টক্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির উদ্দেশ্যে যাই, সেখানে পলিটিকাল সাইন্সে ইন্টারভিউ দিয়ে কৃতকার্য হই। ডিপার্টেমেন্টের হেড ছিলেন........নামটা ভুলে গিয়েছি, তার বাড়ি ছিল কুমিল্লায়। তার কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে সিলেটে আসি। কিন্তু, সিলেটে আসার পর ছাত্রসংঘের দায়িত্বশীলগণ বললেন যে, আপনি সিলেটে থাকেন, সংগঠনের প্রয়োজনে আপনাকে এখানে থাকতে হবে। তখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করে সিলেট গভর্মেন্ট কলেজে ইংলিশ অনার্সে ভর্তি হই। ইংলিশ অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারিনি। পরবর্তীতে আমি সৎপুর কামিল মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি থেকে বি.এ পরীক্ষায় ২য় স্থান অর্জন করি।
প্রশ্নঃ ছাত্র রাজনীতিতে আপনি যুক্ত হলেন কখন, কেন? কোন কোন দায়িত্ব পালন করেছেন?
উত্তরঃ চরিপাড়া মাদ্রাসায় লেখাপড়াকালীন সময়েই ছাত্র-নেতাদের সাথে কিছুটা যোগাযোগ ছিল, তবে সিলেট আলিয়ায় ভর্তির পর পুরাপুরি এক্টিভ হই। সিলেট আলিয়ায় ভর্তির প্রথম দিনেই ইসলামি ছাত্র সংঘের ফরম ফিলাপ করে এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত হই। আমাকে ফরম ফিলাপ করান ছাত্রনেতা সৈয়দ ইকরামুল হক, তখন তিনি সিলেট ছাত্র সংঘের সভাপতি ছিলেন। বর্তমান আঞ্জুমানে খেদমতে কুরআনের সভাপতি। সেসময় সিলেট ছাত্র সংঘের সেক্রেটারি ছিলেন শহীদ শাহ জামাল উদ্দিন চৌধুরী। ছাত্র সংঘের কাজ করেই আমার ছাত্রজীবন কেটেছে।
প্রশ্নঃ স্বাধীন বাংলাদেশে কীভাবে নিজেকে যুক্ত করলেন?
উত্তরঃ স্বাধীনের পর সৎপুর মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে যুক্ত হলাম। আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলি সাহেব আমাকে সৎপুর মাদ্রাসায় নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে মুহাদ্দিস পদে নিযুক্ত করেন। এছাড়াও প্রতি শুক্রবারে শেখঘাট, কুদরত উল্লাহ, রায়নগর, আম্বরখানা জামে মসজিদে তাফসির করতাম। এ সময় ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠা হলেও আমি শিবিরের সাথে যুক্ত হইনি, জামায়াতে ইসলামীর সাথে কিছুদিন কাজ করে ৭৭ সালের ১৪ নভেম্বর লন্ডন চলে যাই।
প্রশ্নঃ লন্ডন জীবন কেমন শুরু হলো?
উত্তরঃ আমি ইসলামী মিশন, ইউ.কে-এর আমন্ত্রণে ইংল্যান্ড যাই। এ সংগঠন ইংল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি মুসলিমের মিলিত একটি প্লাটফর্ম ছিল। ইসলামী মিশনের তখনকার সভাপতি ছিলেন আব্দুস সালাম, তার বাড়ি ছিল বালাগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ১৯৭৬ সালে দেশে এসে আমাকে আমন্ত্রণ করলেও সেবছর আমি যাইনি। তিনি পরের বছর আবার আসেন। সে সময় আমরা আঞ্জুমানে খেদমতে কুরআনের প্রথম জনসভার কাজে ব্যস্ত ছিলাম। তবে, এবারের সফরে তার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান না করে লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
প্রশ্নঃ সেখানে কী কাজে যুক্ত হলেন?
উত্তরঃ পাকিস্তান ভাঙার ফলে ইসলামী মিশনের কাজেও ধাক্কা লাগলো। পাকিস্তানের প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবী খুররম মুরাদ ইসলামী মিশন-এর দায়িত্বশীলদের পরামর্শ দিলেন, যেহেতু পাকিস্তান ভেঙে গেছে এবং এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষকে দেখতে পারছে না, বাংলাদেশিরা পাকিস্তানিদের মানছেন না এবং পাকিস্তানিরাও বাংলাদেশিদের মানছেন না, তাই ইসলামী মিশন আলাদা করে নেওয়া উচিত। তিনি আরও পরামর্শ দিলেন, বাংলাদেশি এবং পাকিস্তানিরা আলাদা সংগঠন গঠন করে কাজ করা উচিত। তার পরামর্শে ইসলামী মিশনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয় এবং সে অধিবেশনে প্রস্তাব এনে ইসলামী মিশনকে দু ভাগ করা হয়। সেদিন থেকে বাংলাদেশিরা ‘দাওয়াতুল ইসলাম ইউ.কে এন্ড আয়ার’-এর অধিনে কাজ করছেন। ইসলামী মিশনের বিশেষ এ অধিবেশনের সভাপতি ছিলাম আমি। এ অধিবেশনে মেহমান হিসেবে বাংলাদেশ থেকে মাওলানা এ.কে.এম ইউসুফ ও মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইদীকে আমি দাওয়াত করে লন্ডন নিয়েছিলাম, এটাই ছিল তাদের প্রথম বিলাতযাত্রা।
প্রশ্নঃ দাওয়াতুল ইসলামকে আপনি কতটা এগিয়ে নিতে পেরেছেন?
উত্তরঃ ইসলামী মিশনের বিপুলসংখ্যক বাংলাভাষী সদস্যদের দাওয়াতুল ইসলামের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়, এতে সংগঠন শুরুতেই গতিশীল হয়। ধীরেধীরে নবাগত বাংলাদেশিরাও যুক্ত হন। শুরুতে আমি দাওয়াতুল ইসলামের সেন্ট্রাল ট্রেজারার হিসেবে কাজ করি, এরপর লন্ডন ব্রাঞ্চের সেক্রেটারি ও প্রেসিডেন্ট ছিলাম। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এবং কেন্দ্রীয় আমীরের দায়িত্বও পালন করি। চার মেয়াদে আমি মোট তেরো বছর দাওয়াতুল ইসলামের আমীর ছিলাম।
প্রশ্নঃ ব্রিটেনের মুসলিম কমিউনিটি তখন কতটা শক্তিশালী ছিল?
উত্তরঃ তখন বাঙালি কমিউনিটিতে ১/২ টি মসজিদ ছিল। আমি যে মসজিদে যাই, সে মসজিদের নিজস্ব জায়গা থাকলেও বিল্ডিং ছিল না। বিলাতে আমাকে আমন্ত্রণের উদ্দেশ্য ছিল সে মসজিদের উন্নয়ন তরান্মিত করা। আমি গমনের পর সে মসজিদে বাঙালিদের আগমন বাড়তে থাকে। আমি স্থানীয় বাংলাভাষী ছাড়াও সৌদি, কুয়েত, ইজিপ্ট সফর করে চাঁদা কালেকশন করি। কখনও একা, কখনও চৌধুরী মইনউদ্দিন ও আব্দুস সালাম সাহেবকে সাথে নিয়ে চাঁদা কালেকশনে গিয়েছি। সৌদি এম্বেসির মাধ্যমে কিং ফাহাদের কাছ থেকে বারো লক্ষ পাউন্ড চাঁদা সংগ্রহ করি, বাদবাকি স্থানীয়দের কাছ থেকে গ্রহণ করেছি। এভাবে দাওয়াতুল ইসলামের কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটি শক্তিশালী হয়েছে।
প্রশ্নঃ ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় দাওয়াতুল ইসলামের কাজ করতে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা এসেছিল?
উত্তরঃ এমনিতে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে , রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ঝুঁকি এলে বাধা আসে, নাহলে কোনো সমস্যা নাই। ধর্মীয় কার্যক্রমে তারা কোনোরকম বাধা দেয় না। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিকগুলো তাদের সি.আই.ডি খেয়াল রাখে।
প্রশ্নঃ আপনার ছাত্রজীবনে সিলেট অঞ্চলে দেওবন্দী আলিমদের ব্যাপক প্রভাব ছিল, আপনি সে প্রভাব উপেক্ষা করে জামায়াতে ইসলামীর প্রতি ঝুঁকলেন কিভাবে?
উত্তরঃ আমি কারও দ্বারা প্রভাবিত কিংবা দাওয়াত পেয়ে আসিনি, নিজের ইচ্ছায় এসেছি। আমাদের এলাকায় দেওবন্দী ও ফুলতলি দুটো ধারাই ছিল। আমি দুটো গ্রুপের বিরুদ্ধে সে সময় বক্তব্য রেখেছি। আমি যখন সৎপুরে ছিলাম, তখন মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, বালাগঞ্জ, বড়লেখা সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই এক/দুটো মাহফিলে থাকতাম, সব মাহফিলেই তাদেও ভুল ধ্যান-ধারণার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলেছি।
প্রশ্নঃ মুসলিম কোন চিন্তাবিধের দ্বারা আপনি অধিক প্রভাবিত হয়েছেন বলে মনে করেন?
উত্তরঃ প্রথম জীবনে সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদির সাহিত্য দ্বারা অধিক প্রভাবিত হয়েছি, পরবর্তীকালে ইবনে তাইমিয়াহ ও শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবির চিন্তাধারা আমাকে আকৃষ্ট করেছে। ছাত্রজীবনে শুধু মওদুদি ও শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবিকে পড়েছি। পরবর্তীতে বিলাত গিয়ে ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইউমের চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হই, তাদের রচিত সকল কেতাব আমার পড়া হয়েছে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার সাইত্রিশ ভলিউম ‘মজুমুয়ায়ে ফতোয়া’ কিনে একটানা পড়েছি।
প্রশ্নঃ মাওলানা মওদুদির কোনো চিন্তার সাথে আপনার দ্বন্ধ কিংবা দ্বিমত আছে বলে মনে করেন?
উত্তরঃ তাঁর চিন্তার সাথে এ পর্যন্ত কোনো দ্বন্ধ তৈরী হয়নি। তবে সাহাবিগণের ব্যাপারে তিনি কঠিন শব্দ প্রয়োগ করেছেন। গবেষক হিসেবে তার আলোচনা যদিও সঠিক, কিন্তু শব্দপ্রয়োগ আমরা গ্রহণ করতে পারি না। এটা আকীদার চেয়ে শালীনতার দিক থেকে প্রবল আপত্তিকর, অন্য ভাষায় লিখলে ভালো হতো। যদিও তার উপর আরোপিত আকীদার প্রশ্নগুলো অবান্তর।
প্রশ্নঃ আপনি এখন কী জামায়াতের সাথে আছেন?
উত্তরঃ ছাত্র সংঘের পর কিছুদিন জামায়াতে ইসলামীর সাথে ছিলাম। বিলেতে গিয়ে তো দাওয়াতুল ইসলামের সাথে কাজ করেছি। দাওয়াতুল ইসলামের কার্যক্রম জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রমের অনুরূপ, শুধু নামটা পরিবর্তিত।
প্রশ্নঃ জামায়াতে ইসলামীর বাইয়াত-পদ্ধতি— যেখানে কর্মী যোগাযোগ, সদস্য যোগাযোগ, বই বিলি সহ ইজতিহাদি নানান সিদ্ধান্ত ও শর্ত যুক্ত হয়েছে। এ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কী?
উত্তরঃ বাইয়াত তো হয় আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে। ইসলামের বাইয়াত হচ্ছে: জিহাদের উপর বাইয়াত, শরিয়তের উপর ঠিকে থাকার বাইয়াত, গোনাহ করব না বলে শপথ করার বাইয়াত, আল্লাহর দ্বীনের কাজ করার বাইয়াত। এ দিক থেকে জামায়াতে ইসলামীর বাইয়াত খালিস ইসলামী বাইয়াত। এ বাইয়াতের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।
প্রশ্নঃ বর্তমান বিশ্বে ইসলামী আন্দোলন বা ইসলামী রাজনীতির যে ধারাÑ সেখানে কার চিন্তাধারা অধিক প্রভাবশালী বলে আপনি মনে করেন।
উত্তরঃ সত্যি বলতে, দুই চিন্তাবিধের চিন্তাধারায় প্রভাবিত হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের ইসলামি রাজনীতি বা বিপ্লববাদী সকল আন্দোলন। একজন হচ্ছেন সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদি এবং অপরজন মিশরের শহীদ সাইয়্যিদ কুতুব। এ দুইজনের চিন্তাধারা বর্তমান বিশ্বের ইসলামী আন্দোলনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। পাশ্চাত্য এবং মধ্যপ্রাচ্যে শহীদ সাইয়িদ কুতুবের চিন্তাধারা অধিক শক্তিশালী এবং প্রাচ্যে মাওলানা সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদুদির চিন্তাধারা অধিক শক্তিশালী।
প্রশ্নঃ উপমহাদেশে, বিশেষ করে দেওবন্দী আলিমগণের অনেক অভিযোগ রয়েছে মাওলানা মওদুদির উপর। তারা ইসলামবিরোধী শক্তির পরিবর্তে মাওলানা মওদুদির মোকাবিলায় অধিক শক্তি নিয়োগ করছেন। এতে কী ইসলামী শক্তি দুর্বল হচ্ছে বা ইসলামী আন্দোলনের গতি ব্যাহত হচ্ছে বলে আপনি করেন?
উত্তরঃ মাওলানা মওদুদির সাহিত্য ছাড়া আধুনিক বিশ্বে ইসলামী রাজনীতি চালানো প্রায় অসম্ভব। দেওবন্দী, বেরলভি কিংবা অপরাপর ধারার যেসকল অভিযোগ মাওলানা মওদুদির উপর করেনÑ সেসব অভিযোগ একসময় মানুষের কাছ থেকে দূর হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অনেক অভিযোগ এমনিতেই মিটে গেছে। মানুষ যত লেখাপড়া করবে, আধুনিক চিন্তাদর্শন, রাজনীতির পাঠ শিখবে ততই মাওলানা মওদুদির সাহিত্যের গভীরতা বুঝতে পারবে। এখন তো অনেক দেওবন্দী, বেরলভি আলিম জামায়াতে ইসলামীর সাথে মিশে রাজনীতি করছেন। জকিগঞ্জের রারাই গ্রামের মাওলানা হাবিবুর রহমান সাহেবের দুই ছেলে ইংল্যান্ডে থাকেন, তাদের একজন ফুলতলি মসলকে আছেন, আরেকজন জামায়াতের ইসলামীর সাথে রয়েছেন। এভাবে দিনেদিনে দূরত্ব কমতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্নঃ পাশ্চাত্য সভ্যতা মানুষের চিন্তাজগতে অনেক স্বাধীনতা এনেছে। যেমন: মানুষের জবানের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, গণতন্ত্র সহ যেসকল আধুনিক চিন্তা এসেছে, এসবের সাথে ইসলামের কোনো দ্বন্ধ আছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ ব্যক্তিস্বাধীনতার ঘোষণা তো ইসলামই প্রথম দিয়েছে। ব্যক্তি স্বাধীন, মহিলা স্বাধীন, দাস স্বাধীন সর্বোপরি মানুষ স্বাধীন। সুতরাং ইসলামের সাথে স্বাধীন চিন্তার মৌলিক কোনো সংঘর্ষ নাই। আর, আধুনিক যুগে কোনো দেশে সরকার বদলাতে হলে মানুষের মতামত ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়। মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই মানুষের সমাজ গড়ে উঠে, রাষ্ট্রও মানুষের মতামতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে গণতন্ত্র বা মানুষের মতামত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইসলামী বিধানের মৌলিক কোনো বিরোধ নাই।
প্রশ্নঃ ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, মত প্রকাশ করতে পারা মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু এসবের আধুনিক প্রয়োগপদ্ধতি তো পাশ্চাত্যের আবিষ্কার। মুসলিম বিশ্ব মানুষের এসকল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রয়োগপদ্ধতি দেখাতে পারেনি। পাশ্চাত্যের এই প্রয়োগ-পদ্ধতি অনুসরণ করে ইসলাম প্রতিষ্ঠা কীভাবে সম্ভব?
উত্তরঃ সত্যি বলতে তারা এসব ধারণা এবং প্রয়োগপদ্ধতি ইসলাম থেকেই ধার করেছে। ওয়েস্টার্ন সিভিলাইজেশনের সকল ভালো কিছুই ইসলাম থেকে নেওয়া। আর, ইসলাম সকল ভালোকে গ্রহণ করতে নির্দেশ করেছে, ভালে সবই গ্রহণ করা জায়েজ। আর, খারাপ দিকের অনুসরণ নাজায়েজ, নিষিদ্ধ বা হারাম। যেমন: মোবাইল রেডিও সহ টেকনোলজির কোনো প্রাণ নাই, এগুলো ডিসিশন নেয় না, এসব আমরা ব্যবহার করছি, এসবের ব্যবহার জায়েজ। কিন্তু তাদের উলঙ্গ সংস্কৃতি আমরা গ্রহণ করব না, এটা নাজায়েজ বা হারাম।
প্রশ্নঃ আধুনিক সময়ে মুসলিম দা’য়ীদের মধ্যে আমরা দেখছি যে, তারা অতিমাত্রায় দলিলনির্ভর বক্তব্য রাখছেন, কুরআন-হাদিস থেকে সরাসরি দলিলের মাধ্যমে তারা কথা বলছেন। কিন্তু মানব মনের সহজাত বৃত্তি হলো— সে যুক্তি খোঁজে, যুগের ভাষায় দার্শনিক তর্ক কিংবা জবাব চায়। দেখা যাচ্ছে, আধুনিক যুক্তিবাদী জগতে আলিমসমাজের এই দুর্বলতা অত্যন্ত প্রকট। আপনি কি মনে করেন যে, পাশ্চাত্য সভ্যতার মোকাবিলায় আমাদের সত্যিই কোনো জ্ঞানগত দুর্বলতা রয়েছে, বা এ দুর্বলতার জন্যে দা’য়ী তার আবেদন হারাচ্ছেন।
উত্তরঃ আমি মনে করি বর্তমানে যুক্তি ও দর্শননির্ভর অনেক জবাব আসছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এ দুর্বলতা অধিক থাকলেও এখন তরুণ প্রজন্ম কাজ করছেন। এমনকি, অমুসলিমদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য যুক্তিশীল ভাষায় তুলে ধরছেন।
প্রশ্নঃ বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম সম্পর্কে আপনি কেমন মূল্যায়ন করবেন?
উত্তরঃ গতমাসে বর্তমান আমীর ডাক্তার শফিকুর রহমান লন্ডন গিয়েছেন, সেখানে আমার সাথে দেখা ও কথা হয়েছে। আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, বর্তমান আমীর জামায়াতে ইসলামীকে অনেকবেশী সার্বজনীন করতে পেরেছেন। আমি যতটা বুঝেছি, বর্তমানে দল ইসলামের সার্বজনীন সৌন্দর্য তুলে ধরার চেষ্টা করছে, এ পদ্ধতি অব্যাহত রাখলে ইসলামী বিপ্লবের পথ অনেক সহজ হবে।
প্রশ্নঃ আল্লাহ জমিনকে নানান রঙে, নানান চরিত্রে সাজিয়েছেন, তেমনিভাবে মানবজাতির মধ্যেও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রয়েছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, ইসলামপন্থীগণ স্থানীয় সংস্কৃতি ধারণ বা লালন করতে পারেন না। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে মানুষের জীবনধারার বৈচিত্রকে তারা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন। এ কারনে জনতার সাথে ইসলামপন্থীদের অদৃশ্য দূরত্ব বা দেয়াল তৈরী হয়। এ দূরত্ব কী ইসলামের প্রচার-প্রসারে ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে বিঘœ ঘটাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তরঃ এ থেকে মুক্তি হাসিলের জন্য দরকার ছোটখাটো ফিকহি ইখতেলাফ মিটিয়ে নেওয়া। কিংবা মানুষের খাওয়াদাওয়া, দৈনন্দিন অভ্যাস, কাপড় পরার অভ্যাস ইত্যাদির প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করে, তার রুচিবোধকে সম্মান জানিয়ে দ্বীনি বিধানের পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে কাজ করা উচিত। টুপি, দাড়ি, শার্ট কিংবা পাজামা-পাঞ্জাবির মধ্যে চিন্তাকে বন্দী না রেখে রুচির স্বাধীনতা রাখা উচিত। এখন তো মানুষ এভাবেই কাজ করছে। আমি এবারের সফরে এ ব্যাপারটি খেয়াল করেছি। আমি কানাইঘাটে গিয়েছি, প্রেসক্লাবে গিয়েছি, সিলেট শহরের নানান প্রোগ্রামেও দেখেছি যে, মানুষ পাজামা-পাঞ্জাবি পরে যেমন আসছে, তেমনি শার্ট-প্যান্ট পরেও ইসলামী আন্দোলনে আসছে, এই ব্যবধান কমে আসছে। মৌলভি, মাস্টার সবাই এক কাতারে আসছেন। ইনশাআল্লাহ, এভাবে যতবেশি কাছাকাছি আসবেন, ইসলামী বিপ্লবের পথও ততটা সুগম হবে।
প্রশ্নঃ পাশ্চাত্য সভ্যতার সূতিকাগার হিসেব পরিচিত গ্রেট ব্রিটেনে আপনি বসবাস করছেন। সেখানে বিশ্বখ্যাত চিন্তক, দার্শনিক, বুদ্ধিজীবীরা থাকেন, নানান দেশ থেকে সেখানে তারা যান। আপনার সাথে তাদের কথাবার্তা, বোঝাপড়া হয়? ইসলাম এবং পাশ্চাত্য সভ্যতা দ্বন্ধ নিয়ে সংলাপ হয়?
উত্তরঃ এসব নিয়ে আমাদের প্রায়ই বসা হয়, আলাপ-আলোচনা চলে। দাওয়াতুল ইসলামের পক্ষ থেকে প্রতি মাসে অন্তত একবার অমুসলিদের নিয়ে আমরা একটা আলোচনাসভার আয়োজন করি। আরও অনেক ইসলামী সংগঠন এভাবে করে। অমুসলিম নেতা, বুদ্ধিজীবী, দার্শনিকের সাথে আমরা বসি, আলাপ করি। এ কর্মসূচির অনেক ফায়দা আছে। আমার এলাকায় ইউসুফ ইসলামের বাস, তার আগের নাম ছিল ক্যাট স্টিভেন। তিনি বিখাত কণ্ঠশিল্পী, ইসলাম গ্রহণ করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের খেদমত করছেন। তার ইসলামীক প্রাইমারি স্কুলে আমার স্ত্রী শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তার পরিচালিত ইউনাইটেড কিংডম ইসলামিক এডুকেশন ওয়াকফ-এর স্থানীয় কমিটির মুখপাত্র আমি। এভাবে আমাদের প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনেক বিখ্যাত মানুষ ইসলামের ছায়ায় এসেছেন। আমরা একটি ইসলামী কলেজ করেছিলাম, সেখানে ম্যাথ-এর টিচার ছিলেন খ্রিস্টান, তিনি বাংলাদেশি মেয়ে বিয়ে করে এখন ইসলামের এক দা’য়ী। এভাবে প্রচুর কাজ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
প্রশ্নঃ মাওলানা মুশাহিদ বাইয়মপুরির সাথে আপনার পরিচয়, কথাবার্তা হয়েছিল কখনো?
উত্তরঃ মাওলানা মুশাহিদ সাহেবের আমি সরাসরি ছাত্র নই। তিনি যখন পার্লামেন্ট, তখন এলাকায় এসে বয়ান করতেন। এমনিতে আমাদের বাড়িতে তিনি সবসময় যেতেন। আমার বড় চাচার সাথে খুব সম্পর্ক ছিল। তখন থেকেই তাকে আমি চিনি, আমাকেও তিনি চিনতেন। কিন্তু, ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান যখন বেসিক ডেমোক্রেটি বা মৌলিক গণতন্ত্র নাম দিয়ে নির্বাচন করলেন, তখন প্রার্থী হয়ে শাহবাগ-তিমুখিতে তার নির্বাচনী জনসভায় এলেন। আমি সে মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে লিখতভাবে তাঁকে ১২টি প্রশ্ন করেছিলাম। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল, আপনি একজন আলিম হয়ে স্বৈরাচারের অধিনে নির্বাচন করছেন কেন? আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যিনি প্রশ্ন পাঠিয়েছেন তাকে আমি চিনি। তবে সকল প্রশ্নের জওয়াব আমি দিব না, সকল প্রশ্নের জওয়াব সবসময় দেওয়া যায় না।”
প্রশ্নঃ আব্দুর রব ক্বাসিমির সাথে আপনার কোনো স্মৃতি আছে?
উত্তরঃ আমার চাচার সাথে তো আগে থেকেই তার গভীর সম্পর্ক ছিল, সে সূত্রে পরিচয় অনেক আগে থেকেই ছিল। শেষদিকে তার সাথে আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। বিশেষ করে, তিনি যখন নতুনভাবে মনসুরিয়া মাদ্রাসা বানালেন, এবং সাইদী সাহেবের ইত্তেহাদুল উম্মাহর সাথে যুক্ত হলেন— তখন। এরপর আমাদের অনেক প্রোগ্রামে তাঁকে দাওয়াত করেছি। দেশে থাকাবস্থায় মনসুরিয়া মাদ্রাসায় আমাকে ছাড়া ওয়াজ মাহফিল করতেন না। তার ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে ঝামেলাও হয়েছে। একবার ওয়াজে বললাম, “ইকরা বিসমি রাব্বিকা” বলতে কি-কি পড়বেন আল্লাহ তা বলেন নি। সুতরাং, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি সহ জ্ঞানের সকল বই পড়া জায়েজ। কয়েকদিন পর দারুল উলুম মাদ্রাসার জলসায় মাওলানা ফয়জুল বারি আমার এ ওয়াজের প্রতিবাদ করলেন। পরের বছর ক্বাসিমি সাহেব আমাকে বললেন, ঐ বক্তব্য রদ করতে হলে এইবার তোমাকে তো আসতেই হবে। তো সেইবারই শেষবারের মতো গিয়েছিলাম। এরপর তো পরে বিলাত চলে যাই।
আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কষ্ট করে দীর্ঘক্ষণ আলাপ করেছেন, আমাকে সময় দিয়েছেন। আপনার কাছে আমাদের জন্য দোয়া চাই।
সরওয়ার ফারুকী
২১ জানুয়ারি, ২০২৫
উপশহর, সিলেট।
0 Comments