ইকামতে দ্বীনের জন্য কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ অনিবার্য।
রাসুলুল্লাহ সা. এর নবুয়তী জিন্দেগী পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নবুয়তী মিশনের আন্দোলন পাঁচটি স্তরে বিভক্ত ছিল:
১. দাওয়াত ইল্লাল্লাহ
২. শাহাদাত আলান্নাছ
৩. কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ
৪. ইকামতে দ্বীন
৫. আমরে বিল মারুফ, নাহী আনিল মুনকার।
রাসুল সা এর নবুয়তী জিন্দেগী ভাল করে খেয়াল করে দেখুন, স্তরগুলো একে অন্যের জন্য কিভাবে অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
দাওয়াত ইল্লাল্লাহ ( পরিপূর্ণ জীবনে একমাত্র আল্লাহর গোলামীর দিকে আহবান) শাহাদাত আলান্নাছকে (সত্যের সাক্ষ্য) অনিবার্য করে তুলে।
দাওয়াত ইল্লাল্লাহ ও শাহাদাত আলান্নাছ কিতাল ফি সাবিলিল্লাহকে ( আল্লাহ-দ্রোহীদের পেশীশক্তির শক্ত হাতে মোকাবেলা) অনিবার্য করে তুলে।
দাওয়াত ইল্লাল্লাহ, শাহাদাত আলান্নাছ এবং কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর পরই ইকামতে দ্বীন ( ইসলামের বিজয় ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা) নিশ্চিত হয়।
ইকামতে দ্বীনের পরই সত্যিকারের 'সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ' এর আমল করা যায়।
অর্থাৎ নবুয়তী মিশনের আন্দোলন শুরু হয় দাওয়াত ইল্লাল্লাহর মাধ্যমে, সমাপ্ত হয় আমরে বিল মারুফ ও নাহী আনিল মুনকার এর মাধ্যমে।
দাওয়াত ইল্লাল্লাহর কাজ করলে দাঈদের সত্যের সাক্ষ্য হিসেবে (পরিপূর্ণ জীবনে আল্লাহর গোলামীর অনুশীলন) নিজেদের গড়ে তোলা অনিবার্য। ইসলামের তথা আল্লাহর গোলামীর পরিপূর্ণ রূপ যখন দাঈদের ( মুমিনদের ) জীবনে ফুটে ওঠে তখন সকল মানুষের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য স্পষ্ট হয়। মানব জাতি নিজ চোখে দেখে, ইসলাম সত্যি মানবতার জন্য কল্যাণকর।
এতে নেই একে অপরের উপর জুলুম নির্যাতন, ধোঁকাবাজি, ভন্ডামি, খুন, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, নারী ধর্ষণ, হানাহানি, লুটপাট ও অন্যের অধিকার হরণের কোন সুযোগ। সবাই নিজ নিজ পূর্ণ অধিকার ভোগ করে। ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত হয়ে ঐ সমাজটা শান্তির আবাসে পরিণত হয়।
তখন কতিপয় ধান্দাবাজ, প্রতারক, জালেম ও সন্ত্রাসী ছাড়া সাধারণ জনতা ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এতে ঐ প্রতারক রাজনৈতিক নেতৃত্ব ইসলামকে তাদের জন্য মারাত্মক হুমকি মনে করে । তারা বুঝে নেয় ইসলাম প্রতিষ্ঠা হলে তাদের ভন্ডামি, ধোঁকাবাজি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের কবর রচিত হবে। তারা ইসলামের ঝান্ডাবাহী গোষ্ঠী বা দলকে নানান অপবাদ দিয়ে বিতর্কিত করার হীন চেষ্টা করে। এই কর্মসূচিও যখন ব্যর্থ হয়, তখন ইসলামী আন্দোলনকে নির্মূল করতে তারা তাদের পেশীশক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ করে।
তখন ইসলামী আন্দোলনের পতাকাবাহীদের জীবন বাজি রেখে সেই রাজনৈতিক ভন্ড আল্লাহদ্রোহীদের পেশীশক্তির মোকাবেলা করতে হয়।
দ্বীনের মুজাহিদরা যখন শাহাদাতের তামান্না নিয়ে শক্তিশালী সম্মিলিত কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে তখন সেই ভন্ড প্রতারক রাজনৈতিক নেতৃত্ব পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। কারণ সাধারণ মুক্তিকামী মানুষ রাজনৈতিক ভন্ডদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তখনই পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠিত হয় ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট খেয়াল করে দেখুন। আল্লাহদ্রোহী নেতৃত্বের দ্বারা এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতারিত হয়ে আসছে। নেতারা তাদের রাজনীতিকে ভয়ঙ্কর ধোঁকাবাজি, ভন্ডামি, নিজেদের বস্তুবাদী স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করছেন।
এতে সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নেতারা তাদের অনুগত দোসরদের সাথে নিয়ে জনগণের অধিকার হরণ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। কেউ অধিকার চাইলেই তার উপর চরম জুলুম নির্যাতন নেমে আসে।
মুক্তিকামী মানুষ বারবার স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেও তাদের হারানো অধিকার ফিরে পায় নি।
অন্যদিকে মানব জাতির জন্য আল্লাহর দেয়া পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা "ইসলাম" কে প্রতিষ্ঠার জন্য মুষ্টিমেয় কিছু লোক আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারা তাদের দাওয়াত ইল্লাল্লাহ এবং শাহাদাত আলান্নাছের মাধ্যমে যখন সাধারণ মানুষের মনযোগ আকর্ষণ করে যাচ্ছে তখন তাদের থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে ঐ ভন্ড, প্রতারক, রাজনৈতিক তাগুতি শক্তি ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানান বানোয়াট অপবাদ দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা বিরোধী, মৌলবাদী, ধর্মান্ধ, রগ কাটার দল, জঙ্গি, সন্ত্রাসী, বাতিল আকিদার অনুসারী ইত্যাদি উপাধি ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি এই আন্দোলনের নেতা কর্মীদের উপর হামলা মামলা, খুন, গুম, চরম নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
ঐ স্বার্থান্বেষী মহলের অপশাসন, প্রতারণা, লুটপাট, দূর্নীতি, খুন-গুম-ধর্ষণ নিপীড়নে অতিষ্ঠ জনগণ ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি জীবন, সুশৃংখল দলীয় ভুমিকা পর্যবেক্ষণ করে যখন ইসলামী আন্দোলনের দিকে এগিয়ে আসছে। ইসলামকে ঘিরে মুক্তি ও শান্তির স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে। তাদের মিথ্যা প্রচারণা যখন কাজে আসছে না, বঞ্চিত জনগণ যখন ইসলামী দলকে "দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে দেখার" আওয়াজ তুলছে তখন ঐ তাগুতী, কুফরী শক্তির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা পাগলা কুকুরের মতো আচরণ করছে। ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করতে তাদের অভ্যন্তরীণ ( যারা এতদিন পরস্পর ঘোর শত্রু ছিল) দ্বন্দ্ব মিটিয়ে দেশী-বিদেশী কুফরী/ তাগুতি শক্তি সম্মিলিতভাবে ইসলামী ঐ দলের উপর হামলে পড়ছে। তাদের হুমকি ধামকি, হামলা নির্যাতন দিনদিন ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মুক্তিকামী মানুষের জন্য একটা সোনালী দিনের হাতছানি দিচ্ছে। তাগুতি শক্তির আচরণ স্পষ্ট করে দিচ্ছে তাদের চুড়ান্ত পরিণতি অবশ্যম্ভাবী।
এখন প্রয়োজন: রাজনৈতিক ভন্ড প্রতারকদের দ্বারা বঞ্চনার শিকার মুক্তিকামী মানুষের ঐক্যবদ্ধ বলিষ্ঠ ভূমিকা। এদেশে ইসলামী শক্তিগুলো এবং সাধারণ মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে ঐ স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা প্রতারিত হয়ে আসছে। মুক্তিকামী ছাত্রজনতার কাছে ভন্ডদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে।
ইসলামী দলগুলো এবং ছাত্র জনতা ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে রাজনৈতিক ভন্ড প্রতারক, নিপিড়ক শক্তির নিষ্ঠুর পেশিকে ( সন্ত্রাস ) শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে পারলে এদেশের সাধারণ মানুষের বিজয় ও মুক্তি হাতের মুঠোয়। মানবতার মুক্তির সূর্য হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বাতিলের পরাজয় নিশ্চিত।
অতএব তাগুতী শক্তির হুমকি ধামকি, হত্যা, নির্যাতনকে ভয় পেলে চলবে না। এখন শুধু নির্যাতন সহ্য করার সময় নয়। রক্তের বন্যা বয়ে পাওয়া স্বাধীন দেশের মানুষেরা আর একতরফা নির্যাতন সহ্য করতে প্রস্তুত নয়। জালেমের হাত ভেঙ্গে ফেলে শান্তির স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রতিক্ষা করছে। জালেমদের শাহাদাতের তামান্না নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। আক্রমণ-নির্যাতনের হাত প্রসারিত করার সাথে সাথে সেই কালো হাতটাকে ধরে মটকে দিতে হবে। তবেই আল্লাহর নিকটবর্তী সহযোগিতা ও বিজয় নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।
তাদের পেশিশক্তিকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে এদেশের মানুষের স্বপ্ন ভেস্তে যাবে। দেশের মুক্তিকামী মানুষের উপর নেমে আসবে যুগের সবচেয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন।
আল্লাহ আমাদের সময়ের চাহিদার আলোকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার তাওফিক দান করুন।
0 Comments