Recent Tube

খিলাফত নিয়ে আলাউদ্দীন জিহাদী কর্তৃক রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে মিথ্যাচার এবং আমাদের জবাবঃ মুহাম্মাদ তানজিল ইসলাম।

খিলাফত নিয়ে আলাউদ্দীন জিহাদী কর্তৃক রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে মিথ্যাচার এবং আমাদের জবাবঃ 
----------------------------------------------------
আলাউদ্দীন জিহাদী নামক জিলাপি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর নামে মিথ্যাচার করে বলেন, "নবীজী (ﷺ) এর ওয়াফাতের পরে খিলাফত ত্রিশ বছর পর বন্ধ হয়ে গেছে। কিয়ামত পর্যন্ত আর খিলাফত আসবে না। এটা সহীহ মুসলিমের হাদীস।"

নাউজুবিল্লাহ মিন জালিক। সহীহ মুসলিম তো দূরের কথা, কোনো হাদীসেই এমন কথা কোথাও পাবেন না। খিলাফত ত্রিশ বছর অবশিষ্ট থাকার পর রাজতন্ত্রের যুগ আসবে। এ কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু কিয়ামত পর্যন্ত আর খিলাফত আসবে না- এমন কোনো হাদীসে বর্ণিত হয়নি বরং সহীহ হাদীসে পুনরায় নুবুওয়্যাতের তরীকায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। নিচের হাদীসগুলো লক্ষ্য করুন।

হযরত সাফীনাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন,
«الْخِلَافَةُ ثَلَاثُونَ سَنَةً ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا» . ثُمَّ يَقُولُ سَفِينَةُ: أَمْسِكْ: خِلَافَةَ أَبِي بَكْرٍ سَنَتَيْنِ وَخِلَافَةَ عُمَرَ عَشْرَةً وَعُثْمَانَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ وَعَلِيٍّ سِتَّةً.
খিলাফত ত্রিশ বছর অবশিষ্ট থাকবে। অতঃপর তা রাজতন্ত্রে পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী সাফীনাহ (রাঃ) বলেন, তা এরূপে বর্ণনা করে নাও- আবূ বা সিদ্দীক (রাঃ)-এর খিলাফতকাল দু বছর, ’উমার (রাঃ)-এর খিলাফতকাল দশ বছর, উসমান (রাঃ)-এর বারো বছর এবং ’আলী (রাঃ)-এর ছয় বছর। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৮৪৩০; আবূ দাউদ হাঃ ৪৬৪৬; তিরমিযী হাঃ ২২২৬;, আস্ সুনানুল কুবরা লিন্ নাসায়ী হাঃ ৮১৫৫, সহীহ ইবনু হিব্বান হাঃ ৬৯৪৩; মিশকাত হাঃ ৫৩৯৫; সিলসিলাতুস্ সহীহাহ হাঃ ৪৫৯)

এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর শাসনামলের পর খিলাফত ব্যবস্থা ত্রিশ বছর অবশিষ্ট থাকবে। এরপর রাজতন্ত্রের যুগ আসবে। কিন্তু 'কিয়ামত পর্যন্ত আর খিলাফত কায়েম হবে না' - এমন কথা এ হাদীসে বলা হয়নি। বরং অপর সহীহ হাদীসে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, রাজতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের পর পুনরায় নুবুওয়্যাতের তরীকায় খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে।

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হুযায়ফাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন : 
«تَكُونُ النُّبُوَّةُ فِيكُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا اللَّهُ تَعَالَى ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ النُّبُوَّةِ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا اللَّهُ تَعَالَى ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا عَاضًّا فَتَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ تَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا اللَّهُ تَعَالَى ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا جَبْرِيَّةً فَيَكُونُ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَكُونَ ثُمَّ يَرْفَعُهَا اللَّهُ تَعَالَى ثُمَّ تَكُونُ خِلَافَةً عَلَى مِنْهَاجِ نُبُوَّةٍ» ثُمَّ سَكَتَ. رَوَاهُ أَحْمد وَالْبَيْهَقِيّ فِي «دَلَائِل النُّبُوَّة» اسنادہ صحیح.
আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন তোমাদের মাঝে নুবুওয়্যাত পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান থাকবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে তুলে নেবেন, তারপর আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন নুবুয়্যাতের নিয়মানুযায়ী খিলাফত থাকবে, অতঃপর এমন এক সময় তাও উঠিয়ে নেবেন। তারপর প্রতিষ্ঠিত হবে দংশনকারী রাজতন্ত্র, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী তা যতদিন থাকার থাকবে, পরে এমন সময় তাকেও উঠিয়ে নেবেন। অতঃপর চেপে বসবে অপ্রতিরোধ্য স্বৈরতন্ত্র। আল্লাহর ইচ্ছা যতদিন থাকার থাকবে, পরে তাকেও তুলে নেবেন। তারপর পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হবে নুবুওয়্যাতের তরীকায় খিলাফত। এ পর্যন্ত বলার পর তিনি নীরব হলেন। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ১৮৪৩০; মুসনাদে বাযযার হাঃ ২৭৯৬, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী হাঃ ৩৭২; সিলসিলাতুস সহীহাহ ৫; মিশকাত হাঃ ৫৩৭৮)

হযরত সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, 
إِنَّ اللَّهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا وَإِنَّ مُلْكَ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا
আল্লাহ সমস্ত পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল ঐ পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ফিতান, হাঃ ৪২৫২; ইফা. হাঃ ৬৯৯৪)

হযরত মিকদাদ বিন আসওয়াদ (রা:) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে,
لَا يَبْقَى عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ بَيْتُ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ كَلِمَةَ الْإِسْلَامِ بِعِزِّ عَزِيزٍ أَوْ ذُلِّ ذَلِيلٍ إِمَّا يُعِزُّهُمْ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَيَجْعَلُهُمْ مِنْ أَهْلِهَا أَوْ يُذِلُّهُمْ فَيَدِينُونَ لَهَا. قلت فيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلِّه.
পৃথিবীর উপর এমন কোনো ঘর বা তাঁবু বাকী থাকবে না যেখানে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামের বিধান প্রবেশ না করাবেন। সম্মানীর ঘরে সম্মানের সাথে আর লাঞ্ছিতের ঘরে লাঞ্ছনার সাথে তা পৌঁছাবেন। আল্লাহ তা’আলা যাদেরকে সম্মানিত করবেন তাদেরকে স্বেচ্ছায় ইসলাম কবূলের উপযুক্ত করে মর্যাদাবান ও গৌরবময় করে দিবেন। পক্ষান্তরে যারা ইসলাম গ্রহণ করবে না, তাদের আল্লাহ তা’আলা লাঞ্ছিত করবেন এবং তারা ইসলামের বিধানের প্রতি অনুগত হবার জন্য বাধ্য হবে। আমি (মিকদাদ) বললাম, তখন তো সমগ্র বিশ্বে আল্লাহরই দ্বীন কায়েম হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ হাঃ ২৩৩০২; সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ ৬৭০১; মুশকিলুল আছার হাঃ ৬১৫৫; মিশকাতুল মাসাবীহ হাঃ ৪২)

উপরোক্ত হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় সমগ্র বিশ্বে ইসলামী খিলাফত ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাঁর দ্বীন কায়েম  করবেন। সুতরাং আলাউদ্দীন জিহাদী রাসুলুল্লাহ (ﷺ) নামে মিথ্যাচার করেছেন এবং খিলাফত বিষয়ে মুসলিম উম্মাহকে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন।

Post a Comment

0 Comments