⛔ ভন্ড ও বিভ্রান্তিকর আলেমদের অপতৎপরতা ⛔
--------------------------------------------------
অনেকেই ভাবেন যে, যার কথা শুনব, যার বই পড়ব, তার চিন্তাধারা খারাপ হলে কিছু আসে যায় না। ভালটা গ্রহণ করব, খারাপটা গ্রহণ করব না।
প্রকৃতপক্ষে কুরআন-হাদীস সম্পর্কে যার অগাধ জ্ঞান আছে, ভাল-মন্দ যাচাই-বাছাই করার যোগ্যতা যার আছে, সেই কেবল এমনটি বলতে পারে।
বর্তমান সময়ে অনেক বক্তা ও ওয়জিনদের আলোচনায় শিরক ও বিদআতের মিশ্রন রয়েছে। সত্য কথা হলো যাদের চিন্তা সঠিক নয় এমন ব্যক্তির কথা ও লেখার মধ্যে বিষ আছে। সেই বিষ আস্তে আাস্তে আপনার অন্তরে প্রবেশ করবে, মস্তিস্ক বিকৃতি করে দেবে, আকীদা-বিশ্বাস নষ্ট করে দেবে। সঠিক লাইন থেকে দূরে সরে পড়বেন।
আখেরি জমানায় এরকমই ভন্ড ও বিভ্রান্তিকর আলেমদের আবির্ভাব হবে। সহিহ বুখারির বর্ণনা..
في صحيح البخاري ٣٦٠٦ عن حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ يَقُوْلُ ..فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا كُنَّا فِيْ جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيْهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُوْنَ بِغَيْرِ هَدْيِيْ تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ إِلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوْهُ فِيْهَا قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا فَقَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُوْنَ بِأَلْسِنَتِنَاৃ
হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জাহিলীয়্যাতে অকল্যাণকর অবস্থায় জীবন যাপন করতাম অতঃপর আল্লাহ আমাদের এ কল্যাণ দান করেছেন। এ কল্যাণকর অবস্থার পর আবার কোন অকল্যাণের আশঙ্কা আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ঐ অকল্যাণের পর কোন কল্যাণ আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ, আছে। তবে তা মন্দ মেশানো। আমি বললাম, মন্দ মেশানো কী? তিনি বললেন, এমন একদল লোক যারা আমার সুন্নাত ত্যাগ করে অন্যপথে পরিচালিত হবে। তাদের কাজে ভাল-মন্দ সবই থাকবে। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, অতঃপর কি আরো অকল্যাণ আছে? তিনি বললেন হাঁ, তখন জাহান্নামের দিকে আহবানকারীদের উদ্ভব ঘটবে। যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাকেই তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এদের পরিচয় বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদেরই সম্প্রদায়ভুক্ত এবং কথা বলবে আমাদেরই ভাষায়। (বুখারি ৩৬০৭, ৭০৮৪, মুসলিম ৩৩/১৩ হাঃ ১৮৪৭)।
সুতরাং আমি যার কথা মানছি, যাকে নেতা হিসেবে গ্রহন করেছি, যে দলের আনুগত্য করছি, যার ওয়াজ আমি নিয়মিত শুনছি, যে ইমাম ও খতীবের পিছে নামায পড়ছি, তার চিন্তাধারা ঠিক আছে কি না?
চিন্তাধারা সঠিক নেই, ঈমান-আকীদা ঠিক নেই এমন ব্যক্তির কথা শুনলে, এমন ব্যক্তির অনুসরণ করলে এবং তাকে মানলে নিজেও গোমরাহ হবেন এবং আপনার দ্বারা অন্যরাও পথভ্রষ্ট হবে।
প্রশ্ন: আপনি বলতে পারেন আমরা ভন্ড ও বিভ্রান্তিকর আলেম চিনব কিভাবে?
উত্তর হলো: আপনি যখন কোন জমি ক্রয় করেন, না জেনে না বুঝে ক্রেতার বক্তব্য শুনেই ক্রয় করেন? অবশ্যই না, আপনি তখন জমির দলিল, পর্চা, এস এ রেকর্ড সহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় প্রমানাদি ইত্যাদি তালাশ করেন। হুট করে কোন কিছুই আপনি কিনবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারণ ইহার সাথে আপনার স্বার্থ জড়িত। কোন অবস্থাতেই আপনি আপনার লোকসান চাইবেনা। এই দুনিয়াবি চাওয়া পাওয়াটা যদি নির্ভেজালমুক্ত হওয়ার আশা করেন তাহলে আখেরাতের ক্ষেত্রে বিনা দলিল বা প্রমান ছাড়া আল্লাহর সন্তষ্টি ও তার জান্নাত এবং কিয়ামত দিবসে নবি মুহাম্মাদ (সা.) এর সুপারিশ ইত্যাদি কিভাবে আাশা করেন!
এ সব কিছু বিনা দলিল বা প্রমান ছাড়া অর্জন করা কি সম্ভব? না কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়।
সেই জন্য আপনার আখেরাতের বিষয়ে দ্বীন গ্রহনের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আপনাকে ভালোভাবে যাচাই করে দ্বীন গ্রহন করতে হবে। ইমাম মুসলিম তার কিতাব সহিহ মুসলিম এর ভূমিকায় মুহাম্মদ ইবনু সীরীন (র.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন:
إنَّ هذا العِلمَ دِينٌ، فانظُروا عمَّن تأخُذون دينَكم
“এ ইলমই হলো দীন। সুতরাং তোমরা লক্ষ্য করো কার নিকট হতে তোমরা তোমাদের দীন গ্রহণ করছো”।
তাই তালিবে ইলম ও সর্বসাধারণ মুসলিমদের উচিত কুরআন ও সহিহ সুন্নাহের ইলম অর্জন করা। এবং সত্যপন্থি আলেমদের সংস্পর্শে থাকা। সত্যপন্থি আলেমদের উপস্থিতি ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে এবং ভন্ড ও বিভ্রান্তিকর আলেমদের বিরূদ্ধে কাজে লাগানো।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের কুরআন ও সহিহ সুন্নাহের ইলম অর্জন ও সত্যপন্থি আলেমদের সাথে থাকার তাউফিক দান করুন। আমিন।
-------------------------
লেখকঃ সাঈদ বিন নূরুজ্জামান খতীব কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ সিলেট ।
0 Comments