Recent Tube

বিতিকিচ্ছা -৩ -রাষ্ট্র, বিত্তবান ও দরিদ্র।

বিতিকিচ্ছা, পর্ব-০৩
 নুর মুহাম্মদ চৌধূরী (মুবিন)।
-------------------------
প্রসঙ্গঃ রাষ্ট্র, বিত্তবান ও দরিদ্র-
*********************
        আমরা দরিদ্র আর ধনী মিলে পারস্পরিক প্রয়োজনে একই সমাজে সহাবস্থান করি। একটি সমাজে সকলেই বিত্তশালী হলে চলে না। ধনী ও দরিদ্র সহাবস্থানে গঠিত সুন্দর এই সমাজে আমাদের সংঘবদ্ধ বাস। ধনীরা যদি তাদের ধন ভাণ্ডারকে শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজনেই আঁকড়ে ধরে থাকেন, তথাপি এর সুফল কস্মিনকালেও তারা একা ভোগ করতে পারেন না। কারণ আমরা আমাদের কোন প্রয়োজন কখনওই অন্যের সহায়তা ছাড়া লাভ করতে পারি না। এতএব সমাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও বিত্তবানরা পারষ্পরিক সহযোগীতা ও লেনদেনের সম্পর্কে সম্পর্কিত হতে বাধ্য। এইভাবে কিছুটা হলেওতো দরিদ্রের চুলা জ্বলানোর একটা ব্যবস্থা এখানে হয়েই যাচ্ছে।
      আমি সমাজের সকল  ধণীক শ্রণীকে কৃচ্ছতা অবলম্বন করতে বলি না,  আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সক্ষমতা থাকার পরও ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত হতে বলি না। অলসতা পরিহার করে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লে অবশ্যই কোন না কোন একজন বিত্তশালীকে কাছে পেয়ে যাবেন। এইভাবে একজনের পরিকল্পনা আর অন্যজনের শ্রমের বদৌলতে আপনার আমার গ্রামটি ক্রমশঃ শহরে রুপান্তরিত হয়ে যায় সৃষ্টি হয় আধুনিক নগর, আর আধুনিক পৃথীবি।
  ধণীরা যতই ধণী হোক, সম্পদ ও ক্ষমতার হিসাব নিকাশে রাষ্ট্র কিন্তু তার চেয়েও বেশী ধনী ও ক্ষমতাবান। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল জনসাধারণই রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী। রাষ্ট্র ধনী আর আমরা সাধারণরা গরীব। আজীবন সকল উপদেশ মিশন থেকে ধণীদের উদ্দেশ্য এই উপদেশ খয়রাত করা হয় যে, দরিদ্রদের প্রতি সহানুভুতিশীল হও। অথচ রাষ্ট্র সয়ং তদপেক্ষা তুলনামুলক দরিদ্র ও তদনুগত নাগরিক বিশেষ করে বিত্তশালী নাগরিকদের প্রতি করে আসছে রীতিমত এক প্রকার বৈরী আচরণ। বিষয়টি অনেকেরই নজরে পড়ার কথা থাকলেও কেন যে চক্কুস্মানরা এড়িয়ে যাচ্ছেন,  তা আমাকে ভাবিত করে।
  আমার প্রশ্ন, নগরীর উচ্চতা কত হবে, (অর্থাৎ রাস্তা সসমুহের উচ্চতা), ড্রেনের গভীরতা কত হবে, এই সমস্থ বিষয়ে নগর ভবনে কর্মরত প্রতিভাধর প্রকৌশলীদের ভিশন কত দুর বিস্তৃত? কিছুদিন পর পর সড়ক সমুহের উচ্চতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে আর ভবন সমুহকে বিপদে ফেলে দেয়া হচ্ছে। একজন ভবন নির্মাতা  তার ভবনটির জন্য নিছক পরিকল্পনা গ্রহন করেই ক্ষান্ত থাকেন না, বরং নগর ভবন থেকে তার নকশা অনুমোদন করে নিতে হয় তাকে। বিজ্ঞ প্রকৌশলী দ্বারা তার দেখভাল করিয়েও থাকেন। কুটি টাকার নীচে কোন ভবনই খাড়া হয়ে উটে না। অতঃপর ভবনটি নির্মান হয়ে গেলে সেই ভবনে আমরা দুই, তিন,কিংবা চারটি সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে উঠি। অথচ কয়েক বৎসর যেতে না যেতেই আমরা দেখতে পাই সেই ভবনে নিম্নমূখী চার চারটি সিঁড়ি ভাঙ্গিয়ে নামতে হচ্ছে। অবশেষে  বাধ্য হয়ে ভবন মালিকগন তাদের নির্মিত ভবনের বাহিরের আঙ্গিনাটি মাটি ভরাট করে উঁচু করে নিতে হয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই আঙ্গিনায় জমে থাকে এক হাটু জল। বৃষ্টি একটু বশী হলেতো আর কথাই নেই, ভবন থেকে সেচ করে জল নিষ্কাশন করতে হয়। ভবনের পোর্সটি মাথায় ঠেকে, কোন কোন স্থানে মাথা নিচু করে করেই ভবনে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ভবনটি তার উপযুক্ত ভাড়ায়,  অথবা উপযুক্ত মুল্যে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। অথচ ড্রেনের গভীতা আর প্রসস্থতা বাড়ানোর ব্যাপারটার প্রতি গুরুত্বই দেয়া- বিষয়টি সমস্যার সমাধান হিসাবে যথার্থ হত।
     আমি নিঃশ্চিত যাকে আল্লাহ তায়ালা অর্থ-বিত্তের মালিক বানিয়েছেন, তাকে মাথায় কিছুটা হলেও ঘিলু দিয়েছেন। অপরিকল্পিত ভবন নকশা বলে এক,দু'জনকে দায়ী করা যেতে পারে বটে তবে পুরো নগরের ত্রিশ বৎসর আগের গড়া কোন ভবনটি এখন এই সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে না। সাধারণ নাগরিকের  কথা বাদ দিন। সরকার কর্তৃক নির্মিত আবাসন প্রকল্পের দিকে তাকালে কি এই চিত্র দৃশ্যমান হয় না? বলতে পারেন  আগের যুগের সকল বিত্তবানরা কিছুটা কম ঘিলু নিয়ে জন্মেছিলেন। আর বর্তমানে নগর ভবনের চেয়ার দখলে নেয়া প্রকৌশলীগনই বুদ্ধির মাপকাটিতে এক হাত এগিয়ে। আমি মনে করি এগুলো এক প্রকার রাষ্ট্রীয় দায়ীত্বহীনতা। পুরোদস্তুর একটা ডাকাতি। আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে যে,  একজন বিত্তবান বা্চলে, বিত্তবানদের ব্যবসা বাঁচলে শুধু  কিছু সংখ্যক দরিদ্রই বাঁচবে না বরং অনেক বড় মাপের  ইঞ্জিনিয়ার তথা পণ্ডিতদের কর্মসংস্থানও হবে।

Post a Comment

0 Comments