পবিত্র কোরআন মাজীদে যাকাত সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীস।
এক.
اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسٰكِيْنِ وَالْعٰمِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّـفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِى الرِّقَابِ وَالْغٰرِمِيْنَ وَفِىْ سَبِيْلِ اللّٰهِ وَابْنِ السَّبِيْلِؕ فَرِيْضَةً مِّنَ اللّٰهِؕ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
নিশ্চয়ই সদকাহ্ (যাকাত) হলো- ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্যে, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্যে-এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ্ ৯:৬০)।
দুই.(২)
اَ لَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ ؕ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ
আমি যদি তাদেরকে পৃথিবীতে রাজত্ব দান করি, তাহলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে, আর সব কাজের চূড়ান্ত পরিণতি একান্তই আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (সূরাহ হাজ্জ ২২: ৪১)।
তিন (৩).
لِلْفُقَرَآءِ الَّذِيْنَ اُحْصِرُوْا فِىْ سَبِيْلِ اللّٰهِ لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ ضَرْبًا فِى الْاَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ اَغْنِيَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِۚ تَعْرِفُهُمْ بِسِيْمٰهُمْۚ لَا يَسْـــَٔلُوْنَ النَّاسَ اِلْحَــافًا ؕ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ خَيْرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ بِهٖ عَلِيْمٌ
এটা (যাকাত) প্রাপ্য সেসব অভাবগ্রস্ত লোকদের, যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত থাকায় জীবীকার জন্যে জমিনে পদচারণা করতে পারে না এবং (আত্মসম্ভ্রমের কারণে) কারো নিকট হাত পাতে না বলে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে।তোমরা তাদের (দারিদ্র্যের) লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে। তারা মানুষের নিকট মিনতি করে যাচনা করে না। আর যে কল্যাণকর কিছু তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা সবশেষ অবহিত। (সূরাহ বাকারাহ ২:২৭৩)
চার (৪)
وَهُوَ الَّذِىْۤ اَنْشَاَ جَنّٰتٍ مَّعْرُوْشٰتٍ وَّغَيْرَ مَعْرُوْشٰتٍ وَّالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا اُكُلُهٗ وَالزَّيْتُوْنَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَّغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ؕ كُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖۤ اِذَاۤ اَثْمَرَ وَاٰتُوْا حَقَّهٗ يَوْمَ حَصَادِهٖ ۖ وَلَا تُسْرِفُوْا ؕ اِنَّهٗ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ
এবং তিনিই মাচাযু্ক্ত (কাণ্ডবিহীন) ও মাচাবিহীন (কাণ্ডবিশিষ্ট) বৃক্ষ-লতা সম্বলিত বাগানসমূহ, খেজুর গাছ, বিভিন্ন স্বাদের খাদ্য শস্য, যায়তুন ও আনার সৃষ্টি করেছেন- যেগুলো পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ ও সাদৃশ্যহীন। যখন তা ফলবান হয় তখন তোমরা তার ফল খাও এবং ফল সংগ্রহের দিনে তার হাক্ক (অর্থাৎ উশর) প্রদান কর এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে ভালোবাসেন না। (সূরাহ আনআম ৬:১৪১)
পাঁচ (৫).
رِجَالٌ ۙ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللّٰهِ وَاِقَامِ الصَّلٰوةِ وَ اِيْتَآءِ الزَّكٰوةِ ۙ يَخَافُوْنَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيْهِ الْقُلُوْبُ وَالْاَبْصَارُ ۙ
সে সব লোক, যাদেরকে ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ, সলাত কায়িম এবং যাকাত প্রদান হতে বিরত রাখে না। তারা ভয় করে সেই দিনকে যেদিন অনেক অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। (সূরাহ নূর ২৪:৩৭)
রাসূলুল্লাহ সা. এর হাদীস সমুহ:
(এক)
হযরত হারিসাহ ইবনি ওয়াহব রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সা.-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সদাকাহ (যাকাত) প্রদান কর, কেননা তোমাদের ওপর এমন যুগ আসবে যখন মানুষ আপন সদাকাহ নিয়ে ঘুরে বেড়াবে কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কাউকে পাবে না। (দাতা যাকে দেওয়ার ইচ্চা করবে সে) লোকটি বলবে, গতকাল পর্যন্ত নিয়ে আসলে আমি গ্রহণ করতাম। আজ আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ্ বুখারী: ১৪১১, সহীহ্ মুসলিম: ১০১১)
দুই.
হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছ থেকে ধন-সম্পদ পেয়েছে কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন ওই ধন-সম্পদ এমন বিষধর সাপে পরিণত হবে যার মাথার ওপর থাকবে দুটি কালো দাগ। এ সাপ সে ব্যক্তির গলায় পেচিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল, আমি তোমার সঞ্চিত সম্পদ। (সহীহ্ বুখারী: ১৪০৩)
তিন.
হযরত আবূ হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ্! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহীহ্ বুখারী: ১৪৪২, সহীহ্ মুসলিম: ১০১০)
চার.
হযরত জারীর ইবনি আবদুল্লাহ্ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের নিকট যাকাত আদায়কারী আসবে, তখন সে যেন তোমাদের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়। (সহীহ্ মুসলিম: ৯৮৯)
পাঁচ.
হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবনি ‘উমার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম সা. ইরশাদ করেন, যেসব জমিতে বৃষ্টি ও ঝরনার পানিতে সেচ হয়, অথবা যেসব জমিতে উপরিভাগ থেকে সেচ করা হয়, সেসব জমির ফসলে যাকাতের পরিমাণ এক দশমাংশ। আর যেসব জমিতে কূপ থেকে পানি সরবরাহ করা হয়, সেসব জমির ফসলের বিশ ভাগের একাংশ যাকাত (উশর) দিতে হবে। (সহীহ বুখারী: ১৪৮৩)
কুরআন মাজীদের আদেশ ও নিষেধ’ বই থেকে সংকলিত।
0 Comments