Recent Tube

আহলে হাদীসের শিরকে আকবরঃ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম লাগে না:- তুই ব্যাটা শিরকে আকবর করলি- মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।



আহলে হাদীসের শিরকে আকবরঃ 
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম লাগে না:- 
তুই ব্যাটা শিরকে আকবর করলি-
--মুফতি কাজী ইব্রাহীম।
আহলে হাদীসের সহীহ শিরকি আকিদা হলো- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম প্রয়োজন নাই। তাদের এ শিরকি আকিদা বিভিন্ন লেখনি ও বক্তৃতায় ফুটে ওঠেছে। এমনকি বিষয়টি কাজী ইব্রাহীম হাফিঃও জানতে পেরেছেন। যেমন- আহলে হাদীস শায়খ মুযাফফর বিন মুহসিন লিখেছেন,
"রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা ইবাদতে তাওক্বীফীও নয়। এটা মু'আমালার অন্তর্ভুক্ত।... (আর) মু'আমালার বিষয়টি ইচ্ছাধীন।" (ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন, পৃঃ ১৫৩)
"রাজনৈতিক (ইকামতে দ্বীনের) সংগ্রাম কি তার (মুমিন ব্যক্তির) মূল টার্গেট হবে? এ বিশ্বাস কতটুকু শরীয়ত সম্মত? কোন নবী রাসূল কি এদিকেই (রাষ্ট্রীয়ভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার) দাওয়াত দিয়েছেন? কখনোই না।" (ভ্রান্তির বেড়াজালে ইক্বামতে দ্বীন, পৃঃ ২০০)
.
আহলে হাদীসের বিরাট শায়খ আসাদুল্লাহ আল গালীব বলেন,
إن الحكم إلا لله.
'নাই কারো হুকুম আল্লাহ ব্যতীত' (ইউসূফঃ১২/৪০)
"আয়াতটি  'হুকমে তাকভীনী' বা প্রাকৃতিক অর্থে নিতে হবে, যার একচ্ছত্র মালিকানা আল্লাহর হাতে। এর অর্থ কখনোই রাষ্ট্রীয় বিধান নয়, যা পরিষ্কার ভাবে 'হুকমে আক্বলী'র অন্তর্ভুক্ত। এটির অর্থ 'হুকমে শারঈ'ও নয়।" (তিনটি মতবাদ, পৃঃ ২৭)
গালীব সাব আরো বলেন,
"মনে রাখতে হবে যে, আমাদের মূল লক্ষ্য হল ইবাদত প্রতিষ্ঠা করা, হুকুমত (রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম) প্রতিষ্ঠা করা নয়। আমাদের সেই লক্ষ্যেই অবিচল থাকতে হবে।" (তিনটি মতবাদ, পৃঃ ৬৩)
.
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আলেম মুফতি কাজী ইব্রাহীম হাফিঃ বলেন,
"কুরআন সুন্নাহ দিয়া রাষ্ট্র চালাইতে হবে- এ কথা যে/যারা বিশ্বাস করে না, শিরকে আকবরে সে/তারা মুশরিক। এখানে আঁকা বাঁকা কোন কথা নেই। (অর্থাৎ এ ব্যাপারে কোন ছাড় নেই)। 
ঈমানের উপমা- সেতো অগ্নিশিখা
কাজ হলো- শুধু তার জ্বলতে থাকা
কত যে কঠিন তারে মুঠে রাখা।
তারা (আহলে হাদীসরা) ঈমানকে মুঠে (ধরে) রাখতে পারে না। আর না পেরে তারা কয়, 
'এখান রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলাম লাগে না। ওখানে ইসলাম দরকার নাই।' 
তুই ব্যাটা শিরকে আকবর করলি। তুমি কবর আর মাজারের শিরক বর্জন করলে কি হবে? তুমি তো আইন ও বিধানের ক্ষেত্রে শিরকে আকবর করে ঈমান শেষ করে দিলে।"
.
আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেন,
"যে ব্যক্তি চোখ খুলে কুরআন মজীদ পড়বে সে স্পষ্ট দেখতে পাবে যে, এ গ্রন্থ তার অনুসারীদেরকে কুফরী ও কাফেরদের আজ্ঞাধীন ধরে নিয়ে বিজিতের অবস্থানে থেকে ধর্মীয় জীবন-যাপন করার কর্মসূচী দিচ্ছে না, বরং প্রকাশ্যে নিজের শাসন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, চিন্তাগত, নৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আইনগত ও রাজনৈতিক ভাবে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জীবনপাত করার জন্য অনুসারীদের কাছে দাবী করছে এবং তাদেরকে মানব জীবনের সংস্কার ও সংশোধনের এমন একটি কর্মসূচী দিচ্ছে যার একটা বৃহদাংশ কেবল তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে যদি সরকারের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব ঈমানদারদের হাতে থাকে। এ কিতাব তার নাযিল করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেঃ 
إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ- 
“হে নবী, আমি ন্যায় ও সত্যসহ তোমার কাছে এই কিতাব নাযিল করেছি যাতে আল্লাহ‌ তোমাকে যে আলো দেখিয়েছেন তার সাহায্যে তুমি মানুষের মধ্যে ফায়সালা করো।” (সূরা নিসাঃ৪/১০৫
.
এই কিতাবে যাকাত আদায় ও বন্টনের যে নির্দেশাবলী দেয়া হয়েছে সেজন্য তা সুস্পষ্টভাবে এমন একটি সরকারের ধারণা পেশ করেছে যে, একটি নির্দিষ্ট নিয়মানুসারে যাকাত আদায় করে হকদারদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেবে (আত তাওবা ৯/৬০ ও ১০৩)। এই কিতাবে সুদ বন্ধ করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে এবং সুদখোরী চালু রাখার কাজে তৎপর লোকদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে (আল বাকারা ২/২৭৫-২৭৯) তা কেবল তখনই বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে যখন দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ঈমানদারদের হাতে থাকবে। এই কিতাবে হত্যাকারীর থেকে কিসাস গ্রহণের নির্দেশ (আল বাকারা ২/১৭৮), চুরির জন্য হাত কাটার নির্দেশ (আল মায়েদা ৫/৩৮) এবং ব্যভিচার ও ব্যভিচারের অপবাদ আরোপের জন্য হদ জারী করার নির্দেশ (নূর ২৪/ ২ ও ৪) একথা ধরে নিয়ে দেয়া হয়নি যে, এসব আদেশ মান্যকারীদেরকে কাফেরদের পুলিশ ও বিচারালয়ের অধীন থাকতে হবে। এই কিতাবে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নির্দেশ (আল বাকারা ২/১৯০-২১৬) একথা মনে করে দেয়া হয়নি যে, এ দ্বীনের অনুসারীরা কাফের সরকারের বাহিনীতে সৈন্য ভর্তি করে এ নির্দেশ পালন করবে। এ কিতাবে আহলে কিতাবদের নিকট থেকে জিযিয়া আদায়ের নির্দেশ (আত তাওবা ৯/২৯) একথা ধরে নিয়ে দেয়া হয়নি যে, মুসলমানরা কাফেরদের অধীন থেকে তাদের থেকে জিযিয়া আদায় করে এবং তাদের রক্ষার দায়িত্ব নেবে। এ ব্যাপারটি শুধু মদীনায় অবতীর্ণ সূরাসমূহ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। দৃষ্টিশক্তির অধিকারীরা মক্কায় অবতীর্ণ সূরাসমূহের মধ্যে স্পষ্টতই দেখতে পারেন, প্রথম থেকেই যে পরিকল্পনা ছিল তা ছিলো দ্বীনের বিজয় ও কর্তৃত্ব স্থাপন, কুফরী সরকারের অধীনে দ্বীন ও দ্বীনের অনুসারীদের জিম্মি হয়ে থাকা নয়। উদাহরণস্বরূপ দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা বনী-ইসরাইল, আয়াত ৭৬ ও ৮০; সূরা কাসাস, আয়াত ৮৫-৮৬; সূরা রূম, আয়াত ১ থেকে ৬; সূরা আস সাফফাত, আয়াত ১৭১ থেকে ১৭৯ এবং সূরা সোয়াদ, ভূমিকা ও ১১ আয়াত ১২ টীকাসহ।" (তাফহীমুল কুরআন, সূরা শুরাঃ৪২/১৩ তাফসীর দ্রঃ) 
.
    শায়খ ইবনে উসাইমীন রাহঃ বলেনঃ 
"আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা একদিক থেকে তা তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত, অপরদিকে তা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহকে একমাত্র আইনদাতা হিসাবে না মানলে তাওহীদুর রুবুবিয়্যাতে শিরক করা হয়। অপরদিকে আল্লাহ্‌র আইনকে না মেনে অন্য কারো আইনে বিচার-ফয়সালা করলে তাতে তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। অনুরূপভাবে, আল্লাহর আইন ছাড়া অন্য কোন আইনের বিচার-ফয়সালা মনে-প্রাণে মেনে নেয়াও তাওহীদুল উলুহিয়াতে শিরক করা হয়। সুতরাং এ থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, আইনদাতা হিসেবে আল্লাহকে মেনে নেয়া এবং আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করা তাওহীদের অংশ, (এর বিরোধীতা করা শিরকে আকবর)।"
(মাজমু ফাতাওয়া ও রাসাইলে ইবনে উসাইমীন ২/১৪০-১৪৪ ও ৬/১৫৮-১৬২)
------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলান।         

Post a Comment

0 Comments