Recent Tube

গণতন্ত্র বনাম স্বৈরাতন্ত্রঃ বর্তমান প্রেক্ষাপট : মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।


     
       নির্বাচন সহ নির্বাচনের পূর্ব পর অবস্থা চিন্তা করতেই হঠাৎ করে আলোড়ন সৃষ্টকারী প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহঃ এর কথা মনে পড়ে গেল।
শায়খ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহঃ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল - ইসলাম কি গণতন্ত্র কে সাপোর্ট করে?
.
জবাবে শায়খ বলেন, গণতন্ত্র সাপোর্ট নয়, ইসলাম যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দিয়েছে এটা গণতন্ত্রের কাছাকাছি। তবে প্রচলিত গণতন্ত্রের সাথে শতভাগ মিল নেই।
তন্ত্র দুটো - 
(১) গণতন্ত্র 
(২) স্বৈরাতন্ত্র।
আর কোন তন্ত্র আমার জানা নাই। অর্থাৎ জনগণের পরামর্শের মাধ্যমে হবে অথবা যে রাজা (শাসক) হবে সে একা (ক্ষমতার জোড়ে) সব করবে। তো "স্বৈর" এর চেয়ে "গণ" ভালো। ইসলাম যে নির্দেশগুলো দিয়েছে - আদালত, ইনসাফ, আমানত, দূর্নীতি মুক্ত হওয়া এগুলো গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভালো হয়। কাজেই ইসলাম স্বৈরাতন্ত্রের বিরোধী। ইসলাম মূলত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিয়েছে। তবে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের সাথে কিছু মিল অমিল আছে।
.
শায়খের বক্তব্যের সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে না কি স্বৈরাতন্ত্র চলছে। আমাদের দেশে আদালত, ইনসাফ ও আমানতের প্রতি লক্ষ্য রাখুন এবং দূর্নীতির প্রতি নজর দিন তাহলে বিষয়টি উপলব্ধি করতে সহজ হবে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে জনগণ বাধাপ্রাপ্ত হতো না, ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে(?) চার সন্তানের জননী গণধর্ষণের শিকার হতো না।
.
আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামকে সকল যুগের, সকল জাতির, সকল মানুষের পালন ও অনুসরণ যোগ্য করে প্রেরণ করেছেন। জাগতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জনকল্যাণমূলক ও প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে ইসলামে খুবই প্রশস্ততা রাখা হয়েছে। যেন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মানুষ তাদের সমাজের প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতির মধ্য থেকেই পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। এরই একটি দিক হলো রাষ্ট্রের শাসক নির্বাচন ও রাষ্ট্র পরিচালনার দিক।
.
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
ﻭَﺷَﺎﻭِﺭْﻫُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮِ ۖ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻋَﺰَﻣْﺖَ ﻓَﺘَﻮَﻛَّﻞْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ۚ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺘَﻮَﻛِّﻠِﻲﻥَ
"আর (হে নবী সা.) কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরার্মশ করুন (তথা জনগণের মতাম নিন)। অতঃপর যখন (কোন কাজ সম্পাদন করার) সংকল্প করবেন তখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালবাসেন।" (সূরা আলি ইমরানঃ৩/১৫৯)
.
প্রকৃত মুসলিমদের গুণ-বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে,
 وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ.
“(যারা সত্যিকার মুসলিম) তাদের প্রতিটি কাজ হবে পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে”। (সূরা শুরাঃ৪২/৩৮)
.
এতদুভয় আয়াতে যেভাবে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে পরামর্শের অপরিহার্যতা প্রতীয়মান হয়, তেমনিভাবে এতে ইসলামের রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিধান সংক্রান্ত কয়েকটি মূলনীতিও সামনে এসে যায়। তা হলো এই যে, ইসলামী রাষ্ট্র হলো পরামর্শ ভিত্তিক রাষ্ট্র যাতে পরামর্শের ভিত্তিতে নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে থাকে। এমনকি আলোচনা ও পরামর্শ করাকে ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য একটি মৌলিক বিষয় হিসাবে মর্যাদা দেয়া হয়েছে।
(তাফসীরে যাকারিয়া, সূরা ইমরানঃ৩/১৫৯)
.
জনগণের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া স্বৈরাতান্ত্রিক ভাবে শাসক হিসাবে বায়াত বা শপথ নিয়ে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ বলে গণ্য হবে না। যেমন, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
مَنْ بَايَعَ أَمِيرًا عَنْ غَيْرِ مَشُورَةِ الْمُسْلِمِينَ فَلا بَيْعَةَ لَهُ، وَلا بَيْعَةَ لِلَّذِي بَايَعَهُ.
"যে ব্যক্তি মুসলিম জনগণের পরামর্শ ও মতামত ছাড়াই শাসক হিসাবে বায়াত (শপথ) নেয় তার বায়াত বৈধ হবে না। আর যারা তার ইমারতের বায়াত গ্রহণ করবে তাদের বায়াতও বৈধ হবে না।" 
(মুসনাদে আহমদ, হাঃ ৩৯১)
.
আমর ইবনুল হারিস ইবনু মুসতালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ বলা হয়, 
أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ اثْنَانِ امْرَأَةٌ عَصَتْ زَوْجَهَا وَإِمَامُ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ.‏
সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে দুই ব্যক্তির,
১. স্বামীর অবাধ্যা স্ত্রীর এবং 
২. এমন দেশের (ইমাম) শাসক যাকে জনগণ অপছন্দ করে। 
(সুনানে তিরমিজী হাদিস নং ৩৫৯) 
.
অর্থাৎ যারা জনগণের পরামর্শ বা মতামতের মূল্যায়ন না করে বরং জুলুম করে স্বৈরাতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করে তারা জাহান্নামেরর সবচেয়ে কঠিক আযাব ভোগ করবে। আর যদি মুমিন নারী পুরুষের উপর অন্যায় অত্যাচার, জুলুম নির্যাতন করে নিজেদের খাঁটি স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে তাহলে তো কথায় নাই। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَتُوبُوا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَلَهُمْ عَذَابُ الْحَرِيقِ

নিশ্চয় যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার করে, তারপর তাওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব। আর তাদের জন্য রয়েছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার আযাব। (সূরা বুরুজঃ৮৫/১০)
----------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments