Recent Tube

আহলে হাদীস কর্তৃক তাফহীমুল কুরআনে বর্ণিত ‎سَاق 'পায়ের গোছা' ‏এর তাফসীরে ভুল প্রমাণে ব্যর্থ চেষ্টা এবং আমাদের জবাবঃ ‎Tanzil ‎Islam ‎

আহলে হাদীস কর্তৃক তাফহীমুল কুরআনে বর্ণিত سَاق 'পায়ের গোছা' এর তাফসীরে ভুল প্রমাণে ব্যর্থ চেষ্টার দালিলিক জবাবঃ
------------------------------------------------------------------
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ وَيُدْعَوْنَ إِلَى السُّجُودِ فَلَا يَسْتَطِيعُونَ.
"সে দিন পায়ের গোছা উন্মোচন করা হবে। আর তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান জানানো হবে, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না।" (সূরা ক্বালাম : ৬৮/৪২)
.
আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) তাঁর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ 'তাফহীমুল কুরআন'-এ অত্র আয়াতের অনুবাদ করেন, এভাবে-
"যেদিন কঠিন সময় এসে পড়বে এবং সিজদা করার জন্য লোকদেরকে ডাকা হবে। কিন্তু তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে না।" (সূরা ক্বালাম : ৬৮/৪২)
তাফসীর করতে গিয়ে তিনি বলেন,
"মূল আয়াতে আছে يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ سَاقٍ “যেদিন পায়ের গোছা অনাবৃত করা হবে” সাহাবা ও তাবেয়ীনগণের এক দলের মতে একথাটি প্রচলিত প্রবাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী প্রবাদে দুর্দিনের আগমনকে “পায়ের গোছা অনাবৃত করা” বলে বুঝানো হয়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসও কথাটির একই অর্থ বর্ণনা করেছেন। আরবী ভাষা থেকে তিনি এর স্বপক্ষে প্রমাণও পেশ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং রাবী ইবনে আনাছ থেকে বর্ণিত অপর একটি ব্যাখ্যায় পায়ের গোছা অনাবৃত করার অর্থ করা হয়েছে সত্যকে আবরণ মুক্ত করা। এ ব্যাখ্যা অনুসারে অর্থ হবে, যেদিন সব সত্য উন্মুক্ত হবে এবং মানুষের সব কাজ কর্ম স্পষ্ট হয়ে সামনে আসবে।" (তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন, ১৮ তম খন্ড, পৃঃ ২৭)

.
আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) সাহাবী তাবেয়ীগণের বরাতে তাফসীর পেশ করার পরেও আমাদের আহলে হাদীসের শায়খগণ তাকে বিতর্কিত করার জন্য তাঁর পায়ে কামড় মারেন। কেন তিনি রূপক অর্থে তাফসীর করলেন! শাব্দিক অর্থে তাফসীর পেশ করে কেন তিনি প্রমাণ করলেন না, মানুষের মত আল্লাহরও পা আছে, পায়ের গোছা আছে!  এটাই ওনার অপরাধ (?) (দেখুনঃ ভ্রান্ত আক্বীদা বনাম সঠিক আক্বীদা, পৃঃ ৩৯) কিন্তু আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) যাদের নীতি অনুসরণ করে এ তাফসীর করলেন, তাঁদের বিরোধীতা করতে এদের সাহস হল না। কেননা, তাঁদের বিরোধীতা করতে গেলে আহলে হাদীস নিজেরাই বিতর্কিত হবেন। তারপরও আল্লাহ তা'য়ালা তাদের বিতর্কিত করছেন।
.
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা., মুজাহিদ ও দাহহাক রহ. সহ বহু সংখ্যক ইমাম ও মুফাসসির পায়ের গোছা ( ﺳﺎﻕ )-কে শাব্দিক অর্থের পরিবর্তে রূপক অর্থে তাওয়িল করেছেন 'অবস্থার বিভীষিকা ও প্রচণ্ডতা' বলে। (দেখুনঃ তাবারী, ইবনু আবি হাতিম, বাগভী, ফাতহুল কাদীর প্রভৃতি তাফসীর গ্রন্থ, সূরা ক্বালাম : ৬৮/৪২) 
এছাড়াও ইমাম হাসান বসরী, ইমাম নজর ইবনু শুমায়ল রহ. ও ইমাম ইবনু হিব্বান রহ সহ বহু সংখ্যক মুহাদ্দিস ‘আল্লাহর পা’ (ﻗﺪﻡ)-এর শাব্দিক অর্থ বর্জন করে রূপক অর্থ দ্বারা তাওয়িল করেছেন। (দেখুনঃ-আসমা-সিফাত, বায়হাকী : ৩৫২; দাফউ শুবাহিত তাশবীহ : ৮১; সহীহ ইবনু হিব্বান : ১/৫০২)
.
আহলে হাদীসের শায়খ মুযাফফর বিন মুহসীন তার 'ভ্রান্ত আক্বীদা বনাম সঠিক আক্বীদা' বইয়ের 'অপব্যাখ্যা ও পর্যালোচনা' শিরনামে লেখেন:
"কিছু বাতিল ফিরকা ও আক্বীদাভ্রষ্ট মুফাসসির আল্লাহর হাত, পা, চোখ, চেহারার রূপক অর্থ করেছেন।"(ভ্রান্ত আক্বীদা বনাম সঠিক আক্বীদা, পৃঃ ৩৮)  এখন প্রশ্ন হল, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা., মুজাহিদ ও দাহহাক রহ. সহ অসংখ্য ইমাম ও মুফাসসিরগণ কি বাতিল ফিরকা ও আক্বীদাভ্রষ্ট? আর পৃথিবীতে সহীহ আকিদা ওয়ালা কি শুধু আহলে হাদীস ও দেহবাদী? 
.
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা ইউনুসের ২ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন,
أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ رَجُلٍ مِنْهُمْ أَنْ أَنْذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّهِمْ ۗ قَالَ الْكَافِرُونَ إِنَّ هَٰذَا لَسَاحِرٌ مُبِينٌ.
"এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট ওহী প্রেরণ করেছি যে, তুমি মানুষকে সতর্ক কর এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য রয়েছে قَدَمَ صِدْقٍ উচ্চ মর্যাদা। কাফিররা বলে, ‘এ তো স্পষ্ট যাদুকর’।" (সূরা ইউনুস :১০/০২)
.
এখানে আল্লাহ তায়ালা “ قَدَمَ صِدْقٍ ” শব্দ ব্যবহার করেছেন। আরবীতে قدم কাদাম অর্থ হলো পা। এবং صدق অর্থ হলো সত্য। “ قَدَمَ صِدْقٍ ” এর শাব্দিক অর্থ হলো সত্যের পা। তাহলে আহলে হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী কি বলতে হবে, আল্লাহ তায়ালা যেহেতু কুরআনের সত্যের পায়ের কথা বলেছেন, সুতরাং 'সত্যের পা' রয়েছে? কেননা, তাদের দৃষ্টিতে কুরআনের রূপক অর্থ করা হারাম। অথচ আহলে হাদীসের তাফসীর বায়ানুল কুরআনে শাব্দিক অর্থ বর্জন করে রূপক অর্থ করে বলা হয়েছে- قَدَمَ صِدْقٍ এর অর্থ 'উচ্চ মর্যাদা' উত্তম প্রতিদান ও ঐ সকল নেক আমল যা একজন মু'মিন তার জীবনে করে থাকে। কপি মুফাসসির শায়েখ যাকারিয়াও শাব্দিক অর্থ বর্জন করে রূপক অর্থ গ্রহণ করেছেন। আহলে হাদীসের শায়েখগণ সূরা ক্বালামের ৪২ নং আয়াত দ্বারা শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে 'আল্লাহর পা' সাব্যস্ত করে কিন্তু সূরা ইউনুসের ২ নং আয়াতের শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে 'সত্যের পা' সাব্যস্ত করেন না কেন? রূপক অর্থ গ্রহণ করার কারণে যদি আল্লামা মওদুদী (রাহঃ) সহ অসংখ্য ইমাম ও মুফাসসির বাতিল ফিরকা ও আকিদাভ্রষ্ট মুফাসসির বলে গণ্য হন, তাহলে শাব্দিক অর্থ বর্জন করে রূপক করার অপরাধে আহলে হাদীস বাতিল ফিরকা ও আকিদাভ্রষ্ট বলে গণ্য হবেন না কেন?

--------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ, গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা। 

Post a Comment

0 Comments