বিতি কিচ্ছা,
পর্ব-৩০,
কেল্লাফতে রসাতল এক্সপ্রেস।
বিশাল দৈর্ঘ্যের একটি রেলগাড়ী। নাম রসাতল এক্সপ্রেস। গন্তব্য!? সে তো নামেই মালুম। এর যাত্রীদের মধ্যে আবেগ আছে, নেই কোন উৎকণ্টা। রেলগাড়ি চলছে তো চলছেই, বিরতিহীন এই চলা। তথাপিও যে কেউ চাইলেই যে কোন সময় এই রেলগাড়িতে আরোহন করতে পারেন। ভুলেও থামার নয় এই রেলগাড়ি, অবিরাম দ্রুত থেকে দ্রুত গতিতে অগ্রসরমান এই রেলগাড়িতে যাত্রী সাধারণের কোন কমতি যেন নেই। দিন কে দিন শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে রসাতল এক্সপ্রেসের ব্যবসা।
কালো রঙের একটি ওভারকোট যার দুটি হাত থাকবে না - এ রকম একটি পোষাক গায়ে দিয়ে যে কেউই এই রেলগাড়িতে চাকরি নিতে পারে। তার পর আর কোন বাধা তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে না। তার জন্য সাত খুন মাফ। সুতরাং অধ্যক্ষ সিরাজ একটি মাদ্রাসার দায়িত্বে থেকে আপন ক্যারিশমা প্রদর্শন করে পার পেতে সাহসী হয়েছেন। এটা কোন অযৌক্তিক সাহস নয় মোটেও। ও সি মোয়াজ্জেম যা পারে, ডি আই জি মিজান যা পারে, ওরা তো দৃশ্যমান ওভারকোটে চিহ্নিত নয়, ওদের নিজস্ব ইউনিফর্মের উপর এই ওভারকোট দৃশ্যত বেমানান। তাই ওরা অদৃশ্য ওভারকোটে নিজেদের জাহির করেন। অধ্যক্ষ সিরাজের ওভারকোটতো দৃশ্যমান।
এদিকে বালিশ নিয়ে বিতিকিচ্ছা সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত ঘটনা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, হলমার্ক কেলেংকারী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো শুধু শুধুই একটা সময়ক্ষেপন। বিয়ের মজলিশ থেকে কনে অপহরন, আর অপহরন করে ধর্ষণ অতঃপর খুন, অতঃপর কালো ওভারকোটের আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ানো খুবই উপভোগ্য খেলা বটে।
কিন্তু কিছু কিছু ধর্মান্ধরা এসব কর্ম কাণ্ডকে দারুন ভাবে সামাজিক অবক্ষয়, নৈতিক বিপর্যয় ও মুল্যবোধের অতলে তলিয়ে যাওয়া হিসাবে দেখে থাকেন আজও। যে কারণে নির্বিঘ্ন রসাতল যাত্রা নিয়ত: ব্যহত হয়। এতএব নির্বিচারে দমন পীড়ন অব্যাহত রাখাই সর্বশেষ ও একমাত্র কৌশল। সম্প্রতি আবু সালেকের অপরাধে জাহালম নামের এক নিরপরাধ শ্রমিকের তিন বৎসর কারাবাস এই দমন পীড়নেরই একটি পদক্ষেপ। এটা কি অবিচার? না। এটি অবিচার নয় এজন্য যে, জাহালম রসাতল এক্সপ্রেসের যাত্রী হয়নি। আসলে ভিন্ন মতের কারো আর্তনাদ আজ কোন কর্ণে প্রবেশ করতে নেই। তাহলেতো থালা, বাটি, তালই, ভাইপো সবাইকে নিয়ে দ্রুত রসাতল যাত্রা সফল হবার নয়। এতএব চলছে, চলবে, রসাতল এক্সপ্রেস। দেশময়, বিশ্বময় চলবে রসাতল যাত্রা। যত নির্বিঘ্নে এ যাত্রা সম্পন্ন করা যায় ততই কেল্লাফতে।
0 Comments