Recent Tube

পহেলা বৈশাখঃ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস পর্যালোচনা ও মুসলমানদের করনীয়। মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

 
                   পহেলা বৈশাখঃ সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
                  পর্যালোচনা  ও মুসলমানদের করনীয়।    


     আমাদের দেশে প্রচলিত বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনের একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জি অনুসারেই সকল কাজ কর্ম পরিচালিত হতো। হিজরী পঞ্জিকা চন্দ্র মাসের উপরে নির্ভরশীল। সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন আর চন্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। এই কারণে চন্দ্র মাসের ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এ জাতীয় অনেক কাজ ঋতু নির্ভর। এ জন্য ভারতের মোঘল সম্রাট আকবরের সময় প্রচলিত হিজরী চন্দ্র পঞ্জিকা কে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

     সম্রাট আকবর বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে এ কাজের দায়িত্ব দেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবর এ হিজরী  সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ২৯ বৎসর পূর্বে তার সিংহাসন আহরোণের বৎসর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এ জন্য ৯৬৩ হিজরী থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতিপূর্বে বাংলায় প্রচলিত শক বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস। এ জন্য বৈশাখ মাসকেই বাংলা বর্ষপঞ্জীর প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখ কে নববর্ষ ধরা হয়।

   তাহলে বাংলা সন মূলত হিজরী সন। রাসূলুল্লাহ (সা) হিজরত থেকেই এ পঞ্জিকার শুরু। ১৪১৫ বঙ্গাব্দ অর্থ রাসূলুল্লাহ (সা) এর হিজরতের পর ১৪১৫। ৯৬২ চন্দ্র বৎসর ও পরবর্তী ৪৫৩ বৎসর সৌর বৎসর। সৌর বৎসর চন্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ বেশি এবং প্রতি ৩০ বৎসরে চন্দ্র বৎসর এক বছর বেড়ে যায়। এ জন্য ১৪২৮ হিজরী সাল মোতাবেক বাংলা ১৩১৪-১৫ সাল হয়।

   মোঘল সময় থেকেই ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা করা হতো। প্রজারা চৈত্র মাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং জমিদারগণ ১লা বৈশাখে প্রজাদের মিষ্টি মুখ করাতেন, কিছু আনন্দ উৎসব হতো। এছাড়াও সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার ১লা বৈশাখে 'হালখাতা' করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে ১লা বৈশাখ উপলক্ষে এমন কিছু কর্মকান্ড করা হচ্ছে যা কখনোই পূর্ববর্তী সময়ে বাঙালীরা করেন নি এবং যা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে প্রচন্ড ভাবে সাংঘর্ষিক। ১লা বৈশাখের নামে যুবক যুবতী, কিশোর কিশোরীদেরকে অশ্লীলতা, বেহায়াপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এদেশের মানুষ জানতেন না এখন নববর্ষের নামে তা আমাদের সংস্কৃতির অংশ বানানো হচ্ছে।

    আবার ব্যবসায়িক, প্রশাসনিক, রাজনৈতিক বা সামাজিক কোন স্বার্থে অনেক মুসলিম ১লা বৈশাখ উপলক্ষে ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার পথ খুলে দেওয়ার জন্য মিছিল, মেলা ইত্যাদির পক্ষে অবস্থান নেন। এর ভয়ংকর পরিণতির কথা আল্লাহর ভাষায় শুনুনঃ

إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلْفَٰحِشَةُ فِى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ 

     যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে মর্মন্তদ শাস্তি এবং আল্লাহ জানেন, তোমরা জাননা। 

(সূরা নূরঃ২৪, আয়াতঃ১৯)।
.
      সুুতরাং সাবধান হোন! সতর্ক হোন! আপনে কি আল্লাহর সাথে পাল্লা দিবেন? আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আপনে কি বিজয়ী হবে? কখন কিভাবে আপনার ও আপনার পরিবারের জীবনে 'মর্মন্তুদ শাস্তি' নেমে আসবে আপনে বুঝতেও পারবেন না। আপনার রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক বা অন্য কোন স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্য কোন ভালো পথ দেখুন। অন্য বিকল্প চিন্তা করুন। তবে কখনোই অশ্লীলতা প্রসার ঘটে এরূপ কোন বিষয়কে আপনার স্বার্থ উদ্ধারের বাহন বানাবেন না। 
  মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের হেফাজত করুন। আমীন!
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।         

Post a Comment

0 Comments