সুওয়াল-জাওয়াব: সত্যের মাপকাঠি প্রসঙ্গে:
১. সত্যের মাপকাঠি এর সংজ্ঞা কি?
২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার শর্ত কি কি?
৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন, তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়া যাবে কি না?
৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁকে বা তাঁর কোন মতামতকে অন্য কোন মহান ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে কি না?
৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে কি না? এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে কি না?
৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে, এমনকি হত্যা করে তাহলে কি ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম বলে গণ্য হবেন?
জাওয়াবঃ
১. মিয়ারে হক বা সত্যের মাপকাঠি শব্দের অর্থ হলো নির্ভুল পরিমাপক, নিখুঁত তুলাদণ্ড, নির্ভুল মানদণ্ড ইত্যাদি। সত্যের মাপকাঠি বা মিয়ারে হক বলতে বুঝায়, যার অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যে হক বা সত্য নিহিত আছে এবং যার অবাধ্যতার/বিরোধীতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَصَدُّوا۟ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَشَآقُّوا۟ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ ٱلْهُدَىٰ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًٔا وَسَيُحْبِطُ أَعْمَٰلَهُمْ
নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে, আল্লাহর পথে বাধা দিয়েছে এবং তাদের নিকট হিদায়াতের পথ সুস্পষ্ট হওয়ার পরও রাসূলের বিরোধিতা করেছে, তারা আল্লাহর কোনই ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। আর শীঘ্রই তিনি তাদের আমলসমূহ নিষ্ফল তথা #বাতিল করে দেবেন।
(সূরা মুহাম্মদঃ৩২)
রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে সাহাবাগণ (রা) কে তুলনা করা হারাম। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
لَّا تَجْعَلُوا۟ دُعَآءَ ٱلرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَآءِ بَعْضِكُم بَعْضًاۚ قَدْ يَعْلَمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًاۚ فَلْيَحْذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না; তোমাদের মধ্যে যারা চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে জানেন। অতএব যারা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সা. এর) নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা যেন তাদের ওপর বিপর্যয় নেমে আসা অথবা যন্ত্রণাদায়ক আযাব পৌঁছার ভয় করে।
(সূরা নূরঃ৬৩)
২. সত্যের মাপকাঠি হওয়ার প্রধান শর্ত তিনি ওহী প্রাপ্ত হবেন, তিনি মাসূম হবেন এবং তাঁর আদেশ মান্য করাই আল্লাহর আদেশ পালন করা বলে গণ্য হবে। আল্লাহর ভাষায়
وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلْهَوَىٰٓ
إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْىٌ يُوحَىٰ
আর তিনি মনগড়া কথা বলেন না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।
(সূরা নাজমঃ২-৩)
আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।
(সূরা নিসাঃ৮০)
৩. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাঁর কোন নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত এড়িয়ে যাওয়ার অধিকার কোন মুমিন মুসলিমের নাই।
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْۗ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَٰلًا مُّبِينًا
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু’মিনা নারীর সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবেনা। কেহ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে অমান্য করলে সেতো স্পষ্টই পথভ্রষ্ট।
(আহযাবঃ৩৬)
৪. যিনি সত্যের মাপকাঠি হবেন তাকে বা তাঁর কোন মতামতকে কোন ব্যাক্তির কথা বা কাজ দ্বারা পরিমাপ করা যাবে না বরং সকল ব্যাক্তির কথা বা কাজ তাঁকে দিয়ে পরিমাপ করতে হবে। ُ عِمْرَانَ بْنَ حُصَيْنٍ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ ". فَقَالَ بُشَيْرُ بْنُ كَعْبٍ مَكْتُوبٌ فِي الْحِكْمَةِ إِنَّ مِنَ الْحَيَاءِ وَقَارًا، وَإِنَّ مِنَ الْحَيَاءِ سَكِينَةً. فَقَالَ لَهُ عِمْرَانُ أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتُحَدِّثُنِي عَنْ صَحِيفَتِكَ.
ইমরান ইবনু হুসায়ন হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই নিয়ে আনে না। তখন বুশায়র ইবনু কা’ব বললেনঃ হিকমাতের পুস্তকে লিখা আছে যে, কোন্ কোন্ লজ্জাশীলতা ধৈর্যশীলতা বয়ে আনে। আর কোন্ কোন লজ্জাশীলতা এনে দেয় শান্তি ও সুখ। তখন ‘ইমরান বললেনঃ আমি তোমার কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করছি। আর তুমি কিনা (তার স্থলে) আমাকে তোমার পুস্তিকা থেকে বর্ণনা করছ।
(সহীহ বুখারী হাঃ৬১১৭, মুসলিম১/১২, হাঃ ৩৭, আহমাদ ২০০১)
৫. যিনি সত্যের মাপকাঠি তাঁর অনুকরণ ও অনুসরণের মধ্যো হক বা সত্য নিহিত আছে এবং তাঁর কোন অবাধ্যতার/বিরোধীতার মধ্যে বাতিল বা অসত্য নিহিত আছে। আল্লাহ তাঁর রাসূল (সা) কে বলেনঃ
قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَٰفِرِينَ
বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না।
(সূরা ইমরানঃ৩২)
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُۥ كَانَت تَّأْتِيهِمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَقَالُوٓا۟ أَبَشَرٌ يَهْدُونَنَا فَكَفَرُوا۟ وَتَوَلَّوا۟ۚ وَّٱسْتَغْنَى ٱللَّهُۚ وَٱللَّهُ غَنِىٌّ حَمِيدٌ
এটি এ জন্য যে, তাদের রাসূলগণ তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আসত, অথচ তারা বলত, মানুষই কি আমাদের পথ প্রদর্শন করবে? অতঃপর তারা কুফরী করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। আর আল্লাহ বে-পরওয়াই দেখালেন এবং আল্লাহ অভাবমুক্ত পরম, প্রশংসিত।
(সূরা তাগাবুনঃ৬)
৬. কেউ যদি সত্যের মাপকাঠি'র বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যুদ্ধ করে কিংবা হত্যা করে তাহলে ঐ ব্যাক্তি মুমিন মুসলিম হিসাবে গণ্য হবে না। এতদূর নয়, কেউ সত্যের মাপকাঠি'র কোন রায় বা সিদ্ধান্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে না নেয় তাহলে ঐ ব্যাক্তি মুমিন বলে গণ্য হবে না। আল্লাহর ভাষায়
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا۟ تَسْلِيمًا
অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।
(সূরা নিসাঃ৬৫)
বি.দ্রঃ পূর্বের একটি পোস্টে এ প্রশ্নগুলো করেছিলাম কিন্তু কেউ এর সঠিক জবাব দিতে না পারায় আমি সুওয়াল জাওয়াব শিরনামে এই পোস্টটি করলাম। কারো নিকট কোন প্রশ্নের জবাব ভুল বলে মনে হলে তা দলিলসহ ধরে দিতে পারেন। সংশোধন করে নিব।
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা ও মাওলানা।
0 Comments