Recent Tube

প্রিয় নবীজি সঃ এর নয়টি ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে কারবালা ট্রাজেডি। আবুল হুসাইন আলেগাজী।

প্রিয় নবীজি সঃ এর নয়টি ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে কারবালা ট্রাজেডি। 
------------------------------------------------  
     প্রিয় নবীজি সঃ শুধু কারবালা ট্রাজেডি নয়, ফিতনায়ে ইরতিদাদ (কিছু নও মুসলিম দের -ছাহাবীদের সময়কালীন - ইসলাম ত্যাগ), শাহাদতে উমর, শাহাদতে উসমান, খলীফা আলীর বিরুদ্ধে আমীর মুয়াবিয়ার বিদ্রোহ, খারেজীদের উৎপাত ও আমীর মুয়াবিয়ার সাথে ইমাম হাসানের সন্ধিসহ কেয়ামত পর্যন্ত সঙ্ঘটিতব্য উল্লেখযোগ্য সকল বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন৷ এসব ভবিষ্যদ্বাণী বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থের কিতাবুল ফিতানসহ নানা অধ্যায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে৷

    নীচে আমি কারবালাসহ আহলে বাইত তথা হযরত আলী ও হাসান-হুসাইনের উপর সঙ্ঘটিত হওয়া জুলুম সম্পর্কে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম'র কৃত ভবিষ্যদ্বাণীর ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য নয়টি বর্ণনা তুলে ধরছি:
عَنْ عَلْقَمَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ مسعود-رضي الله عنه- ، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذْ أَقْبَلَ فِتْيَةٌ مِنْ بَنِي هَاشِمٍ. فَلَمَّا رَآهُمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ، اغْرَوْرَقَتْ عَيْنَاهُ وَتَغَيَّرَ لَوْنُهُ. قَالَ ، فَقلْتُ: مَا نَزَالُ نَرَى فِي وَجْهكَ شَيْئاً نَكْرَهُهُ. فَقَالَ: «إِنَّا أَهْلُ بَيْتٍ اخْتَارَ اللهِ لَنَا الآخِرَةَ عَلَى الدٌّنْيَا ، وَإِنَّ أَهْلَ بَيْتِي سَيَلْقَوْنَ بَعْدِي بَلاَءً وَتَشْرِيداً وَتَطْرِيداً ، حَتَّى يَأْتِىَ قَوْمٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ مَعَهُمْ رَايَأتٌ سُودٌ. فَيَسْأَلونَ الْخَيْرَ ، فَلاَ يُعْطَوْنَهُ. فَيُقَاتِلُونَ فَيُنْصَرُونَ. فَيُعطَوْنَ مَا سَأَلُوا ، فَلاَ يَقْبَلُونَهُ ، حَتَّى يَدْفَعُوهَا إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِي فَيَمْلَؤُهَا قِسْطاً كَمَا مَلَؤُوهَا جَوْراً ، فَمَنْ أَدْرَكَ ذلِكَ مِنْكُمْ ، فَلْيَأْتِهِمْ وَلَوْ حَبْواً عَلَى الثَّلْجِ». أخرجه ابن ماجه (2/1366 ، رقم 4082) ، والحاكم (4/511 ، رقم 8434). 
অর্থঃ হযরত আলকামা হযরত ইবনে মাসউদ -رضي الله عنه- থেকে বর্ণনা করেন যে, একসময় আমরা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে ছিলাম। ওই সময় বনু হাশেমের কয়েকজন তরুণ এলো। তাদেরকে দেখে নবীজির চোখে কান্না ভাব চলে এলো এবং চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। তখন আমি বললাম, আমরা আপনার চেহেরায় অনাকাঙ্খিত বিষয় দেখতে পাচ্ছি। তিনি বললেন, “আমরা হলাম এমন এক ঘরওয়ালা, যাদের জন্য আল্লাহ দুনিয়ার উপর আখেরাতকে পছন্দ করেছেন। আমার পরে নিশ্চয় আমার আহলে বাইত পরীক্ষা ও জুলুম-নিপীড়নের মুখোমুখি হতে থাকবে। এক পর্যায়ে পূর্ব থেকে কালো পতাকা নিয়ে একটি দল আসবে। তারা মানুষের কাছে কল্যাণ (আনুগত্য) চাইবে। কিন্তু তাদেরকে তা দেওয়া হবে না। এতে তারা যুদ্ধ করবে এবং বিজয়ী হবে। অতঃপর তাদেরকে তাদের চাওয়া বস্তু দেওয়া হবে। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করবে না। বরং তা তারা আমার আহলে বাইতের এক লোককে দিয়ে দিবে। অতঃপর তিনি পৃথিবীকে ইনসাফ দ্বারা পূর্ণ করে দিবেন, যেমন ইতিপূর্বে তাকে জুলুম দ্বারা পূর্ণ করে ফেলেছিল। তো তোমাদের কেউ ওই সময় থাকলে পাথরের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাদের কাছে যাবে।” [সুনানে ইবনে মাজা (৪০৮২) ও মুসতাদরকে হাকেম (৮৪৩৪)]।

ব্যাখ্যা ও জ্ঞাতব্যঃ 
১. প্রিয় নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী, ফাতেমা ও হাসান-হুসাইনকে গোলাম বান্দী ও সোনা-রূপার ব্যবহার থেকে বিরত রাখতেন। এ ব্যাপারে একাধিক স্পষ্ট হাদীছ রয়েছে [দেখুন ছহীহ বোখারী (২৯৪৫), ছহীহ মুসলিম (২৭২৭), সুনানে আবু দাউদ (৪২১৩), সুনানে নাসায়ী (৫১৪০), মুসনদে আহমদ (২২৪১৭, ২২৪৫১) ও মুস্তাদরকে হাকেম (৪৭২৫)]। 
২. এ হাদীছে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী হযরত আলী, হাসান, হুসাইন ও তাঁর পরিবার, জায়েদ বিন আলী ও নফসে জকিয়াসহ আহলে বাইতের লোকজন বনু উমাইয়া ও বনু আব্বাসসহ বিভিন্ন শাসকদের কাছ থেকে জুলুম ও হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলের। কারণ, তারা অন্যায়ের সাথে আপোষ করতে পারেনি। 
৩. এ হাদীছের শেষের দিকে যে লোকের কথা বলা হয়েছে, তিনি হলেন ইমাম মাহদী এবং পূর্বদিকের কালো পতাকাওয়ালা লোক বলতে খোরাসানসহ পূর্বদিকের মুমিন যোদ্ধাদের কথা বলা হয়েছে। 

عَنْ شَقِيقِ بن أَبِي عَبْدِ اللَّهِ ، حَدَّثَنِي عُمَارَةُ بن يَحْيَى بن خَالِدِ بن عُرْفُطَةَ ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ خَالِدِ بن عُرْفُطَةَ يَوْمَ قُتِلَ الْحُسَيْنُ بن عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، فَقَالَ لَنَا خَالِدٌ: هَذَا مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، يَقُولُ: «إِنَّكُمْ سَتُبْتَلَوْنَ فِي أَهْلِ بَيْتِي مِنْ بَعْدِي». أخرجه الطبرانى فى الكبير (4/192 ، رقم 4111) ، قال الهيثمى (9/194): رجاله رجال الصحيح غير عمارة ، وعمارة وثقه ابن حبان.
অর্থঃ হযরত উমারা বিন ইয়াহয়া বিন খালেদ বলেন, যেদিন হুসাইন বিন আলীকে -رضي الله عنه- হত্যা করা হয়েছে, সেদিন আমরা খালিদ বিন উরফাতার কাছে ছিলাম। খালিদ তখন বলেছিলেন, আমি আল্লাহর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এটাই বলতে শুনেছি। তাঁকে বলতে শুনেছি যে, “তোমরা আমার পরে আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে পরীক্ষার মুখোমুখি হবে।” [মুজমে তবরানী কবীর (৪/১৯২), মানঃ ছহীহ]।

عن أبي سعيد -رضي الله عنه- ، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن أهل بيتى سيلقون من بعدى من أمتى قتلا وتشريدًا ، وإن أشد قومًا لنا بغضًا بنو أمية وبنو المغيرة وبنو مخزوم ». أخرجه الحاكم (4/534 ، رقم 8500) وقال : صحيح الإسناد ، ونعيم بن حماد (1/131 ، رقم 319).
অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার পরে নিশ্চয় আমার আহলে বাইত পরীক্ষা ও জুলুম-নিপীড়নের মুখোমুখি হতে থাকবে। আর আমাদের প্রতি সবচেয়ে বেশী বিদ্বেষ পোষণ করবে বনু উমাইয়া, বনু মুগীরা ও বনু মখজুম।” [মুস্তাদরকে হাকেম (৪৫০০), মানঃ ছহীহ]।
প্রসঙ্গত, উমাইয়া, বনু মুগীরা ও বনু মখজুম হলো কোরায়শের তিনটি শাখা। 

عَنْ نُجَيٍّ ، أَنَّهُ سَارَ مَعَ عَلِيٍّ ، وَكَانَ صَاحِبَ مَطْهَرَتِهِ ، فَلَمَّا حَاذَى نِينَوَى ، وَهُوَ مُنْطَلِقٌ إِلَى صِفِّينَ ، فَنَادَى عَلِيٌّ : اصْبِرْ أَبَا عَبْدِ اللهِ ، اصْبِرْ أَبَا عَبْدِ اللهِ ، بِشَطِّ الْفُرَاتِ ، قُلْتُ : وَمَاذَا ؟ قَالَ : دَخَلْتُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّىْ اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، ذَاتَ يَوْمٍ ، وَعَيْنَاهُ تَفِيضَانِ ، قُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ ، أَغْضَبَكَ أَحَدٌ ، مَا شَأْنُ عَيْنَيْكَ تَفِيضَانِ ؟ قَالَ : «بَلْ قَامَ مِنْ عِنْدِي جِبْرِيلُ قَبْلُ ، فَحَدَّثَنِي أَنَّ الْحُسَيْنَ يُقْتَلُ بِشَطِّ الْفُرَاتِ ، قَالَ : فَقَالَ : هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ أُشِمَّكَ مِنْ تُرْبَتِهِ ؟ قَالَ : قُلْتُ : نَعَمْ ، فَمَدَّ يَدَهُ فَقَبَضَ قَبْضَةً مِنْ تُرَابٍ فَأَعْطَانِيهَا ، فَلَمْ أَمْلِكْ عَيْنَيَّ أَنْ فَاضَتَا». أخرجه أحمد (1/85 ، رقم 648) ، وأبو يعلى (1/298 ، رقم 363) ، والطبرانى (3/105 ، رقم 2811) ، وابن أبى شيبة (7/478 ، رقم 37367) ، والبزار (3/101 ، رقم 884) . قال الهيثمى (9/187) : رجاله ثقات ، ولم ينفرد نجى بهذا . 
অর্থঃ তাবেয়ী নুজাই (হযরত আলীর সঙ্গী ও খাদেম) বলেন যে, তিনি হযরত আলীর সাথে চলছিলেন। সিফফীনের পথে তিনি যখন নিনভীর (বর্তমানে উত্তর ইরাকের একটি জেলা) পাশ দিয়ে গেলেন, তখন ডাক দিয়ে বললেন, ‘আবদুল্লাহর বাপ! ফুরাতের তীরে একটু ছবর করো।’ আমি বললাম, কেন? তিনি বললেন, আমি একদিন নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে গেলাম। তখন তাঁর চোখদ্বয় অশ্রুসিক্ত ছিল। আমি বললাম, ইয়া নবীয়াল্লাহ! আপনাকে কি কেউ ক্ষুব্ধ করেছে? আপনার চোখদ্বয় অশ্রুসিক্ত কেন? তিনি বললেন, “জিবরীল একটু আগেই আমার কাছে এসে গেলেন। তিনি বলেছেন, হুসাইনকে ফুরাতের তীরে হত্যা করা হবে।” তিনি (আরো) বলেন, “তো তিনি (জিবরীল) বললেন, আমি কি আপনাকে ওই তীরের মাটি শুঁকাবো? আমি বললাম, হ্যা! তখন তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করে কিছু মাটি নিয়ে আমাকে দিলেন। তখন আমি আমার চোখদ্বয়ের অশ্রু ধরে রাখতে পারিনি।” [মুসনদে আহমদ (৬৪৮), মুসনদে আবু ইয়ালা (৬৩৬), মুসনদে বজ্জার (৮৮৪), মুছন্নফে ইবনে আবী শায়বা (৩৭৩৬৭) ও মুজমে তবরানী কবীর (৩/১০৫), মানঃ ছহীহ]।

عن أم سلمة -رضى الله عنها- ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم اضطجع ذات ليلة للنوم فاستيقظ وهو حائر ثم اضطجع فرقد ثم استيقظ وهو حائر دون ما رأيت به المرة الأولى ثم اضطجع فاستيقظ وفي يده تربة حمراء يقبلها فقلت ما هذه التربة يا رسول الله؟ قال: «أَخْبَرَنِي جِبْرِيلُ أَنَّ الحُسَيْنٍ يُقْتَلُ بِأَرْضِ الْعِرَاقِ ، فَقُلْتُ لِجِبْرِيلَ: أَرِنِي تُرْبَةَ الأَرْضِ الَّتِي يُقْتَلُ فِيهَا، فَهَذِهِ تُرْبَتُهَا». أخرجه الحاكم (4/440 ، رقم 8202) وقال : صحيح على شرط الشيخين ، ووافقه الذهبى . وابن سعد فى الطبقة الخامسة من الصحابة طبعة مكتبة الصديق (1/423-424 ، رقم 411) ، وابن أبى عاصم فى الآحاد والمثانى (1/310 ، رقم 429) ، والطبرانى (3/109 ، رقم 2821).
অর্থঃ উম্মে সালামা –رضي الله عنها- থেকে বর্ণিত, তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একরাত ঘুমানোর জন্য শয়ন করলেন। অতঃপর জেগে উঠলেন এবং তখন তিনি একটু বিচলিত ছিলেন। অতঃপর আবার ঘুমালেন। পরে তিনি জেগে উঠলেন এবং আগের বারের চেয়ে একটু কম বিচলিত ছিলেন। অতঃপর আবার ঘুমালেন। পরে তিনি জেগে উঠলেন এবং ওই সময় তাঁর হাতে কিছু লাল মাটি ছিল, যাতে তিনি চুমু দিচ্ছিলেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ এটি কিসের মাটি? বললেন, “জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন, হুসাইনকে ফুরাতের তীরে হত্যা করা হবে। তখন আমি বললাম, যেখানে সে শহীদ হবে, সেখানকার মাটি আমাকে দেখান। তো এটি হলো সেই মাটি।” [হাকেম (৮৮৪), ইবনে সাদ (৪১১), ইবনে আবী আছেম (৪২৯) ও মুজমে তবরানী কবীর (৩/১০৯), মানঃ ছহীহ]।

عَنْ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ بن عَبْدِ اللَّهِ بن حَنْطَبٍ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ -رضى الله عنها- ، قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا ذَاتَ يَوْمٍ فِي بَيْتِي ، فَقَالَ : «لا يَدْخُلْ عَلَيَّ أَحَدٌ». فَانْتَظَرْتُ فَدَخَلَ الْحُسَيْنُ ، فَسَمِعْتُ نشيز رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَبْكِي ، فَاطَّلَعْتُ فَإِذَا حُسَيْنٌ فِي حِجْرِهِ ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمْسَحُ جَبِينَهُ وَهُوَ يَبْكِي ، فَقُلْتُ : وَاللَّهِ مَا عَلِمْتُ حِينَ دَخَلَ ، فَقَالَ : «إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ مَعَنَا فِي الْبَيْتِ ، فَقَالَ : تُحِبُّهُ ؟ قُلْتُ : أَمَّا مِنَ الدُّنْيَا فَنَعَمْ ، قَالَ : إِنَّ أُمَّتَكَ سَتَقْتُلُ هَذَا بِأَرْضٍ يُقَالُ لَهَا كَرْبَلاءُ». فَتَنَاوَلَ جِبْرِيلُ مِنْ تُرْبَتِهَا ، فَأَرَاهَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَلَمَّا أُحِيطَ بِحُسَينٍ حِينَ قُتِلَ ، قَالَ : مَا اسْمُ هَذِهِ الأَرْضِ ؟ قَالُوا : كَرْبَلاءُ ، قَالَ : صَدَقَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ ، أَرْضُ كَرْبٍ وَبَلاءٍ. أخرجه الطبرانى فى الكبير (3/108 ، رقم 2819) ، قال الهيثمى (9/189) : رواه الطبرانى بأسانيد ورجال أحدها ثقات 

অর্থঃ আবদুল মুত্তালিব আবদুল্লাহ বিন হানতাব উম্মে সালামা –رضي الله عنها- থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমার ঘরে বসা ছিলেন। ওই সময় তিনি বললেন, “এখন আমার কাছে যেন কেউ না আসে।” তো আমি উনি কি করেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। ওই সময় শিশু হুসাইন প্রবেশ করলো। তখন আমি আল্লাহর রসূলের ছঃ কাঁদার আওয়াজ শোনলাম। তাকিয়ে দেখলাম. তাঁর কোলে হুসাইন এবং নবীজি ছঃ কান্নারত অবস্থায় তার কপাল মুছে দিচ্ছিলেন। তখন আমি বললাম, ও যে এখানে প্রবেশ করেছে তাতো আমি খেয়াল করিনি। তিনি বললেন, ঘরে এতক্ষণ আমাদের সাথে জিবরীল ছিলেন। তিনি বললেন, আপনি কি একে ভালোবাসেন? আমি বললাম, “যদি দুনিয়াবাসীর মধ্য থেকে হয়, তাহলে অবশ্য। তিনি বললেন, আপনার উম্মতের লোকজন তাকে কারবালা নামক স্থানে হত্যা করবে।” অতঃপর জিবরীল সেখানকার মাটি হাতে নিলেন এবং তা নবীজিকে ছঃ দেখালেন। (আবদুল মুত্তালিব বলেন) পরে যখন হুসাইনকে ঘিরে ফেলা হলো, তখন তিনি বললেন, এই জায়গার নাম কি? লোকজন বললো, কারবালা। তিনি বললেন, আল্লাহ ও আল্লাহর রসূল সত্য বলেছেন। এটি কারব (বিপদ) ও বালার (পরীক্ষার) জায়গা।” [মুজমে তবরানী কবীর (৩/১০৮), মানঃ ছহীহ]। 

عَنْ عَائِشَةَ –رضي الله عنها- ، قَالَتْ : دَخَلَ الْحُسَيْنُ بن عَلِيٍّ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يُوحَى إِلَيْهِ ، فَنَزَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُنْكَبٌّ ، وَلَعِبَ عَلَى ظَهْرِهِ ، فَقَالَ جِبْرِيلُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَتُحِبُّهُ يَا مُحَمَّدُ ؟ قَالَ : «يَا جِبْرِيلُ ، وَمَا لِي لا أُحِبُّ ابْنِي». قَالَ : فَإِنَّ أُمَّتَكَ سَتَقْتُلُهُ مِنْ بَعْدِكَ ، فَمَدَّ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلامُ يَدَهُ ، فَأَتَاهُ بِتُرْبَةٍ بَيْضَاءَ ، فَقَالَ : فِي هَذِهِ الأَرْضِ يُقْتَلُ ابْنُكَ هَذَا يَا مُحَمَّدُ ، وَاسْمُهَا الطَّفُّ ، فَلَمَّا ذَهَبَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلامُ مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتُّرْبَةُ فِي يَدِهِ يَبْكِي ، فَقَالَ : «يَا عَائِشَةُ ، إِنَّ جِبْرِيلَ أَخْبَرَنِي أَنَّ الْحُسَيْنَ ابْنِي مَقْتُولٌ فِي أَرْضِ الطَّفِّ ، وَأَنَّ أُمَّتِي سَتُفْتَتَنُ بَعْدِي». ثُمَّ خَرَجَ إِلَى أَصْحَابِهِ فِيهِمْ عَلِيٌّ ، وَأَبُو بَكْرٍ ، وَعُمَرُ ، وَحُذَيْفَةُ ، وَعَمَّارٌ ، وَأَبُو ذَرٍّ وَهُوَ يَبْكِي ، فَقَالُوا : مَا يُبْكِيكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ؟ فَقَالَ : «أَخْبَرَنِي جِبْرِيلُ أَنَّ ابْنِي الْحُسَيْنَ يُقْتَلُ بَعْدِي بِأَرْضِ الطَّفِّ ، وَجَاءَنِي بِهَذِهِ التُّرْبَةِ ، وَأَخْبَرَنِي أَنَّ فِيهَا مَضْجَعَهُ». أخرجه الطبرانى (3/107 ، رقم 2814) . 

অর্থঃ হযরত আয়েশা –رضي الله عنها- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুসাইন রসূলুল্লাহ ছঃ এর কাছে এলো। তখন তাঁর উপর ওহী নাজিল হচ্ছিল। এসে সে রসূলুল্লাহ ছঃ এর পিঠে লাফ দিয়ে পড়েলো এবং পিঠের উপর খেললো। জিবরীল তখন বললেন, আপনি কি একে ভালোবাসেন? বললেন, “আমার নাতিকে আমি ভালোবাসবো না কেন?” বললেন, আপনার পর আপনার উম্মতের কিছু লোক তাকে হত্যা করবে। অতঃপর জিবরীল নিজের হাত প্রসারিত করে কিছু সাদা মাটি নিয়ে এলেন এবং বললেন, এ মাটিতেই আপনার নাতি নিহত হবে। ওই জায়গার নাম তফ। তো জিবরীল চলে যাবার পর রসূলুল্লাহ ছঃ অশ্রুসিক্ত নয়নে বের হলেন এবং ওই সময় তাঁর হাতে ওই মাটি ছিল। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, “আয়েশা! জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, আমার নাতি হুসাইনকে তফের ভূমিতে হত্যা করা হবে এবং আমার পর আমার উম্মত পরীক্ষার সম্মুখীন হবে।” অতঃপর তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁর ছাহাবীদের মাঝে গেলেন। সেখানে আবু বকর, উমর, হুযাইফা, আম্মার ও আবু যর ছিলেন। তারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ আপনি কাঁদছেন কেন? বললেন, “জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, আমার পরে তফের ভূমিতে হুসাইনকে হত্যা করা হবে এবং তিনি সেখানকার এই মাটি আমাকে দিয়ে গেলেন। তিনি জানিয়েছেন যে, সেখানেই তাকে শায়িত করা হবে।” [মুজমে তবরানী কবীর (৩/১০৭), মানঃ ছহীহ]।

জ্ঞাতব্যঃ
১. এসব হাদীছের বক্তব্যে কোনো বৈপরিত্য নেই। তবে জিবরীল এসে খবর দেওয়ার এ ঘটনাটি উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামার ঘরেই ঘটেছিল। এটি হয়তো কোনো এক সন্ধ্যায় ঘটেছিল। পরের দিন তাঁর কাছে শিশু হুসাইন এলে তিনি উম্মে সালামাকে তিনি বিষয়টি পুনরায় বলেন এবং পরে হযরত আয়েশার ঘরে গিয়ে তাঁকে এবং অতঃপর ছাহাবা কেরামের মাঝে গিয়ে বিষয়টি তাঁদেরকেও জানিয়েছিলেন। 
২. কারবালা এলাকার প্রাচীন নাম তফ। মক্কা ও মদীনাসহ অনেক জায়গার একাধিক নাম রয়েছে। 
৩. তফ বা কারবালার মাটি কিছুটা লাবর্ণের হওয়ায় বর্ণনাকারীরা হয়তো লাল ও সাদা উভয়টা বলেছেন।

عن أنس بن الحارث بن نبيه -رضي الله عنه- ، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إن ابنى هذا يعنى الحسين يقتل بأرض من أرض العراق يقال لها كربلاء فمن شهد ذلك منكم فلينصره». أخرجه البغوى فى الجعديات (1/63 ، رقم 46) ، وابن عساكر (14/223) وقال قال البغوى : ولا أعلم روى -عن أنس بن الحارث بن نبيه- غيره . 
অর্থঃ হযরত আনাস বিন হারিছ বিন নবীহ -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার এ নাতি অর্থাৎ, হুসাইন কারবালা নামের ইরাকের একটি জায়গায় নিহত হবে। ওই সময় কেউ সেখানে থাকলে তাকে যেন সাহায্য করে।” [বাগভীর জা‘দিয়াত (৪৬) ও ইবনে আসাকির (১৪/২২৩)]।

عن أم سلمة -ضي الله عنها- ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إن جبريل أخبرنى أن ابنى هذا يعنى الحسين يقتل وأنه اشتد غضب الله على من يقتله». أخرجه ابن عساكر (14/193) .
অর্থঃ উম্মে সালামা –رضي الله عنها- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জিবরীল আমাকে জানিয়েছেন যে, আমার এ নাতি অর্থাৎ, হুসাইন নিহত হবে এবং তার খুনীদের উপর আল্লাহর ক্রোধ প্রবল হবে।” [ইবনে আসাকির (১৪/১৯৩)]।

  প্রসঙ্গত, এজিদসহ ইমাম হুসাইনের সকল ঘাতক খুব অল্প সময়েই হৃদরোগ ও শত্রুর আঘাতের শিকার হয়ে মারা যায়।

  মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাঁর প্রিয়তম নবী সঃ এর আহলে বাইতকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসার তৌফীক দান করুন৷
২৮.০৮.২০২০, জুমাবার।
-------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ প্রবন্ধ লেখক ও মাওলানা।          

Post a Comment

0 Comments