Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৪৩; নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

                           বিতি কিচ্ছা
                                  পর্ব-৪৩;
আকামের রেকর্ড
-----------------
   কর্তা বলেছেন, " অগ্রযাত্রার দৌড়ে অগ্রবর্তী আমরা"। কথা বটে ঠিক। প্রাণপণ চেষ্টা করেও কেউ পারে নাই তাল মেলাতে আমাদের সাথে। শিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকে পিছনে ফেলেছি সেই সে কবে। এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যও কাবু হবে। তবে এই অগ্রযাত্রাও কাম্য নয় অনেকের। পরিবর্তনশীল বিশ্বে সবাই চায় পরিবর্তন। কারণ পরিবর্তন পদন্নোয়নের সোপান। দিনের পর দিন একই অবস্থানে পড়ে থাকা মানে অযোগ্যতার পরিচায়ক। বৎসরান্তে একটি করে শ্রেণী মাড়িয়ে উর্ধ্বগামী না হয়ে কেউ উচ্ছ শিক্ষিত হতে পারে না। অথচ কেন যে বোদ্ধারা আজ পরিবর্তন চায় না।

        এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি খ্যাত আমার স্বপ্নের সোনার বাংলা ক্রমশঃ চুরের বাংলায় পরিনত হল। ধনাত্বক হোক অথবা ঋণাত্মক হোক পরিবর্তনতো একটা হল। একটা হিসাব নিকাশ করার সুযোগতো হল। হৈ চৈ গোলমাল যা হোক সময়টা বেশ আমেজে কাটিয়ে নেয়া গেল,  এরই নামইতো উন্নয়ন।

        আমার ছেলেবেলার আড্ডামহলে এক সুজন ছিল। যার মাথায় খেয়াল জাগলো ভিখ্যাত হবে। আসলে অল্প দিনের মধ্যেই তার একটি খ্যাতি লাভ হল। বলতে পারেন সে ভিখ্যাতই হলো। তার কৌশল ছিল কোন কষ্টকর কাজের মধ্য ভাগে পৌছে ক্রন্দন করা। তার ক্রন্দন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এতে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সে সকলের পরিচিতি পেয়ে গেল, পেয়ে গেল খ্যাতি, পেয়ে গেল কেঁদো মিয়া লকব। এযুগে ভিখ্যাত হওয়ার পদ্মতি হল নষ্টালজির চর্চ্চায় অগ্রবর্তী হওয়া। 

           জাতিসংঘ দপ্তরে নাকি ভিখ্যাতদের নাম তালিকাভুক্তুির জন্য একটি রেজিষ্টার আছে। যাকে বলে "গিনেজ রেকর্ড বুক"। পৃথিবীর ছয় সাত হাজার কুটি নাগরিকের মধ্যে ক'জনের নাম স্থান পায় এই রেকর্ড বুকে। খ্যাতিমানদের পাশাপাশি নানাবিধ আকাম-কুকামের রেকর্ড সংরক্ষনেরও ব্যবস্থা আছে এই রেকর্ড বুকে। সুতরাং আর যায় কোথায়। আগ্রহী পারফর্মাররা গিনেজ বুকে তাদের নাম উটাতে সমর্থ হল অনেকেই। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১২-১৪ তারীখ পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৮ ঘন্টা ৩৫ মিনিট ৫৮ সেকেণ্ড লম্বা একটি কিস ইভেন্টে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টিকারী থাইল্যান্ডের এক ঝুটি হেন অপকর্ম দিয়ে গিনেজ বুকে স্থান করে ভিখ্যাত হয়। তদ্রূপ চীনা মহিলা ৫.৬২৭ মিটার লম্বা চুল রেখে ভিখ্যাত হল।

         কেঁদে কেটে ভিখ্যাত হওয়ার যুগ অতীত হল। নির্লজ্জতা নষ্টামিতে ভিখ্যাত হওয়ার সব সুযোগ এখন নাগালে। এই সুযোগে কেউ লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে বস্ত্র খোলে ভিখ্যাত হতে চাইবেই, যেহেতু সুযোগ আছে। এখন আমরা ভিখ্যাত হই কোন পথে? 

        ইদানীং চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মদ, জুয়া, ক্যাসিনো পরিচালনা, সরকারী রাজস্ব ডাকাতি,  ব্যংক লুট, তহবিল তসরুফ ইত্যাদি নানাবিধ অপকর্মে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে  কেউ কেউ গৌরবের আমেজ লাভ করছেন বটে। তবে এর ফলে পুরো একটি জাতি তিলে তিলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে হাজির হয়েছে। এই সব অপকর্মে আমরা এখন সকলের শীর্ষে, বিশ্ব সেরা।  মালয়েশিয়া,  শিঙ্গাপুর কি বলেন, একেবারে যুক্তরাজ্য,  যুক্তরাষ্ট্র,  কানাডা!!  কে পারে ঠেক্কা দিতে আমাদের সাথে। আমরাতো বদলে গেছি কোন এক আলাদীনের চেরাগ পেয়ে, এক দিবসও লাগেনি, বরং একটি মাত্র রাতে।

       কিন্তু এখন আবার শুরু হল, ' Go back' কর্মসূচি। এটা নাকি শুদ্ধি অভিযান। জননী বলেছেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। দিন কে দিন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে করতে যখন সব ল্যাটা চুকে যাবার পালা, তখন আচমকা  শুরু হল ধর শালারে, মার শালারে। পরিস্থিতি যখন ঘোলাটে তখন সাফাই কর্তারা মুখ খুললেন এসবের পুরোটাই বটে নন্দ ঘোষের আয়ত্বে। ব্যাটা লণ্ডন বসে দিব্যি সুখে এই সব অপকর্মের নাটাই ঘুরায়, সুতরাং ধর শালারে। ওদিকে কপাল দোষে ধৃত ভাতিজাও আঙ্গুল তোলে কয় জননী তোমাকেও মুল্য দিতে হবে নিঃশ্চয়। এর মানে? ভাগে ছিলা, আর বাগে থাকবা না তা হবে না,  তা হবে না।

        কেমন নির্মম, নিষ্টুর, চতুর জননী আমার। কিছু দিন আগেও রাষ্ট্র ব্যাপী অপরাধ নির্মুলের নামে প্রতিপক্ষ দমন পীড়ন চলল। সব অপরাধী ধরা পড়ল বটে, সাথে জব্দ হল কোরআন কিতাব, হাদীস কালাম, তসবীহ ছড়া, ও পেয়াজ কাটার চাকু। এবার যত অপরাধী ধরা পড়ে সাথে থাকে হাজার কুটি টাকায় ভরা বস্তা, কাটা রাইফেল, রাম দা, বোমা তৈরীর সরঞ্জাম সহ রকমারি আগ্নেয়াস্ত্র। এত সব অপকর্মের ভাগে যাকে তৃপ্ত করছি রোজ, সেই তো আজ নল ঘোরায়ে নিচ্ছে সকল অপকর্মের  খোজ।

        এদিকে এহেন প্রতিযোগিতার দৌড়ে যারা শামিল নেই তারা পেয়াজের দাম বাড়লে কাফনের টাকার ভাগ থেকে পুষিয়ে নিয়েও দিব্বি ভাল আছে। গিনেজ বুকে স্থান দখলের কোন তাড়নায় তারা ভোগে না। নশ্বর এই জীবন নিয়ে ভাবনায় তাদের ঘুমে কিন্তু মোটেও ঘাটতি হয় না।
-------------------------------------------------

Post a Comment

0 Comments