Recent Tube

কুরআন ও হাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব, ফজিলত না করার পরিনতি এবং করণীয়-বর্জনীয়। ---শামীম আজাদ।


কুরআনহাদীসের আলোকে বিবাহের গুরুত্ব, ফজিলত না করার পরিনতি এবং করণীয়-বর্জনীয়। 
          ১১তম পর্ব;

পুরুষদেরকে একটি বিয়ের জন্যই উৎসাহিত করেন তবে যোগ্যতা থাকলে দুটি বা চারটিও করতে পারবেন

وَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تُقْسِطُواْ فِي الْيَتَامَى فَانكِحُواْ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاء مَثْنَى وَثُلاَثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلاَّ تَعْدِلُواْ فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَلِكَ أَدْنَى أَلاَّ تَعُولُواْ
“সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই,  অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।” 
সূরা নিসাঃ ৩

একজন পুরুষ কয়টি বিয়ে করতে পারবেন সে বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ভালভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি একটি বিয়ের ব্যপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন কিন্তু কেউ যদি দুটি বা তার অধিক চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে চায়, করতে পারবেন। তবে সকল স্ত্রীর প্রতি সমতা রক্ষা করতে হবে; যা খুবই কষ্টকর। সেক্ষেত্রে তিনি একটি বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।

জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের কি কি গুণাবলী থাকা আবশ্যক?

বিবাহের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে পাত্র ও পাত্রী উভয়ের ধার্মিকতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

আল্লাহ তা'আলা বলেন, 

وَ لَا تَنْكِحُوا الْمُشْرِكٰتِ حَتّٰى یُؤْمِنَّؕ وَ لَاَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَیْرٌ مِّنْ مُّشْرِكَةٍ وَّ لَوْ اَعْجَبَتْكُمْۚ وَ لَا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِیْنَ حَتّٰى یُؤْمِنُوْاؕ وَ لَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَیْرٌ مِّنْ مُّشْرِكٍ وَّ لَوْ اَعْجَبَكُمْؕ أُولَٰئِكَ یَدْعُوْنَ اِلَى النَّارِ ۚۖ وَ اللّٰهُ یَدْعُوْۤا اِلَى الْجَنَّةِ وَ الْمَغْفِرَةِ بِاِذْنِهٖۚ وَ یُبَیِّنُ اٰیٰتِهٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ یَتَذَكَّرُوْنَ۠

মুশরিক নারীদেরকে কখনো বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একটি সম্ভ্রান্ত মুশরিক নারী তোমাদের মনহরণ করলেও একটি মু’মিন দাসী তার চেয়ে ভালো। আর মুশরিক পুরুষদের সাথে নিজেদের নারীদের কখনো বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। একজন সম্ভ্রান্ত মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও একজন মুসলিম দাস তার চেয়ে ভালো। তারা তোমাদের আহবান জানাচ্ছে আগুনের দিকে আর আল্লাহ‌ নিজ ইচ্ছায় তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন জান্নাত ও ক্ষমার দিকে। তিনি নিজের বিধান সুস্পষ্ট ভাষায় লোকদের সামনে বিবৃত করেন। আশা করা যায়, তারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করবে।
সূরা বাকারাঃ ২২১

চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে মহিলার বিবাহ করা হয়

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُنْكَحُ النِّسَاءُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ "চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে মহিলার বিবাহ করা হয়। তার সম্পদ, তার বংশ-মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য্য এবং তার ধর্ম-পরায়ণতা। অতএব তুমি ধর্ম-পরায়ণা নারীর সন্ধান করো। অন্যথায় তোমার দু'হাত ধূলি ধুসরিত হোক। "  
 বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাউদ ২০৪৭, আহমাদ ৯২৩৭ দারেমী ২১৭০, ইরওয়াহ ১৭৮৩, গায়াতুল মারাম ২২, সহীহ আবী দাউদ ১৮৮৬, ইবনে মাজাহ ১৮৫৮

বিবাহের ওয়ালীমা বা ভোজের ব্যবস্থা করা

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عُمَرَ الْعَدَنِيُّ وَغِيَاثُ بْنُ جَعْفَرٍ الرَّحَبِيُّ قَالَا حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ حَدَّثَنَا وَائِلُ بْنُ دَاوُدَ عَنْ ابْنِهِ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَوْلَمَ عَلَى صَفِيَّةَ بِسَوِيقٍ وَتَمْرٍ

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফিয়্যা (রাঃ) -এর বিবাহে ছাতু ও খোরমা দিয়ে বিবাহ ভোজের আয়োজন করেন। 
বুখারী ৩৭১, ৫০৮৫, ৫১৫৯, ৫১৬৯, ৫৩৮৭, তিরমিযী ১০৯৫, নাসায়ী ৩৩৮০, ৩৩৮২, আবূ দাউদ ৩৭৪৪, আহমাদ ১২২০৫, ১৩১৬৩, আল-আদাব ৬৯-৭১, মুখতাসারুস শামাইল ১৫০, ইবনে মাজাহ ১৯০৯

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ - رضي الله عنه - أَنَّ النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ، قَالَ: «مَا هَذَا» ? قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ! إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ. فَقَالَ: «فَبَارَكَ اللَّهُ لَكَ، أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ، وَاللَّفْظُ لِمُسْلِمٍ (1).

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আওফ (রাঃ)-এর দেহে সুফ্‌রার (হলুদ রঙ) চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এ কী? ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, হে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি এক মহিলাকে একটি খেজুরের আঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা তোমার এ বিয়েতে বারাকাত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর। ; শব্দবিন্যাস মুসলিমের। 
বুখারী ২০৪৯, ২২৯৩, ৩৭৮১, ৩৯৩৭, ৫০৭২, মুসলিম ১৪২৭, তিরমিযী ১০৯৪, ১৯৩৩, নাসায়ী ৩৩৪১, ৩৩৫২, ৩৩৭২, ২১০৯, ইবনু মাজাহ ১৯০৭, আহমাদ ১২২৭৪, ১২৫৬৪, ১২৭১০, মালেক ১১৫৭, দারেমী ২২০৪ 

যে ওয়ালীমায় শুধুমাত্র ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদেরকে দাওয়াত করা হয় না সেই ওয়ালীমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট

حديث أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الْوَلِيمَةِ، يُدْعَى لَهَا الأَغْنِيَاءُ وَيُتْرَكُ الْفُقَرَاءُ، وَمَنْ تَرَكَ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, যে ওয়ালীমায় শুধুমাত্র ধনীদেরকে দাওয়াত করা হয় এবং গরীবদেরকে দাওয়াত করা হয় না সেই ওয়ালীমা সবচেয়ে নিকৃষ্ট। যে ব্যক্তি দাওয়াত কবুল করে না, সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে নাফরমানী করে। (বুখারী পর্ব ৬৭: /৭২, হাঃ ৫১৭৭;  মুসলিম ১৬/১৬, হাঃ ১৪৩২)।

মুবারকবাদ জানানো

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَبْدَةَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ حَدَّثَنَا ثَابِتٌ الْبُنَانِيُّ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى عَلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ فَقَالَ مَا هَذَا أَوْ مَهْ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلَى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ فَقَالَ «بَارَكَ اللهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ».

আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) -এর চেহারায় হলুদের রং দেখে তাকে বলেনঃ একী? আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি এক মহিলাকে সামান্য সোনার বিনিময়ে বিবাহ করেছি। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্‌ তোমাকে বরকত দান করুন। একটি বকরী দিয়ে হলেও বিবাহ ভোজের আয়োজন করো। 
বুখারী ২০৪৯, ৩৭৮১, ৩৯৩৭, ৫০৭২, ৫১৪৮, ৫১৫৩, ৫১৫৫, ৫১৬৭, ৬০৮২, ৬৩৮৬, মুসলিম ১৪২৭, তিরমিযী ১০৯৪, ১৯৩৩, নাসায়ী ৩৩৫১, ৩৩৫২, ৩৩৭২, ৩৩৭৩, ৩৩৭৪, ৩৩৮৮, আবূ দাউদ ২১০৯, আহমাদ ১২২৭৪, ১২৫৬৪, ১২৭১০, ১২৯৫৭, ১৩৪৫১, ১৩৪৯১, ১৩৫৫০, মুয়াত্তা মালেক ১১৫৭, দারেমী ০৬৪, ২২০৪, ইরওয়াহ ১৯২৩, ইবনে মাজাহ ১৯০৭

- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا أَشْعَثُ عَنْ الْحَسَنِ عَنْ عَقِيلِ بْنِ أَبِي طَالِبٍ أَنَّهُ تَزَوَّجَ امْرَأَةً مِنْ بَنِي جُشَمَ فَقَالُوا بِالرَّفَاءِ وَالْبَنِينَ فَقَالَ لَا تَقُولُوا هَكَذَا وَلَكِنْ قُولُوا كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اللّٰهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ وَبَارِكْ عَلَيْهِمْ

আকীল বিন আবূ তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বনু জুশম গোত্রের এক মহিলাকে বিবাহ করলে লোকেরা (মুবারকবাদ দিয়ে) বললো, সুখী হও এবং অধিক সন্তান হোক। তিনি বলেন, তোমরা এরূপ বলো না, বরং যেরূপ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তদ্রুপ বলোঃ

اللهُمَّ بارك لَهُمْ وَبَارك عليهم   

“হে আল্লাহ! তাদেরকে বরকত দান করুন এবং তাদের উপর বরকত নাযিল করুন।” 
নাসায়ী ৩৩৭১, আহমাদ ১৭৪০, ১৫৩১৩, দারেমী ২১৭৩, আল-আদাব ৯০, ইবনে মাজাহ ১৯০৬

বিবাহকে সহজ করতে হবে: 

وَعَن عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ النَّبِىُّ ﷺ : «إِنَّ أَعْظَمَ النِّكَاحِ بَرَكَةً أَيْسَرُهُ مُؤْنَةً».
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সর্বাপেক্ষা উত্তম বিবাহ হলো স্বল্প খরচে সম্পন্ন করা।
আহমাদ ২৪৫২৯, শু‘আবুল ঈমান ৬৫৬৬, মিশকাতুল মাসাবিহ ৩০৯৭
 

হাদীসে দেখা যাচ্ছে বিয়েতে কম খরচ করাকে রাসুল (সা.) বরকতময় বলেছেন। অথচ বর্তমানে মানুষ বিয়েকে কত কঠিন করে ফেলেছে। এই কঠিন করে ফেলার কারণেই সমাজে ব্যভিচারের রাস্তা খুলে গেছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে...।
-----------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments