Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৪৭ ---নুর মুহাম্মদ চৌধূরী।

     
                     বিতি কিচ্ছা-৪৭;

একটা ডালিম কোথায় পাই:
""""""""""""""""""""""""
        অনেক অনেক দিন নয়, সবে মাত্র অর্ধ শত সাল আগেকার কথা। প্রাইমারী স্কুলের ১ম শ্রেণীকক্ষে এক অথবা দুই বস্তা আটা দিয়ে কাঁই তৈরীর দৃশ্য উপভোগ করছি। তৎকালীন সময়ে স্কুলে স্কুলে ভোখাদের জন্য নঙ্গরখানা খোলা হয়েছিল। কারণ দেশে তখন ভিক্ষার দারুণ অভাব বিরাজ করছিল। সালটা ছিল ১৯৭৪। আমি তখন ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র। আমি ছাড়াও আমার সহপাঠী যারা দর্শক ছিলাম সেখানে তাদের মধ্যে আলাউদ্দিনের কথা আবছা আবছা মনে আছে। তার বাড়ী ছিল স্কুলের একেবারে লাগোয়া। পানি আর আটার লাবড়া তৈরী করে প্রায় দেড় পোয়া ওজনের গোল্লা তৈরী করা হল। ভোখাদের লাইনে দাড় করিয়ে একটি একটি করে গোল্লা দেয়া হচ্ছে। আজ তাদের রাতের এমন কি কারো কারো ক্ষেত্রে পরদিন সকালেরও একটা সংস্থান হয়ে গেল। এ ছাড়া আর কি ই বা করার ছিল তাদের। যখন ২৭৫ টাকা সরকারী মাইনের চাকরিতে একজন লোক তার সংসারের ৮ /১০ জন সদস্য নিয়ে ভালভাবে মাস যাপন করতে পারত, যখন খোলা বাজারে ভাল মানের চালের দর প্রতি সের বারো আনার বেশী ছিল না, যখন ভাল জাতের শুকনো মরিচ প্রতি সের আট আনার বেশী ছিল না, যখন লবনের সের ২ আনার বেশী ছিল না, তখন লবন ৮০ টাকা ও মরিচের দাম গিয়ে ১০০টাকায় দাঁড়াল। অনেকের এক মাসের পুরো আয় এক কেজি লবনের মুল্যের সমান ছিল না- এই অবস্থায় চুরি বিদ্যার আশ্রয় নিবে কি না সাধারণ জনতা- এটা তাদের নিজেদের কাছে ছিল নিজেদের শেষ প্রশ্ন। তারা চুরি না করে আর যাবে কোথায়? নিজে না খাক্ অন্তত সন্তানদের মুখেতো একটু ডাল ভাত দেয়া জরুরী ছিল তাদের জন্য।

          সচ্ছল পরিবার মোল্লা বাড়ীর হাজী আইয়ুব আলী সাহেবের বাড়ীতে ভাতের মাড় নেবার জন্য অনুরোধ জানায় অনেক দূরবর্তী প্রতিবেশীরা। পারষ্পরিক মযবুত ভাতৃত্বের  বন্ধনে বাঁধা বাংলাদেশে এমন আবদারে না বলবে কে? তারপরও কথা হল কয়জনকে দেখবে দু-একটি সচ্ছল পরিবার। 

         এরকম অবস্থা কয়দিন ছিল দেশে মনে করতে পারি নাই, তবে যেটুকু স্মৃতি গাঁথা রয়েছে হৃদয়ের গহীন কোনে তা কখনও ভুলে যাবার নয়। দেশে তখন সিঁদেল চোর আর ছিঁছকে চোরের উৎপাত বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। তবে অপেশাদার এই সব চোরেরা পেটের দায়ে চুরিতে গিয়ে ধরা পড়তো প্রায়ই। কারণ চৌর্যবৃত্তিতে  তারা কোন ক্রমেই সিদ্দহস্ত ছিল না। আর চুরি করে তারা যা আনত তা রান্ন করা ভাত, তরকারী, ডিম, পিয়াজ, চাল,  ডাল এগুলোই ছিল। কারণ চুরি দ্বারা তারা অনাহারে,অর্ধাহারে তিলে তিলে চুপসে যওয়া দেহটিকে কোন রকমে খাড়া রাখার তাগিদ ছাড়া অন্য কোন লক্ষ্য ছিল না।

          এহেন পরিস্থিতি সৃষ্টি কিন্তু স্রষ্টার কর্ম ছিল না। আর স্রষ্টা এমনটি করেনওনি। যা হয়েছিল তখন তা ছিল আমাদের নিজ হাতেরই কামাই। সবে মাত্র স্বাধীন হওয়া একটি দেশের উর্ধ্বাসনের প্রায় সকল হোমড়া চোমড়ারা যেমন খুশি তেমনিভাবে দেশটাকে লুটপাটের একটি অভয়ারণ্য  হিসাবে পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় সবকটি নকল সনদে মুক্তিযাদ্ধা বনে রীতিমত আওয়ামীলীগ হয়ে গেল। এই ডাকাত গুটিকয়েক মানুষ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আর কলম চুরির প্রতিভায় পারদর্শিতা প্রদর্শন করে দেশের তাবৎ সম্পদ বিদেশে পাচার করে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেন। আর দেশটাকে একটি তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত করে ছাড়লেন। বাঁধা দেওয়ার বলতে গেলে কেউই ছিল না। বরং সবাইই ছিল চোর। দু-চার জন যারা এ অবস্তার প্রতিবাদ করাকে নিজেদের দায়ীত্ব মনে করেছিলেন, তাদের কপালে কারাভোগ নয়ত বুকে গুলি দুটার একটা ঝুটেছিল। পরিশেষে বড় কর্তা বললেন," ওরা পেলো সোনার খনি, আর আমি পেলাম চোরের খনি। বাস্তবতা হচ্ছে আজও সেই দুষ্ট স্বাধীনতা বিরুধীরা দেশের সবচেয়ে বড় মুখবাঁজ আওয়ামীলীগ।

       তার পর আজ প্রায় অর্ধশত বৎসরের কাছাকাছি সময় অতিবাহিত হল। এর মধ্যে কতবার দেশ আগালো আর কতবার পেছালো দেশের মানুষের কাছে তার হিসাব আছে। চুরি বা চৌর্যবৃত্তি আগে যেমন ছিল এখনও তা আছে। তবে পদ্মতিটা ভিন্ন। বিদেশে বসে আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ গায়েব হয়ে যায়। কারো কিছু করার থাকে না। কারো উপর তার দায়ও বর্তায় না। হলমার্ক কেলেঙ্কারি,  ক্যাসিনোকাণ্ড ইত্যাদি নতুন নতুন শব্দ আমাদেরকে শিখতে হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে সখ্যতা থাকার সুবাদে অথবা খাকি পোষাকের আড়ালে থেকে ডিজিটাল পদ্মতিতে কলকাঠি নাড়তে পারঙ্গম ভদ্রলোকের সংখ্যা এখন আগের তুলনায়  অনেক বেশী। এদের একেক জনের আয়ত্বে থাকা অবৈধ সম্পদ হিসাব করলে দেখা যায় কমবেশী ত্রিশ হাজার লোকের সচ্ছলতা এতে  লুক্কায়িত। এই অবস্থায় নির্ভেজাল ভাল থাকা  যাদের স্বপ্ন তাদের অবস্থা নাকাল। 

            পিয়াজের মুল্য সবে 'শ' কে করেছে পার,  লক্ষ্য তাহার হাজার ছু'বে কার আছে বলার? লবন আবার শ্রবন করাবে তিলোত্তমা ঢঙ।মরিচ বেটাকি থাকবে বসে, ধরাবেনা তাতে রঙ। হাজীর বাড়ীর প্রতিবেশীররা যদি ছুটে আসে আরবার,শরমে মুখ লুকায়ে করে ভাতের মাড়ের আবদার। তবে কি আছে তোমার করবার। উটানের ডালিম গাছটায় আর ধরেনা পুষ্ট ফল। সার, পানি নাই তেমন বলে তা নেহায়েৎ হীনবল। 

         আগেকার দিনের গল্পকথায় দেখছি, রাজবংশে পুত্র সন্তান না থাকলে রাজার স্ত্রীদেরে ডালিমের বিচি খাইতে দেয়া হত। আশা করা হত রাণী মহাশয়া এতে বীর পুরুষ উপহার দেবেন। আমাদের দুর্ভাগ্য একটা হৃষ্টপুষ্ট ডালিম গাছও আজ কারো বাড়ীতে নাই। জালিমটা কখনও ডালিম চাইবে না -এটাই স্বাভাবিক ।।
---------------------------------------------


Post a Comment

0 Comments