Recent Tube

সত্যের সাক্ষ্য, ৷ -সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী রহঃ


🇧🇩সত্যের সাক্ষ্য দানের পদ্ধতি;
--------------------------------- 
🎆সত্যের সাক্ষ্যদানের এ সংকটজনক দায়িত্বই আমরা, আপনার ও যারা মুসলিম জাতি বলে পরিচয় দেয় এবং যাদের কাছে আল্লাহর কিতাব ও নবীদের হিদায়াত বর্তমান রয়েছে, তাদের উপরর ন্যস্ত হয়ে আছে। সাক্ষ্য দু’রকমের হয়ে থাকে। 
১. মৌখিক সাক্ষ্য
২. বাস্তব সাক্ষ্য।

🎇মৌখিক সাক্ষ্যদান-
মৌখিক সাক্ষ্য বলতে বুঝায় নবীর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে সত্য এসে পৌছেছে 
১. বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে দুনিয়ার সামনে তাকে তুলে ধরা। 

২. মানুষকে বুঝাবার ও তাবলীগ এবং প্রচার – প্রোপাগান্ডার সম্ভাব্য সকল উপায় উপকরণ ব্যবহার করে ও আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞান উদ্ভাবিত সমস্ত মাল-মসলাকে আয়ত্তে এনে আল্লাহর মনোনীত দীনের সাথে দুনিয়ার মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয়া। 

৩. পরন্তু মানুষের চিন্তায়, বিশ্বাসে, নৈতিকতায়, তাহযীব-তামাদ্দুনে, সামাজিক রীতি-নীতিতে, রুজি-রোজগারে, লেনদেন ও আইন-আদালতে, রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এবং মানবীয় বিষয়াদি অন্যান্য সকল দিক ও বিভাগের জন্যে এ পেশকৃত শিক্ষাকে অত্যন্ত খোলাখুলিভাবে বিবৃত করা। 

৪. যুক্তি-প্রমাণের দ্বারা তার সত্যতার প্রমাণ করা এবং এর বিপরীত যত মতাদর্শ বর্তমান রয়েছে যুক্তিপূর্ণ সমালোচনার মাধ্যমে তার দোষ-ক্রটি নির্দেশ করা। 

কিন্তু যে পর্যন্ত না গোটা মুসলিম জাতি মানুষকে হিদায়াতের পথ দেখানোর জন্য নবীদের ন্যায় চিন্তা ভাবনা করবে, সে পর্যন্ত এ মৌখিক সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব পুরোপুরি আদায় হতে পারে না। কর্তব্য পালন করতে হলে এ কাজটিকে আমাদের সামগ্রিক চেষ্টা, সাধনা ও জাতীয় কর্ম- চাঞ্চল্যের কেন্দ্রীয় লক্ষ্যে পরিণত করতে হবে এবং সকল কাজেই এ উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। পরন্তু আমাদের মধ্য থেকে সত্যের বিপরীত সাক্ষ্য দানকারী কোনো আওয়াজকেই বরদাশত না করার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।

🎆বাস্তব সাক্ষ্যদান-
বাস্তব সাক্ষ্যদানের অর্থ হচ্ছে এই যে, 
১. আমরা যেসব নিয়ম নীতিকে সত্য বলে প্রচার করি আমাদের বাস্তব জীবনেও সেগুলোকে প্রতিফলিত করতে হবে। 

২. দুনিয়ার মানুষ যেন আমাদের কাছ থেকে ঐ নীতিগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে কেবল মৌখিক চর্চাই শুনতে না পায়, বরং তারা যেন স্বচক্ষে আমাদের জীবনে ঐ সবের সৌন্দর্য ও কল্যাণকারিতা প্রত্যক্ষ করতে পারে। 

৩. ঈমানের কল্যাণে মানুষ নৈতিক চরিত্র ও আচার ব্যবহারের মাধ্যমে তার রসাস্বাদন করতে পারে। 

৪. এ দীনের পথ -নির্দেশ কেমন আদর্শ মানুষ তৈরি হয়, কিরূপ ন্যায়পরায়ণ সমাজ গঠিত হয়, কেমন সৎ সমাজ ব্যবস্থার গোড়াপত্ত¡ন হয়, কত স্বচ্ছ ও পবিত্র তামাদ্দুন গড়ে ওঠে, কিরূপ সঠিক ধারায় জ্ঞান- বিজ্ঞান ও শিল্প সাহিত্যের বিকাশ ঘটে, কি রকম সুবিচার ও সহানুভতিপূর্ণ এবং আর্থিক সহযোগিতার সূচনা হয় আর ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগ কেমন পরিশুদ্ধ, সুবিন্যস্ত ও কল্যাণের সম্পদে ভরপুর হয়ে ওঠে, তা যেন তারা স্বচক্ষে দেখতে পারে। 

৫. বস্তত আমরা যদি ব্যক্তিগত ও জাতিগতভাবে নিজেরা দীনের মূর্তিমান সাক্ষ্যে পরিণত হতে পারি, আমাদের ব্যক্তি চরিত্র সত্যতার প্রমাণ পেশ করে, আমাদের ঘর- বাড়ী সৌরভে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ তারাই আলোকে আলোকিত হয়ে ওঠে; আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা তারাই সৌন্দর্য চর্চায় নিয়োজিত হয় এবং আমাদের জাতীয় নীতি ও সম্মিলিত চেষ্টা-সাধনা তার সত্যতার উজ্জ্বল নিদর্শনে পরিণত হয়, তাহলে এ সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব যথার্থরূপে পালিত হতে পারে।

🎆মোদ্দা কথা, 
যেকোনো স্থানে, যেকোনো ব্যক্তি বা জাতির সাথেই আমাদের সাক্ষাৎ হোক না কেন, আমরা যে নীতিগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকি এবং যার বদৌলতে মানুষের জীবন বাস্তবিকই সুন্দর ও উন্নত হতে পারে, তারা যেন আমাদের ব্যক্তি ও জাতীয় চরিত্রে সে সব নীতির সত্যতার প্রকাশ প্রত্যক্ষ করতে পারে।

🎇সত্যের সাক্ষ্য বই থেকে নেওয়া।
---------------------------------------------------------------
  

Post a Comment

0 Comments