Recent Tube

খোলা চিঠি: হে যুবক - ২ ; জিয়াউল হক।


  খোলা চিঠি: হে যুবক - ২
  
-------------------------------------------------------------
  তিন তিন জন বিশ্ববিখ্যাত দর্শনিক Greek Gang of Three নামে তাদেরকে সবাই চেনে। সক্রেটিস, তার চুয়াল্লিশ বৎসর পরে প্লেটো এবং তারও একচল্লিশ বৎসর পরে এ্যরিস্টেটলের জন্ম। এদের দর্শন গ্রিক সমাজে ব্যাপকভাবে চর্চিত হতো। শাসক শ্রেণীর সাথে সক্রেটিসের চিন্তার অনৈক্য, এবং সাংঘর্ষিক হবার কারণে তাকে শেষ পর্যন্ত হেমলক পানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার ঘটনা আমরা জানি। 

    সক্রেটিসের একটা উক্তি; ‘Know Thyself ‘নিজেকে জানো’ আড়াই হাজার বৎসর পরেও অমর হয়ে আছে। নিজেকে জানলে কি হবে? এবং সেই জানার পথটাইবা কী? সে বিষয়ে কিন্তু সক্রেটিস একেবারে নিশ্চুপ। 
সক্রেটিসের অনেক পরে এসে ইসলাম সোজাসাপ্টা বলেছে; ‘মান আরাফা নাফসাহু ফাক্বাদ আরাফ রাব্বাহু’ অর্থাৎ যে নিজেকে চিনেছে, সে তার স্রষ্টাকে চিনেছে (আলী রা: এর উক্তি)।

   স্রষ্টাকে চেনার সহজ এই পথটাই সক্রেটিস, প্লেটো এবং এ্যরিষ্টেটল কেউই বলতে পারেন নি। গ্রিক দর্শনের এই ব্যর্থতার কারণ কিন্তু এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। গ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি ছিল দুটো; (এক) ইনটুইশন (Intuition) এবং (দুই) লজিক (Logic) 

   অর্থাৎ বোধ ও যুক্তি। এদু’টোর উপরে ভিত্তি করেই তারা টিকে থাকার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। সক্রেটিস থেকে শুরু করে এ্যরিস্টেটল সকলেই তাদের ‘বোধ’ কে যুক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।

    মানুষের বোধ ও উপলব্ধীতেই ভূল বা কোন ধরনের অপূর্ণতা থাকলে ‘অকাট্য’ যুক্তিতে তা প্রতিষ্ঠিত করা যায়? এ প্রশ্নটি কেউ করেনি গ্রিক সমাজের ঐ তিন দার্শনিকের কাছে। তবে তাদের সেই শিক্ষাকে চ্যালেঞ্জ করেছে ইসলাম। 

   শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি নিয়ে গ্রিকদের দেয়া দুটো উৎসের বিপরিতে ইসলামে জ্ঞানের উৎস হলো তিনটি;
(এক) ইনটুইশন - Intuition, লজিক (Logic) আর (তিন) এক্সপেরিমেন্ট (Experiment)  অর্থাৎ বোধ-যুক্তি আর নীরিক্ষণ বা যাচাই। 

   প্রথমটি অর্থাৎ ইনটুইশন তথা বোধের উৎস গ্রিক সমাজ মনে করতো মানুষে মনে উদিত চিন্তা-চেতনা ও বিশ্বাস। ইসলামে এই বোধ-এর উৎস হলো আল্লাহ প্রদত্ত অহি (রাসুলগণের ক্ষেত্রে) অথবা ইলহাম (সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে)। 

     অহীর জ্ঞান বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে কোন যাচাই বাছাই চলবে না, শর্তহীন বিশ্বাস করতে হবে। এটার নাম ঈমান। কিন্তু মনে উদিত ইলহামকে অহির জ্ঞান, যুক্তি ও বাস্তবতার আলোকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা (Experiment))  করে বিশ্বাস করা বা না করাটাই হলো ইসলামি শিক্ষার মৌলিক ভিত্তিমূল।

    এই ভিত্তিমূলের সন্ধানটাই সক্রেটিস ও তার দুই শিষ্য দিতে পারেন নি। এটা হলো সক্রেটিসের শিক্ষা ও দর্শনের এক বিরাট দূর্বলতা। এটা বলতে আমরা ভয় পাই, সংকোচ বোধ করি। কারণ, সক্রেটিসকে পশ্চিমা বিশ্বে চিন্তা ও দর্শনের ইশ্বর ভাবা হয়। ইশ্বরের কি সমালোচনা করা যায়?

   এই যে মনস্তত্ত, চিন্তা ও দর্শন, ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব থাকার কারণে মানুষকে ‘ইশ্বর’ মেনে প্রশ্নাতীতভাবে দাসত্ব করার মত মানসিক অবস্থাটা ছিলো গ্রিক সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সেখানে আল্লাহকে কেউ চিনতো না। মানুষের উপরে কর্তৃত্বপরায়ন কোন শক্তি যদি থেকে থাকে, তা হলে তারা হলো; ভেনাস, এ্যাপেলো, জুপিটার এসব। আল্লাহ নয়।

   সময় গড়িয়ে যাবার সাথে সাথে গ্রিকো-ল্যাটিন সেই দর্শনেও পরিবর্তন এসেছে। মানুষের বোধ ও উপলব্ধীর মধ্যে এক বিরাট অপূর্ণতা রয়েছে এবং তাকে শিক্ষার চুড়ান্ত উৎস মানাটা নিরাপদ নয়, সে বোধ তাদের এসেছে। 

     কিন্তু তারা আবারও ভুল করেছে। পশ্চিমা সভ্যতা ইনটুইশন এবং লজিক (বোধ ও যুক্তি) এ দুটোকে বিজ্ঞানের অধিনস্থ করেছে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে যদি ইনটুইশন ও লজিক উৎরে যায়, তা হলে সেটাই সত্য! মানবতার জন্য এ এক আত্মবিধ্বংসী বিশ্বাস। নিত্য পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানকেই ‘সত্যের উৎস’ মানাটা এক মারাত্মক ভ্রম। সর্বনাশা এই ভুলের মধ্যেই নিপতিত আধুনিক বিশ্ব।

   আধুনিক যুগের অনেক মুসলমানরাও ইসলামি দর্শনের ধারক বাহক হওয়া সত্তেও গ্রিকদের মাধ্যমে উঠে আসা পশ্চিমা সভ্যতার ভ্রমাত্মক এ ধারনায় নিমজ্জিত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও বড় সমস্যা হলো, ওস্তাদ বা শিক্ষকের কোন কথারই যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। তার বাণীকেই শিরোধার্য হিসেবে মানতে ও জানতে হবে! 

      যারা একটু স্বাধীন চিন্তা ও মত পোষণ করেন তারা ওস্তাদ বা শিক্ষকের মতের বিপরিতে আরও একজনের মতামতকে অন্ধের মত প্রাধান্য দেন, সেটা; Science বা বিজ্ঞান!
 
   হয় শিক্ষক, না হয় বিজ্ঞান, এই দুটোর যে কোন একটা অবশ্যই সত্য ও চুড়ান্ত সত্য। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব চিন্তা ও বুদ্ধি বিবেচনায় যাচাই করছে না, ভাবছে না, ফলে তাদের স্বাধীন চিন্তার বিকাশ ঘটছে না। অথচ ইসলামের নির্দেশই হলো; প্রাপ্ত প্রতিটি জ্ঞান, তথ্য, উপাত্ত ও শিক্ষা পরখ করে দেখার পরেই কেবল তা সত্য বলে গ্রহণ করতে হবে। কারো অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না (দ্রষ্টব্য: আল কুরআন ১৭ : ৩৬)।

    তার মানে হলো ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার তৃতিয় যে বৈশিষ্ঠ, সেই বৈশিষ্ঠের কোন চর্চা হচ্ছে না আমাদের মুসলিম সমাজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে। ফলে ছাত্ররা পড়ছে, তবে শিখছে না। এরকম পরিস্থিতি মাথায় রেখে যুবকদের প্রতি আহ্বান, অর্জিত জ্ঞান যাচাই করে নিজের জ্ঞান ও বিশ্বাসকে সমৃদ্ধ করুন।

Post a Comment

0 Comments