Recent Tube

নির্বাচন ও ভোট বিষয়ে শরয়ীদৃষ্টিকোণ: মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।

 
  নির্বাচনভোট বিষয়ে  
  শরয়ী দৃষ্টিকো:
-------------------------------------
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ

 বর্তমান জামানার কথিত আহলে হাদীস  আধুনিক দলীয় ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নন। কারণ তাদের দাবী ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বা সমাজে ইসলাম বিরোধী কাজ রোধে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে রাসূলুল্লাহ (সা), তাঁর সাহাবীগণ, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ কখনোই রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণের জন্য দল গঠন, নির্বাচন ইত্যাদি করেন নি।

এখানে সমস্যা হলো ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত বর্জনের পার্থক্য না করা। প্রথম যুগের মুসলিমগণ দলীয় রাজনীতি করেননি বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন করে ভালো সরকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেননি তার কারণ হলো এই ব্যবস্থা তাঁদের যুগে ছিল না। তাঁদের রাষ্ট্রের শাসককে শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিবর্তন করা যেত না। তাই তারা সাধারণত শাসক পরিবর্তনের চেষ্টা না করে সংশোধনের চেষ্টা করতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে সে সুযোগ আছে। আমরা যদি তা ব্যবহার না করি তবে দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবো:

প্রথমত, সৎকাজে আদেশ ও সমাজে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড পরিবর্তন করে পরিপূর্ণ ইসলাম প্রতিষ্ঠার একটি বড় মাধ্যম আমরা হারাব।

দ্বিতীয়ত, বর্তমানে সমাজে যারা ইসলামী মূল্যবোধের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা চান না, তারা এই (গণতান্ত্রিক) মাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ রোধ করবেন। এ কারণে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল প্রচেষ্টার মোকাবিলা করাও আমাদের দায়িত্ব।

এ জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে একটি নব উদ্ভাবিত উপকরণ হিসাবে বিবেচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে ইসলামী শরীয়তের শিক্ষার আলোকে শরীয়ত সম্মত ভাবে সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধ ইত্যাদি ইসলামের সুনির্দিষ্ট ইবাতদ পালনের মাধ্যম হিসাবে একে ব্যবহার করতে হবে।

আল্লাহ তা'য়ালা ইসলামকে সকল যুগের, সকল জাতির, সকল মানুষের পালন ও অনুসরণ যোগ্য করে প্রেরণ করেছেন। জাগতিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জনকল্যাণমূলক ও প্রাকৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে ইসলামেখুবই প্রশস্ততা রাখা হয়েছে। যেন প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক জাতির মানুষ তাদের সমাজের প্রচলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় রীতিনীতির মধ্য থেকেই পরিপূর্ণ ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। এরই একটি দিক হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দিক।

ভোট দেয়া জরুরী:
----------------
প্রত্যেক ব্যক্তির স্বীয় সাধ্যানুযায়ী দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসার ও বাস্তবায়ন এবং গোনাহ ও জুলুমকে রুখে দেয়ার তাকীদ কুরআনও হাদীসে এসেছে। তাই জাতিকে জুলুম ও নিপীড়ণ থেকে বাঁচাতে, সেই সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের জালিম ও ইসলাদ্রোহীর হাত থেকে রক্ষা করতে এবং সকল বাতিল মতবাদের উপর দ্বীন ইসলাম কে বিজয়ী করতে ভোট প্রদান করা আবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ (সা) কে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য পাঠানো হয়েছে। কুরআনের ভাষায় - 

هُوَ ٱلَّذِىٓ أَرْسَلَ رَسُولَهُۥ بِٱلْهُدَىٰ وَدِينِ ٱلْحَقِّ لِيُظْهِرَهُۥ عَلَى ٱلدِّينِ كُلِّهِۦ.

তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীন তথা সকল মতবাদ ও শাসন -ব্যবস্থার উপর তা বিজয়ী করে দেন।
(দেখুনঃ- সূরা তওবাঃ৩৩, সূরা ফাতাহঃ২৮, সূরা সফঃ০৯) 

তাছাড়া আল্লাহর আইন পরিত্যাগ করে তাগুতী শাসন -ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা করা মারাত্মক জুলুম। দেখুনঃ-

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ 
.
আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।
(সূরা মায়িদাঃ৪৫)

জুলুম ও ইসলাম বিদ্বেষী কাজ থেকে একদম হাত গুটিয়ে বসে থাকার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে। যেমন-
ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﺳَﻤِﻌْﻨَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻘُﻮﻝُ: ‏«ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻭُﺍ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻢَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﺄْﺧُﺬُﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻳَﺪَﻳْﻪِ، ﺃَﻭْﺷَﻚَ ﺃَﻥْ ﻳَﻌُﻤَّﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻌِﻘَﺎﺏ«ٍ

হযরত আবু বকর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন। যদি লোকেরা জালিম ব্যক্তিকে দেখেও তাকে বাঁধা না দেয়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাদের সবার উপর আযাব নাজিল করে দিতে পারেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৩৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫৩, সুনানে তিরমিজী, [বাশশার] হাদীস নং-২১৬৮, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০৫}

নিজের চোখের সামনে জালিম ও ইসলাম বিদ্বেষী নির্বাচিত হয়ে এসে জুলুমের ষ্টীমরোলার মুসলমানদের উপর চালালে, ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে, যে ব্যক্তি নির্বিকার বসে থেকে, মাজলুমের সহায়তা করে জালিমের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ না করে থাকে, উক্ত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে লাঞ্ছিত হবে। হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে-
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺃُﻣَﺎﻣَﺔَ ﺑْﻦِ ﺳَﻬْﻞِ ﺑْﻦِ ﺣُﻨَﻴْﻒٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ: ‏«ﻣَﻦْ ﺃُﺫِﻝَّ ﻋِﻨْﺪَﻩُ ﻣُﺆْﻣِﻦٌ ﻓَﻠَﻢْ ﻳَﻨْﺼُﺮْﻩُ، ﻭَﻫُﻮَ ﻳﻘَﺪِﺭُ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﺼُﺮَﻩُ ﺃَﺫَﻟَّﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻋَﻠَﻰ ﺭُﺀُﻭﺱِ ﺍﻟْﺨَﻠَﺎﺋِﻖِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ »

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তির সামনে কোন মুমিনকে অপমান করা হয়, অথচ তাকে সহায়তা করার ক্ষমতা উক্ত ব্যক্তির থাকা সত্বেও সে তাকে যদি সাহায্য না করে, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে সবার সামনে লাঞ্ছিত করবেন।
{মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৯৮৫, আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৫৫৫৪}

ভোট না দিয়ে বসে থাকা জায়েজ নয়:
--------------------------------- জালিম ও ইসলামদ্রোহী শক্তিকে রুখে দেয়ার শক্তি থাকা বা কর্মপদ্ধতি থাকা সত্বেও বসে থাকা জায়েজ নয়। যেমনটি উপরে বর্ণিত হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশে যেহেতু নির্বাচনকালীন সময়ে ভোটের দ্বারাই দেশের নিয়ন্ত্রকদের জুলুম ও ইসলাম বিদ্বেষী মানসিকতা রুখে দেয়া অনেকাংশে সম্ভব হয়ে থাকে। তাই এ পদ্ধতিকে ব্যাবহার না করে বসে থাকা জায়েজ হবে না। ভোট দিয়ে সাধ্যানুযায়ী বাতিল শক্তির প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করতে হবে।
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻜْﺘُﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻬَﺎﺩَﺓَۚ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻜْﺘُﻤْﻬَﺎ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺁﺛِﻢٌ ﻗَﻠْﺒُﻪُۗ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﻋَﻠِﻴﻢٌ 

তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে জ্ঞাত। 
(সূরা বাকারা-২৮৩)

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ‏«ﻣَﻦْ ﻛَﺘَﻢَ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓً ﺇِﺫَﺍ ﺩُﻋِﻲَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﻤَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﺑِﺎﻟﺰُّﻭﺭِ »

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকা হয়, কিন্তু সে তা দেয় না, তাহলে সে যেন অন্যায়ের পক্ষে সাক্ষ্য দিল।
{মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৯৪২, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৪১৬৭}

ﻋَﻦْ ﺯَﻳْﺪِ ﺑْﻦِ ﺧَﺎﻟِﺪٍ ﺍﻟْﺠُﻬَﻨِﻲِّ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ: ‏«ﺃَﻟَﺎ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺨَﻴْﺮِ ﺍﻟﺸُّﻬَﺪَﺍﺀِ؟ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺑِﺸَﻬَﺎﺩَﺗِﻪِ ﻗَﺒْﻞَ ﺃَﻥْ ﻳُﺴْﺄَﻟَﻬَﺎ »

হযরত জায়েদ বিন খালেদ জুহানী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের বলবো না যে, উত্তম সাক্ষ্য কে? ঐ ব্যক্তি যে, চাওয়া ছাড়াই সাক্ষ্য দিয়ে দেয়।
{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৬৮৩, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৬}

ভোট একটি আমানত:
-------------------
ভোট একটি আমানত। এটাকে যথেচ্ছা প্রয়োগকারী আমানতের খেয়ানতকারী সাব্যস্ত হবে। তার জন্য রয়েছে আখেরাতে ভয়াল শাস্তি। কাউকে ভোট দেয়া কোন আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়। বরং এটি একটি ধর্মীয় বিষয়ও। যাকে তাকে ভোট দেয়া ইসলাম সম্মত নয়। ইসলাম বিদ্বেষী, দেশ ও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর ব্যক্তিকে ভোট দেয়া মারাত্মক গোনাহের কাজ। 
মহান আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

وَتَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْبِرِّ وَٱلتَّقْوَىٰۖ وَلَا تَعَاوَنُوا۟ عَلَى ٱلْإِثْمِ وَٱلْعُدْوَٰنِۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَۖ إِنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ 

তোমরা সৎ কাজ করতে ও সংযমী হতে পরস্পরকে সাহায্য কর। তবে পাপ ও শক্রতার ব্যাপারে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করনা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা।
(সূরা মায়িদাঃ০২)
তাই বুঝে শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। দলীয় আবেগ, ব্যক্তির প্রতাপ, আত্মীয় বা প্রতিবেশি হওয়া ভোট পাওয়ার যোগ্যতার অন্তর্ভূক্ত নয়। ভোট পাওয়ার যোগ্য ঐ ব্যক্তিই হবে যিনি উক্ত পদে যোগ্য। দেশ ও ইসলামের পক্ষের শক্তি। যার দ্বারা দেশের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না। সমাজে বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে না। যার দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি সাধিত হবে না। এমন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আবশ্যক। আর অযোগ্য, ইসলাম বিদ্বেষী, আল্লাহর আইন বিরোধী, নাস্তিকপ্রিয়, দেশদ্রোহী, লুটতরাজকে ভোট দেয়া শরীয়ত গর্হিত কাজ।

শরীয়তের দৃষ্টিতে ভোট:
---------------------
ইসলামী শরীয়তে ভোট দেয়ার চারটি অবস্থা রয়েছে। যথা- 
১- স্বাক্ষ্য দান।
২- ওকীল নিযুক্তকরণ বা অর্পিত দায়িত্ব পালন।
৩- সুপারিশকরণ।
৪- আমানত

সাক্ষ্যদান:
---------
কোন পদের প্রার্থীকে উক্ত পদের জন্য ভোট দেয়ার মানে হল, ভোটার এ স্বাক্ষ্য প্রদান করছে যে, প্রার্থী যে পদের আশা করছে, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে সে পদের উপুযুক্ত উক্ত প্রার্থী। সুতরাং যদি উক্ত প্রার্থী প্রার্থিত পদের যোগ্য না হয়, বরং ক্ষমতায় বসে শরীয়ত বিরোধী কাজ করে, তাহলে ভোটার মারাত্মক গোনাহগার হবে। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗُﻠْﺘُﻢْ ﻓَﺎﻋْﺪِﻟُﻮﺍ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﺍ ﻗُﺮْﺑَﻰٰۖ.

যখন তোমরা কথা বল, তখন সুবিচার কর, যদিও সে আত্মীয় হয়। 
(সূর আনআম-১৫২)
 
ﻓَﺎﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺄَﻭْﺛَﺎﻥِ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﻗَﻮْﻝَ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ‏[ ٢٢ :٣٠ ]

সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক। 
(সূরা হজ্ব-৩০)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
ﻋَﻦْ ﺧُﺮَﻳْﻢِ ﺑْﻦِ ﻓَﺎﺗِﻚٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺻَﻠَﺎﺓَ ﺍﻟﺼُّﺒْﺢِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍﻧْﺼَﺮَﻑَ ﻗَﺎﻡَ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ: ‏«ﻋُﺪِﻟَﺖْ ﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﺑِﺎﻟْﺈِﺷْﺮَﺍﻙِ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ‏» ﺛَﻠَﺎﺙَ ﻣِﺮَﺍﺭٍ ،

হযরত খুরাইম বিন ফাতিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ একদা ফজর নামায শেষে দাঁড়িয়ে তিনবার বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আল্লাহর সাথে শিরক সমতুল্য অপরাধ। 
{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৬০৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৩৭২}

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮَﺓَ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﻻَ ﺃُﺧْﺒِﺮُﻛُﻢْ ﺑِﺄَﻛْﺒَﺮِ ﺍﻟﻜَﺒَﺎﺋِﺮِ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ: ﺑَﻠَﻰ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺍﻹِﺷْﺮَﺍﻙُ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﻋُﻘُﻮﻕُ ﺍﻟﻮَﺍﻟِﺪَﻳْﻦِ، ﻭَﺷَﻬَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ ﺃَﻭْ ﻗَﻮْﻝُ ﺍﻟﺰُّﻭﺭِ

হযরত হযরত আবু বাকরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, আমি কি তোমাদের সবচে’ বড় কবীরাগোনাহ সম্পর্কে বলে দিবো না? সাহাবাগণ বললেন, অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন রাসূল সাঃ বললেন, আল্লাহ তাআলার সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার নাফরমানী করা। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। বা মিথ্যা কথা
বলা। 
{সুনানে তিরমিজী [বাশশার], হাদীস নং-২৩০১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৯৭৬, ৫৬৩১, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৩}

ওকীল নিযুক্ত করণ বা দায়িত্বপালন:
-------------------------------
ভোটের সময় ভোটারের ভোট পুরো জাতির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। ভোটার তার ভোট দেয়ার মাধ্যমে জাতির প্রতিনিধি নির্বাচনে পুরো জাতির পক্ষ থেকে যিম্মাদার হিসেবে রায় পেশ করে থাকে। পুরো জাতির যিম্মাদার হিসেবে উক্ত রায় পেশ করার সময় যদি দলীয় সংকীর্ণতা, স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, আর কারো প্রতাপের সামনে নতি স্বীকার করে তুলনামূলক যোগ্য ও ইসলামপ্রিয় প্রার্থীকে রেখে অযোগ্য বা দেশ ও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর প্রার্থীকে ভোট প্রদান করে, তাহলে জাতির পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালনে লোকটি খেয়ানতকারীরূপে সাব্যস্ত হবে। আর যিম্মাদারের দায়িত্বে অবহেলা তথা স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারে হাদীসে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে।

ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﻮَﻟَّﻰ ﻣِﻦْ ﺃُﻣَﺮَﺍﺀِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌْﻤَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻭَﻫُﻮَ ﻳَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻥَّ ﻓِﻴﻬِﻢْ ﻣَﻦْ ﻫُﻮَ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﻭَﺃَﻋْﻠَﻢُ ﻣِﻨْﻪُ ﺑِﻜِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠﻪِ ﻭَﺳُﻨَّﺔِ ﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ، ﻓَﻘَﺪْ ﺧَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻭَﺟَﻤِﻴﻊَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻙَ ﺣَﻮَﺍﺋِﺞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟَﻢْ ﻳَﻨْﻈُﺮِ ﺍﻟﻠﻪُ ﻓِﻲ ﺣَﺎﺟَﺘِﻪِ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘْﻀِﻲَ ﺣَﻮَﺍﺋِﺠَﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺆَﺩِّﻱ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﺑِﺤَﻘِّﻬِﻢْ ،

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মুসলমানদের পক্ষ থেকে কোন বিষয়ে যিম্মাদার নিযুক্ত হয়, তারপর সে তাদের উপর কোন ব্যক্তিকে (কোন কাজের) কর্মকর্তা নিযুক্ত করে, অথচ সেজানে যে, মানুষদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে, যে তার চেয়েও অধিক যোগ্য এবং কুরআনও হাদীসের অধিক জ্ঞান রাখে, তবে সে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে খেয়ানত করল। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজনকে পূর্ণ করল না, আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির প্রয়োজনও পূর্ণ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না উক্ত ব্যক্তি মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করে এবং তাদের হক আদায় করে দেয়। 
{আলমুজামুল কাবীর লিততাবারানী-১১২১৬}

সুপারিশকরণ:
------------
ভোটার তার স্বীয় ভোট কোন প্রার্থীকে দেয়ার মানে হল, ভোটার উক্ত ব্যক্তির প্রার্থিত পদের ব্যাপারে যোগ্য বলে সুপারিশ করছে। তার সাফাই গাইছে। সুতরাং প্রার্থী যদি অযোগ্য হয়, আল্লাহর আইন অমান্য করে মানব রচিত আইন অনুযায়ী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাহলে অন্যায় কাজে সুপারিশ করার কারণে সুপারিশকারী তথা ভোটার গোনাহগার হবে। এমনকি উক্ত ভোটের কারণে নির্বাচিত হয়ে প্রার্থী যত শরীয়ত বিরোধী কাজ করবে, খারাপ কাজ করবে এর গোনাহের ভাগিদারও ভোটার ব্যক্তি হবে। তাই ভেবে-চিন্তে ভোট দিতে হবে।
এ বিষয়ে আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেনঃ

ﻣَّﻦ ﻳَﺸْﻔَﻊْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُ ﻧَﺼِﻴﺐٌ ﻣِّﻨْﻬَﺎۖ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺸْﻔَﻊْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻳَﻜُﻦ ﻟَّﻪُ ﻛِﻔْﻞٌ ﻣِّﻨْﻬَﺎۗ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻰٰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻣُّﻘِﻴﺘًﺎ ‏[ ٤ : ٨٥ ]

যে লোক সৎকাজের জন্য কোন সুপারিশ করবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক সুপারিশ করবে মন্দ কাজের জন্যে সে তার বোঝারও একটি অংশ পাবে। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল। 
(সূরা নিসা-৮৫)

আমানত:
--------
ভোটারের ভোটটি একটি আমানত। পুরো জাতির পক্ষ থেকে তা সঠিক ও যোগ্য স্থানে প্রয়োগের জন্য তা সংরক্ষিত আমানত। তা অযোগ্য, আল্লাহদ্রোহী ও ইসলাম বিরোধী ব্যক্তিকে দেয়া মানে হল আমানতের খিয়ানত করা। খুবই মারাত্মক গোনাহের কাজ। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ

ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﺄْﻣُﺮُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﺗُﺆَﺩُّﻭﺍ ﺍﻟْﺄَﻣَﺎﻧَﺎﺕِ ﺇِﻟَﻰ ﺃَﻫْﻠِﻬَﺎ

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আদেশ দিয়েছেন আমানতকে তার সঠিক হকদারের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য।
(সূরা নিসা-৫৮)

হাদীসে এসেছে
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ: ‏«ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﺸَﺎﺭُ ﻣُﺆْﺗَﻤَﻦ«ٌ

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হবে উক্ত ব্যক্তির বিশ্বস্ততা রক্ষা করতে হবে।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৭৪৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫১২৮}

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺫَﺭٍّ، ﻗَﺎﻝَ : ﻗُﻠْﺖُ: ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ، ﺃَﻟَﺎ ﺗَﺴْﺘَﻌْﻤِﻠُﻨِﻲ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻀَﺮَﺏَ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻨْﻜِﺒِﻲ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ‏« ﻳَﺎ ﺃَﺑَﺎ ﺫَﺭٍّ، ﺇِﻧَّﻚَ ﺿَﻌِﻴﻒٌ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺃَﻣَﺎﻧَﺔُ، ﻭَﺇِﻧَّﻬَﺎ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺧِﺰْﻱٌ ﻭَﻧَﺪَﺍﻣَﺔٌ، ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﻦْ ﺃَﺧَﺬَﻫَﺎ ﺑِﺤَﻘِّﻬَﺎ، ﻭَﺃَﺩَّﻯ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻓِﻴﻬَﺎ »

হযরত আবু জর গিফারী রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল সাঃ এর কাছে আরজ করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে কোন স্থানে হাকীম বা ওলী কেন বানিয়ে দেন না? রাসূল সাঃ (মোহাব্বতের সাথে) তার স্বীয় হাত আমার কাঁধের উপর রাখলেন। আর বললেন, আবু জর! তুমি নরম মনের মানুষ। আর এটি হল একটি বড় আমানত। (যা আদায় করা খুবই জরুরী।) নতুবা কিয়ামতের দিন তা লজ্জায় ফেলে দিবে। তবে যে ব্যক্তি এটি পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করতে পারে এবং তা আদায় করতে পারে তার বিষয়টি ভিন্ন। 
{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৫২৫}

কাকে ভোট দিবেন?:
-----------------
যে ব্যক্তি যে পদের অধিক যোগ্য, ইসলাম ও মুসলমানদের বন্ধু এবং তাগুতী শাসন -ব্যবস্থা উৎখাত করে আল্লাহ প্রদত্ত শাসন -ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় এমন ব্যক্তিদের ভোট দিয়ে খিলাফাত কায়েমের জন্য এগিয়ে আসা জরুরি। যদি এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি নাও পাওয়া যায় তবুও তুলনামূলক এ গুণ যার মধ্যে কম তার থেকে ভোট পাওয়ার অধিক যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এটাই মূলনীতি বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোট দেয়ার। যিনি দেশ ও জাতির এবং ইসলামের জন্য অধিক উপকারী ব্যক্তি বলে সাব্যস্ত হবেন, তাকে ভোট দেয়ার দ্বারা স্বীয় দায়িত্ব আদায় হবে ইনশাআল্লাহ। বাকি সর্বদা চেষ্টা করতে হবে যেন পরিপূর্ণ ইসলামী খিলাফত কায়েম করা যায়।

কুরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ

ﻭَﻗَﺪْ ﻓَﺼَّﻞَ ﻟَﻜُﻢ ﻣَّﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﺍﺿْﻄُﺮِﺭْﺗُﻢْ ﺇِﻟَﻴْﻪِۗ ‏[ ٦ :١١٩

যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন;কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল,যখন তোমরা নিরূপায় হয়ে যাও। (সূরা আনআমঃ ১১৯)

মৃত জীব, রক্ত, শুকরের গোস্ত এবং গাইরুল্লাহ নামে জবাইকৃত পশু হারাম হওয়া সত্বেও তীব্র প্রয়োজনের সময় তা ভক্ষণ করার অনুমতি প্রদান করে ইরশাদ হচ্ছেঃ

ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺣَﺮَّﻡَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻴْﺘَﺔَ ﻭَﺍﻟﺪَّﻡَ ﻭَﻟَﺤْﻢَ ﺍﻟْﺨِﻨﺰِﻳﺮِ ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﺑِﻪِ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِۖ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍٍ ﻭَﻟَﺎ ﻋَﺎﺩٍ ﻓَﻠَﺎ ﺇِﺛْﻢَ ﻋَﻠَﻴْﻪِۚ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ‏[ ٢ : ١٧٣ ]

তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন,মৃত জীব,রক্ত,শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়,তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। 
(সূরা বাকারা-১৭৩)

আরেক আয়াতে কারীমায় এসেছেঃ

ﻗُﻞ ﻟَّﺎ ﺃَﺟِﺪُ ﻓِﻲ ﻣَﺎ ﺃُﻭﺣِﻲَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣُﺤَﺮَّﻣًﺎ ﻋَﻠَﻰٰ ﻃَﺎﻋِﻢٍ ﻳَﻄْﻌَﻤُﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻥ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻣَﻴْﺘَﺔً ﺃَﻭْ ﺩَﻣًﺎ ﻣَّﺴْﻔُﻮﺣًﺎ ﺃَﻭْ ﻟَﺤْﻢَ ﺧِﻨﺰِﻳﺮٍ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺭِﺟْﺲٌ ﺃَﻭْ ﻓِﺴْﻘًﺎ ﺃُﻫِﻞَّ ﻟِﻐَﻴْﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑِﻪِۚ ﻓَﻤَﻦِ ﺍﺿْﻄُﺮَّ ﻏَﻴْﺮَ ﺑَﺎﻍٍ ﻭَﻟَﺎ ﻋَﺎﺩٍ ﻓَﺈِﻥَّ ﺭَﺑَّﻚَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَّﺣِﻴﻢٌ ‏[ ٦ :١٤٥ ]

(হে নবী!) আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে ভক্ষণ
 করে; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে (তা ভক্ষণ করে) এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্গন করে না, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু। 
(সূরা আনআম-১৪৫)

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা পরিস্কার হারাম বস্তুও তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে সাময়িক হালাল হবার কথা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় প্রকাশ করছে। যা আমাদের একটি মূলনীতি শিক্ষা দিচ্ছে যে, তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে হারাম বস্তুও সাময়িকভাবে জায়েজ হয়ে যায়।

ইসলামী ফিক্বহের কয়েকটি মূলনীতি এ বিষয়ে জেনে নেয়া ভাল। যেমন-

ﺍﻟﻀﺮﻭﺭﺍﺕ ﺗﺒﻴﺢ ﺍﻟﻤﻈﻮﺭﺍﺕ
তীব্র প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়।
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২০}


ﺍﻟﻀﺮﺭ ﻳﺪﻓﻊ ﺑﻘﺪ ﺍﻹﻣﻜﺎﻥ
যথা সম্ভব ক্ষতিকর বস্তুকে বিদূরিত করা হবে। 
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-৩০}


ﺍﻟﻀﺮﺭ ﺍﻷﺷﺪ ﻳﺰﺍﻝ ﺑﺎﻟﻀﺮﺭ ﺍﻷﺧﻒ
তুলনামূলক অধিক ক্ষতিকর বস্তুকে কম ক্ষতিকর বস্তু দিয়ে হলেও বিদূরিত করা হবে। 
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২৬}

ﻳﺘﺤﻤﻞ ﺍﻟﻀﺮﺭ ﺍﻟﺨﺎﺹ ﻟﺪﻓﻊ ﺿﺮﺭ ﻋﺎﻡ
ব্যাপক ক্ষতি দূর করতে ব্যক্তিগত ক্ষতিকে মেনে নেয়া হবে। 
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২৫}

ﺩﺭﺀ ﺍﻟﻤﻔﺎﺳﺪ ﺍﻭﻟﻰ ﻣﻦ ﺟﻠﺐ ﺍﻟﻤﻨﺎﻓﻊ
উপকার অর্জনের চেয়ে ক্ষতিরোধ করা উত্তম। {শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ
জারক্বা, কায়দা নং-২৯}

ﺍﺫﺍ ﺗﻌﺎﺭﺽ ﻣﻔﺴﺪﺗﺎﻥ ﺭﻭﻋﻰ ﺃﻋﻈﻤﻬﻤﺎ ﺿﺮﺭﺍ ﺑﺈﺭﺗﻜﺎﺏ ﺃﺧﻔﻬﻤﺎ
যখন দুটি ক্ষতিকর বস্তু পরস্পর মুখোমুখি হবে, তখন ছোটটি মেনে বড়টিকে দূর করা হবে। 
{শরহুল কাওয়ায়িদিল ফিক্বহ লিজ জারক্বা, কায়দা নং-২৭}

ভোটের প্রচারণা করা:
-------------------
যে ব্যক্তিকে শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ভোট দেয়া জায়েজ বা উত্তম উক্ত ব্যক্তির পক্ষে ভোটের প্রচারণা করাও জায়েজ। আর যাকে ভোট দেয়া জায়েজ নয় তার পক্ষে ভোটের প্রচারণা করাও জায়েজ নয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 

ﻭَﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺒِﺮِّ ﻭَﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯٰۖ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺈِﺛْﻢِ ﻭَﺍﻟْﻌُﺪْﻭَﺍﻥِۚ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَۖ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﺍﻟْﻌِﻘَﺎﺏِ 
.
সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। 
(সূরা মায়িদা-২)
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য করতে হবে
যেন, এতে করে কারো কোন কষ্ট না হয়।

ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
-----------------------------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামি চিন্তাবিদ গ্রন্থপ্রনেতা আলোচক ও দাঈ। 

Post a Comment

0 Comments