Recent Tube

মুক্তি যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এই জ্ঞানপাপীরা হয় জানে না,আর না হয় জেনে অস্বীকার করছে? ইবনে যুবাইর।



 মুক্তি যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এই জ্ঞানপাপীরা হয় জানে না,আর না হয় জেনে অস্বীকারছে? 


কিছু মুর্খপন্ডিত এবং নিরেট জ্ঞানপাপী ৭১ প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামীর দিকে তীর ছুঁড়ে মজা লুটে। মুক্তি যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এই জ্ঞানপাপীরা হয় জানে না,আর না হয় জেনে অস্বীকার করছে। 

মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার ‘১৯৭১ : ভেতরে বাইরে’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথম আলো গ্রুপের প্রকাশনা সংস্থা, প্রথমা।সাম্প্রতিক আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বইটি উদ্বোধন করেন। বইটির ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তাজউদ্দিনকন্যা শরমিন আহমদের বইও এ বুদ্ধিজীবীরাই মোড়ক উন্মোচন করে আলোচনা করেছিলেন। সে বই নিয়ে আওয়ামী মহলে খুব একটা হইচই পড়েনি। কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, তার স্বামী জঙ্গিবাদী মুসলমান। সেই সূত্রে তিনি এরকম একটি বই লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। তারপর পত্রিকায় দেখলাম, সরকারের তরফ থেকে কোনো হইচই না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে-ও খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। তারপর গেল একে খন্দকারের বই। এ বইয়ের কিছু অংশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 
তাতে আছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের কোনো পূর্ব প্রস্তুতিই ছিল না। আর আওয়ামী লীগ যেটাকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা বলে চালিয়ে আসছে, সেটি হলো তার ৭ মার্চের ভাষণ। তাতে অনেক কথার পর শেখ মুজিবুর রহমান একটি মাত্র বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন। তা হলো, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের এ ভাষণ শেখ মুজিবুর রহমান এই বলে শেষ করেন যে, ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান; খোদা হাফেজ।’ এটি কোনো বিবেচনাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা হতে পারে না। আওয়ামী লীগের আপত্তি, শেখ মুজিব তার ভাষণে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেননি। ৭ মার্চের (১৯৭১) জনসভায় লাখো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আমি নিজেও ছিলাম সেই সমাবেশে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন সেখানে।
আমরা কেউ নাবালক ছিলাম না। তখন আমার বয়স ১৮। জগন্নাথ কলেজে পড়ি। মৃত লোককে সাক্ষী মানতে চাই না। তবু বলব, আর্ট কলেজের পাশে যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা শেখ মুজিবের ভাষণ শুনছিলাম। তখন আমার পাশে ছিলেন মোহাম্মদ তোয়াহা এবং দৈনিক পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রতিবেদক মাশির হোসেন। চেনা আরও কেউ কেউ ছিলেন, যাদের নাম এখন ভুলে গেছি। আমরা কেউ জয় পাকিস্তান শুনে আশ্চর্যান্বিত হইনি। কারণ তখনও আমাদের ভেতরে একটি আশা ছিল যে, পাকিস্তান সরকার শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবে।শেখ মুজিবের ঐ দিনের ভাষণের পর জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে তার আলোচনার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়নি। শেখ মুজিবের ঐ ঘোষণা যদি স্বাধীনতার ঘোষণাই হতো, তাহলে সঙ্গত কারণেই ধরে নেয়া যায় যে, জেনারেল ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার তার সঙ্গে পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান ও ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে না। এমনকি পরে ইয়াহিয়া খান সিদ্দিক সালেকের ভাষ্য অনুযায়ী, তার জেনারেলদের শেখ মুজিবের সামনে ডেকে বলেছিলেন, ‘জেন্টালমেন, মিট ইওর নেক্সড প্রাইম মিনিস্টার।’ ফলে শেষ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান আশাবাদী ছিলেন যে, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। আলোচনা চলেছিল ২৩ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত। জেনারেল ইয়াহিয়া ঢাকায় ছিলেন। মুজিবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জুলফিকার আলী ভুট্টোও ঢাকায় ছিলেন। আলোচনাও চলছিল। দিন শেষে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে আমাদের জানানো হচ্ছিল যে, আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এরপর ইয়াহিয়া খান পার্লমেন্ট অধিবেশন স্থগিত করে পশ্চিম পাকিস্তানে ফেরত যান। ভুট্টো আরও একদিন ছিলেন। তিনিও গোপনে পাকিস্তানে পাড়ি দেন। ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম এদের মধ্যে দূতিয়ালি করছিলেন। তাকে দুইবার শেখ মুজিবুর রহমান হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পাঠান। তিনি ইয়াহিয়া ও ভুট্টোর প্রস্থানের খবর নিয়ে আসেন। তখন শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ওরা আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। 
তারপরেও ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তাজউদ্দিন আহমদ যখন শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতা ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে বা টেপ রেকর্ডারে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করতে অনুরোধ করেন, তখনও তিনি বলেছিলেন, এটি করলে পাকিস্তানীরা আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীর অভিযোগ আনতে পারবে। অর্থাৎ ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের স্বপ্ন তখনও তার মন থেকে তিরোহিত হয়নি। তাজউদ্দিন আহমদ যখন তার কাছে জানতে চান, তার (শেখ মুজিব) অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্বের কী হবে! শেখ মুজিব তার কোনো জবাব দেননি; বরং বলেছিলেন, ২৭ মার্চ হরতাল ডেকেছি। ‘গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাও।’ তাজউদ্দিন আহমদ বিরক্ত হয়ে চলে আসার পর আসম আবদুর রবসহ কয়েকজন তরুণ নেতা শেখ মুজিবের বাসায় গিয়ে বলেছিলেন, তারা শেখ মুজিবকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ছয়টি রুট তৈরি রেখেছেন। কোন পথে তিনি যেতে চান? শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বলেছিলেন, তোরা পালা। আমার ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি। শারমিন আহমদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি পাকিস্তান বাহিনীর কাছে ধরা দেয়ার জন্য হোল্ডঅল গুছিয়ে রেখেছিলেন। ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ভাষ্য অনযায়ী, দুই পাকিস্তানী সেনা ঐ হোল্ডঅল মাথায় করে গাড়িতে নামায় এবং শেখ মুজিব, বেগম মুজিব ও রাসেলকে আদর করে মিলিটারির গাড়িতে গিয়ে ওঠেন।
এসব ইতিহাসের সত্য। নানাভাবে নানা জায়গায় লিপিবদ্ধ আছে। কেউ তা পরোয়া করতে চায়নি। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে বলতে হয়, ইতিহাস বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ যা বলবে, সেটাই ইতিহাস। আর সকলকে তা মেনে নিতে হবে। 
একে খন্দকারের বই প্রকাশের পর ধারণা করি না যে, আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এখন পর্যন্ত বইটি পড়েছেন বা দেখেছেন। আমি নিজেও পড়িনি। কারণ প্রথম আলো অফিসের নিচতলায় প্রথমার যে স্টল আছে সেখানেও বইটি পাওয়া যাচ্ছে না। আজিজ সুপার মার্কেটে প্রথমার স্টলেও বইটি এখন নেই। তারা জানিয়েছেন আসবে। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান জয় পাকিস্তান বলেছিলেন কিনাÑ এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্য ইস্যু। মুক্তিযুদ্ধের উপ-অধিনায়ক এয়ারভাইস মার্শাল একে খন্দকার লিখেছেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন, ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে। আওয়ামী লীগের যত রাগ ঐ জয় পাকিস্তান নিয়ে। একে খন্দকার ‘জয় পাকিস্তানে’র কথা এই প্রথম বলেননি। তার আগে অনেকেই এই সত্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। 
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম গণপরিষদে সরকারি দলের চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ২০০২ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক ‘বলেছি, বলছি, বলবো’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে বক্তব্য দিলেন, তা যেমন ছিল ঐতিহাসিক, তেমনই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বললেন বটে, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। কিন্তু ঘোষণা দিলেন না আনুষ্ঠানিকভাবে। শেষ করলেন, জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে। (পৃ-৩৭)
১৯৬৮-৬৯ সময়ে আওয়ামী লীগের ঘোর দুর্দিনে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন আমেনা বেগম। ১৯৭৬ সালের ২৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন, এটা ঠিক নয়। ৭ মার্চে (১৯৭১) এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম বললেও একই বক্তৃতায় জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান বলেছেন।’ (সাপ্তাহিক বিচিত্রা ৫/১১/১৯৭৬)
১৯৯৭ সালের ২ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা চেতনামঞ্চ কর্তৃক আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষক কেন্দ্রসংলগ্ন সড়কদ্বীপে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তৎকালীন সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভাষণের শেষে জয় বাংলা বলে পরে জয় পাকিস্তান বলা হয়েছিল।’ এখন সেটা উল্লেখ না করাকে তিনি ইতিহাস বিকৃতি বলে উল্লেখ করেন। (দৈনিক দিনকাল, ৩ মার্চ ১৯৯৭)
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘বাংলাদেশের তারিখ (১৯৯৮)’ গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় আছে যে, শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণের শেষে ‘জয় বাংলা, জিয়ে পাকিস্তান বলেছিলেন।’( বুধবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ;Esangarm) 
নিজের লেখা বই ‘১৯৭১: ভেতরে-বাইরে’র বিতর্কিত অংশের জন্য সংবাদ সম্মেলন করে জাতির কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের উপসর্বাধিনায়ক ও সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার (বীরউত্তম)। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ উঠায় বইয়ের সেই বিতর্কিত অংশটুকু প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এই লেখক।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রকাশিত এই বইটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বইটির একটি অংশে এ কে খন্দকার লিখেন যে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশে নিজের ভাষণ শেষ করে ‘জয় পাকিস্তান’ বলে স্লোগান দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেসময় বইটি নিষিদ্ধ করারও দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এই পরিকল্পনামন্ত্রীর বিচারও দাবি করেন অনেকে।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কে খন্দকার জানান যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান। তিনি বইয়ের বিতর্কিত অংশের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে চান। আজ প্রকাশ্যে সেই ক্ষমা চাইলেন।(যুগান্তর ১ জুন, ২০১৯)
তিনি ইতিহাসের চরম সত্যকে প্রথমে স্বীকার এবং রাজনৈতিক চাপে পড়ে একটি নিরেট সত্যকে অস্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিজের অস্তিত্বকে ছোট না করলেই ভাল করতেন!!

Post a Comment

0 Comments