Recent Tube

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত; শামীম আজাদ।







 

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত;
--------------------------------- 


    লাইলাতুল কদর ( لیلة القدر‎‎) এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান।

      পবিত্র কুরআন ও হাদীস দ্বারা লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ‘শব-ই-বরাত’ নিয়ে এবং শব-ই-বরাতের হাদীসগুলোর বর্ণনা নিয়ে হাদীস বিশেষজ্ঞ ও ফকিহ্দের মধ্যে যে সংশয় রয়েছে- লাইলাতুল ক্বদরের ব্যাপারে তার কোনই অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন, নির্ভরযোগ্য হাদীস এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর লাইলাতুল ক্বদরের জন্য গৃহীত কর্মতৎপরতা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

  এ সম্মানিত রজনীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, 

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ. وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ . لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
‘আমি এ (কুরআনকে) ক্বদরের রাতে নাজিল করেছি। তুমি কি জান, ক্বদরের রাত কি? ক্বদরের রাত হাজার মাস হতেও উত্তম-কল্যাণময়’।
সুরা আল ক্বদরঃ ১-৩

   এ রাতটি কোন মাসে? 
এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআ'লা বলেন, 

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيَ أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
‘রমযান এমন মাস যাতে কুরআন নযিল হয়েছে-’।
সূরা বাকারাঃ ১৮৫

  এ রাতটি রমযানের কোন তারিখে? 

  রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একটি রহস্যময় কারণে তারিখটি সুনির্দিষ্ট করেননি

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: سُئِلَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ عَنْ لَيْلَةِ الْقَدْرِ فَقَالَ: «هِىَ فِىْ كُلِّ رَمَضَانَ». رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَقَالَ: رَوَاهُ سُفْيَانُ وَشُعْبَةُ عَنْ أَبِىْ إِسْحَقَ مَوْقُوفًا عَلَى ابْنِ عُمَرَ

     ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

      তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে লায়লাতুল কদর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, তা প্রত্যেক রমাযানে আসে। 
আবূ দাঊদ ১৩৮৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫২৬, য‘ঈফ আল জামি‘ ৬১০২, 
মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৯৩

وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ :كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يُجَاوِرُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، ويَقُوْل: «تَحرَّوا لَيْلَةَ القَدْرِ في العَشْرِ الأَوَاخرِ مِنْ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيْهِ

    আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ:

      তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিনে এতেকাফ করতেন এবং বলতেন, “তোমরা রমযানের শেষ দশকে শবেক্বদর অনুসন্ধান কর ।”
বুখারী ২০২০, ২০১৭, মুসলিম ১১৬৯, তিরমিযী ৭৯২, আহমাদ ২৩৭১৩, ২৩৭৭১, ২৩৯২৪, ২৫১৬২, রিয়াদুস সলেহিন ১১৯৯

وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ». رَوَاهُ البُخَارِىُّ

  আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কদর রজনীকে রমাযান (রমজান) মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করো।  
বুখারী ২০১৭, মুসলিম ১১৬৯, তিরমিযী ৭৯২, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৬৬০, আহমাদ ২৪৪৪৫, ২৪২৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৩১, ৮৫২৭, সহীহাহ্ ৩৬১৬, সহীহ আল জামি‘ ২৯২২, মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৮৩

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ ﷺ أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْمَنَامِ فِى السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «أَرٰى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِى السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِى السَّبْعِ الْأَوَاخِرِ». (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণিতঃ:

     তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কয়েক ব্যক্তিকে লায়লাতুল কদর (রমাযান (রমজান) মাসের) শেষ সাতদিনে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি দেখছি তোমাদের সকলের স্বপ্ন শেষ সাত রাতের ব্যাপারে এক। তাই তোমাদের যে ব্যক্তি কদর রজনী পেতে চাও সে যেন (রমাযান (রমজান) মাসের) শেষ সাত রাতে তা খুঁজে।  
বুখারী ২০১৫, মুসলিম ১১৬৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ১১৪৪, আহমাদ ৪৪৯৯, মু‘জামুল আওসাত ৩৮৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৪৪, সহীহ ইবনু হিববান ৩৬৭৫, সহীহ আল জামি‘ ৮৬৭, মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৮৪
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ قَالَ: الْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ: فِىْ تَاسِعَةٍ تَبْقٰى فِىْ سَابِعَةٍ تَبْقٰى فِىْ خَامِسَةٍ تَبْقٰى. رَوَاهُ البُخَارِىُّ

  ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

     তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা লায়লাতুল কদরকে রমাযান (রমজান) মাসের শেষ দশকে সন্ধান করো। লায়লাতুল কদর হলো নবম রাতে (অর্থাৎ- একুশতম রাতে), বাকী দিন হলো সপ্তম রাতে (সেটা হলো তেইশতম রাত), আর অবশিষ্ট থাকল পঞ্চম রাত (আর তা হলো পঁচিশতম) রাত।  
 বুখারী ২০২১, আবূ দাঊদ ১৩৮১, আহমাদ ২৫২০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫৩৩, শু‘আবূল ঈমান ৩৪০৭, সহীহ আল জামি‘ ১২৪৪, মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৮৫

     অবশ্য কোন কোন ইসলামী মনীষি নিজস্ব ইজতিহাদ, গবেষণা, গাণিতিক বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে রমযানের ২৬ তারিখের রাতে শব্-ই-ক্বদর হওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এটাকে সুনির্দিষ্ট করেননি বরং কষ্ট করে খুঁজে নিতে বলেছেন। 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - رضى الله عنه - أَنَّاللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِي بَعْضُ أَهْلِي فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ ‏"‏ ‏.‏ وَقَالَ حَرْمَلَةُ ‏"‏ فَنَسِيتُهَا ‏"‏ ‏.

  আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাকে স্বপ্নে ক্বদরের রাত দেখানো হয়েছিল। অতঃপর আমার পরিবারের কেউ আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর ফলে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা তা শেষ দশকে অন্বেষণ কর।
রাবী হারমালাহ্ (রহঃ) বলেছেনঃ  “আমি তা ভুলে গেছি” (ই.ফা. ২৬৩৫, ই.সে. ২৬৩৪)
মুসলিম ২৬৫৮

وَعَنْ أَبِىْ بَكْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُولُ: «الْتَمِسُوْهَا يَعْنِى لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِىْ تِسْعٍ يَبْقِيْنَ أَو فِىْ سَبْعٍ يَبْقِيْنَ أَو فِىْ خَمْسٍ يَبْقِيْنَ أَوْ ثَلَاثٍ أَوْ اٰخِرِ لَيْلَةٍ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ

 আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তোমরা লায়লাতুল কদরকে (রমাযান (রমজান) মাসের) অবশিষ্ট নবম রাতে, অর্থাৎ- ২৯তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে, অর্থাৎ- ২৭তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট পঞ্চম রাতে, অর্থাৎ- ২৫তম রাতে; অথবা অবশিষ্ট তৃতীয় রাতে, অর্থাৎ- ২৩তম রাতে; অথবা শেষ রাতে খোঁজ করো। (তিরমিযী)তিরমিযী ৭৯৪, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২১৭৫, সহীহ আল জামি‘ ১২৪৩। 
মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৯২

      মহান আল্লাহ্ চান বান্দাহ কয়েক রাত ইবাদতে গভীর মনোনিবেশ করে এ মহামূল্যবান রাতের সন্ধান পাক। আল্লাহ্ তার বান্দাহদের সবরের পরীক্ষায় ফেলেছেন। এ রহস্যের অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। পৃথিবীতে আমরা দেখি যা দুর্লভ তাই মূল্যবান। ভূগর্ভে অন্ধকার কয়লা খনির বিশেষ বিশেষ স্থানে মূল্যবান হীরার সন্ধান পাওয়া যায়। সে হীরা সন্ধান ও উত্তোলনে কত মূল্যবান জীবন-সম্পদ -শ্রম নিঃশেষ হয়ে যায়! চমৎকার পদ্মটি ফোটে সরোবরের মধ্যে, আর তা সংগ্রহের জন্য কষ্টের পাশাপাশি কাঁটার আঘাতও সহ্য করতে হয়। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও বিষয়টি সত্য। যে দ্রব্য অবাধ তার মূল্য নেই। যে দ্রব্যের যোগান সীমিত, যা অর্জনে পরিশ্রম করতে হয় তাকেই বলে অর্থনৈতিক দ্রব্য। আর এ দ্রব্যেরই বাজারে মূল্য রয়েছে। সহজ পরীক্ষা দিয়ে যথার্থ মেধা যাচাই করা যায় না। তাই আকর্ষণীয় বেতনে উচ্চ পদের জন্য পরীক্ষার অনেকগুলোর ধাপ অতিক্রম করতে হয়।

   তবে অন্য হাদীসে আসছে;

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أُنَيْسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أُنْسِيتُهَا وَأَرَانِي صُبْحَهَا أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ فَمُطِرْنَا لَيْلَةَ ثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ فَصَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَانْصَرَفَ وَإِنَّ أَثَرَ الْمَاءِ وَالطِّينِ عَلَى جَبْهَتِهِ وَأَنْفِهِ ‏.‏ قَالَ وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ أُنَيْسٍ يَقُولُ ثَلاَثٍ وَعِشْرِينَ ‏.

    ’আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাকে ক্বদরের রাত দেখানো হয়েছিল। অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। আমাকে ঐ রাতের ভোর সম্পর্কে স্বপ্ন আরও দেখানো হয়েছে যে, আমি পানি ও কাদার মধ্যে সাজ্দাহ্ করছি। রাবী বলেন, অতএব ২৩ তম রাতে বৃষ্টি হ’ল এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে (ফজরের) সলাত আদায় করে যখন ফিরলেন, তখন আমরা তাঁর কপাল ও নাকের ডগায় কাদা ও পানির চিহ্ন দেখতে পেলাম। রাবী ‘আবদুল্লাহ ইবনু উনায়স (রাঃ) বলতেন, তা ছিল ২৩ তম। (ই.ফা. ২৬৪২, ই.সে. ২৬৪১)
সহিহ মুসলিম ২৬৬৫

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَةَ بْنَ أَبِي لُبَابَةَ، يُحَدِّثُ عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ، عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، قَالَ أُبَىٌّ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَاللَّهِ إِنِّي لأَعْلَمُهَا وَأَكْثَرُ عِلْمِي هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقِيَامِهَا هِيَ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ - وَإِنَّمَا شَكَّ شُعْبَةُ فِي هَذَا الْحَرْفِ - هِيَ اللَّيْلَةُ الَّتِي أَمَرَنَا بِهَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏.‏ قَالَ وَحَدَّثَنِي بِهَا صَاحِبٌ لِي عَنْهُ ‏.

   উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

      তিনি ‘লাইলাতুল ক্বদ্‌র’ বা ক্বদ্‌রের রাত সম্পর্কে বলেনঃ আল্লাহর ক্বসম! আমি রাতটি সম্পর্কে জানি এবং এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে, যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন সেটিই অর্থাৎ সাতাশ তারিখের রাতই ক্বদ্‌রের রাত। হাদীসটির ঐ অংশ সম্পর্কে যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন।
শু‘বাহ্ সন্দেহ পোষন করেছেন। বর্ণনাকারী শু‘বাহ্ বলেছেনঃ আমার এক বন্ধু (‘আবদাহ্ ইবনু আবূ লুবাবাহ্ ) তার থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬৫৬, ই.সে. ১৬৬৩)
মুসলিম ১৬৭১

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ قَالَ ‏ "‏ لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ ‏"‏ ‏.

   মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

     নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলেছেনঃ লাইলাতুল ক্বদর সাতাইশের রাতে।
সুনানে আবু দাউদ ১৩৮৬

     সম্ভবতঃ এ ধরনের কোন একটি কারণেই মহিমান্বিত এ রাতটিকে মহান আল্লাহ্ রমযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লুকিয়ে রেখেছেন। বান্দাহ বিনিদ্র রজনী কাটাবে, সবর করবে এর মধ্যে খুঁজে পাবে সম্মানিত রাত, পাবে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত, ফেরেস্তার অদৃশ্য মোলাকাতে তার হৃদয় সিক্ত হবে, আপন রবের ভালবাসায় হবে সে উদ্বেলিত । এ যেন দীর্ঘ বিরহের পর আপনজনকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ। এ দীর্ঘ প্রতীক্ষার কষ্ট- বিরহের মাধ্যমে রব তার বান্দাহকে আরো আপন করে নেন। কাজেই শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদতে মশগুল হতে হবে। প্রতিটি রাতকেই লাইলাতুল ক্বদর মনে করতে হবে। তাহলে লাইলাতুল ক্বদর আল্লাহর মেহেরবানীতে হাতছাড়া হবে না ইনশাআল্লাহ্। ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮শে রমযানের দিবাগত রাতগুলোই হল শেষ দশকের বেজোড় রাত।

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، - رضى الله عنه - قَالَ اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعَشْرَ الأَوْسَطَ مِنْ رَمَضَانَ يَلْتَمِسُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ قَبْلَ أَنْ تُبَانَ لَهُ فَلَمَّا انْقَضَيْنَ أَمَرَ بِالْبِنَاءِ فَقُوِّضَ ثُمَّ أُبِينَتْ لَهُ أَنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فَأَمَرَ بِالْبِنَاءِ فَأُعِيدَ ثُمَّ خَرَجَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ ‏ "‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهَا كَانَتْ أُبِينَتْ لِي لَيْلَةُ الْقَدْرِ وَإِنِّي خَرَجْتُ لأُخْبِرَكُمْ بِهَا فَجَاءَ رَجُلاَنِ يَحْتَقَّانِ مَعَهُمَا الشَّيْطَانُ فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ الْتَمِسُوهَا فِي التَّاسِعَةِ وَالسَّابِعَةِ وَالْخَامِسَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ يَا أَبَا سَعِيدٍ إِنَّكُمْ أَعْلَمُ بِالْعَدَدِ مِنَّا ‏.‏ قَالَ أَجَلْ ‏.‏ نَحْنُ أَحَقُّ بِذَلِكَ مِنْكُمْ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ مَا التَّاسِعَةُ وَالسَّابِعَةُ وَالْخَامِسَةُ قَالَ إِذَا مَضَتْ وَاحِدَةٌ وَعِشْرُونَ فَالَّتِي تَلِيهَا ثِنْتَيْنِ وَعِشْرِينَ وَهْىَ التَّاسِعَةُ فَإِذَا مَضَتْ ثَلاَثٌ وَعِشْرُونَ فَالَّتِي تَلِيهَا السَّابِعَةُ فَإِذَا مَضَى خَمْسٌ وَعِشْرُونَ فَالَّتِي تَلِيهَا الْخَامِسَةُ .‏ وَقَالَ ابْنُ خَلاَّدٍ مَكَانَ يَحْتَقَّانِ يَخْتَصِمَانِ ‏.

  আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

     তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বদরের রাত অন্বেষণের উদ্দেশ্যে তা তাঁর কাছে সুস্পষ্ট হবার পূর্বে রমাযানের মধ্যেই দশদিন ই’তিকাফ করলেন। দশদিন অতিবাহিত হবার পর তিনি তাঁবু তুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। অতএব তা গুটিয়ে ফেলা হ’ল। অতঃপর তিনি জানতে পারলেন যে, তা শেষ দশ দিনের মধ্যে আছে। তাই তিনি পুনরায় তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন। তা খাঁটানো হ’ল। এরপর তিনি লোকদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে লোক সকল! আমাকে ক্বদরের রাত সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছিল এবং আমি তোমাদের তা জানানোর জন্য বের হয়ে এলাম। কিন্তু দু’ ব্যক্তি পরস্পর ঝগড়া করতে করতে উপস্থিত হ’ল এবং তাদের সাথে ছিল শাইত্বান। তাই আমি তা ভুলে গেছি। অতএব তোমরা রমাযান মাসের শেষ দশ দিনে অন্বেষণ কর। তোমরা তা ৯ম, ৭ম ও ৫ম রাতে অন্বেষণ কর। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ সা’ঈদ! আপনি সংখ্যা সম্পর্কে আমাদের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমরাই এ বিষয়ে তোমাদের চেয়ে অধিক হাক্বদার। আমি বললাম ৯ম, ৭ম, ৫ম সংখ্যাগুলো কী? তিনি বললেন, যখন ২১তম রাত অতিবাহিত হয়ে যায় এবং ২২তম রাত শুরু হয়-তখন তা হচ্ছে ৯ম তারিখ, ২৩তম রাত অতিক্রান্ত হবার পরবর্তী রাত হচ্ছে ৭ম তারিখ এবং ২৫তম রাত অতিবাহিত হবার পরের দিনটি হচ্ছে ৫ম তারিখ।

     ইবনু খাল্লাদের বর্ণনায়……. (আরবি)………-এর শব্দের স্থলে …… (আরবি)……শব্দের উল্লেখ আছে (অর্থ একই, অর্থাৎ তারা ঝগড়া করে)। (ই.ফা. ২৬৪১, ই.সে. ২৬৪০)
মুসলিম ২৬৬৪

  লাইলাতুল কদর রাতের আলামত 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، - رضى الله عنه - قَالَ تَذَاكَرْنَا لَيْلَةَ الْقَدْرِ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ‏ "‏ أَيُّكُمْ يَذْكُرُ حِينَ طَلَعَ الْقَمَرُ وَهُوَ مِثْلُ شِقِّ جَفْنَةٍ ‏"‏ ‏.

   আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

       তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে ক্বদরের রাত সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে সে (রাত) স্মরণ রাখবে, যখন চাঁদ উদিত হবে থালার একটি টুকরার ন্যায়। (ই.ফা. ২৬৪৬, ই.সে ২৬৪৫)
সহিহ মুসলিম ২৬৬৯

سَمِعَا زِرَّ بْنَ حُبَيْشٍ، يَقُولُ سَأَلْتُ أُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ - رضى الله عنه - فَقُلْتُ إِنَّ أَخَاكَ ابْنَ مَسْعُودٍ يَقُولُ مَنْ يَقُمِ الْحَوْلَ يُصِبْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ‏.‏ فَقَالَ رَحِمَهُ اللَّهُ أَرَادَ أَنْ لاَ يَتَّكِلَ النَّاسُ أَمَا إِنَّهُ قَدْ عَلِمَ أَنَّهَا فِي رَمَضَانَ وَأَنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ وَأَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ ‏.‏ ثُمَّ حَلَفَ لاَ يَسْتَثْنِي أَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ فَقُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ تَقُولُ ذَلِكَ يَا أَبَا الْمُنْذِرِ قَالَ بِالْعَلاَمَةِ أَوْ بِالآيَةِ الَّتِي أَخْبَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا تَطْلُعُ يَوْمَئِذٍ لاَ شُعَاعَ لَهَا ‏.

   যির ইবনু হুবায়শ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, আমি উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে বললাম, আপনার ভাই ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে- সে ক্বদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমাযান মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭ তম রজনী। অতঃপর তিনি দৃঢ় শপথ করে বললেন, তা ২৭ তম রজনী। আমি (যির) বললাম, হে আবুল মুনযির! আপনি কিসের ভিত্তিতে তা বলেছেন? তিনি বললেন, বিভিন্ন আলামত ও নিদর্শনের ভিত্তিতে-যে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে অবহিত করেছেন। যেমন, সেদিন সূর্য উদয় হবে। কিন্তু তাতে আলোকরশ্নি থাকবে না। (ই.ফা. ২৬৪৪, ই.সে. ২৬৪৩)
সহিহ মুসলিম ২৬৬৭

  حديث أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: اعْتَكَفْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ مِنْ رَمَضَانَ، فَخَرَجَ صَبِيحَةَ عِشْرَينَ، فَخَطَبَا، وَقَالَ: إِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أُنْسِيتُهَا أَوْ نُسِّيتُهَا، فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي الْوِتْرِ، وَإِنِّي رَأَيْتُ أَنِّي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلْيَرْجِعْ فَرَجَعْنَا وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءٍ قَزَعَةَ؛ [ص: 25] فَجَاءَتْ سَحَابَةٌ فَمَطَرَتْ حَتَّى سَالَ سَقْفُ الْمَسْجِدِ، وَكَانَ مِنْ جَرِيدِ النَّخْلِ، وَأَقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْجُدُ فِي الْمَاءِ وَالطِّينِ، حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ فِي جَبْهَتِهِ

    আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

      তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রমাযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল ক্বদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সাজদাহ করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খণ্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মাসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সলাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাদা-পানিতে সাজদাহ করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (বুখারী পর্ব ৩২ : /২ হাঃ ২০১৬,  মুসলিম  হাঃ)

 গুরুত্বঃ

    এ রাতের আর একটি গুরুত্ব হল এ পবিত্র রাতেই কুরআন নাযিল হয়েছে। আর এ কুরআনের সাথেই মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে। এ জন্য ক্বদরের আর একটি অর্থ হল- ভাগ্য। তাহলে লাইলাতুল ক্বদরের অর্থ হয় ভাগ্য রজনী। যে মানুষ, যে সমাজ, যে জাতি, কুরআনকে বাস্তব জীবন বিধান হিসাবে গ্রহণ করবে তারা পার্থিব জীবনে ও পরকালীন জীবনে সম্মানিত হবে। এ রাতে নাযিলকৃত কুরআনকে যারা অবহেলা করবে তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এ রাতেই মানব কল্যাণে আল্লাহ্ মানুষের জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ফেরেস্তাদের জানান। আল্লাহ তা’আলা বলেন- 

  فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
“এ রাতে প্রত্যেকটি ব্যাপারে অত্যন্ত বিজ্ঞান সম্মত ও সুদৃঢ় ফায়সালা জারী করা হয়।” 
সূরা দুখানঃ ৪

   মহান আল্লাহ তা'আলা  আরো বলেন- 

تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ  سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
“ফেরেশতা ও রূহ (জিব্রাইল আঃ) এ রাতে তাদের রব-এর অনুমতিক্রমে সব হুকুম নিয়ে অবতীর্ণ হয়, সে রাত পুরাপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।”
সূরা আল-ক্বদরঃ ৪-৫

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِذَا كَانَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ نَزَلَ جِبْرِيْلُ ؑ فِىْ كُبْكُبَةٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ يُصَلُّونَ عَلٰى كُلِّ عَبْدٍ قَائِمٍ أَوْ قَاعِدٍ يَذْكُرُ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدِهِمْ يَعْنِىْ يَوْمَ فِطْرِهِمْ بَاهٰى بِهِمْ مَلَائِكَتَه فَقَالَ: يَا مَلَائِكَتِىْ مَا جَزَاءُ أَجِيرٍ وَفّٰى عَمَلَه؟ قَالُوا: رَبَّنَا جَزَاؤُه أَنْ يُوَفّٰى أَجْرُه. قَالَ: مَلَائِكَتِىْ عَبِيدِىْ وَإِمَائِي قَضَوْا فَرِيضَتِىْ عَلَيْهِمْ ثُمَّ خَرَجُوا يَعُجُّونَ إِلَى الدُّعَاءِ وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ وَكَرَمِىْ وَعُلُوِّىْ وَارْتِفَاعِ مَكَانِىْ لَأُجِيْبَنَّهُمْ. فَيَقُوْلُ: ارْجِعُوْا فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ وَبَدَّلْتُ سَيِّئَاتِكُمْ حَسَنَاتٍ. قَالَ: فَيَرْجِعُونَ مَغْفُورًا لَهُمْ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيمَانِ

   আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘লায়লাতুল কদর’ শুরু হলে জিবরীল আমীন মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দলবলসহ (পৃথিবীতে) নেমে আসেন। তাঁরা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা আল্লাহর স্মরণকারী আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার জন্য দু‘আ করতে থাকেন। এরপর ঈদুল ফিতরের দিন এলে আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকার কাছে তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)! বলো দেখি সে প্রেমিকের কী পুরস্কার হতে পারে যে নিজ কাজ সম্পাদন করেছে? মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, হে আমাদের রব! তার পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে তার পুরস্কার। তখন আল্লাহ বলেন, আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)! আমার বান্দা ও বান্দীগণ তাদের ওপর আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। আজ (ঈদের দিন) আমার নিকট দু‘আর ধ্বনি দিতে দিতে ঈদগাহের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমার ইজ্জতের, বড়ত্বের, উঁচু শানের কসম! জেনে রাখো তাদের দু‘আ আমি নিশ্চয়ই কবূল করব। এরপর আল্লাহ বলেন, আমার (বান্দাগণ)! আমি নিশ্চয়ই তোমাদের সকল অপরাধ মাফ করে দিলাম। তোমাদের গুনাহখাতাগুলোকে নেক কাজে পরিবর্তন করে দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ী ফিরে যায়। (বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান)
শু‘আবূল ঈমান ৩৪৪৪। 
মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৯৬

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَكَذَا رَوَاهُ يَحْيَى بْنُ أَبِي كَثِيرٍ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو عَنْ أَبِي سَلَمَةَ ‏.‏

    আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি এ হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুত্রে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানে সওম পালন করে  তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ক্বিয়াম করে তারও পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করা হয়।
আবু দাউদ ১৩৭২

 عَنْ عُقْبَةَ، - وَهُوَ ابْنُ حُرَيْثٍ - قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، - رضى الله عنهما - يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ الْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ - يَعْنِي لَيْلَةَ الْقَدْرِ - فَإِنْ ضَعُفَ أَحَدُكُمْ أَوْ عَجَزَ فَلاَ يُغْلَبَنَّ عَلَى السَّبْعِ الْبَوَاقِي ‏"‏ ‏.

   উক্ববাহ্ ইবনু হুরায়স (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

      তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা (রমাযানের) শেষ দশ দিনে ক্বদ্‌রের রাত অনুসন্ধান কর। তোমাদের কেউ যদি দূর্বল অথবা অপরাগ হয়ে পড়ে, তবে সে যেন শেষের সাত রাতে অলসতা না করে। (ই.ফা. ২৬৩২, ই.সে. ২৬৩১)
মুসলিম ২৬৫৫

وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ

   আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি শবেক্বদরে (ভাগ্যরজনী অথবা মহীয়সী রজনীতে) ঈমানসহ নেকীর আশায় কিয়াম করে (নামায পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ ক’রে দেওয়া হয় ।”
বুখারী ৩৫, ৩৭, ৩৮, ১৯০১, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০, তিরমিযী ৬৮৩, নাসায়ী ২১৯৮ থেকে ২২০৭, ৫০২৭, আবূ দাঊদ ৩১৭১, ১৩৭২, আহমাদ ৭১৩০, ৭২৩৮, ৭৭২৯, ৭৮২১, ৮৭৭৫, ৯১৮২, ৯৭৬৭, ৯৯৩১, ১০১৫৯, ১০৪৬২, ২৭৫৮৩, ২৭৬৭৫, দারেমী ১৭৭৬, রিয়াদুস সলেহিন ১১৯৭

و حَدَّثَنِي زِيَاد عَنْ مَالِك أَنَّهُ سَمِعَ مَنْ يَثِقُ بِهِ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ يَقُولُ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُرِيَ أَعْمَارَ النَّاسِ قَبْلَهُ أَوْ مَا شَاءَ اللهُ مِنْ ذَلِكَ فَكَأَنَّهُ تَقَاصَرَ أَعْمَارَ أُمَّتِهِ أَنْ لَا يَبْلُغُوا مِنْ الْعَمَلِ مِثْلَ الَّذِي بَلَغَ غَيْرُهُمْ فِي طُولِ الْعُمْرِ فَأَعْطَاهُ اللهُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ.

   মালিক (র) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি নির্ভরযোগ্য আহলে ইলমকে বলতে শুনেছেন  রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর পূর্ববর্তী লোকদের আয়ু দেখান হয়। অথবা উহাতে যতটুকু আল্লাহ্ চেয়েছেন তা দেখান হয়। ফলে তিনি যেন তাঁর উম্মতের আয়ুকে সংক্ষিপ্ত মনে করলেন যার কারণে আমলের দিক দিয়ে তাঁরা পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁকে হাজার মাস হতে উত্তম লাইলাতুল ক্বদর প্রদান করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)
মুয়াত্তা ইমাম মালিক ৬৯১

 লাইলাতুল ক্বদরের ফজিলতগুলো সংক্ষেপে নিম্নরূপঃ

★★★ এ রাতটি হাজার মাস হতে উত্তম- কল্যাণময় (কুরআন)

★★★  এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাযিল করা হয়েছে। (কুরআন)

★★★ এ রাতে ফেরেস্তা নাযিল হয় এবং আবেদ বান্দাহদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান, শু‘আবূল ঈমান ৩৪৪৪, মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৯৬

★★★ ফজর পর্যন্ত এ রাতে পুরাপুরি শান্তি ও নিরাপত্তার। (কুরআন)

 ★★★  এ রাতে প্রত্যেকটি গুরুত্ব ব্যাপারে সুদৃঢ় ফায়সালা জারী করা হয়। (কুরআন)

 ★★★ এ রাতে ইবাদতে মশগুল বান্দাদের জন্য অবতরণকৃত ফেরেশতারা দু’আ করেন। বায়হাক্বী- শু‘আবূল ঈমান,
শু‘আবূল ঈমান ৩৪৪৪, মিশকাতুল মাসাবিহ ২০৯৬

  গুনাহ মাফঃ 

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهٗ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

   আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

     তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় রমাযান (রমজান) মাসে সিয়াম পালন করবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় ‘ইবাদাতে রাত কাটাবে, তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় লায়লাতুল কদরে ‘ইবাদাতে কাটাবে তারও আগের সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।  
বুখারী ৩৮, ১৮০২, ১৯১০, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০, আবূ দাঊদ ১৩৭২, নাসায়ী ২২০৫, ইবনু মাজাহ ১৬৪১, ইবনু আবী শায়বাহ্ ৮৮৭৫, আহমাদ ৭১৭০, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ১৮৯৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৮৫০৬, সহীহ ইবনু হিববান ৩৪৩২, মিশকাতুল মাসাবিহ ১৯৫৮

وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ

   আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি শবেক্বদরে (ভাগ্যরজনী অথবা মহীয়সী রজনীতে) ঈমানসহ নেকীর আশায় কিয়াম করে (নামায পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ ক’রে দেওয়া হয় ।”

   বুখারী ৩৫, ৩৭, ৩৮, ১৯০১, ২০০৮, ২০০৯, ২০১৪, মুসলিম ৭৬০, তিরমিযী ৬৮৩, নাসায়ী ২১৯৮ থেকে ২২০৭, ৫০২৭, আবূ দাঊদ ৩১৭১, ১৩৭২, আহমাদ ৭১৩০, ৭২৩৮, ৭৭২৯, ৭৮২১, ৮৭৭৫, ৯১৮২, ৯৭৬৭, ৯৯৩১, ১০১৫৯, ১০৪৬২, ২৭৫৮৩, ২৭৬৭৫, দারেমী ১৭৭৬, রিয়াদুস সালেহীন ১১৯৭

وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : دَخَلَ رَمَضَانُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «إِنَّ هٰذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مَنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّه، وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا كُلُّ مَحْرُوْمٍ». رَوَاهُ ابْن مَاجَه

   আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    তিনি বলেন, রমাযান (রমজান) মাস এলে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রমাযান (রমজান) মাস তোমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের (কল্যাণ হতে) বঞ্চিত রয়েছে; সে এর সকল কল্যাণ হতেই বঞ্চিত। শুধু হতভাগ্যরাই এ রাতের কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকে।
ইবনু মাজাহ ১৬৪৪, সহীহ আত্ তারগীব ১৪২৯, আহমাদ ৬৬২৬, সহীহ আল জামি‘ ৩৮৮২, হাকিম ২০৩৬, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৮৮, মিশকাতুল মাসাবিহ ১৯৬৪

عَنْ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ عَائِشَةَ، أَخْبَرَتْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ يُصَلِّي فِي الْمَسْجِدِ، فَصَلَّى بِالنَّاسِ - وَسَاقَ الْحَدِيثَ، وَفِيهِ قَالَتْ - فَكَانَ يُرَغِّبُهُمْ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَأْمُرَهُمْ بِعَزِيمَةٍ، وَيَقُولُ: «مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» قَالَ: فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ
---
[حكم الألباني] صحيح الإسناد لكن قوله متوفى الخ مدرج إنما هو من قول الزهري

   উরওয়া ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

    আয়েশা (রাঃ) তাঁকে খবর দিয়েছেন যে, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) গভীর রাত্রে বের হয়ে গেলেন এবং মসজিদে গিয়ে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এটা দীর্ঘ হাদীস; এতে উল্লেখ রয়েছে যে, আয়েশা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের ফরযের নির্দেশ দেওয়া ব্যতীতই তারাবীহ্‌র সালাতের ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন এবং বলতেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাত্রিতে জাগরণ করে তার পূর্বাপর সমস্ত (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। রাবী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল পর্যন্ত তাঁর আমল এরকমই ছিল।
সুনানে আন-নাসায়ী ২১৯৩

    কিয়ামূল লাইলঃ ‘কিয়ামূল লাইল অর্থ হল রাত্রি জাগরণ। মহান আল্লাহর  জন্য আরামের ঘুম স্বেচ্ছায় হারাম করে রাত জেগে ইবাদত করা আল্লাহর  প্রিয় বান্দাহদের একটি গুণ। মহান আল্লাহ তা'আলা তার প্রিয় বান্দাহদের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে  তারা রাত্রি যাপন করে রবের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে। 
সূরা ফুরকানঃ ৬৪

  تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ. فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّا أُخْفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَاء بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
“তাদের পার্শদেশ বিছানা হতে পৃথক থাকে (অর্থাৎ তারা শয্যা গ্রহণ করে না ; বরং এবাদতে মশগুল থাকে)। তারা (গজবের) ভয়ে এবং (রহমাতের) আশায় তাদের রবকে ডাকতে থাকে এবং আমি যা দিয়েছি তা হতে দান করে থাকে। কেউ জানে না। তাদের আমলের পুরস্কার স্বরূপ (আখিরাতে) তাদের জন্য কি জিনিস গোপনে রাখা হয়েছে।” 
সূরা সিজদাঃ ১৬-১৭

     আল্লাহর প্রিয় বান্দারা গোটা জীবনটাই এভাবে কাটান। আমাদের সে জীবনে প্রবেশ করতে হলে দরকার অধ্যবসায়। পবিত্র রমযান বিশেষ করে লাইলাতুল ক্বদরের অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা আমাদের উদ্দেশ্য  লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করবে। মুসনাদে আহমেদ গ্রন্থে হযরত ওবায়দা ইবনে সামেত বর্ণিত হাদীসে উদ্ধৃত হয়েছে- “নবী করীম (সাঃ) বলেছেন- ক্বদরের রাত রমজান মাসের শেষ দশ রাতে রয়েছে। যে ব্যক্তি উহার শুভফল লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আল্লাহ্ তার আগের পিছনের গুণাহ মাফ করে দিবেন।”

   রাসূল (সাঃ) রমযানের শেষ দশদিন মসজিদে ইতিকাফে থাকতেন এবং ইবাদতে গভীর মনোনিবে?
----------------------------------------------
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments