Recent Tube

নিখোঁজ আবু ত্বহা আদনান ও কিছু নিরপেক্ষ কথা। --- আব্দুল্লাহ আরমান।






 নিখোঁজ আবু ত্বহা আদনান ও কিছু নিরপেক্ষ কথা।

    শুরুতেই একটু ইতিহাসের গল্প শোনাই। আলী রাঃ এর শাসনামল থেকে খারেজীদের উৎপাত বিশেষভাবে লক্ষনীয়। পরবর্তীতে উমাইয়া খলিফা মুয়াবিয়া (রাঃ) থেকে শুরু করে সুলায়মান পর্যন্ত মোট ৭ জন খলিফা প্রায় ৫৬ বছর ধরে খারেজীদের সাথে তরবারী যুদ্ধ চালিয়ে তাদের কোনঠাসা করতে পারলেও দমন করতে সক্ষম হননি। কোনো খলিফাই তাদের উৎপীড়ন ও বিদ্রোহ থেকে রেহাই পাননি। ৭১৭ ঈসায়ী সনে ইসলামের প্রথম মুজাদ্দিদ ও ২য় ওমর খ্যাত ওমর ইবনে আঃ আযীয (রহঃ) খেলাফতের মহান  দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ক্ষমতায় এসে তিনি খারেজীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে পূর্বসূরিদের পথ অবলম্বন না করে ঘার থেকে তরবারী নামিয়ে কূটনৈতিক সমঝোতার পথে হাঁটলেন! তার ন্যায়পরায়ণতা, মহানুভবতা ও যুগান্তকারী শাসনে দলে দলে বহু খারেজী তার আনুগত্যের বায়য়াত গ্রহণ করেছে! অসংখ্য খারেজীদের আনুগত্যের অঙ্গীকার অর্জন তার জীবনের এক অনন্য কীর্তি। তরবারী দিয়ে যে কাজ সম্ভব হয়নি তিনি ভালোবাসা ও কোমলতা দিয়েই তা সম্ভব করেছেন।

     এবার আসি মূল কথায়। আবু ত্বহা আদনান সুন্দর বাচনভঙ্গি ও চমৎকার ভয়েসের একজন তরুণ ‘বক্তা’। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অল্প কিছুদিনেই তিনি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন। যার যার জ্ঞানগত অবস্থান থেকে ইসলামের দিকে মানুষকে আহ্বান করা সকল মুসলিমের দ্বীনি দায়িত্ব। তারই অংশ হিসেবে তিনি তার দায়িত্ব ও আদর্শিক অবস্থান থেকে বেশ কিছুদিন যাবৎ জোরালোভাবে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলেন। আত্মশুদ্ধি, পরকালীন জীবন, দুনিয়া বিমুখতা ইত্যাদি বিষয়ে তিনি চমৎকার আলোচনা করেন।

    কিন্তু ইসলামী জ্ঞানের সকল বিষয়ে সকলের কথা বলার অধিকার নেই যতক্ষণ না তারা জ্ঞানের সেই স্তরে পৌছায়। রিজালশাস্ত্র,উসূল, তাফসীর, ফিতান, রাষ্ট্রীয় ও পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতিমালা, ইসলামী দণ্ডবিধির আইন, রাজনৈতিক ফতোয়া, জিহাদ বা যুদ্ধনীতি , রাজনৈতিক নীতিনির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে কথা তাঁরাই বলবেন যারা সেসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। বিশেষ করে শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ, রাষ্ট্রীয় জিহাদ বা যুদ্ধ,বিদ্রোহ ইত্যাদি নিছক আবেগের কোন বিষয় নয়। তাই এসব নিয়ে কথা বলার অধিকার কেবল আহলুল হাল্ল ওয়াল আকদ বা বিশেষজ্ঞদেরই আছে। কিন্তু আবু ত্বহা আদনান এসব বিষয়ে তার জ্ঞানের সীমারেখার বাহিরে গিয়ে অনেক বক্তব্যে ভায়োলেন্স করেছেন যা নিঃসন্দেহে অনধিকার চর্চা ও ইলমী খিয়ানত। জিহাদ ও হিজরত বিষয়ে যুবসমাজকে তিনি যে ভুল মেসেজগুলো দিয়েছেন তা আইনত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তাই সেসব বক্তব্যের গঠনমূলক সমালোচনা করে সমাজকে সঠিক বার্তা দেয়া  ওলামাগণের দায়িত্ব ছিলো। এদেশীয় সালাফী,ক্বওমী ও জামাআতি ঘরানার কিছু বিদ্বান সে দায়িত্ব পালনও করেছেন আলহামদুলিল্লাহ।

    স্বাধীন দেশের জনগণ হিসেবে প্রশাসনিক ও আইনি সুবিধা পাওয়া প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার। সরকার,প্রশাসন বা ক্ষমতাবান কারও বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আসামী যত বড় অপরাধীই হোক তাকে অন্যায়ভাবে গুম/অপহরণ করা পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্রীয় আইনেই অনুমোদিত নয়। উপরন্তু বাংলাদেশের বিচারবিভাগের বিরুদ্ধেই যেখানে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের অভিযোগ আছে সেখানে প্রশাসনের বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে মৌন সমর্থন দেওয়া নিরেট অজ্ঞতা, হীন মানসিকতা ও চরম রাজনৈতিক অদূরদর্শীতার পরিচয় বহন করে। 

    দুঃখজনক হলেও সত্য কিছু মানুষ এই গুম হওয়াকে প্রকাশ্যেই সমর্থন করে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের আদর্শিক বিশুদ্ধতা জাহির করছেন !! তাদের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন নিচু মানসিকতাকে ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। কতোটা অমানবিক ও অবিবেচক হলে মতপার্থক্যের কারণে একজনের প্রতি জুলুম ও অন্যায়কে সমর্থন করতে পারে। অপরাধীর প্রতি জুলুম ও তার প্রশ্রয় কি সত্যিই ইসলাম সমর্থন করে?! এভাবে বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা মানে জেনে শুনে জননিরাপত্তাকে হুমকির সম্মুখীন করে ফ্যাসিবাদকে উস্কে দেয়া, ভবিষ্যতে যার ভিক্টিম আমি বা আপনিও হতে পারি। যুগে যুগে এভাবেই ফ্যাসিবাদ প্রশ্রয় পেয়ে জনগণের উপরই চেপে বসেছে।

    তার সাথে আমাদের আদর্শিক পার্থক্য আছে সত্য কিন্তু কোনভাবেই ত্বহা আদনানের মিসিং হওয়াকে আমরা সমর্থন করতে পারি না,না,না। সে অপরাধী হলে গ্রেফতার হোক,মুচলেকা কিংবা আইনি প্রক্রিয়ায় তার বিচার হোক। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে এটা তার অধিকার। আমরা তার এই অধিকারকে জোরালোভাবে সমর্থন জানাই এবং অকুণ্ঠভাবে তার সন্ধানের দাবী জানাই। 

    আবু ত্বহা আদনান উগ্রবাদী মনোভাবাপন্ন হলে তার বক্তব্যের গঠনমূলক সমালোচনা করুন, প্রতিবাদ জানান কিন্তু বর্তমানে মাজলুম এই মানুষটার প্রতি ওমর ইবনে আঃ আযীয রহঃ'র মতো সহনশীলতার হাত বাড়িয়ে দিন। সত্যের পক্ষে আক্রমণাত্মক কঠোর অবস্থান সবসময় কার্যকরী নয়, কখনও কখনও সহনশীল অবস্থানও দাওয়াতী গ্রহণযোগ্যতাকে ত্বরান্বিত করে।

    কিছুই না পারলে অন্তত এই পরিস্থিতিতে চুপ থাকুন, আগুনে কেরোসিন ঢালবেন না প্লিজ। তার অসহায় স্ত্রী ও সন্তানের দিকে তাকিয়ে হলেও সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিন। আমরা তার হেদায়েত,সুস্থতা ও প্রত্যাবর্তন কামনা করি।
---------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক গ্রন্থপ্রনেতা অনলাইন এক্টিভিস্ট ও শিক্ষক। 

Post a Comment

0 Comments