Recent Tube

যেসব মানুষ জান্নাতে যাবে না বলেছেন রাসূল সাঃ শামীম আজাদ।







যেসব মানুষ জান্নাতে যাবে না বলেছেন রাসূল সাঃ ;


    জান্নাত মানুষের শেষ ও চিরস্থায়ী বাসস্থান। দুনিয়ার জীবনই শেষ কথা নয়। এ জীবনের পরেই শুরু হবে পরকালের চিরস্থায়ী জীবন। যে জীবনের শুরু আছে শেষ নেই। দুনিয়ার জীবনে যারা সফল পরকালের চিরস্থায়ী জান্নাতই তাদের শেষ ও চূড়ান্ত ঠিকানা। যারা দুনিয়ার জীবনে ব্যর্থ তাদের পরিণাম জাহান্নাম।

   মানুষ যা-ই করুক জাহান্নামে যেতে চায় না। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে জাহান্নামে যেতে চান। আল্লাহ তাআলা নিজেও চান মানুষ যে জান্নাতের অধিবাসী হয়। সে কারণে যেসব কাজ জান্নাতের অন্তরায় তা তিনি কুরআন-সুন্নাহর নসিহতের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন।

   মানুষের জান্নাতে যাওয়ার পথে যেসব কাজ প্রধান অন্তরায় সেসব কাজের বিবরণ তুলে ধরেছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যা প্রত্যেক ঈমানদার মুমিন মুসলমানের এড়িয়ে চলা উচিত। আর তাহলো-

  ০১. আল্লাহকে অবিশ্বাস করা

  জান্নাত লাভের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘ঈমানদার ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ 
বুখারি ও মুসলিম

وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، أَنْبَأَنَا جَرِيرٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا ‏"‏ ‏.‏ بِمِثْلِ حَدِيثِ أَبِي مُعَاوِيَةَ وَوَكِيعٍ ‏.‏

  আ’মাশ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সে সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান আন। পরবর্তী অংশ আবূ মু’আবিয়াহ্‌ ও ওয়াকী’-এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ১০১; ই.সে. ১০৩)
মুসলিম ৯৯

  ০২. প্রতিবেশীর প্রতি সদয় না হওয়া

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ، وَقُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، وَعَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، جَمِيعًا عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ جَعْفَرٍ، - قَالَ ابْنُ أَيُّوبَ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، - قَالَ أَخْبَرَنِي الْعَلاَءُ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ ‏"‏ ‏.

  আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (ই.ফা. ৭৮; ই.সে. ৮০)
মুসলিম ৭৬

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসলিম)

 ০৩. অহংকারী ব্যক্তি

وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبَانَ بْنِ تَغْلِبَ، عَنْ فُضَيْلٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ ‏"‏ ‏.

‘ আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (ই.ফা. ১৬৯; ই.সে. ১৭৫)
মুসলিম ১৬৮

 ০৪. দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে ইলম(জ্ঞান) অর্জনকারী।

وَعَنْ أَبِيْ هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ - عَزَّ وَجَلَّ - لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضاً مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ» يَعْنِي: رِيحَهَا
رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ والأحاديث في الباب كثيرةٌ مشهورةٌ 
 আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে বিদ্যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা যদি একমাত্র সামান্য পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে কেউ শিক্ষা করে, তাহলে সে কিয়ামতের দিনে জান্নাত পাবে না, এমনকি সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’
ইবনু মাজাহ ২৫২, আবূ দাউদ ২৬৬৪, আহমাদ ৮২৫২

 ০৫. পরনিন্দাকারী ও চোগলখোর ব্যক্তি

عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ

  হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, চোগলখোর (পরোক্ষ নিন্দাকারী) জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত ৪৬১২)।

তিনি আরও বলেছেন, 

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم تَجِدُوْنَ شَرَّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِيْ يَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَيَأْتِيْ هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ-

 আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমরা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক ঐ ব্যক্তিকে পাবে, যে দ্বিমুখী। সে এক মুখ নিয়ে এদের কাছে আসে এবং আরেক মুখ নিয়ে তাদের কাছে যায়’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২২; বাংলা মিশকাত ৯ম খণ্ড, হা/৪৬১১)। অত্র হাদীছ দু’টি হতে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জিহ্বা ও লজ্জাস্থান কবীরা গুনাহ সমূহের উৎস। কেননা মানুষ মুখ দ্বারা মিথ্যাচার, গালমন্দ, চোগলখুরী, ধোঁকাবাজি, গীবত-তোহমত, অভিসম্পাৎ প্রভৃতি কবীরা গোনাহ করে থাকে। কিন্তু মানুষ এসব পাপ থেকে সাবধান হওয়ার ন্যূনতম চেষ্টা করে না। এগুলি থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের জিহ্বাকে সংবরণ করা অত্যাবশ্যক। কেননা এগুলির ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘চোগলখোর ও খোটাদানকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বুখারী, মুসলিম, বাংলা মিশকাত হা/৪৬১২)।

وَحَدَّثَنِي شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ أَسْمَاءَ الضُّبَعِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا مَهْدِيٌّ، - وَهُوَ ابْنُ مَيْمُونٍ - حَدَّثَنَا وَاصِلٌ الأَحْدَبُ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ حُذَيْفَةَ، أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ رَجُلاً، يَنِمُّ الْحَدِيثَ فَقَالَ حُذَيْفَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ ‏"‏ ‏.

 আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 হুযাইফাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট খবর পৌঁছল যে, এক ব্যক্তি চোগলখোরী করে বেড়ায়। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, কোন চোগলখোরই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। [৪৪] (ই.ফা. ১৯২; ই.সে. ১৯৮)

 ফুটনোটঃ
[৪৪] একজনের কথা অন্যজনের সামনে এ জন্য বলে যে, তাদের মধ্যে যেন শত্রুতার সৃষ্টি হয় ও ঝগড়া-বিবাদ লেগে যায় তাকে ‘নাম্মাম’ বা চোগলখোর বলে। (নাবাবী) 
মুসলিম ১৯১

 ০৬. আত্মহত্যাকারী

عَبْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ الْحَارِثِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ عَنْ سُلَيْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ ذَكْوَانَ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ تَرَد‘ى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَه“ فَهُوَ فِي نَارِ جَهَنَّمَ يَتَرَدّ‘ى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ تَحَسّٰى سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَه“ فَسُمُّه“ فِي يَدِه„ يَتَحَسَّاه“ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَه“ بِحَدِيدَةٍ فَحَدِيدَتُه“ فِي يَدِه„ يَجَأُ بِهَا فِي بَطْنِه„ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا.

  আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরকাল সে জাহান্নামের ভিতর ঐভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভিতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।[১৩৬৫; মুসলিম ১/৪৭, হাঃ ১০৯, আহমাদ ১০৩৪১০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫০)
বুখারী ৫৭৭৮

  ০৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী

 وَعَنْ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ» يَعْنِي: قَاطِعَ رَحِمٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

   যুবায়ের ইবনু মুত’ইম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। 
বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ২৫৫৬, তিরমিযী ২৫০৯, আবূ দাউদ ১৬৯৬, আহমাদ ১৬২৯১, ১৬৩২২ 

  ০৮. হারাম ভক্ষণকারী

عَنْ أَبِيْ بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بالحرَامِ.

  আবুবকর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে দেহ হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (বায়হাক্বী শু’আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৭৮৭)।
  

  ০৯. উপকার করে খোটা দেয়া

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، حَدَّثَنَا صَدَقَةُ بْنُ مُوسَى، عَنْ فَرْقَدٍ السَّبَخِيِّ، عَنْ مُرَّةَ الطَّيِّبِ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ خِبٌّ وَلاَ مَنَّانٌ وَلاَ بَخِيلٌ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏

  আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতারক-ধোঁকাবাজ, কৃপণ ও উপকার করে তার খোটা দানকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।
জামে' আত-তিরমিজি ১৯৬৩

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে উপকার করে খোটা দেয়।’ (নাসাঈ)

   ০৯. তাকদির (ভাগ্য) অস্বীকারকারী ও অবাধ্য সন্তান

عَن أَبِى أُمَامَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ثَلَاثةٌ لَا يَقْبَلُ اللهُ لَهُمْ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا : عَاقٌّ وَمَنَّانٌ وَمُكَذِّبٌ بِالْقَدَرِ
আবূ উমামাহ থেকে বর্ণিতঃ:

   রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির নিকট হতে আল্লাহ ফরয নফল কিছুই গ্রহণ করবেন না; পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দান করে প্রচারকারী এবং তকদীর অস্বীকারকারী ব্যক্তি।” (ত্বাবারানী ৭৫৪৭, সহীহুল জামে ৩০৬৫)
  
  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, মদ্যপায়ী এবং তাকদিরের প্রতি অস্বীকারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সিলসিলা)

  ১০. জ্যোতিষ, জাদুকর, মাদক তথা নেশাকারী

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘৫ শ্রেণীর মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (তারা হলো) মদ্যপায়ী, যাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, চোগলখোর এবং গণক তথা জ্যোতিশ ব্যক্তি।’ (মুসনাদে আহমদ)

  ১১. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো ঋণগ্রস্ত মৃতের লাশ (জানাযার জন্য) নিয়ে আসা হলে (তিনি) জিজ্ঞাসা করতেন, ‘সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না? যদি বলা হতো করেছে, তবে জানাযা পড়তেন। অন্যথায় (সাহাবীদেরকে) বলতেন- তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও।’ (কিন্তু তিনি নিজে তাতে অংশ গ্রহণ করতেন না)। (মুসলিম)

  أَخْبَرَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلَانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَوْهَبٍ، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ أَبِي قَتَادَةَ يُحَدِّثُ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِرَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ لِيُصَلِّيَ عَلَيْهِ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ فَإِنَّ عَلَيْهِ دَيْنًا»، قَالَ: أَبُو قَتَادَةَ هُوَ عَلَيَّ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بِالْوَفَاءِ»، قَالَ: بِالْوَفَاءِ، فَصَلَّى عَلَيْهِ

  আবূ কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একজন আনসারী ব্যক্তির মৃত দেহ আনা হল জানাযার সালাত আদায় করার জন্য। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজেরাই স্বীয় সাথীর উপর জানাযার সালাত আদায় কর, যেহেতু সে ঋণগ্রস্ত। আবূ কাতাদা (রহঃ) বললেন, সে ঋণ আমার উপর (সে ঋণ আদায়ের দায়িত্ব আমার) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা আদায় করার অঙ্গীকার চাইলেন। আদায় করার অঙ্গীকার করা হলে তিনি  জানাযার সালাত আদায় করলেন।
সুনানে আন-নাসায়ী ১৯৬০

 وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ يَغْفِرُ اللهُ لِلْشَّهِيدِ كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ الدَّيْنَ رواه مسلموَفِيْ رِوَايَةٍ لهالقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللهِ يُكَفِّرُ كُلَّ شَيءٍ إِلاَّ الدَّيْن

  আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ আল্লাহ মাফ ক’রে দেবেন।” (মুসলিম ৪৯৯১)
এর অন্য এক বর্ণনায় আছে, “আল্লাহর পথে শাহাদত বরণ ঋণ ব্যতীত সমস্ত পাপকে মোচন করে দেয়।” (ঐ ৪৯৯২ নং)
  

  ১২. পুরুষ বেশধারী নারী ও দাইয়ুস

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسَرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ثَلاَثَةٌ لاَ يَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ أَبَدًا اَلدَّيُوْثُ وَالرَّجْلَةُ مِنَ النِّسَاءِ وَمُدْمِنُ الْخَمْرِ.

  আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর মানুষ কখনো জান্নাতে যাবে না। (১) যে ব্যক্তি তার পরিবারে বেহায়াপনার সুযোগ দেয়। (২) পুরুষের বেশধারী নারী। (৩) নিয়মিত নেশাদার দ্রব্য পানকারী’ (তাবরাণী, তারগীব হা/৩৩৮১)।
  

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘৩ শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তারা হলো- ‘পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, দাইয়ূস এবং পুরুষ বেশধারী নারী।’ (সহিহ জামে)

  অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয়, যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।’ (মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ)

  ১৩. ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী শাসক, অহংকারী গরিব

وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عن: قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَة، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ ألِيمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ ». رواه مسلم

 আবূ হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ:

 , তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে (অনুগ্রহের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, (১) ব্যভিচারী বৃদ্ধ, (২) মিথ্যাবাদী শাসক এবং (৩) অহংকারী গরীব।’’
মুসলিম ১০৭, আহমাদ ৭৩৯৩, ৯৩১১, ৯৮৬৬, রিয়াদুস সলেহিন ৬২২

 عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَرْبَعَةٌ يَبْغُضُهُمْ اللهُ  عَزَّ وَجَلَّ الْبَيَّاعُ الْحَلَّافُ وَالْفَقِيرُ الْمُخْتَالُ وَالشَّيْخُ الزَّانِي وَالْإِمَامُ الْجَائِرُ

 আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “চার ব্যক্তিকে আল্লাহ ঘৃণা করেন; অত্যধিক কসম খেয়ে পণ্য বিক্রয়কারী ব্যবসায়ী, অহংকারী গরীব, ব্যভিচারী বৃদ্ধ এবং অত্যাচারী রাজা (শাসক)। (নাসাঈ ২৫৭৬, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ৪৮৫৩, সহীহুল জামে’ ৮৮০ নং)
 

 ১৪. কঠোরতা অবলম্বকারী ও কটূভাষী ব্যক্তি

  যে ব্যক্তি মানুষের কাছে এমন বিষয় নিয়ে গর্ব-অহংকার করে বেড়ায়; প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই। 

عَنْ حَارِثَةَ ابْنِ وَهْبٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ الْجَوَّاظُ وَلَا الْجَعْظَرِيُّ.

 হারেছ ইবনু ওয়াহাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘কঠোর ও রুক্ষ্ম স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫০৮০, সনদ ছহীহ)।

   রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কঠোর প্রকৃতি ও কটুভাষী লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং ওই লোকও নয়, যে এমন সব বিষয়ে মানুষের কাছে গর্ব-অহংকার প্রকাশ করে বেড়ায় প্রকৃতপক্ষে যা তার কাছে নেই।’ (আবু দাউদ)

 وَعَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ - رضي الله عنه - قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم -: «لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ خِبٌّ، وَلَا بَخِيلٌ، وَلَا سَيِّئُ الْمَلَكَةِ» أَخْرَجَهُ التِّرْمِذِيُّ وَفَرَّقَهُ حَدِيثَيْنِ، وَفِي إِسْنَادِهِ ضَعْفٌ

  আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাতে প্রবেশ করবে না ধোঁকাবাজ, কৃপণ, কর্তৃত্বের বা ক্ষমতার অপপ্রয়গকারী। 
তিরমিযি ১৯৪৭, ১৯৬৪ 

 ১৫. অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী

 عَنْ أَبِي بَكْرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ سَيِّئُ الْمَلَكَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَقَدْ تَكَلَّمَ أَيُّوبُ السَّخْتِيَانِيُّ وَغَيْرُ وَاحِدٍ فِي فَرْقَدٍ السَّبَخِيِّ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ ‏.‏

  আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।
ইবনু মাজাহ ৩৬৯১, জামে' আত-তিরমিজি ১৯৪৬

  ১৬. অঙ্গীকারগ্রহণকারী অমুসলিমকে হত্যাকারী

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিম সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বসবাসকারী কোনো অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ চল্লিশ বছরের পথের দূর থেকে জান্নাতের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (বুখারি)

  ১৭. বিশ্বাস ঘাতকতাকারী শাসক

  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে জনসাধারণের শাসনকর্তা হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, কিন্তু সে জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে এবং বিশ্বাসঘাতক থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।’ (মুসলিম)

 ১৮. অন্যায়ভাবে মানুষকে নির্যাতনকারী ও পর্দাহীন নারী

حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا ‏"‏ ‏.‏

  আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্  (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবেনা অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। (ই.ফা.  ৫৩৯৭, ই.সে. ৫৪১৯)
মুসলিম ৫৪৭৫
  

 ১৯. অধীনস্থদেরকে ধোঁকাদানকারী শাসক।

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَعَلِيُّ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ مُغِيرَةَ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ فَرْقَدٍ السَّبَخِيِّ، عَنْ مُرَّةَ الطَّيِّبِ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ ‏"‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ سَيِّئُ الْمَلَكَةِ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَيْسَ أَخْبَرْتَنَا أَنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ أَكْثَرُ الأُمَمِ مَمْلُوكِينَ وَيَتَامَى قَالَ ‏"‏ نَعَمْ فَأَكْرِمُوهُمْ كَكَرَامَةِ أَوْلاَدِكُمْ وَأَطْعِمُوهُمْ مِمَّا تَأْكُلُونَ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا فَمَا يَنْفَعُنَا فِي الدُّنْيَا قَالَ ‏"‏ فَرَسٌ تَرْتَبِطُهُ تُقَاتِلُ عَلَيْهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مَمْلُوكُكَ يَكْفِيكَ فَإِذَا صَلَّى فَهُوَ أَخُوكَ ‏"‏ ‏.‏

   আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অধীনস্থদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের অবহিত করেননি যে, এ উম্মাতের অধিকাংশ হবে গোলাম ও ইয়াতীম? তিনি বলেনঃ হাঁ, অতএব তোমরা তোমাদের সন্তানের মত তাদের সাথে ব্যবহার করো এবং তোমরা যা আহার করো তা তাদেরকে আহার করাও। সাহাবীগণ বলেন, দুনিয়াতে কোন জিনিস আমাদের উপকারে আসবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করার উদ্দেশ্যে তুমি যে ঘোড়া প্রতিপালন করো এবং যে গোলাম তোমার দায়িত্ব পালন করে। সে যদি নামায পড়ে, তবে সে তোমার ভাই।  
তিরমিযী ১৯৪৬, আহমাদ ১৪, ৩২, ৭৬। আত তা’লীকুর রাগীব ৩/১৬১, দঈফ আল-জামি’ ৬৩৪০,সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৬৯১

 ২০. অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী

 حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرٍو عَنْ سَالِمِ بْنِ أَبِي الْجَعْدِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ كَانَ عَلَى ثَقَلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كِرْكِرَةُ فَمَاتَ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ فِي النَّارِ فَذَهَبُوْا يَنْظُرُوْنَ إِلَيْهِ فَوَجَدُوْا عَبَاءَةً قَدْ غَلَّهَا قَالَ أَبُوْ عَبْد اللهِ قَالَ ابْنُ سَلَامٍ كَرْكَرَةُ يَعْنِيْ بِفَتْحِ الْكَافِ وَهُوَ مَضْبُوطٌ كَذَا

 ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাহারা দেয়ার জন্য এক ব্যক্তি নিযুক্ত ছিল। তাকে কার্‌কারা নামে ডাকা হত। সে মারা গেল। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে জাহান্নামী! লোকেরা তাকে দেখতে গেল আর তারা একটি আবা পেল যা সে আত্মসাত করেছিল। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইব্‌নু সালাম (রহঃ) বলেছেন, কারকারা।
বুখারী ৩০৭৪

  ২১. উপকার করে খোটা দানকারী, অবাধ্য সন্তান, ও মদ্যপানকারী।

 عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لاَ يَلِجُ حَائِطَ الْقُدُسِ مُدْمِنُ خَمْرٍ وَلاَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَلاَ الْمَنَّانُ عَطَاءَهُ.

  আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘নেশাদার দ্রব্য পানকারী জান্নাতে যাবে না। পিতামাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। খোটা দানকারী জান্নাতে যাবে না’ (তারগীব হা/২৩৬৩)।

  ২২. অন্যের পিতাকে নিজের পিতা বলে পরিচয়দানকারী

  حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، أَنْبَأَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَبْدِ الْكَرِيمِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ خَمْسِمِائَةِ عَامٍ ‏"‏ ‏.‏

  আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অপর ব্যক্তিকে বাপ বলে পরিচয় দেয়, সে জান্নাতের সুবাসটুকুও পাবে না। অথচ পাঁচ শত বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের সুবাস পাওয়া যাবে।  
  আহমাদ ৬৫৫৫, আত-তালীকুর রাগীব ৩/৮৮, রাওদুন নাদীর ৫৮৭, সহীহাহ ২৩০৭, ইবনে মাজাহ ২৬১১

  ২৩. রাসূলুল্লাহ সা.এর নাফরনাম(যে রাসূলের আনুগত্য করে না)।

﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ ٱلۡخِيَرَةُ مِنۡ أَمۡرِهِمۡۗ وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلَٰلٗا مُّبِينٗا ٣٦ ﴾ [الاحزاب: ٣٦]

  “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের কোনো রকম (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার থাকবে না। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল, সে নিঃসন্দেহে সুস্পষ্টভাবে গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) হলো।” 
সূরা আল-আহযাবঃ ৩৬
বুখারী ৬৭৩৭

 ২৪. অকারনে তালাক কামনাকারীনি নারী

حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ خَلَفٍ أَبُو بِشْرٍ حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ عَنْ جَعْفَرِ بْنِ يَحْيَى بْنِ ثَوْبَانَ عَنْ عَمِّهِ عُمَارَةَ بْنِ ثَوْبَانَ عَنْ عَطَاءٍ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَا تَسْأَلُ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا الطَّلَاقَ فِي غَيْرِ كُنْهِهِ فَتَجِدَ رِيحَ الْجَنَّةِ وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامًا

 ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে স্ত্রীলোক একান্ত অনন্যোপায় অবস্থা ছাড়া, স্বামীর নিকট তালাক দাবি করে, সে জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ বছরের (পথের) দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে। ইরওয়াহ ৭/১০১, যঈফাহ ৪৭৭৭, যইফ আল-জামি' ৬২১, ইবনে মাজাহ ২০৫৪

 ২৫. কালো কলপ ব্যবহারকারী।

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَاصِمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ ، عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : " رَأَيْتُ شَعْرَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَخْضُوبًا " .

 আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

 তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মাথার চুল খিযাবকৃত দেখেছি।

 ব্যাখ্যা : কালো খিযাব ব্যবহার করা জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, শেষ যামানায় এমন লোক পাওয়া যাবে, যারা কালো খিযাব বা কলপ ব্যবহার করবে। তারা জান্নাতের সুঘ্ৰানও পাবে না। 
আবু দাউদ, হা/৪২১৪ং নাসাঈ, হা/৫০৭৫, শামায়েলে তিরমিযি ৪০

 ২৬. রিয়াকারী (লোক দেখানো আমলকারী)

حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ، حَدَّثَنِي الْمُحَارِبِيُّ، عَنْ عَمَّارِ بْنِ سَيْفٍ الضَّبِّيِّ، عَنْ أَبِي مُعَانٍ الْبَصْرِيِّ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جُبِّ الْحُزْنِ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا جُبُّ الْحُزْنِ قَالَ ‏"‏ وَادٍ فِي جَهَنَّمَ تَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ ‏"‏ ‏.‏ قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَدْخُلُهُ قَالَ ‏"‏ الْقُرَّاءُ الْمُرَاءُونَ بِأَعْمَالِهِمْ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ.

 আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ‘জুব্বুল হুযন’ হতে আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারা প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘জুব্বুল হুযন’ কি? তিনি বললেনঃ তা জাহান্নামের মধ্যকার একটি উপত্যকা, যা থেকে স্বয়ং জাহান্নামও দৈনিক শতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তাতে কে প্রবেশ করবে? তিনি বললেনঃ যেসব কুরআন পাঠক লোক দেখানো আমল করে। 
ইবনু মাজাহ ২৫৬
জামে' আত-তিরমিজি ২৩৮৩

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله ﷺ إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُوتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَه فَعَرَفَهَا؟ فَقَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلى وَجْهِه حَتّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَه وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُوتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ اِنَّكَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ انك قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِه فَسُحِبَ عَلى وَجْهِه حَتّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّه فَأُتِيَ بِه فَعَرَّفَه نِعَمَه فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا؟ قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا اِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِه فَسُحِبَ عَلى وَجْهِه ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ

 আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে এক শহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা'আলার সামনে হাশরের ময়দানে তাকে পেশ করবেন এবং তিনি তার সকল নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার এসব নি'আমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব নি'আমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছ? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুর করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। 

     তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব নি'আমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি'আমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি'আমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি 'ইল্ম অর্জন করেছি, মানুষকে 'ইল্ম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমাকে 'আলেম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। 

   এরপর তৃতীয় ব্যক্তি - যাকে আল্লাহ তা'আলা বিভিন্ন ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে দেয়া সব নি'আমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি'আমাত পেয়ে তুমি কি 'আমাল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি এমন কোন খাতে করচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তা'আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খেতাব তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। 
মুসলিমঃ ১৯০৫, ৪৮১৭, মিশকাতুল মাসাবিহঃ ২০৫

 ২৭. ওয়ারিশ কে বঞ্চিতকারী

حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحِيمِ بْنُ زَيْدٍ الْعَمِّيِّ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَنْ فَرَّ مِنْ مِيرَاثِ وَارِثِهِ قَطَعَ اللَّهُ مِيرَاثَهُ مِنَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏ ‏.‏

   আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ওয়ারিশকে মীরাস দেয়া থেকে পশ্চাদপসরণ করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের অংশীদার হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন।  
বায়হাকী ফিস সুনান ৬/২৬৪, মিশকাত ৩০৭৮, সুনানে ইবনে মাজাহ ২৭০৩

 ২৮. জিম্মীকে হত্যাকারী 

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنِ النَّبِيِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ قَتَلَ مُعَاهَداً لَمْ يَرَحْ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ، وَإِنَّ رِيحَهَا لِيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ أَرْبَعِينَ عَامَاً» أَخْرَجَهُ الْبُخَارِيُّ

  আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন জিম্মীকে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দূরত্ব হতে পাওয়া যাবে’। 
বুখারী ৬৯১৪, নাসায়ী ৪৭৫০, ইবনু মাজাহ ২৬৮৬. আহমাদ ৬৭০৬। 

أَخْبَرَنَا إِسْمَعِيلُ بْنُ مَسْعُودٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، عَنْ عُيَيْنَةَ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي قَالَ: قَالَ أَبُو بَكْرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَتَلَ مُعَاهِدًا فِي غَيْرِ كُنْهِهِ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ»

  আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন।
সুনানে আন-নাসায়ী ৪৭৪৭

 ২৯. মদ পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি 

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عُتْبَةَ، حَدَّثَنِي يُونُسُ بْنُ مَيْسَرَةَ بْنِ حَلْبَسٍ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، عَنِ النَّبِيِّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ خَمْرٍ ‏"‏ ‏.‏

 আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শরাব পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। 
আহমাদ ২৬৯৩৮, সহীহাহ ৬৭৫, ৬৭৮, ইবনে মাজাহ ৩৩৭৬

 হতাশা নয়, আশার বাণী হলো-
আল্লাহ তাআলা বলেন, 

 ا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا
‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের সব গোনাহ মাপ করে দিবেন। 
সূরা যুমারঃ ৫৩

  যদিও উপরোক্ত কাজগুলো কবীরাহ গোনাহের অন্তর্ভূক্ত।

   যারা উল্লেখিত কাজগুলো থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর পথে ফিরে আসবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা তাওবাকারী বান্দাদের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। উল্লেখিত গোনাহে জড়িত ব্যক্তি যদি এ গোনাহ থেকে ফিরে আসে এবং এর প্রতিকারমূলক কাজ করে এবং পুনরায় এসব গোনাহ না করে যথাযথভাবে তাওবাহ করে তবে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন। কেননা মহান আল্লাহ তাওবাহকারীকে ভালোবাসেন। বান্দাহকে ক্ষমা করতেও ভালোবাসেন।

   উল্লেখ্য, আল্লাহ তাআলা নিজ দয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে এদের মধ্যে যাকে খুশি ক্ষমা করে দেবেন যদি সে শিরক থেকে দূরে থাকে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّ اللّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء
  ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে শরিক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।’ 
সূরা নিসাঃ ৪৮

  তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 

 ‘উসমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

  তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি অন্তরে এ বিশ্বাস রেখে মৃত্যু বরণ করলো যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।  
মুসলিম ১৪৫

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي وَوَكِيعٌ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ وَكِيعٌ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَقَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ مَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ النَّارَ ‏"‏ ‏.‏ وَقُلْتُ أَنَا وَمَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بِاللَّهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ ‏.

 ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

   রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অন্য বর্ণনায় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শারীক করে মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আমি বলি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শারীক না করা অবস্থায় মারা যায় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ই.ফা. ১৭০; ই.সে. ১৭৬)
মুসলিম ১৬৯

   আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসে ঘোষিত জান্নাতের অন্তরায় কাজগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ বিধান যথাযথ বাস্তবায়ন করে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। 
আমিন।।
--------------------------------- 
লেখকঃ ইসলামিক আর্টিকেল লেখক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। 

Post a Comment

0 Comments