Recent Tube

সুললিত কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত কারীর জন্য কতিপয় দিক নির্দেশনা এবং কণ্ঠের ‘রিয়া’ থেকে মুক্তির ১০ উপায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল





 সুললি কণ্ঠে কুরআন তিলায়াত কারীর জন্য কতিপয় দিক নির্দেশনা এবং কণ্ঠের ‘রিয়া’ থেকে মুক্তির ১০ উপায়:
--------------------------------- 

 প্রশ্ন
 কোনও ব্যক্তি যদি সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে তাহলে এই কণ্ঠকে সে কিভাবে রিয়া মুক্ত ভাবে ব্যবহার করবে? কারণ যে আমলের মধ্যে রিয়া সৃষ্টি হয় তা শিরকে পরিণত হয় এবং তার সমূদয় সওয়াব বাতিল হয়ে যায়।
----------------------
 ত্ত:

নি:সন্দেহে সুন্দর কণ্ঠ মহান আল্লাহর একটি চমৎকার নিয়ামত। আর কেউ যদি আল্লাহর দেয়া এই নিয়ামতকে কাজে লাগিয়ে সুমধুর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করতে সক্ষম হয় তাহলে এর চেয়ে উত্তম আর কী হতে পারে?
 তবে এ ক্ষেত্রে এটি বড় আশঙ্কা রয়েছে। তা হলো, এই সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াতের সময় মানুষের প্রশংসা ও বাহবা পাওয়ার মনোবাসনা জাগ্রত হতে পারে। আর যখনই অন্তরে এ মনোভাব ও ইচ্ছা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে বের হতে না পারলে এই নিয়ামতই তার জন্য আল্লাহর গজব এবং ধ্বংসের কারণে পরিণত হতে পারে। আল্লাহ ক্ষমা করুন। নিম্নোক্ত হাদিসটিতে সে ভয়াবহতার কথাই উচ্চারিত হয়েছে:
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إن أول الناس يقضى يوم القيامة عليه رجل استشهد فأتي به فعرفه نعمها فعرفها، قال فما عملت فيها، قال : قاتلت فيك حتى استشهدت، قال: كذبت، ولكنك قاتلت لأن يقال جريء فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار. ورجل تعلم العلم وعلمه وقرأ القرآن فأتي به فعرفه نعمه فعرفها، قال: فما عملت فيها، قال: تعلمت العلم وعلمته وقرأت فيك القرآن، قال: كذبت، ولكنك تعلمت العلم ليقال: عالم وقرأت القرآن ليقال هو قارئ فقد قيل، ثم أمر به فسحب على وجهه حتى ألقى في النار
 আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন,

 “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাজির করা হবে এবং আল্লাহ তার নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন। এবং সে তার প্রতি সকল নিয়ামত চিনতে পারবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন তুমি কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি তোমার পথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহিদ হয়েছি। 
আল্লাহ বলবেন: “তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি তো যুদ্ধ করেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলা হয়েছে।”

 অত:পর নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে টেনে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

  তারপর এমন ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে নিজে ইলম (দীনি জ্ঞান) অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তিলাওয়াত করেছে। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তার নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে স্বীকার করবে। তাকে জিজ্ঞেস করবেন কি কাজ করে এসেছ? সে বলবে আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তেলাওয়াত করেছি। 

 আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এ জন্য যে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে। কুরআন তেলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে কারী বলবে। আর তা বলা হয়েছে। 

 এরপর নির্দেশ দেয়া হবে তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার জন্য।" (সহিহ মুসলিম)

 যাহোক, নিম্নে সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করার নিয়ামত প্রাপ্ত হলে অন্তরকে রিয়া মুক্ত রাখার এবং ফিতনা থেকে বাঁচার ১০টি পদ্ধতি প্রদান করা হল:

 ♦ ১) তিলাওয়াতের সময় অন্তরকে খালেসভাবে আল্লাহ অভিমূখী করবে।

♦ ২) অত:পর তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহিমিনাশ শায়ত্বানির রাজীম (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করবে। যেন শয়তান তার মনে কোন বাজে চিন্তা ও রিয়া তথা মানুষের প্রশংসা পাওয়ার মনোভাব সৃষ্টি করতে না পারে।

♦ ৩) তিলাওয়াত দ্বারা আল্লাহর নিকট সওয়াব অর্জনের নিয়ত করবে।

♦ ৪) তিলাওয়াতের সময় অন্তরে বিনয়, নম্রতা ও আল্লাহ ভীতি জাগ্রত রাখবে।

♦ ৫) কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে হেদায়েত লাভের প্রত্যাশা করবে। 

♦ ৬) কুরআনের মর্মার্থ বোঝার প্রতি মনোযোগ দিবে।

♦ ৭) কুরআনের দিক-নির্দশানা মোতাবেক আমল করার নিয়ত রাখবে।

♦ ৮) সেই সাথে মহান‌ আল্লাহ তাকে যে এই সুন্দর কণ্ঠ দান করেছেন সে জন্য তাঁর দরবারে কৃতজ্ঞতা আদায় করবে।

♦ ৯) তারপরও যদি মনের মধ্যে রিয়া বা মানুষের প্রশংসা পাওয়ার মনোভাব জাগ্রত হয়ে যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ উক্ত চিন্তা থেকে ফিরে আসবে এবং শয়তান ও মনের কু প্রবৃত্তি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। 

 মনে রাখতে হবে, সুন্দর কণ্ঠ অনেক সময় ফিতনার কারণ। বিশেষ করে বিপরীত লিঙ্গের ফিতনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রেখে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।

♦ ১০) তৎসঙ্গে রিয়া মুক্তির জন্য নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করবে:

  اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণ:
‘‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম
ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আ’লাম।”
অর্থ:
"হে আল্লাহ, জেনে-বুঝে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর অজানা বশত: সংঘটিত শিরক থেকে তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
[সহীহ আদাবুল মুফরাদ হা/৭১৬, পৃষ্ঠা ২৫০, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৬ শাইখ আলবানী বলেন, এর সনদ হাসান লিগাইরিহী-আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত। এছাড়াও মুহাদ্দিস আলবানী রাহ. তার বিখ্যাত সহিহুল জামে গ্রন্থে প্রায় অনুরূপ শব্দে বর্ণিত হাদিসকে সহিহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। দ্রষ্টব্য: সহিহুল জামে হা/৩৭৩১-আবু বকর রা. হতে বর্ণিত]

আল আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থের ব্যাখ্যাকার বলেন,

এখানে ’অজানা বশত: শিরক’ দ্বারা উদ্দেশ্যে হল, রিয়া তথা মানুষকে দেখানো ও মানুষের প্রশংসা পাওয়ার জন্য করা আমল। মানুষ যতক্ষণ না নিজে নিজেকে চিনতে সক্ষম হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ সকল নিকৃষ্ট চিন্তাভাবনা তার ভেতর থেকে দূর হবে না।” (গ্রন্থ: فضل الله الصمد في توضيح الأدب المفرد ২/১৭৯)

♦ সত্যিকার অর্থে রিয়া একটি খুবই সূক্ষ্ম ও গোপন সমস্যা- যা মানুষের অন্তরে অতি সন্তর্পণে প্রবেশ করে। তাই তো রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে ﺃَﺧْﻔَﻰ ﻣِﻦْ ﺩَﺑِﻴﺐِ ﺍﻟﻨَّﻤْﻞِ বা “পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম” বলে আখ্যায়িত করেছেন।

● যে আমলের সাথের এ ধরণের চিন্তাভাবনার সংমিশ্রণ ঘটবে সে আমলটি আল্লাহর দরবারে পুরোপুরি বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। বরং এর সওয়াব পাওয়া তো দূরের কথা বরং তা শিরকে আসগর (ছোট শিরক) এ পরিণত হবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।
--------------------------------- 
 উত্তর প্রদানে: 
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব। 

Post a Comment

0 Comments