Recent Tube

বদ নজরের চিকিৎসা। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।



বদ নজরের চিকিৎসা;
------------------------

 প্রশ্ন
 নজর লাগার বিষয়টি সত্য। এর চিকিৎসার সঠিক পদ্ধতি কি? আর আমরা যদি বুঝতে পারি যে, কারও উপর বদ নজর পড়েছে কিন্তু কিন্তু জানা যায় না যে, কার মাধ্যমে বদ নজর লেগেছে। তাহলে আমরা এর চিকিৎসা কিভাবে করব? অথবা জানা গেলেও তাকে কিছু বলা যায় না- যার মাধ্যমে আমরা সুন্নতি পন্থায় চিকিৎসা করতে পারি। তাহলে এমতাবস্থায় আমাদের কী করণীয়?

 ত্ত
 বদ নজর দ্বারা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এটি চরম সত্য। 
জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
العين تدخل الرجل القبر وتدخل الجمل القدر

 অর্থঃ বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌছে দেয় এবং উটকে পাতিলে । (সহীহ আল জামেঃ শাইখ আলবানী (রহঃ) সহীহ বলেছেনঃ ১২৪৯)
অর্থাৎ মানুষের নজর লাগায় সে মৃত্যুবরণ করে, যার ফলে তাকে কবরে দাফন করা হয়। আর উটকে যখন বদ নজর লাগে তখন তা মৃত্যু পর্যায়ে পৌছে যায় তখন সেটা যবাই করে পাতিলে পাকানো হয় ।
ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
 الْعَيْنُ حَقٌّ وَلَوْ كَانَ شَيْءٌ سَابَقَ الْقَدَرَ سَبَقَتْهُ الْعَيْنُ وَإِذَا اسْتُغْسِلْتُمْ فَاغْسِلُوا "رواه مسلم في صحيحه
“বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য এমনকি যদি কোন বস্তু ত্বাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত। সুতরাং তোমাদেরকে যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে) গোসল করতে বলা হয় তখন তোমরা গোসল কর।” (মুসলিমঃ ১৪/১৭১)

 ★ নজর লাগার চিকিৎসা:

 আলেমগণ বলেন, নজর লাগার চিকিৎসা হল: 

♦ কোন ব্যক্তির নজর লেগেছে তা যদি জানা যায় তাহলে তার গোসল করা পানি দ্বারা রোগীকে গোসল করাতে হবে। 
যেমন: উপরোক্ত হাদিস।
♦  অথবা তাকে ওযু করতে বলা হবে। অতঃপর উক্ত অযুর পানি দ্বারা বদ নজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল করাতে হবে।
আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
 كَانَ يُؤْمَرُ الْعَائِنُ فَيَتَوَضَّأُ ثُمَّ يَغْتَسِلُ مِنْهُ الْمَعِينُ 
”যে ব্যক্তির বদ নজর অন্যের উপর লাগতো, তাকে অযু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতো। এরপর ঐ পানি দিয়ে তাকে গোসল করানো হতো, যার উপর বদ নজর লাগতো।” (আবু দাউদ ৩৮৪০, শাইখ আলবানী বলেন, এর সনদ সহিহ)

  ♦ অথবা যার নজর লেগেছে তা হাত, মুখ, হাতের কনুই, হাটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে গোসল দিতে হবে। যেমন হাদিসে এসেছে:
আবূ উসামা ইবন সহল (রহঃ)-এর রেওয়ায়ত, ‘আমের ইবনে রবী'আ সহল ইবনে হানীফকে গোসল করতে দেখে বললেন, আজ আমি যে সুন্দর মানুষ দেখলাম, এ রকম কাউকে দেখি নি। এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখি নি। (আমেরের) এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে ঢলে পড়ল।

   এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট হাজির হয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি সহল ইবনে হুনাইফ (বা হানীফ)-এর কিছু খবর রাখেন কি? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করতে পারছ না। 

   তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললে: তোমার কি মনে হয় যে, কেউ তাকে বদ নজর দিয়েছে?
 লোকটি বলল, হ্যাঁ, আমর ইবন রবী'আ। 

   অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমের ইবন রবী’আকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকে বললেন: তোমাদের কেউ নিজের মুসলিম ভাইকে কেন মেরে ফেলছে? তুমি بارك الله বারাকাল্লাহ কেন বললে না? (অন্য হাদিসে بارك الله-বারাকাল্লাহ এর পরিবর্তে ما شاء الله لا حول ولا قوة الا بالله-মাশাআল্লাহ! লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা বলার কথা বর্ণিত হয়েছে।) এবার তুমি তার  জন্য গোসল কর। 
অতএব আমের হাত, মুখ, হাতের কনুই, হাটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি বর্তনে জমা করল। সেই পানি সহলের দেহে ঢেলে দেয়া হল। অতঃপর সাহল সুস্থ হয়ে সকলের সঙ্গে রওয়ানা হলো।
(মুয়াত্তা মালিক / অধ্যায়ঃ ৫০. বদনজর সংক্রান্ত অধ্যায় (كتاب العين), হাদিস নং ১৭৪৬)

  ★ বদ নজরের জন্য ঝাড়ফুঁক:

  কার নজর লেগেছে যদি তা জানা না যায় বা যার নজর লেগেছে তার ওযু বা গোসলের পানি নেয়া সম্ভব না হয় তাহলে শরিয়ত সম্মত উপায়ে ঝাড়ফুঁক করতে হবে।

  আয়েশা সিদীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বদ নজর থেকে বাঁচার জন্যে ঝাড়-ফুক করার নির্দেশ দিতেন। (বুখারীঃ ১০/১৭০, মুসলিমঃ ২১৯৫)

  উম্মে সালমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ঘরে এক মেয়ে শিশুর চেহারায় দাগ দেখে তিনি বলেছেন যে, তার চেহারায় বদ নজরের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তাকে ঝাড়-ফুক করাও। (বুখারীঃ ১/১৭১, মুসলিমঃ ৯৭)

 ★ সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস, ফাতিহা, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত এবং হাদিস বর্ণিত দুআগুলো পড়ে রোগীকে ফুঁ দিতে হবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাআলা এর সমস্যা থেকে মুক্তি দান করবেন।

 ★ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান ও হুসাইন রা. কে এই বাক্যগুলো দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করতেন:
ﺃُﻋِﻴﺬُﻛُﻤَﺎ ﺑِﻜَﻠِﻤَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻴْﻄَﺎﻥٍ ﻭَﻫَﺎﻣَّﺔٍ ﻭَﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻋَﻴْﻦٍ ﻻَﻣَّﺔٍ
“আমি তোমাদের উভয়কে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালামের আশ্রয়ে রাখতে চাই সব ধরণের শয়তান হতে, কষ্টদায়ক বস্তু হতে এবং সব ধরণের বদনজর হতে।”
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের পিতা (ইবরাহীম আলাইহিস সালাম) এই দুয়া দ্বারা (তাঁর দুই সন্তান) ইসমাইল ও ইসহাক আলাইহিস সালামকে ঝাড়ফুঁক করতেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৬৬২,ইসলামিক ফাউন্ডেশন)

 ★ আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেন:
তখন তিনি তাঁকে এ দুআ পড়ে রুকিয়া করলেন:
ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺭْﻗِﻴﻚَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺷَﻰْﺀٍ ﻳُﺆْﺫِﻳﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻛُﻞِّ ﻧَﻔْﺲٍ ﺃَﻭْ ﻋَﻴْﻦِ ﺣَﺎﺳِﺪٍ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳَﺸْﻔِﻴﻚَ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﺭْﻗِﻴﻚَ
“আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সে সব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (সহীহ মুসলিম,হাদিস নং-৫৫১২,ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
আল্লাহু আলাম।
------------✪✪✪------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব),
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments