Recent Tube

আল্লাহর যে সকল গুণবাচক নাম কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট আর যে সকল নাম কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং বান্দার জন্যও প্রযোজ্য। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।




আল্লাহর যে সকল গুণবাচক নাম কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট আর যে সকল নাম কেবল আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং বান্দার জন্যও প্রযোজ্য।


-------------✪✪✪-------------

প্রশ্ন: 
আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম দিয়ে কোন মানুষ কে সম্বোধন করলে শিরক হবে কি?

উত্তর:
জানা প্রয়োজন যে, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম গুলো দু প্রকার। এগুলোর মধ্যে কিছু নাম কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট পক্ষান্তরে কিছু গুণবাচক নাম আছে যেগুলো বান্দার জন্যও প্রযোজ্য।

নিম্নে উভয় প্রকার নামের কতিপয় উদাহরণ পেশ করা হল।

♦ যে সকল গুণবাচক নাম কেবল আল্লাহ তাআলার শানেই প্রযোজ্য। এ সকল নাম দ্বারা বান্দার নাম করণ করা বৈধ নয়। যেমন:
 
১) আল্লাহ (মাবুদ বা উপাস্য)
২) আল ইলাহ (উপাস্য)
৩) আর রহমান (পরম করুণাময়), 
৪) আল খালিক (স্রষ্টা/সৃষ্টিকর্তা)
৫) আল বারী (উদ্ভাবক/স্রষ্টা )
৬) আল-কুদ্দুস (মহা পবিত্র)।
৭) আল আওয়াল (সর্ব প্রথম)
৮) আল আখির (সর্ব শেষ)
৯) আল মুহয়ী (জীবন দাতা)
১০) আল মুমীত (মৃত্যু দাতা) 
১১) আল  আহাদ (একক ও অদ্বিতীয়)
১২) আস সামাদ (মুখাপেক্ষী হীন বা স্বয়ং সম্পন্ন)
১৩) রাযযাক (রিজিক বা জীবিকা দান কারী)
১৪)  আল্লামুল গুয়ুব (অদৃশ্য বিষয়ে সম্যক অবগত)
এ নামগুলো কেবল মহান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। তাই এ সকল নাম দ্বারা কোন ব্যক্তির নাম রাখা বা কাউকে ডাকা বৈধ নয়। সুতরাং কোন মানুষকে কেবল রহমান, রাযযাক, খালেক, কুদ্দূস ইত্যাদি বলে ডাকা হারাম। বরং এ শব্দগুলো দ্বারা মানুষের নাম রাখা বা নাম ধরে ডাকার ক্ষেত্রে এগুলোর শুরুতে আব্দ (দাস বা গোলাম) শব্দ ব্যবহার করা আবশ্যক। যেমন আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক ইত্যাদি।

♦ পক্ষান্তরে কিছু গুণবাচক নাম আছে যেগুলো নাম অথবা গুণ হিসেবে বান্দার জন্যও প্রযোজ্য।

 নিম্নে এ জাতীয় কিছু নামের তালিকা প্রদান করা হল (দলীল সহকারে):

★ ১)  রউফ (মমতাময়ী)
★ ২)  রাহীম (দয়ালু)
কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঊফ (স্নেহ ও মমতাময়ী) এবং রহিম (দয়ালু) শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
 لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
“তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।” (সূরা তওবা: ১২৮)
★ ৩) হালীম (সহনশীল)
★ ৪) রাশীদ (সঠিকপথ প্রাপ্ত বা সুবুদ্ধি সম্পন্ন)
 আল্লাহ তাআলা নবী শুআইব আ. কে উদ্দেশ্য করে উক্ত দুটি গুণ বাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন আল্লাহ তআলা বলেন:
إِنَّكَ لَأَنتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ
“তুমি তো অত্যন্ত সহনশীল, সৎপথের পথিক।” (সূরা হুদ: ৮৭)
★ ৫)  ক্বাবী (শক্তিশালী)
আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামকে ক্বাবী বা শক্তিশালী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
 إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ 
“কর্মচারী হিসেবে তাকেই নিয়োগ দেয়া উত্তম যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।” (সূরা কাসাস: ২৬)

★ ৬) আল মালিক (রাজা/বাদশাহ)
আল্লাহ মিসরের শাসককে ‘রাজা/বাদশাহ’ বলেছেন। যেমন:
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ
“আর বাদশাহ বলল: তাকে (ইউসুফ আ. কে) আমার কাছে নিয়ে এসো।” (সূরা ইউসুফ: ৫৪)
★ ৭) আযীয (প্রতাপশালী বাদশাহ)
আল্লাহ তাআলা মিসরের শাসককে আযীয হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
قَالَتِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ
“আযীয-পত্মি বলল..:”  (সূরা ইউসুফ: ৫১)
★ ৮)  হাফিয (রক্ষক)
★ ৯) আলীম (অধিক জ্ঞানবান)
 قَالَ اجْعَلْنِي عَلَىٰ خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ 
“ইউসুফ বলল: আমাকে দেশের ধন-ভাণ্ডারে নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান।”
★ ১০) হাই (জীবিত) 
আল্লাহ বলেন:
وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ 
“আর তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন।” (সূরা আনআম: ৯৫)

★ ১১) সামী’ (শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন)
★ ১২) বাসীর (দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে উদ্দেশ্য করে এই দুটি শব্দ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا 
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্র বিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন।”সূরা দাহার/ইনসান ২য় আয়াত)
★ ১৩) আলী (সুউচ্চ)। সাহাবী আলী বিন আবি তালিব রা.
★ ১৪) হাকীম (জ্ঞানী বা প্রজ্ঞাবান): সাহাবী হাকীম বিন হিযাম রা.

এই সকল নাম দ্বারা বান্দার নাম রাখা জায়েজ রয়েছে। শুরুতে আব্দ (দাস বা গোলাম) যুক্ত করা আবশ্যক নয় তবে উত্তম।সুতরাং কাউকে কেবল রহীম, করীম, আলী, হাকীম, হালীম, রশীদ ইত্যাদি শব্দ দ্বারা নাম করণ করা হলেও তাতে কোন আপত্তি নেই। কোন আলেমই এগুলোকে শিরক বা কুফুর বলেন নি। 
তবে আব্দুর রহিম, আব্দুল করিম, আব্দুল হালিম, আব্দুল হাকিম এভাবে বলাই অধিক উত্তম।

 ♦ তবে মনে রাখা আবশ্যক যে, উপরোক্ত নামগুলো নাম ও গুণ হিসেবে বান্দার ব্যাপারে প্রযোজ্য হলেও এই বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহর সিফাত বা গুণের সাথে বান্দার গুণের কোন তুলনা চলে না। আল্লাহর প্রতিটি গুণ অপার, অসীম, অবিনশ্বর ও তুলনা বিহীন। পক্ষান্তরে বান্দার গুণাবলী নিতান্তই দুর্বল, সীমিত ও ক্ষণস্থায়ী। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তার সৃষ্টি জগতের কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
ّকোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।" (সূরা শুরা: ১১)
আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী।
-------------✪✪✪-------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
AbdullaahilHadi

Post a Comment

0 Comments