Recent Tube

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নতুন লড়াই ও জামায়াতের মৃত্যু। খোমেনি ইহসান।




চীনা কমিনিস্ট পার্টির নতুন লড়াই ও জামায়াতের মৃত্যু;

 চীন তরতর করে যে বিশ্ব নেতৃত্বে উঠে আসছে তার মূলে রয়েছে চেয়ারম্যান মাওসেতুংয়ের কট্টর নীতিকে বাদ দিয়ে বাজার নীতির প্রবর্তক দাং শিয়াওপিং। 

  আমি যখন লানজু ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম তখন একদিন পরমাণু বিদ্যার একজন প্রফেসরের সঙ্গে কথা হয়েছিল মুসলিম কেন্টিনে, উনার কথা হলো চীনা সমাজে মাও সেতুং একজন মিথ মাত্র, চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি সম্মানিত হলেও চীনা পার্টি ও সমাজে কেউ মাওকে অনুসরণ করে না।

  তার কথার প্রমাণ অবশ্য পেয়েছি। শিয়ান, বেইজিং, উহান, হফেই, সাংহাইয়ের মতো শহরে আমি গেছি, চীনা বাজার সমাজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিপ স্টেটের কোথাও মাও সেতুং নাই। 

  এম্নিতে চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও মাওসেতুং বিরোধী শিবির বিরোধী লোক। তার বাবা মাওবাদীদের রোষাণলে পড়েছিলেন।

  তো ক্ষমতায় আসার পর চীন জুড়ে মাওবাদীরা দমনপীড়নের শিকীর। শি যখন সংবিধান সংশোধন করে আমৃত্যু প্রেসিডেন্ট থাকার সুযোগ তৈরি করেন তখন এনিয়ে যারা আপত্তি করেছিল তার মধ্যে লানজু ইউনিভার্সিটির কিছু ছাত্র ছিল, যার মধ্যে দুজনকে লাইব্রেরি থেকে গোয়েন্দারা তুলে নিয়ে গেছিল।

  এখন এক মজার ব্যাপার ঘটছে গত কয়েক দিন ধরে। বলা হচ্ছে, মাও বিরোধী শি জিনপিং এখন কালচারাল রেভুল্যুশন ২.০ এর পথে হাটছেন।

  এরইমধ্যে চীনা পোলাপানের ভিডিও গেৃস খেলা তিন ঘণ্টা বেধে দেওয়া হইছে, নিজের নাম পরিচয় দিয়ে গেমস লগইন করতে হয়, বড় কর্পোরেশনগুলো প্রচণ্ড রেগুলেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এসব নিয়ে চীনের ভেতরে ও বাইরে তোলপাড় হচ্ছে।

  কিন্তু সিগনিফিক্যান্ট হলো শি জিনপিং গত সপ্তাহে পার্টির তরুণ ক্যাডারদের সামনে এমন এক বক্তব্য দিয়েছেন যা চীনের চাকচিক্যময় উন্নতি ভোগবাদকে ছাপিয়ে কমিউনিজমের চিরচেনা বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরছে, সেটি হলো-স্ট্রাগল।

  সেক্রেটারি শি বলছেন, দুনিয়া এমন এক সন্ধিক্ষণে হাজির হয়েছে যে এ সনয় কমিউনিস্টদের স্ট্রাগলের কথা ভুললে চলবে না, বরং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্ট্রাগল জোরদার করতে হবে।

  এরমধ্যে গত বছর করোনা মহামারী শুরুর আগেই শি জিনপিং একটা ঐতিহাসিক কথা বলেছিলেন৷ সেটি হলো, রুশিয়ায় সোভিয়েত আমলে রাষ্ট্র ও পার্টি একাকার হয়ে পার্টি যেভাবে ভেঙে পড়েছিল, মানে পার্টি স্ট্রাগল বাদ দিয়ে দুর্নীতিবাজ নেতা ও আমলাদের ধান্দা করার প্লাটফর্মে পরিণত হয়েছিল, কিন্তু চীনা পার্টির কমিউনিস্ট লড়াইকে শি জিনপিং জারি রাখতে চান।

  মামে পুঁজিতন্ত্রের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটিয়ে একে উৎখাত করে শ্রেণীহীন সমাজ বিনির্মাণের লড়াইটা চালিয়ে যেতে চীনে সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রের চেয়ে গুরুত্ব পাবে পার্টি। সর্বময় ক্ষমতা রাষ্ট্রের নয়, পার্টির হাতে থাকবে।

   আপনাদের হয়তো মনে আছে আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা মাঝখানে নিখোঁজ ছিলেন৷ পরে তিনি নিজ গ্রামের এক স্কুলে হাজির হন। ওই সময় মূলতঃ পার্টির রেগুলেশনের মুখে পড়েন তিনি। আলীবাবাসহ বড় কর্পোরেশনগুলোর মালিকানা ব্যক্তিগত হলেও এসব কিছুই পার্টির অধীনে যাবে এক সময়, সে জায়গা থেকেই জ্যাক মাকে ডেকে নেওয়া হয়।

   আমার এই লম্বা আলাপের মূল কথা হলো, চীন আগামী দিনে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হতে চললেও তাদের স্ট্রাগলের ঐতিহাসিক নীতি নবায়ন হচ্ছে এবং এর ফলে চীন আরও শক্তিশালী হবে।

   এখন কথা হলো একই সময়ে আমরা বাংলাদেশে কী দেখছি? চীনা পার্টির মতোই ক্যাডার ভিত্তিক ইডিওলজিক্যাল পার্টি বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী৷ আপনারা কি খেয়াল করছেন জামায়াত কিভাবে মরে গেছে?

   আমি চীনে আসার আগে মেডিকেল চেকআপ করাইছিলাম কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতালে। সেখানে ডাক্তাররা আমাকে যথেষ্ট সমাদর করেন এবং ভালোবাসা জানান।

   কিন্তু আমি মন খারাপ করেছিলাম একটা ব্যাপার দেখে, প্রশাসনিক একজন কর্মকর্তা, হয়তো রাজশাহী ভার্সিটি থেকে আসা, দেখেই বুঝবেন শিবির নেতা, অফিস টাইমে তিনি চেয়ারে হেলান দেওয়া, চারপাশে খরচ ছাড় নিতে আসা সাধারণ মানুষ, ওই সময় ভদ্রলোক যেভাবে জমিদার ভঙিতে ছিলেন তা দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি।

    এই কষ্টটা আমি ইসলামী ব্যাংক থেকে শুরু করে জামায়াতে ইসলামী সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে আকসার দেখেছি। সবাই নাদুস, জীবনকে যেন তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন, যেখানে যাবেন উন্নতি ক্ষমতা পদপদবী অর্জনের কথা শুনবেন। লোকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ নানা ক্ষমতার কাঙাল, ফ্ল্যাট প্লট বাড়ির স্বপ্নে বিভোর।

   কিন্তু ইতিহাস হলো জামায়াতে ইসলামী একটা স্ট্রাগল করা পার্টি ছিল। অনেক ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারের ছেলেরা পার্টিতে এসে স্ট্রাগল করেছে।

   আমি যতদিন পার্টির সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে সম্পৃক্ত ছিলাম স্ট্রাগলই করেছি৷ আমার জীবনে প্রথম প্রাইভেটকারে চড়েছিলাম এটিএম আজহার ভাইয়ের সঙ্গে, আমার এক মামা গেছিলাম ওনার সঙ্গে শহীদ গোলাম আযমের (রহ.) কাছে দেখা করাতে নিয়ে যেতে, উনি গাড়িতে আমার কাছে কুরআন তেলাওয়াত শুনতে চাইছিলেন, আমি সূরা এখলাস পড়েছিলাম, তখন তিনি খুশী হয়েছিলেন, আমার মনে পড়ে প্রাইভেটকারে উঠলেও সেখামো কোনো কিছু বিলাসিতা মনে হয়নি, একটা যানবাহন, বিলাস বলতে আজহার ভাইয়ের মাথায় ঐতিহাসিক পশমি টুপিটাই ছিল এবং আমার কিশোরমনে একজন জাদরেল নেতার প্রতিচ্ছবি ছিলেন তিনি, প্রথমে শহীদ নিজামীর (রহ.) দেখা হলো, আমার বাবা যে দল করতেন, যেসব  মানুষের সঙ্গে করতেন, তাদের সত্যিকারের সেক্রেটারি জেনারেলই মনে হয়েছে তাকে।

    কিন্তু কুড়ি বছর পর ২০১৭/১৮ সালে এসে আমার মনে হয়েছে সেই সব মানুষের স্ট্রাগলের মানসিকতা দেখিনি আর। বড় নেতা বড় পদ বড়লোক, এরকম একটা ব্যাপার সর্বত্র। 

    ব্যাপারটা কদ্দুর হয়েছে দেখেন, যেসব ছেলেমেয়ে ভার্সিটিতে ভালোছাত্র, যাদের পরিবার স্বচ্ছল, যাদের একটু পয়সা আছে তাদের কথাবার্তা ও আচরণকে মিলায়েন, কারো কি মনে হবে একটা ইডিওলজি নিয়ে কারো কোনে স্ট্রাগল আছে?

   চীনা পার্টি তার স্ট্রাগলের জায়গা থেকে জ্যাক মাকে পর্যন্ত উধাও করে ফেলতে পারে। কিন্তু আমি আগে কিছু লেখায় দেখিয়েছি, জামায়াতের রোকনরা লোকজনের টাকা মেরে দিছে, দল তাদের বিষয়ে কিছু করেনি, তারা রোকন আছে এবং সভাসমিতি করে বেড়ায়।

   জামায়াতের দেউলিয়া রাজনীতির আরেক প্রমাণতো বিচারপতি আবদুর রউফ, এই লোক ইসরায়েলপন্থী প্রমাণিত, তারপরেও তার সঙ্গে জামায়াতের লোকেরা আছে।

   দেশ-বিদেশের সর্বত্র জামায়াতের লোকেরা ব্যক্তিগত উন্নতি নিয়ে পেরেশান হলেও আদর্শিক স্ট্রাগল নিয়ে বড়ই উদাসীন ও অনীহ।

   এরমধ্যে আমেরিকায় পওএইচডিরত একজন আফসোস করে বললেন, অমুক অমুকতো সব ছেড়ে দিছে। মানে স্ট্রাগলটা আর নাই।

   আমার মনে পড়ে, লোকজন হেয় করতে আমাকে এ কথা বলত যে তুমি কি করেছ। আমার কর বলার আছে, ৩৬ বছরের জীবনে অন্তত ২২ বছর স্ট্রাগল করছি। আমি জামায়াত করি না, কারণ আমার স্ট্রাগল জামায়াত করার চেয়ে বড় হয়ে গেছে। শৈশব কৈশোরের জায়গাটুকুতে থাকলে আমি জামায়াত করতাম। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা জানেন আমার সংগ্রাম আরও কতটা গভীর হয়েছে এবং যে কারণে পার্টি আমাকে ধারণ করতে পারে না, এটা কোনো দলই পারবে না।

  আমরা একটা মুসলিম জাতি, আমাদের একটা স্বতন্ত্র ভূখণ্ড ভাষা সংস্কৃতি লাইফস্টাইল আছে, এর স্ট্রাগলটা আমি ধারণ করি, জামায়াতে ইসলামী উত্তর ভারত ও পাকিস্তানীদের কাছ থেকে আসা একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ, কিন্তু বাংলাদেশে এর রাজনীতিটা বাংলার মুসলিম জাতীয়তাবাদ থেকে আসছে, এটির কারিগর শহীদ গোলাম আযম (রহ.), তবে জামায়াত কালচারালি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ইসলামের বদলে আরবের রাজতন্ত্রবাদী ইসলামকে ধারণ করে গোত্রবাদে জড়িয়েছে, আমি এসবে যাইনি, আমি বাংলাদেশী মুসলিম জাতীয়তাবাদকে অঔন করি, এরমধ্যে আমি জামায়াতের রাজনৈতিক সংগ্রামটাকেও রাখি।

  কিন্তু জামায়াত স্রেফ ধর্মীয় দল আর সালাফিস্ট গ্রুপ হয়ে গেছে, তাদের এখন কোনো স্ট্রাগল নাই।

Post a Comment

0 Comments