Recent Tube

বিতি কিচ্ছা-৮৪; নুর মুহাম্মদ চৌধূরী (মুবিন)।


                 
                              বিতি কিচ্ছা;
                                      পর্ব-৮৪;

"যুগে যুগে ডাক্তার-
ডাকাতের হাতিয়ার"
-----------------------

"মাগো আমায় দেখাসনে আর জুজু বুড়ীর ভয়,
আজকাল আর আমি তোমার ছোট্ট খেকা নয়।"
প্রতিযুগে মা বাবারা বাচ্চা-কাচ্চাদের এরুপ কল্পিত জুজুর ভয় দেখিয়ে সন্তানের দুরন্তপনায় ইতি আনয়নের চেষ্টা করে থাকেন। সন্তান মায়ের মুখ নিসৃত এই কল্পিত জুজুকে অবশেষে আবিষ্কার করে ফেলে। আর একসময় সেও মাকে ঐ কল্পিত জুজুর ভয় দেখিয়ে হাস্যরস করতে থাকে। অত:পর এক পর্যায়ে এসে এই কল্পিত জুজু যে আসলেই "একটি দুরন্তপনা নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার" এটা বুঝতে বাচ্চার আর বাকি থাকে না। আসলে ভীতি প্রদর্শনের এই জুজু একটি জলজ্যান্ত মিথ্যা। প্রতিটি মিথ্যাই দোষণীয়। এবং মিথ্যা কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একদিন মিথ্যার গোঁমড় ফাঁস হয়েই যায়। তখন এই মিথ্যা আর মিথ্যা হিসাবে চর্চিত হয় না, হয় রসালো আলোচনার বিষয়বস্তু। কোন কোন রসালোচোনা প্রজন্মের শিক্ষা গ্রহনের নিমিত্বে ঐতিহাসিক উপাখ্যান হিসাবে জীবিত থাকে। কিন্তু মানুষের মরচে ধরা অন্তরাত্নায় ক্রমশ: এই হাস্যরস আর মিথ্যাকে তেমন ক্ষতিকারক বা অপরাধ হিসাবে গন্য করা হয় না বিধায় ছোট ছোট এইসব মিথ্যা বটবৃক্ষসম ক্ষতি বা বিপর্যয় নিয়ে আবির্ভুত হয় সমাজে।  

 এইরুপে বহু অসত্যকে অসত্য বা পাপ বলে মনে করার মন আজ নেহায়েৎ অল্প। এরকম হাজারো অসত্যের মধ্যে একটি বহুল ব্যবহৃত অসত্য হচ্ছে ডাক্তারী প্রত্যয়নপত্র। চাকুরীরত থাকা অবস্থায় অফিস ফাঁকি দিতে, এমনকি দাওয়াতী তাবলিগের মত দ্বীনি কাজের ওসিলায় অফিস কামাইয়ে ডাক্তারী প্রত্যয়ন পত্রের ব্যবহার আজ মামুলী বিষয়। মানবিক কারণে এই প্রত্যয়ন পত্রের উপর কেউ হাত তোলেন না। সুতরাং ডাক্তারী প্রত্যয়ন পত্র ক্রয় ও বিক্রয় একটি বহুজন জ্ঞাত অপরাধ বিশেষ। একমাত্র মানবিক কারণের দোহাই তোলে এটাকে জায়েজ করে নিয়েছে সকল কর্তৃপক্ষ। মানবিকতার প্রশ্নকে সামনে রেখে অমানবিক ডাকাতি কর্মযজ্ঞ প্রতিষ্ঠিত করতে এটা শয়তানের একটি বড় সাফল্য।

এতএব এই অসত্য মেডিকেল সার্টিফিকেট একটি ডাকাতি প্রক্রিয়া, এবং এর নির্মানে অর্থাৎ এই ডাকাতি কর্মে যাদের সক্রীয়তা শতভাগ তারাই হলেন ডাক্তার। এক শুভঙ্করের ফাঁকির মারপ্যাচে পড়ে এরা সমাজে সর্বাধিক বরেণ্য ও পূজনীয় বটে। 

অফিস আদালতে কাজ ফাঁকি দিতে ডাক্তারী মিথ্যা প্রত্যয়ন পত্রের ব্যবহারে চতুর্মূখী লাভ। প্রথমত: কাজ ফাঁকি দেয়া, দ্বীতিয়ত: অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজে নিজেকে লাগিয়ে রাখা, তৃতীয়ত: যথারীতি বেতন আদায়, এছাড়াও কল্পিত মিথ্যা ব্যবস্থাপত্রের মুল্যের বিল সমুহ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাগিয়ে নেয়া। যা নি:সন্দেহে একটি ডাকাতি কার্যক্রম। আর এই কাজের দক্ষ হাতিয়ারই হচ্ছেন ডাক্তার। সমাজের কোন মহলে তার ব্যবহার কমবেশী নাই - তা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তালাশ সাপেক্ষ বটে। 

বাংলাদেশের আদালতে আসামীর হাজিরা না দিয়ে দু'শ টাকা মূল্যের ডাক্তারী প্রত্যয়ন পত্রের ব্যবহার প্রতিনিয়ত হচ্ছে না-এমন কথা হলফ করে বলতে পারবেন না কোন আইনজীবি অথবা বিচারক। এর চেয়েও মারাত্বক বিষয় হল," হাসপাতালের রেজিষ্টারে রোগী ভর্তি দেখিয়ে বাহিরে এসে খুন-খারাবী করে আবার গিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পড়া। এতএব সয়ং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চাক্ষুষ সাক্ষী হবার পরও সমুহ ঘটনা মিথ্যা প্রমান করতে সক্ষম হল সুনামগঞ্জ জেলার কোন এক মামলায়। এহেন ঘটনায় ব্যবহৃত মুল হাতিয়ারই হল ডাক্তার। 
এতএব এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিয়ে না করেও স্ত্রীর অসুস্থতার নিমিত্তে ছুটি ভোগ বা নানাবিধ সুবিধা ভোগও যে আজকাল হচ্ছে না -তা বলা যায় কিভাবে? 

ইদানীং সমাজে ছোট ছোট এইসব দূর্ণীতিকে ডাকাতি বলা হয় না বটে, তবে বড় বড় ডাকাতেরা কখনও কোন মায়ের গর্ভে জন্ম লাভ করে না, এই সব ছোট ছোট মাপের ডাকাতরাই ক্রমশ: বড় মাপের ডাকাতের রুপ লাভ করে থাকে। আজ সমাজে পুকুরচুরি, সাগর চুরির ন্যায় যে সব বিশাল বিশাল ডাকাতি দৃশ্যমান - তা ঐ ছোট ছোট ডাকাতিকে গুরুত্ব না দেওয়ারই ফল। এই সমুহ অকল্যাণ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই রুখে দিতে পারে যা - তা হচ্ছে ইসলামী নৈতিকতার শিখন, প্রশিক্ষণ, ও চর্চা। 

কিন্তু বর্তমান বিশ্ব ইসলামকে সবার আগেই নৈতিকতা বিবর্জিত একটি ব্যবস্থা হিসাবে জ্ঞান করে থাকে। যার প্রমান আমাদের দেশে জনগনের উপর চেপে বসা সরকার কচি শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা বইয়ের নামের মধ্যে একটি "ও" যুক্ত করে নাম দিয়েছে 'ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা'। পাঠ্যপুস্তকের এমন নামকরনের মধ্যেই তারা তাদের ইসলাম বিরুধী মনোভাবের পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছে। এরা নৈতিকতার নামে কল্পিত ও বিকৃত মুল্যবোধের চাষাবাদ করে সমাজকে যা উপহার দিয়েছে তা "একটি নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজ ব্যবস্থা ও তার উপাদান অর্থাৎ এক দল অসৎ মানুষ।"
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত মানবকুল সর্বদাই এহেন ডাকাতী কর্ম থেকে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে চলছেন বলেই সমাজে আজও খানিকটা মানবতার পরশ পাওয়া যায়। এরপরও আমরা যারা এখনও এহেন নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টার আত্ননিয়োগ করছি না - তাদের জন্য জীবন যাপন ক্রমশ: অভিশাপ হিসাবে আভির্ভূত হবে নয়ত কি? আর ডাকাতের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আমরা সমাজকে আরও নতুন নতুন সমস্যায় পৃথিবীকে জর্জরিত করবো নয়তো কি? 

ইতিপুর্বে নব্বইয়ের দশকে লাইভষ্টক বিভাগের ডাক্তারদের প্রত্যয়ন নিয়ে কথিত "বার্ড ফ্লু"র দোহাই দিয়ে কোন একদল দেশীয় অথবা আন্তর্জাতিক মহল ধ্বংস করলো দেশের সম্ভাবনাময় শিল্প পোল্ট্রী ব্যবসা। মানব স্বাস্থ্যের সমুহ ক্ষতির দোহাই তোলে তারা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করলো লক্ষ লক্ষ ক্ষুদে প্রাণ। পথে বসতে হল লক্ষ লক্ষ উটতি যুবক। যাদের বেকারত্ব নিয়ে ইতিপুর্বে কারো কোন মাথাব্যাথা ছিল না। ঐ সময়ের ঐ বৈজ্ঞানিক গুজবে বলা হয়েছিল, ১০০* সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় বার্ড ফ্লু'র জীবানু নাকি ধ্বংস হয়ে যায় । তবে কেন জ্বালিয়ে  পুড়িয়ে ধ্বংস করতে হবে নব্য উটতি খামারিদের স্বপ্ন এই কষ্টের ফসল? তবে আমরা যারা বিষয়গুলেকে আঁড়চোখে দর্শন করে থাকি , তারা কিন্তু তখনও মোরগের গোস্ত খাওয়া বন্ধ করিনি। যেমনভাবে আজও আমরা সাম্প্রতিক এই বৈজ্ঞানিক গুজব করোনাকে আঁড়চোখে দেখতে প্রয়াস পাই। এইভাবে নানা সময়ে নানাবিধ শব্দবাণে বোকা বানিয়ে পৃথিবীকে এক হাত দেখিয়ে দেয়ার ব্যাপার ছিল-সোয়ান ফ্লু সমস্যা, ডেঙ্গু সহ আরও কত কি?

ইত্যবসরে করোনা নামক জুজুর ভয়টিও একটি জলজ্যান্ত মিথ্যা জ্ঞান করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। দীর্ঘ্য এক বৎসরেরও বেশী কাল ধরে নানাপ্রকার বৈশিষ্ট লেপ্টে দেয়া হচ্ছে কভিডের গায়ে। নানা ভাবে মানুষকে ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলা হচ্ছে করোনার প্রতি। কে দেখেছে করোনা? আর কি ই বা তার প্রকৃত তাণ্ডব? মহামারিতে মৃত্যুর হার মোটে ৬%? মানুষকে বোকা বানানো তাহলে এতই সোজা? তবে শুধু ডাক্তারদের সহযোগীতায়ই এটা সম্ভব।

এক্ষণে ক্ষমতাসীনরা করোনার দোহাই দিয়ে স্বীয় ক্ষমতার স্থায়ীত্ব বাড়ানোর বাহানায় মজা লোটতে সুযোগ লাভ করছে। মালোয়েশিয়ার মত দেশে অস্থায়ী সরকার কর্তৃক নির্বাচন পিছিয়ে নিতে নিতে বৎসর করলো পার। ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্যে নিয়ন্ত্রনহীন ব্যবস্থা কায়েম করে বিপর্যস্থ করছে জনপদ। বিরোধী দল দমনের নামে লক-ডাউন লক ডাউন খেলা, ইত্যাদী হেন অপকর্মই আজ এই করোনার নামে আজ্ঞাম দেয়ার প্রয়াস পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দুষ্টচক্র । অপর দিকে সিনেমা হল, বানিজ্য মেলার নামে ক্যাসিনো আড্ডা সবই আছে সুবিধামত। এছাড়া নাস্তিকদের পদলেহনের মজা উপভোগে যাদের ফিরে পায় প্রাণ স্পন্দন, তাদের পরম চাওয়ার তাগিদে মসজিদে তালা হরদম। এসবের মানে জনগন বুঝেনা বললে ভূল হবে বৈ কি । তবে সবকিছুর নেপথ্যে ভীলেন কিন্তু ডাক্তার বাবুজি।

তাইতো দেখতে অথবা বুজতে বাকি নাই আর,
মানবতার ফেরিওয়ালা নামে খ্যাত ডাক্তার,
দিনে দিনে হয়ে গেছে ডাকাতের হাতিয়ার।।

Post a Comment

0 Comments