স্পেনে মুসলিমদের ৮০০ বছরের শাসন ও নানা ভুলের কথা ;
পর্ব-০১;
----------------------------------
ভূমধ্যাসাগরে জিব্রাল্টার প্রণালীর তীরে একটি সবুজ পাহাড় রয়েছে। যেটি ব্রিটেনের ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি। ব্রিটেনের নিরাপত্তার জন্য এই ঘাঁটিকে দ্যা রক (The Rock) বা পাথরও বলা হয়। এই পাহাড়টি এবং এর আশেপাশের জমিগুলো একটি ছোট সংযোগ স্থলের মাধ্যমে স্পেনের সাথে সংযুক্ত। এখানে ব্রিটেন সেনারা থাকে। এখানে ৩৩ হাজার স্থানীয় অধিবাসীও রয়েছে। যারা ব্রিটেনের নাগরিক। এখানে মুসলিম শাসনামলের একটি দুর্গের ধংসাবশেষ আছে। এছাড়া এখানে একটি মসজিদও আছে। যা সৌদি আরবের প্রাক্তন বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ নির্মাণ করিয়েছিলেন। এই পাহাড় এবং এর আশেপাশের জমি স্পেন ১৭১৩ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটেনের কাছে হস্তান্তর করে। এই ঘাঁটির মাধ্যমে ব্রিটেন জিব্রাল্টার প্রণালী তথা ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগ স্থলকে নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রিটেন চাইলে এই প্রণালী বন্ধও করতে পারে। ব্রিটেন প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির পথ আটকানোর জন্য জিব্রাল্টার প্রণালী বন্ধও করেছিলো। এই জায়গার কৌশলগত গুরুত্ব ছাড়াও একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। আজ থেকে ১৩০০ বছর পূর্বে ৭১১ সালের মে মাসে কিংবদন্তী মুসলিম সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ ৭ থেকে ১০ হাজার সৈন্যের সেনাবাহিনীর সাথে এই পাহাড়ের কাছাকাছি অবতরণ করেন। সেই থেকে এই পাহাড়ের নাম জাবাল-আত-তারিক বা তারিকের পাহাড়। যা ইউরোপীয় ভাষায় বিকৃত হতে হতে জিব্রাল্টার হয়ে যায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই পাহাড় এবং এর আশেপাশের এলাকাকে জিব্রাল্টার বলা হয়। আর এই পাহাড় সংলগ্ন প্রণালীকে জিব্রাল্টার প্রণালী বলা হয়। আজ থেকে ১৩০০ বছর পূর্বে যখন তারিক বিন যিয়াদ (Tariq ibn Ziyad) তাঁর সেনাবাহিনীসহ জিব্রাল্টারে অবতরণ করেছিলেন তখন সমুদ্রের ওপারের সমগ্র উত্তর আফ্রিকা তৎকালীন সুপার পাওয়ার উমাইয়া খিলাফাতের অংশ ছিলো। উমাইয়া খিলাফাতের রাজধানী ছিলো আজকের সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক।
তখন আফ্রিকাকে আফ্রিকিয়া বলা হতো। উমাইয়ারা এক আরব সেনাপতি মুসা বিন নুসাইরকে আফ্রিকিয়ার গভর্নরের দ্বায়িত্ব দিয়েছিলো। ইসলামি ইতিহাসের বিখ্যাত বই ফাতহু বুলদান মোতাবেক মুসা বিন নুসাইর একজন গোলাম ছিলেন। যাকে উমাইয়ারা মুক্ত করে আফ্রিকিয়ার গভর্নর নিযুক্ত করে। মুসা বিন নুসাইরের রাজধানী ছিলো আজকের তিউনিসিয়ার শহর কিরওয়ান। মুসা বিন নুসাইর আজকের মরোক্কোর একটির শহর তানজা জয় করে বার্বার গোত্রের এক গোলাম তারিক বিন যিয়াদকে তানজা শহরের শাসক বানান। উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন গোত্রের লোকেদের বার্বার বলা হতো। তারিক বিন যিয়াদ একজন নওমুসলিম ছিলেন। অর্থ্যাৎ তিনি সবে মাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি আল জেরিয়ার লোক ছিলেন। তারিক বিন যিয়াদ মুসা বিন নুসাইরের বিশস্ত এবং দক্ষ সেনাপতি ছিলেন। মুসা বিন নুসাইর যখন স্পেন জয় করা সিদ্বান্ত নিয়েছিলেন তখন মুসা বিন নুসাইর তারিক বিন যিয়াদকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি তারিক বিন যিয়াদকে স্পেনে গিয়ে সেখানকার অবস্থা, মানুষের জীবন যাপনের ধরণ, গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ ও বন্ধু বানানোর নির্দেশ দেন। অর্থ্যাৎ এখনই যুদ্ধ নয়। যুদ্ধ পরে করা হবে। তারিক বিন যিয়াদ ৭ হাজার সৈনিক জড়ো করলেন। তাদের জাহাজে উঠালেন এবং জিব্রাল্টারের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেন। তারিক বিন যিয়াদের সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সৈনিক বার্বার ছিলেন। এছাড়া সেনাবাহিনীতে কিছু সংখ্যক সিরিয় এবং ইয়েমেনি সৈন্যও ছিলো। জিব্রাল্টার ছিলো স্পেনে প্রবেশের সবচেয়ে সহজ পথ। হয়তো এজন্যই তারিক বিন যিয়াদ জিব্রাল্টারকে বেছে নিয়েছিলেন। স্পেনের সেনাবাহিনী ধারণাও করতে পারে নি যে, এই ছোট্ট পাগাড়ি উপত্যকা দিয়ে এতবড় সেনাবাহিনী স্পেনে প্রবেশ করে। স্পেনের সেনাবাহিনী ও শাসকরা এই পাহাড়কে অগুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলো। এজন্য সেখানে নজরদারির জন্য কোন সেনাদল কিংবা দুর্গ রাখে নি। কিংবা দুর্গ থাকলেও তা খালি ছিলো।
তারিক বিন যিয়াদ ও তাঁর সেনাবাহিনী বিনা বাধায় স্পেনে প্রবেশ করলো। তারিক বিন যিয়াদের সেনাবাহিনী হামলা করার জন্য নয় বরং গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্যই স্পেনে গিয়েছিলো। জিব্রাল্টারে অবরতরণের পর তারিক বিন যিয়াদ তাঁর সৈনিকদের জাহাজ পুড়িয়ে ফেলতে আদেশ দেন। কারণ তারিক বিন যিয়াদ আর সাথীর দেখেছিলো যে, মাইলের পর মাইল জমি খালি পড়ে রয়েছে। আর স্পেনের শাসকগণ এই হামলার আশংকাও করছে না। তাই তারিক বিন যিয়াদ ভাবলো যে, যদি অবস্থা এরকম হয় তাহলে এই ছোট্ট সেনাবাহিনীর জন্যও স্পেন জয় করা খুব একটা কঠিন হবে না। তারিক বিন যিয়াদের সৈনিকরা জাহাজ পোড়ানোর আদেশে হতবাক হয়ে যায়। তাও তারিক বিন যিয়াদ তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। তারিক বিন যিয়াদের আদেশে সকল জাহাজ পু্ড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর তারিক বিন যিয়াদ তাঁর সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে মনোবল চাঙ্গাকারী এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তারিক বিন যিয়াদ বলেন, - " আমার ভাইয়েরা। আমরা এখানে আল্লাহর দ্বীনের প্রসারের জন্য এসেছি। শত্রু আপনাদের সামনে আর সমুদ্র আপনাদের পিছনে। এখন আপনাদের আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করতে হবে। হয় আপনারা জয়ী হবেন কিংবা শহীদ। এছাড়া আর অন্য কোন বিকল্প নেই।" তারিক বিন যিয়াদ ও তাঁর সেনাবাহিনীর জীবনের নিশ্চয়তা শুধুমাত্র বিজয় অর্জনের ওপরই ছিলো। কারণ এখন ফিরে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। তারিক বিন যিয়াদ হয় মৃত্যু না হয় বিজয়ের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লেন এবং সেই গতিতে এগিয়ে যেতে লাগলেন। এখানে দুটি প্রশ্ন উঠে। এক, মুসলিমরা স্পেনে কেন হামলা করেছিলো কিংবা মুসা বিন নুসাইর কেন স্পেনে হামলা করার সিদ্ধান্ত নেন? দুই, তারিক বিন যিয়াদের লড়াই কার সাথে ছিলো? চলুন স্পেনে মুসলিমদের ৮০০ বছরের শাসন ও নানা ভুলের কথা সিরিজের ১ম পর্বে এ সম্পর্কে জানা যাক।
যখন তারিক বিন যিয়াদ স্পেনে হামলা করছিলেন তখন সেই জায়গাকে স্পেন বলা হতো না। তাকে আইবেরিয়ান পেনিনসুলা (IEBERIAN PENINSULA) বলা হতো। এই জায়গায় কয়েক শো বছর পূর্বে রোমানদের শাসন ছিলো। রোমানরা এই অঞ্চলকে হিসপানিয়া বলতো। আর মুসলিমরা এই অঞ্চলকে আল আন্দালুস বলতো। আইবেরিয়ান পেনিনসুলার প্রাচীন বসবাসকারীদেরকে ভ্যান্ডেল বা অ্যান্ডেলস বলা হতো। বলা হয়ে থাকে এই ভ্যান্ডেলস বা অ্যান্ডেলস শব্দটি আরবীতে গিয়ে আন্দালুস হয়ে যায়। এজন্য মুসলিমরা এই অঞ্চলকে আল আন্দালুস বলতো। তারিক বিন যিয়াদ যখন স্পেনে হামলা করেন তখন একটিমাত্র জাতির বসবাস ছিলো না। বরং বিভিন্ন অংশ থেকে আগত বিভিন্ন যাযাবর জাতি এখন বসবাস করতো। ইউরোপের একটি যাযাবর গোষ্ঠীর নাম ছিলো ভিসিগোথ। এরা ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলো। ৪১৮ সালে এরা স্পেনের প্রাচীন বাসিন্দা ভ্যান্ডেলস কিংবা অ্যান্ডেলসদের পরাজিত করে এই অঞ্চলে ভিসিগোথিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্য তাঁর স্বর্ণযুগে স্পেন, পর্তুগাল, মরোক্কোর পাশের কিছু এলাকা এবং ফ্রান্সের কিছু এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। মুসলিমদের আগমণের প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিলো। বলা হয়ে থাকে প্রত্যেক স্বর্ণযুগ বা শক্তির সর্বোচ্চ সীমার পরই প্রত্যেক সাম্রাজ্যের পতন হয়। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্য বহ্যিক দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী মনে হলেও মুসলিমদের আগমণের পূর্বে এই সাম্রাজ্যের ক্ষমতা এমন এক ব্যক্তি লাভ করে যে, সাম্রাজ্যকে দূর্বল করে দেয়। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের ঐক্যকে ছিন্ন বিছিন্ন করে দেয়। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যে পারস্পরিক মত পার্থক্য এমন এক পর্যায়ে পৌছায় যে, সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই শাসকের নাম ছিলো রডরিক (Roderic)। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের সম্রাট বা রাজা রডরিক ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের রাজ পরিবারের সদস্য ছিলো না। রডরিকের পূর্বের জীবন সম্পর্কে ইতিহাসে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না।
ধারণা করা হয় রডরিক ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের কোন প্রদেশের গভর্নর ছিলেন। ৭১০ সালে যখন ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের সম্রাটের মৃত্যু হয় তখন রডরিক ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের কিছু মন্ত্রীর সহায়তায় রডরিক ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। সম্রাটের ছেলেদের বঞ্চিত করে। এর ফলে রডরিকের শাসনকালের শুরু থেকেই তাঁর শাসন বিতর্কিত ছিলো। সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অংশে রডরিককে আইনগত সম্রাট মানা হয় নি। ধীরে ধীরে সাম্রাজ্যের মন্ত্রীগণ রডরিকের বিরোধী হয়ে উঠে। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর যারা রডরিককে পছন্দ করতো না তারা এবং প্রাক্তন সম্রাটের ছেলেরা রডরিকের শাসন শেষ করার জন্য পরিকল্পনা করতে লাগলো। রডরিকের এরকম এক বিরোধীর নাম ছিলো কাউন্ট জুলিয়ান (Julian, Count of Ceuta)। কাউন্ট জুলিয়ান সমুদ্রের ওপারে আফ্রিকা মহাদেশে থাকা ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের প্রদেশ Ceuta সাবতা বা সিউটার গভর্নর। যা আজ মরোক্কোর সীমান্তবর্তী। এই অঞ্চলটি আজও স্পেনের সায়ত্তশাসিত এক কলোনি। তারিক বিন যিয়াদের সময়েও এই এলাকা ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো। এই এলাকার গভর্নর কাউন্ট জুলিয়ান রডরিককে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মুসলিমদের সমর্থন করছিলেন এবং মুসলিমদের সাহায্য চাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি কেন রডরিকের বিরোধীতা করছিলেন? এর উত্তরে একটি কিংবদন্তী বর্ণনা করা হয় যা সত্যও হতে পারে। আবার মিথ্যাও হতে পারে। বলা হয় কাউন্ট জুলিয়ানের মেয়ে লাকাভা অত্যন্ত সুন্দরী ছিলো। কাউন্ট জুলিয়ান তাঁর মেয়ে লাকাভার শিক্ষার জন্য তাঁকে ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের সম্রাটের প্রাসাদে পাঠায়। রডরিকের রাজধানী ছিলো টলিডো। যাকে আরবীতে তালিতলাও বলা হয়। লাতাভা যখন টলিডোর রাজ প্রাসাদে পৌঁছানোর পর রাজা রডরিক লাকাভার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যান।
রাজা রডরিক লুকিয়ে লুকিয়ে লাকাভাকে দেখতো এবং আনন্দিত হতো। ধীরে ধীরে যুবতী লাকাভাও রাজা রডরিকের প্রেমে পড়ে যায়। এরপর মানুষ যখন রাজা রডরিক এবং লাকাভার প্রেম কাহিনী আরও মজাদার করে প্রচার করা শুরু করলো তখন তা কাউন্ট জুলিয়ানের কানেও পৌঁছায় তখন কাউন্ট জুলিয়ান প্রচন্ড দুঃখ পান ও রাগ্বানিত হন। এছাড়া এই কিংবদন্তীর অন্য একটি বর্ণনা অনুযায়ী লাকাভাকে রাজা রডরিক ধর্ষণ করেছিলো। লাকাভা এই ঘটনা তাঁর বাবা কাউন্ট জুলিয়ানকে বলার পর কাউন্ট জুলিয়ান রডরিককে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করতে লাগলেন। শুরু থেকেই রাজা রডরিকে শাসন দূর্বল ছিলো। তাই রডরিকের ব্যাপারে এরকম পরিকল্পনা করা কাউন্ট জুলিয়ানের পক্ষে সহজ ছিলো। এই কিংবদন্তীর অন্য আরেকটি বর্ণনা অনুযায়ী লাকাভা আসলে কাউন্ট জুলিয়ানের স্ত্রী ছিলো। যে নিজে রডরিককে তাঁর প্রেমের জালে জড়ান। এই খবর কাউন্ট জুলিয়ান পাওয়ার পর কাউন্ট জুলিয়ান রডরিককে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরিকল্পনা শুরু করেন। যদিও আধুনিক ঐতিহাসিকরা কাউন্ট জুলিয়ানের কোন মেয়ে ছিলো বা এর পেছনে কোন মেয়ের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন৷ কাউন্ট জুলিয়ানের মেয়ের অস্তিত্ব মিথ্যাও হতে পারে কিংবা সত্যও হতে পারে। তবে কাউন্ট জুলিয়ান সত্যিই রাজা রডরিককে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাচ্ছিলেন। হয়তো তিনি নিজেই রাজা হতে চেয়ে ছিলেন। এরপর কাউন্ট জুলিয়ান উমাইয়া খিলাফাতের আফ্রিকিয়া প্রদেশের গভর্নর মুসা বিন নুসাইরের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। এছাড়া ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের প্রাক্তন সম্রাট ভ্যাটিজের পুত্ররাও মুসা বিন নুসাইরকে পত্রের পত্র পাঠিয়ে চলেছিলেন। তারা পত্রে বলছিলেন রাজা রডরিকের বেআইনি শাসন থেকে আপনি আমাদের মুক্ত করুন। সাবেক সম্রাট ও কাউন্ট জুলিয়ানের পত্রের পত্র পেয়ে মুসা বিন নুসাইর আইবেরিয়া বা আল আন্দালুস জয় করার সিদ্বান্ত নেন। পূর্বেই বলেছি মুসা বিন নুসাইর এই অভিযানের জন্য তারিক বিন যিয়াদকে বেছে নিয়েছিলেন।
তারিক বিন যিয়াদের মূল যুদ্ধ ছিলো ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের সম্রাট বা রাজা রডরিকের সাথে। যার মন্ত্রীগণ এবং জনগণ তাঁর বিরোধী হয়ে উঠেছে। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের জনগন ও অধিকাংশ মন্ত্রী তারিক বিন যিয়াদকে গোপনে সাহায্য করতে থাকে। তারিক বিন যিয়াদ যেই জাহাজগুলো দিয়ে জিব্রাল্টারে অবতরণ করেছিলো সেগুলো কাউন্ট জুলিয়ান সরবরাহ করেছিলেন। তারিক বিন যিয়াদ যখন জিব্রাল্টার দিয়ে দক্ষিণ স্পেনে প্রবেশ করছিলো তখন রাজা রডরিক একটি বিদ্রোহ দমনের জন্য উত্তর স্পেনে গিয়েছিলো। তারিক বিন যিয়াদের থেকে বহুদূরে রডরিকের সেনাবাহিনী অবস্থান করছিলো। তারিক বিন যিয়াদ গুপ্তচরবৃত্তির পরিবর্তে স্পেন জয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে চললো। তারিক বিন যিয়াদ কোন বড় বাঁধা ছাড়াই একের পর এলাকা জয় করতে লাগলেন। তারিক বিন যিয়াদের জন্য করণীয় ছিলো রাজা রডরিকের বাহিনী আসার আগেই যতটা বেশি সম্ভব এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠা করে সফল গুপ্তচরবৃত্তি করা। তারিক বিন যিয়াদ বড় ধরনের কোন বাঁধা ছাড়াই স্পেনের একের পর এক এলাকা জয় করে নেন। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও মুসলিম সেনাবাহিনী সেসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়। রাজা রডরিক যতদিনে তারিক বিন যিয়াদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আসে ততদিনে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছিলো। সময়টা ছিলো পুরো দু মাস। এই সময়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তারিক বিন যিয়াদ এর মধ্যে উপকুলীয় শহর জাজিরা আল খাদরা জয় করেন। এ সময় খ্রিস্টান সেনাবাহিনীর সাথে কয়েকটি সংঘর্ষও হয়। তারিক বিন যিয়াদ এই এলাকা এবং এর আশে পাশের এলাকার মানুষদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। রাজা রডরিক উত্তর স্পেন থেকে দক্ষিণ স্পেনে পৌঁছান। তখন তারিক বিন যিয়াদ রডরিকের সাথে যুদ্ধ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। শুরুতে তারিক বিন যিয়াদের কাছে ৭ থেকে ১০ হাজার সৈন্য থাকলেও রাজা রডরিকের সাথে যুদ্ধের আগে মুসা বিন নুসাইর আরও ৭ হাজার অশ্বারোহীর এক বাহিনী তারিক বিন যিয়াদের কাছে পাঠান। তারিক বিন যিয়াদের কাছে সব মিলিয়ে খুব বেশী হলে ১৭ হাজার সৈন্য ছিলো। কিন্তু এর বিপরীতে রাজা রডরিকের সৈন্য ছিলো এরচেয়ে অনেক বেশী।
মুসলিম এবং অমুসলিম উভয় ঐতিহাসিকগণই একমত যে, তারিক বিন যিয়াদের তুলনায় রডরিকের সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুণের বেশী ছিলো। কেউ বলেন ২৪ হাজার, আবার কেউ বলেন ১ লাখের কাছাকাছি। যাই হোক রাজা রডরিকের সৈন্য সংখ্যা তারিক বিন যিয়াদ থেকে দ্বিগুণের বেশি ছিলো। ৭১১ সালের জুলাই মাসে জিব্রাল্টার থেকে ৮৭ কিলোমিটার দূরে স্পেনের শহর মদিনাতুস সাইদোনার কাছে কোন এক জায়গায় দুই বাহিনী মুখোমুখি হয়৷ এক ঐতিহাসিক যুদ্ধের শুরু ছিলো এটা। যা স্পেন ও পর্তুগালের পরবর্তী ৮০০ বছরের ইতিহাস তৈরি করতো। তারিক বিন যিয়াদ যেমন জাহাজ পুড়িয়ে এখানে এসেছিলেন ঠিক তেমনি রডরিকের জন্যও এই যুদ্ধ তাঁর ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ ছিলো। এই যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার অর্থ ছিলো রাজা রডরিকের সাম্রাজ্যের ইতি। কয়েকদিন পর্যন্ত দুই বাহিনীর যুদ্ধ হয়। কখনো মুসলিমদের পাল্লা ভারী তো কখনো রাজা রডরিকের পাল্লা ভারী। রাজা রডরিকের সেনাবাহিনীর একটি সমস্যা ছিলো। এমন সমস্যা যদি কোন সেনাবাহিনীর ভিতর থেকে তাহলে সেই সেনাবাহিনী অবশ্যই পরাজিত হবে। পূর্বে বলেছি যে, সাম্রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় রাজা রডরিকের শাসন মেনে নেওয়া হয় নি। এছাড়া রাজা রডরিক যেই সেনাবাহিনী নিয়ে তারিক বিন যিয়াদের সাথে যুদ্ধে এসেছিলো সেই সেনাবাহিনীতেও এমন কিছু কমান্ডার ছিলো যারা রডরিককে পছন্দ করতো না। তারা রডরিককে ধোঁকা দিচ্ছিলো। তাদের কেউ কেউ নিজের সেনাদল নিয়ে যুদ্ধের ময়দান ত্যাগ করলো। আবার কেউ কেউ অল্প কিছু সৈন্যকে যুদ্ধ করার জন্য পাঠিয়ে দিয়ে নিজে পিছনে থেকে যেতো। এসব কিছুর ফলে রডরিকের সেনাবাহিনীর একটি ভয়ানক পরিণতি হয়। আর তা ছিলো মুসলিমদের ছোট সেনাবাহিনীর হাতে শোচনীয় পরাজয়। তারিক বিন যিয়াদের ছোট মুসলিম সেনাবাহিনী নিজেদের চেয়ে দ্বিগুণ বড় সেনাবাহিনীকে প্রায় নিঃশেষ করে দিয়েছিলো। যুদ্ধে পরাজয়ের সাথেই রাজা রডরিকের সাথে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। ইতিহাস যেমন রাজা রডরিকের রাজা হওয়ার পূর্বের কোন কিছু জানে না। ঠিক তেমনি ইতিহাস রাজা রডরিকের সাথে কী হয়েছিলো তাও জানে না।
কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, রাজা রডরিক যুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন। আবার কিছু ঐতিহাসিকদের মতে, রাজা রডরিক পর্তুগালের দিকে পালিয়ে যান। যাই হোক না রডরিকেরে লাশ পাওয়া গিয়েছিলো। আর না রাজা রডরিককে কেউ জীবিত দেখেছিলো। প্রায় এক বছর শাসন করার পর রাজা রডরিকের সাম্রাজ্য এবং রাজা রডরিকের নাম দুটোই গায়েব হয়ে যায়। যে সময়ে এই যুদ্ধটি হয়েছিলো সে সময়টি আরবী মাসের হিসেবে রমজান মাস ছিলো। আর তারিখ ছিলো ২৮। রাজা রডরিকের পরাজয়ের ব্যাপারে একটি বিখ্যাত কিংবদন্তী রয়েছে। কিংবদন্তী অনুযায়ী রাজা রডরিকের প্রাসাদে একটি বন্ধ কামরা ছিলো। যা সব সময় বন্ধ থাকতো এবং কেউ সেই কামরা খুলতো না। রাজা রডরিক এই কামরা খুলতে চাইলো। সবাই তাকে বাঁধা দিলেও রাজা রডরিক সেই কামরা খুলে ফেললো। সেই কামরার ভিতরের দৃশ্য রাজা রডরিকের জন্য ভয়ানক ছিলো। সেই কামরাটি আরব যোদ্ধাদের ছবিতে পরিপূর্ণ ছিলো। বলা হয় এভাবে ইশ্বরের তরফ থেকে রাজা রডেরিককে তাঁর পরাজয়ের ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। রাজা রডরিক তাঁর পরাজয়ের ব্যাপারে আগে থেকেও কোন জানলেও কোন পার্থক্য ছিলো না কারণ রাজা রডরিক শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে ছিলেন। যাই হোক এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি কিংবদন্তী যার সাথ সত্যের কোন সম্পর্ক নেই। মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে রাজা রডরিকের পরাজয় ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের ভীত নাড়িয়ে দেয়। এরপর মুসলিমদের সামনে কোন বড় বাহিনী আসে নি। হয়তো এর কারণ ছিলো রাজা রডরিকের একটি যুদ্ধেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ। রাজা রডরিক হয়তো ভাবেন নি পরাজিত হলে বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে। ফলে স্পেনের অধিকাংশ শহর মুসলিমদের জন্য প্রায় উন্মুক্ত ছিলো। এছাড়া রাজা রডরিকের পরাজিত সেনাবাহিনী পুরো ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তারা যেখানে যেতো মুসলিমদের প্রচন্ড শক্তি ও বানোয়াট নির্যাতনের কাহিনী শুনাতো। ফলে পুরো ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। যা মুসলিমদের বিজয় অভিযানের জন্য সহায়ক ছিলো। তারিক বিন যিয়াদ বিদ্যুৎের গতিতে একের পর এক শহর জয় করতে থাকেন।
তারিক বিন যিয়াদ খুব সহজেই ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের রাজধানী টালিডা বা তালিতলা জয় করেন। কর্ডোভা মাত্র ৩০০ জন মুসলিম সৈনিক জয় করেন। এছাড়া একটি শহরের গভর্নর সৈন্য সংখ্যা বেশী দেখানোর জন্য নারীদের সৈন্যদের পোশাক পরিয়ে দেন। এর ফলেও মুসলিমদের ধোকা দেওয়া সম্ভব হয় নি এবং এই শহরও মুসলিমরা জয় করে নেয়। তারিক বিন যিয়াদ একা পুরো স্পেন জয় করেন নি। পরবর্তী বছর ৭১২ সালে মুসা বিন নুসাইর প্রায় ১৮ হাজার সৈন্য নিয়ে তারিক বিন যিয়াদের সাথে যোগদেন। তারিক বিন যিয়াদ মুসা বিন নুসাইরের আদেশ ছাড়াই স্পেনে অগ্রসর হয় এবং যুদ্ধ করে। এই কারণে মুসা বিন নুসাইর তারিক বিন যিয়াদের ওপর কিছুটা অন্তুষ্ট ছিলেন। বলা হয় যখন তারিক বিন যিয়াদের সাথে মুসা বিন নুসাইরের দেখা হয় তখন মুসা বিন নুসাইর তারিক বিন যিয়াদকে শাস্তি দেওয়ার জন্য চাবুক হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এই অসন্তোষ বেশীক্ষণ থাকলো না। তারিক বিন যিয়াদ মুসা বিন নুসাইরের অসন্তোষ কমাতে সক্ষম হলেন। এরপর তারিক বিন যিয়াদ এবং মুসা বিন নুসাইর দুজনে মিলে স্পেন ও পর্তুগালের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা জয় করেন। তারিক বিন যিয়াদ ও মুসা বিন নুসাইরের বিজয় অভিযানে কাউন্ট জুলিয়ানও তাদের সহোযোগিতা করছিলেন। যে দুর্গ ও শহরে মুসলিমরা প্রচন্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হতো সে দুর্গ ও শহরে কাউন্ট জুলিয়ান তাঁর সৈন্য নিয়ে মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসতো। কাউন্ট জুলিয়ান এখানে একটি চাল ব্যবহার করতো। কাউন্ট জুলিয়ান ও তাঁর সৈন্যরা দুর্গের সামনে গিয়ে বলতো আমরা মুসলিমদের বন্দীশালা থেকে পালিয়ে এসেছি। আমাদের আশ্রয় দাও। দুর্গের খ্রিস্টান সৈন্যরা নিজেদের লোকদের প্রতি দয়ালু হয়ে কিংবা নিজেদের লোকবল বৃদ্ধির আশায় কাউন্ট জুলিয়ান ও তাঁর সৈন্যদের দুর্গের ভিতর প্রবেশ করতে দিতো। তারপর কাউন্ট জুলিয়ান ও তাঁর সৈন্যরা মুসলিম বাহিনীর জন্য দরজা খুলে দিতো বা দুর্গের গোপন রাস্তা কিংবা হামলা করার জন্য দূর্বল অংশ দেখিয়ে দিতো। এভাবে ঐ শহর কিংবা দুর্গও মুসলিমরা জয় করে নিতো।
রাজা রডরিকের সেনাবাহিনী ও মন্ত্রীগণ ছাড়াও আরও একপক্ষ মুসলিমদের স্পেন বিজয়ে মুসলিমদের সমর্থন করেছিলো। এইপক্ষ ছিলো স্পেনের ইহুদীরা। আজ যদি আপনি কোন স্পেনিশ কিংবা পর্তুগিজ খ্রিস্টানকে জিজ্ঞেস করেন যে, ১৩০০ বছর পূর্বে মুসলিমরা একটি ছোট সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুরো স্পেন ও পর্তুগাল জয় করে নিয়েছিলো? তখন ঐ স্পেনিশ বা পর্তুগিজ জবাবে হয়তো বলবেন এটা এক ইহুদি ষড়যন্ত্র ছিলো। এটাকে কোন ঠাট্টা কিংবা অসত্য মনে হতে পারে। কিন্তু সত্য হলো ইহুদিরা স্পেনে মুসলিমদের সমর্থন করেছিলো। স্পেন ও পর্তুগিজ খ্রিস্টানরা ইহুদিদের মুসলিম বাহিনীকে সমর্থন করাকে আজও ভুলে যায় নি। স্পেন থেকে মুসলিমদের শাসন শেষ হওয়ার পর স্পেনের খ্রিস্টানরা ইহুদিদের ওপর এর পূর্ণ প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং ইহুদিদের স্পেন থেকে বের করে দেয়।
রাজা রডরিকের সেনাবাহিনীর বিশ্বাসঘাতকতা, কাউন্ট জুলিয়ানের সাহায্য, জনগণের এক অজানা ভয়, ইহুদিদের সমর্থন এবং সু সংগঠিত সামরিক শক্তি না থাকায় মুসলিম বাহিনী বিনা বাধায় স্পেন বা আল আন্দালুসের একের পর এক এলাকা জয় করতে থাকে। মুসা বিন নুসাইর এবং তারিক বিন যিয়াদ একের পর এক বিজয় অর্জন করতে থাকে। তারপর আচমকাই তারিক বিন যিয়াদ ও মুসা বিন নুসাইরের বিজয় অভিযান থেমে যায়। তাদের বিজয় অর্জন বাঁধা গ্রস্থ হয়। ৭১৪ সালে তারিক বিন যিয়াদ ও মুসা বিন নুসাইরকে আচমকা উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের দরবারে তলব করা হয়। মুসলিম বিশ্বের এই সেরা দুই সেনাপতি দামেস্ক পৌঁছান এবং আর কখনো আল আন্দালুসে ফেরত যান নি। তারিক বিন যিয়াদ এবং মুসা বিন নুসাইর যতদিনে দামেস্কে পৌঁছান ততদিনে উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের মৃত্যু হয় এবং সুলেমান বিন আব্দুল মালিক উমাইয়া খিলাফাতের নয়া খলিফা হন। সুলেমান বিন আব্দুল মালিক এই দুই দক্ষ সেনাপতিকে অসম্মানিত করে উমাইয়া সেনাবাহিনী থেকে বের করে দেন। এরপর তারিক বিন যিয়াদের বাকী জীবন সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তারিক বিন যিয়াদের শেষ জীবন সম্পর্কে ইতিহাস কিছুই জানে না।
মুসা বিন নুসাইরের পরিণতি অনেক খারাপ হয়। মুসা বিন নুসাইরকে সর্বশেষ হাজীদের কাফেলায় ভিক্ষা চাইতে দেখা গিয়েছিলো। তখন মুসা বিন নুসাইরের পায়ে শিকল বাঁধা ছিলো আর তিনি বলছিলেন কেউ আছে যে, এই ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধকে কয়েকটি ধাতব মুদ্রা দেবে। যাতে এই বৃদ্ধ নিজের স্বাধীনতা কিনতে পারে। মুসা বিন নুসাইরকে কষ্ট দেওয়ার জন্য খলিফা সুলেমান বিন আব্দুল মালিক তাঁর ছেলের মাথা কেটে তাঁর সামনে উপস্থিত করে। এরপর মুসা বিন নুসাইরকে ইতিহাসে আর কেউ দেখে নি। মুসা বিন নুসাইর ও তারিক বিন যিয়াদের মতো দক্ষ মুসলিম সেনাপতিরা না থাকলেও আল আন্দালুসে মুসলিমদের বিজয় অভিযান থেমে থাকে নি। আল আন্দালুস বলতে আজকের স্পেন ও পর্তুগাল। মুসলিম বাহিনী তারিক বিন যিয়াদ ও মুসা বিন নুসাইরের মতো দক্ষ সেনাপতিদের ছাড়াই কয়েক বছরের মধ্যে পুরো আল আন্দালুস জয় করে নেয়। এসময় মুসলিমরা প্রচুর পরিমাণে গনীমতের মাল অর্জন করে। ভিসিগোথিক সাম্রাজ্যের রাজধানী টলিডো বা তালিতলায় মুসলিমরা হিরা, মণিমুক্তা খচিত এক সুন্দর টেবিল পায়। বলা হয়ে থাকে এটি বনী ইসরাইলের নবী হযরত সুলেমান আঃ এর মালিকানাধীন ছিলো ঐ টেবিলটি। এভাবে মুসলিমরা ১০ বছরেরও কম সময়ে আল আন্দালুস বা আইবেরিয়ান পেনিনসুলা জয় করে নেয়। তখন মনে হতো আল আন্দালুসে খ্রিস্টানদের শাসনকাল একেবারে শেষ। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মতো আল আন্দালুসের জনগণও ইসলাম গ্রহণ করবে এবং এই এলাকা সব সময়ের জন্য মুসলিমদের শাসনাধীনই থাকবে। কিন্তু এখানে মুসলিম শাসকগণ এক ঐতিহাসিক ভুল করলো। কিংবা মুসলিম শাসকগণের দ্বারা অজান্তেই এমন এক ভুল সংগঠিত হলো যা আল আন্দালুসে মুসলিমদের স্বর্ণযুগের সাথে পতনের সূচনাও করলো।
মুসলিম শাসকগণ কল্পানও করতে পারে নি যে, তাদের এই ছোট ভুল পরবর্তী শতাব্দীতে আন্দালুসের মুসলিমদের জন্য কতটা কষ্টদায়ক হতে চলেছে। এটা কোন ভুল ছিলো? ইনশাআল্লাহ আমরা এ সম্পর্কে জানবো কিন্তু আগামী পর্বে।
চলবে................ চলবে................. চলবে....
-----------------
লেখিকাঃ জান্নাত খাতুন।
আন্তর্জাতিক বার্তা সম্পাদক, হাভার টার্ক।
-----------------
[কমেন্টে জানান কেমন লাগলো স্পেনে মুসলিমদের ৮০০ বছরের শাসন ও নানা ভুলের কথা সিরিজের প্রথম পর্ব]
তথ্যসূত্রঃ Tariq ibn Ziyad - Wikipedia [English]
Tariq bin Ziyad — The conqueror of
Spain | Arab News - 21 May, 2015.
Ṭāriq ibn Ziyād | Muslim general |
Britannica
Musa ibn Nusayr - Wikipedia - [English]
Visigothic Kingdom - Wikipedia
Spain - The Visigothic kingdom |
Britannica
410 CE — 716 CE: The Rise and Fall of
the Visigothic Kingdom - Islamic
Spain TV.
Roderic - Wikipedia - [English]
Julian, Count of Ceuta - Wikipedia
Futuh Al-Buldan By Ahmad Ibn Yahya
Al-Baladhuri. Page - 394.
Muslim Spain and Portugal: A Political
History of Al-Andalus By Hugh N.
Kennedy. Page -12, 14,
The Moor's Last Stand By Elizabeth
Drayson.
The Arab conquest of Spain, 710-797
Roger Collins.
0 Comments