"জুমার দিন গরিবের হজ্জের দিন" একটি বানোয়াট হাদিস।
------------ ◐◯◑------------
প্রশ্ন:
"জুমার দিন গরিবের হজ্জের দিন।" এ কথাটা কি সঠিক? আমাদের গ্রামের মসজিদে প্রতি জুমার বয়ানের ভূমিকাতেই ইমাম সাহেব এ কথাটা বলে থাকেন।
উত্তর:
"জুমার দিন গরিবের হজ্জের দিন", "টঙ্গির এজতেমা হল, গরিবের হজ্জ" এসব কথাবার্তা হল, ইসলামের ৫ম স্তম্ভ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হজ্জ এর সাথে উপহাস মাত্র। ইসলামে এসব কথার কোনও ভিত্তি নাই।
এ মর্মে কিছু হাদিস পেশ করা হয় সেগুলো বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের মতে সেগুলো বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার। যেমন:
الجمُعةُ حَجُّ الفقراءِ ، وفي لفظٍ : المساكينِ
“জুমা হল গরিবদের (অন্য বর্ণনায়, মিসকিনদের) হজ্জ।”
নিম্নে এ হাদিসের ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
◈ শাওকানি বলেন, لا أصل له "এ হাদিসটির কোনও ভিত্তি নাই।" [দ্রষ্টব্য: আল ফাওয়াইদুল মাজমুআ/৪৩৭]
◈ সগানি বলেন, এ হাদিসটি বানোয়াট। [মাউযুআতে সাগানি/৫০] এ ছাড়াও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ কেউ যইফ (দুর্বল) আর কেউ বানোয়াট বলেছেন।
◈ আলবানি বলেন, হাদিসটি موضوع বানোয়াট। [দ্রষ্টব্য: যাইফুল জামে/২৬৫৮, সিলসিলাহ যাইফা/১৯১০]
এ ব্যাপারে আরেকটি হাদিস পেশ করা হয়। তা হল,
الدجاجُ غَنَمُ فُقراءِ أُمَّتي والجمُعةُ حجُّ فُقَرائِها
“মুরগি হল, আমার উম্মতের ছাগল আর জুমা হল, গরিবদের হজ্জ।”
এটিও হাদিসের নামে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে মিথ্যাচার।
নিম্নে এ হাদিসের ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
◈ এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন, موضوع لا أصل له "এটি একটি ভিত্তিহীন বানোয়াট হাদিস।" [কিতবুল মাজরূহীন ২/৪৩৮]
◈ ইবনুল জাওযিও এ হাদিসটিকে তার বানোয়াট হাদিস সংকলন 'কিতাবুল মাউযুআত' كتاب الموضوعات কিতাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। [৩/১৪৩]
◈ যাহাবি বলেন, باطل "হাদিসটি বাতিল ও বানোয়াট।" [দ্রষ্টব্য: মিযানুল ইতিদাল ৪/৩০১০, তাহযিবুত তাহযিব ১১/৪৮]
তিনি আরও বলেছেন, فيه عبد الله بن يزيد محمش – كذاب "এর বর্ণনা সূত্রে আব্দুল্লাহ বিন ইয়াজিদ মুহাম্মাশ নামক একজন মিথ্যাবাদী রয়েছে।" [দ্রষ্টব্য: তারতীবুল মাউযুআত/২১৮]
এছাড়াও ইমাম দারাকুতনি, শাইখ আলবানি সহ বহু মুহাদ্দিস এটিকে বানোয়াট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং ভ্রান্তি উন্মোচন এবং মানুষকে হাদিসের নামে মিথ্যাচারের ব্যাপারে সচেতন করার উদ্দেশ্য ছাড়া এ জাতীয় বানোয়াট, ভুয়া ও ফেইক হাদিস প্রচার-প্রসার করা এবং বয়ান-বক্তৃতায় উল্লেখ করা হারাম।
তবে হাদিসে জুমার দিনকে মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে। যেমন: আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللهُ لِلْمُسْلِمِينَ ، فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ ، وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ ، وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
"নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের জন্য জুমার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। সুতরাং জুমায় শরিক হওয়ার পূর্বে গোসল করে নিবে। আর সুগন্ধি থাকলে, ব্যবহার করবে। আর অবশ্যই মিসওয়াক করবে।"
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/ ১০৯৮, শাইখ আলবানি এটিকে হাসান বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সহিহ ইবনে মাজাহ]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◐◯◑▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi
0 Comments