Recent Tube

গোরস্থানে কবরের মাটি সমান করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ বা সম্প্রসারণ এবং তাতে সালাত আদায়ের বিধান। আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল।




গোরস্থানে কবরের মাটি সমান করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ বা সম্প্রসারণ এবং তাতে সালাত আদায়ের বিধান।
-------------- ✪✪✪-------------- 
 প্রশ্ন: 
 আমাদের গ্রামের মসজিদের পাশে কবর ছিল। তো মসজিদ বড় করার জন্য জায়গার মালিকের অনুমতি নিয়ে কবরস্থানের মাটি সমান করে তার উপর মসজিদ বড় করা হয়েছে। এখন ওই মসজিদে কি নামাজ শুদ্ধ হবে? কয়েকজন আলেম হাদিস গ্রন্থের দলিল দেখিয়ে বলেছেন যে, এখানে নামাজ হবে। এখন আপনাদের কাছেও এ বিষয় জানতে চাই কুরআন-হাদিসের আলোকে।
উত্তর:
কবরস্থানের কবরের মাটি সমান করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ করলে বা মসজিদ সম্প্রসারণ করলে সে মসজিদ বা সম্প্রসারিত স্থানে সালাত শুদ্ধ হবে না। কারণ— 
 
◈ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَلاَ فَلاَ تَتَّخِذُوا الْقُبُورَ مَسَاجِدَ إِنِّي أَنْهَاكُمْ عَنْ ذَلِكَ
"সাবধান! তোমরা কবরসমূহকে মসজিদ বা সেজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করতে তোমাদেরকে নিষেধ করছি।" [সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী), অধ্যায়: ৫। মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, পরিচ্ছেদ: ৩. কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ, মসজিদে ছবি বানানো, কবরকে সেজদার স্থান নির্ধারণ করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা]
 
◈ জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ ‏.‏
“রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর চুনা লাগানো, তার উপর বসা, কবরের উপর গৃহনির্মাণ বা পাকা করতে নিষেধ করেছেন।” [সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ১২/ জানাজা সম্পর্কিত, পরিচ্ছেদ: ২৬. কবর পাকা করার নিষেধাজ্ঞা]
 
❑  কোন পরিস্থিতিতে কবরস্থানে মসজিদ নির্মাণ বা সম্প্রসারণ করা বৈধ?

পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, মসজিদে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে তা সম্প্রসারণ করা নিতান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে কিন্তু মসজিদের পার্শ্বে কবর থাকার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না আর অন্য দিকে মসজিদ বাড়ানোর মত জায়গাও নাই। তাহলে এমন জরুরি প্রয়োজন বশত: মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য কবরস্থানের যতটুকু জায়গা প্রয়োজন ততটুকু স্থান থেকে কবরগুলো খনন করে অত্যন্ত সম্মানের সাথে মৃত মানুষের লাশ বা অবশিষ্ট হাড়-হাড্ডি যা পাওয়া যায় সেগুলো অন্য কোনও কবরস্থানে দাফন করতে হবে। তারপর উক্ত স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মাটি সমান করে সেখানে মসজিদ সম্প্রসারণ করা বৈধ হবে।
 
স্মর্তব্য যে, মুসলিম ব্যক্তির কবরের সম্মান বজায় রাখা জরুরি। কারণ মৃত ব্যক্তির কবর মূলত তার জন্যই ওয়াকফ কৃত স্থান। সুতরাং তাতে কারও হস্তক্ষেপ করা বৈধ নয়।  কিন্তু একান্ত জরুরি প্রয়োজনে হলে এবং বিকল্প কোনও উপায় না থাকলে কবর খনন করে তার লাশ বা অবশিষ্ট হাড়-হাড্ডি অন্য কোথাও কবর খনন করে সেখানে স্থানান্তরিত করার পর তদস্থলে মসজিদ নির্মাণ, মসজিদ সম্প্রসারণ অথবা বসত বাড়ি নির্মাণ বা অন্যান্য কাজে লাগানো জায়েজ আছে। 
কিন্তু লাশ বা লাশের অবশিষ্টাংশ অন্যত্র স্থানান্তরিত না করে সে অবস্থায় শুধু কবরের মাটি সমান করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ নয়। বরং এমনটি করা হলে উক্ত মসজিদে সালাত আদায় করা বৈধ নয় বরং তা ভেঙ্গে ফেলা আবশ্যক। এমনটি বড় আলেমদের ফতোয়া।

❑ সৌদি স্থায়ী ফতোয়া কমিটির ফতোয়া:

প্রশ্ন: আমাদের শহরের মাঝখানে একটি পুরানো কবরস্থান ছিল। পৌরসভা তার ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে তদস্থলে একটি আবাসিক এলাকা ও সীমিত আয়ের লোকদের জন্য ভবন নির্মাণ করেছে। কিন্তু সেখানে একটি বিশাল এলাকা রয়ে যাওয়ায় সৎ ও দানশীল ব্যক্তিরা সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন-যেন এলাকার বাসিন্দারা তাতে নামাজ পড়তে পারে।  
 মসজিদটি নির্মিত হওয়ার পর এই মসজিদে নামায পড়া জায়েজ আছে কি না তা নিয়ে শহরের মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় এবং তারা সমর্থক ও বিরোধী দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই মসজিদের হুকুম কি? এটা কি ধ্বংস করা জরুরি না কি রাখা যাবে? এই মসজিদে নামায জায়েজ কি না?
 উত্তর:
"الأرض التي بني عليها مسجد إذا كانت خالية من القبور صحت الصلاة فيها ، وإلا فيجب هدم المسجد الذي بني عليها" انتهى
الشيخ عبد العزيز بن عبد الله بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان .
" فتاوى اللجنة الدائمة " ( 1 / 418 ، 419 )
“যে জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে তা যদি কবর মুক্ত হয় তাহলে তাতে সালাত শুদ্ধ হবে। অন্যথায় ঐ মসজিদ ভেঙ্গে ফেলতে হবে যা কবরের উপর নির্মাণ করা হয়েছ।” 
উত্তর প্রদানে:
১. শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায রাহ.
২. শাইখ আব্দুর রাযযাক আফিফি রাহ.
৩. ও শাইখ আব্দুল্লাহ গুদাইয়ান রাহ.
[ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ১/৪১৮ ও ৪১৯]

 অবশ্য হারবি তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত কাফির-মুশরিকদের কবর খনন করা এবং তার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করত: মাটি সমান করে তার উপর মসজিদ নির্মাণ করা অথবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহার করা বৈধ। কারণ তাদের কবরের কোনও সম্মান নেই। যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে মসজিদে নববি নির্মাণ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
 عَنْ أَنَسٍ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ وَأَمَرَ بِبِنَاءِ الْمَسْجِدِ فَقَالَ يَا بَنِي النَّجَّارِ ثَامِنُونِي فَقَالُوا لاَ نَطْلُبُ ثَمَنَهُ إِلاَّ إِلَى اللهِ فَأَمَرَ بِقُبُورِ الْمُشْرِكِينَ فَنُبِشَتْ ثُمَّ بِالْخِرَبِ فَسُوِّيَتْ وَبِالنَّخْلِ فَقُطِعَ فَصَفُّوا النَّخْلَ قِبْلَةَ الْمَسْجِدِ
আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এসে মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। অতঃপর বলেন, “হে বনী নাজ্জার! আমার নিকট হতে মূল্য নিয়ে (জমি) বিক্রি করো। 
তারা বললেন, আমরা এর মূল্য কেবল আল্লাহর নিকটই চাই। 
এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হল, ধ্বংসাবশেষ সমতল করা হল, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হল। কেবল মসজিদের কিবলার দিকে কিছু খেজুর গাছ সারিবদ্ধভাবে রাখা হল।” [সহীহ বুখারি (তাওহীদ পাবলিকেশন)  ২৯/ মদিনার ফযিলত, পরিচ্ছেদ: ২৯/১. মদিনা হারাম (পবিত্র স্থান) হওয়া]
আল্লাহু আলাম।
-------------- ✪✪✪-------------- 
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল।
(লিসান্স, মদিনা ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments