Recent Tube

আল্লাহর_আইন V/S মানব রচিত আইন। মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।




আল্লাহর আইন V/S মানব রচিত আইন। 
--------------------------------------

 নিখিল বিশ্বের সব কিছু চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-সাগর, পশু-পাখি ইত্যাদির উপর যেমন আইন ও বিধান চলে একমাত্র আল্লাহর, তেমনি মানুষের জীবনে সকল দিক ও বিভাগে আইন জারি করার নিরংকুশ অধিকারো তাঁর। কোন ফ্যাক্টরিতে যেমন ফ্যাক্টরির মালিকের আইন কানুন চলে, কোন শ্রমিকের নির্দেশ বা মন মত ফ্যাক্টরি চলে না। ঠিক তেমনি দুনিয়াতেও দুনিয়ার মালিকের আইন চলবে। স্রষ্টার বিধান অনুযায়ী সৃষ্টি (মানুষ) কে জীবন যাপন করতে হবে।'

 আল্লাহ এরশাদ করেছেন:
ﺃَﻟَﺎ ﻟَﻪُ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖُ ﻭَﺍﻟْﺄَﻣْﺮُ

#সাবধান! সৃষ্টি তাঁর (আল্লাহর) এবং বিধানও তাঁর।”-(সূরা আ’রাফঃ-৫৪)।

  আল্লাহ তা'আলা আরও বলেনঃ
 ﺇِﻥِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢُ ﺇِﻻَّ ﻟِﻠّﻪِ 
“আইন রচনা করার অধিকার আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই।”-
(সূরা আন’আমঃ৫৭, সূরা ইউসুফঃ ৪০, ৬৭)। 

 আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ 
 আল্লাহই হলেন আইনদাতা, আর তাঁর নিকট থেকেই আইন নিতে হবে"
(আবু দাউদ হাদীস নং(৪৯৫৫), নাসায়ী, (৮/২২৬), বায়হাকী (১০/১৪৫) বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত)।

 আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের উপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন জারি করার অধিকার নেই। আর মানুষও পারে না আল্লাহ ব্যতীত আর কারো আইন মেনে নিতে বা পালন করতে। করলে তা হবে সুস্পষ্ট আল্লাহর আইনের বিরোধিতা করা। কোন মুসলিম দেশের সংসদ আল্লাহর আইনের বিপরীত কিংবা আল্লাহর বিধানের পরিপন্থী কোন আইন বা বিধান তৈরী করতে পারে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম দেশের আদালত বা কোর্ট-কাচারীতে কোন মুসলমান বিচারপতি আল্লাহর আইনের মোকাবিলায় কোন মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার করতে পারে না। যদি করে থাকে তা হবে চরম মূর্খতা।

 আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
 ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠّﻪِ ﺣُﻜْﻤﺎً ﻟِّﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ .
 
“(যারা আল্লাহর আইন হতে বিচ্যুত হয়) তারা কি জাহেলীয়তের (মূর্খতার) আইন কামনা করে? অথচ আল্লাহর প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে তাদের নিকট আল্লাহ অপেক্ষা উত্তম আইন রচনাকারী আর ককে হহতে পারে?”-(সূরা মায়িদাঃ-৫০)।
 
 যারা আল্লাহর আইন পরিত্যাগ করে মানব রচিত মতবাদ, মানুষের মনগড়া আইন, প্রবৃত্তি প্রসূত বিধানের অনুসরণ করে তারা মূলত আল্লাহকে পরিত্যাগ করে তাকেই ইলাহ রূপে গ্রহণ করে শিরকের মধ্যে নিমিজ্জিত হয়েছে।

 আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ 
أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ أَفَأَنْتَ تَكُونُ عَلَيْهِ وَكِيلًا
 
(হে নবী) তুমি কি তাকে দেখনি, যে তার প্রবৃত্তিকে নিজের ইলাহ রূপে গ্রহণ করেছে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার হবে?
(সূরা ফুরকান৪৩)

أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ.

 তবে তুমি কি তাকে লক্ষ্য করেছ, যে তার প্রবৃত্তিকে আপন ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে? 
(সূরা জাসিয়াঃ২৩)
 
 কেউ যদি আল্লাহর আইন পরিত্যাগ করে নিজের মন মত চলে তাহলে সে নিজের মন তথা প্রবৃত্তি কে ইলাহ রূপে গ্রহণ করেছে। আর মানব রচিত বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করলে ঐ বিধানদাতা কে ইলাহ রূপে গ্রহণ করেছে। 
 
قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَٰهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ
 
 ফিরআউন বলল, ‘যদি তুমি আমাকে ছাড়া কাউকে ইলাহ (বিধানদাতা) রূপে গ্রহণ কর, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে কয়েদীদের অন্তর্ভুক্ত করব’।
(শুআরাঃ২৯)
 
 ফিরআউন নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত বিধানদাতা হিসাবে ইলাহ বলে দাবী করেছিল, উপাস্য হিসাবে নয়। কারণ সে নিজেও মূর্তি কে উপাস্য ভেবে মূর্তির (পূঁজা) উপাসনা করত।
 
وَقَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ
 
 আর ফির‘আউনের কওমের সভাসদগণ বলল, ‘আপনি কি মূসা ও তার কওমকে ছেড়ে দেবেন যাতে তারা যমীনে ফাসাদ করে এবং আপনাকে ও আপনার ইলাহ (মূর্তি) গুলোকে বর্জন করে?’ 
(সূরা আ'রাফঃ১২৭)
 
 এখানে ফিরআউন তার মূর্তি তথা দেবতাগুলোর ইলাহ হিসাবে উপাসনা করে, পূঁজা করে। কিন্তু সে নিজেই আইন প্রণয়নে, বিধানদাতা হিসাবে নিজেকে ইলাহ হিসাবে দাবী করে।
 সুতরাং এটি স্পষ্টভাবে কুরআনের দলিল দ্বারা প্রমানিত হলো যে, যারা আল্লাহর আইন পরিত্যাগ করে মানব রচিত কারো আইন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে চলে তারা আল্লাহ বাদ দিয়ে ঐ আইন প্রণয়নকারী, আইনদাতাকেই ইলাহ রূপে গ্রহণ করে শিরক করে। অথচ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, 

مَا لَهُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا

 তিনি (আল্লাহ) ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক, (আইনদাতা) নেই। তাঁর আইনে তিনি কাউকে শরীক করেন না।
(সূরা কাহফঃ২৬)
---------------------------------- 
লেখকঃ
মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম Tanzil Islam দাঈ, মাওলানা প্রবন্ধ লেখক  ও  অনলাইন এক্টিভিস্ট

Post a Comment

0 Comments