Recent Tube

মুসলিম উম্মাহর পরাজিত ও নির্যাতিত হওয়ার কারণঃ মুহাম্মদ তানজিল ইসলাম।




 মুসলিম উম্মাহর পরাজিত ও নির্যাতিত হওয়ার কারণঃ
------------------------------------

 বাংলাদেশে ৯৫% থেকে ৯৭% মুসলিম। কিন্তু এরপরেও তারা মজলুম ও নির্যাতিত। কারণ তারা বিভিন্ন বিষয় কে কেন্দ্র করে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ে দলে দলে বিভক্ত। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন, 
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ-
"আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (সূরা আনফাল : ৮/৪৬)

  এ আয়াতে ‘তাওহীদ ফিততাশরী’ তথা
একমাত্র আল্লাহকেই বিধানদাতা বলে বিশ্বাস করার আদেশ আছে। শর্তহীন আনুগত্য একমাত্র আল্লাহর এবং আল্লাহর আদেশে তাঁর রাসূলের। অন্য সকলের আনুগত্য এ আনুগত্যের অধীন। সাথে সাথে কলহবিবাদ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে এবং এর বড় দুটি কুফল সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে : এক. এর দ্বারা উম্মাহ শক্তিহীন হয়ে পড়বে,  দুই. তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি লোপ পাবে। ফলে আমরা পরাজিত ও নির্যাতিত। ইমাম নববী রাহ. বলেন- 
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ : ﻭﺍﻷﻟﻔﺔ ﺇﺣﺪﻯ ﻓﺮﺍﺋﺾ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻭﺃﺭﻛﺎﻥ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ، ﻭﻧﻈﺎﻡ ﺷَﻤْﻞ ﺍﻹﺳﻼﻡ .
কাযী ইয়ায রাহ. বলেছেন, ‘ভ্রাতৃত্ব-সম্প্রীতি (মুসলিম ঐক্য) দ্বীনের অন্যতম ফরয, শরীয়তের অন্যতম রোকন এবং বৈচিত্রপূর্ণ মুসলিম সমাজকে একতাবদ্ধ করার উপায়’। (শরহু সহীহ মুসলিম ২/১০)

  নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারের বয়ানে বলেছেন,
ﻭﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﺭﺣﻤﺔ، ﻭﺍﻟﻔﺮﻗﺔُ ﻋﺬﺍﺏ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ : ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ .
"জামাআত (মুসলিম ঐক্য) হল রহমত আর বিচ্ছিন্নতা হচ্ছে আযাব।" (যাওয়াইদুল মুসনাদ, হা: ১৮৪৪৯, ১৯৩৫০; কিতাবুস সুন্নাহ, ইবনু আবী আসিম, হা: ৯৩)
অর্থাৎ বিচ্ছিন্নতাই হচ্ছে আমাদের আযাব বা শাস্তি ও নির্যাতনের কারণ।

  মুসলিম উম্মাহ পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং নিজেদের একতা ও সংহতি রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক ফরয। তেমনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা তাওহীদ ও ঈমান বিল্লাহর পর ইসলামের সবচেয়ে বড় ফরয। কেননা, মুসলিম সমাজ থেকে সকল শিরক ও কুফুর অপসরণ করে ইসলামের ফরয বিধারকে ফরয হিসাবে, হালাল বিধানকে হালাল হিসাবে, হারাম বিধানকে হারাম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রীয় ভাবে দ্বীন কায়েম করা অপরিহার্য। ইসলামে শিরক কুফুরের সুযোগ নেই এবং অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের
ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ- সর্বক্ষেত্রে এক আল্লাহর ইবাদত-দাসত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আর এটি মুশরিকদের জন্য অসহনীয় বিষয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন,
شَرَعَ لَكُمْ مِنَ الدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِ نُوحًا وَالَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَمَا وَصَّيْنَا بِهِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰ ۖ أَنْ أَقِيمُوا الدِّينَ وَلَا تَتَفَرَّقُوا فِيهِ ۚ كَبُرَ عَلَى الْمُشْرِكِينَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ ۚ اللَّهُ يَجْتَبِي إِلَيْهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ يُنِيبُ-
"তিনি তোমাদের জন্য দ্বীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর (হে রাসূল!) আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দ্বীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহবান করছ তা তাদের কাছে অসহনীয় মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি  হিদায়াত দান করেন।" (সূরা শুরা : ৪২/১৩)

  মুসলমানের পারিবারিক, সামাজিক ও
রাষ্ট্রীয় জীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত
করার জন্য অনেক নীতি ও বিধান দেওয়া
হয়েছে। ইসলামের এ সকল বিধানের উপর
সংক্ষেপে নজর বুলিয়ে গেলেও পরিষ্কার হয়ে যায়, বিভেদ-বিচ্ছিন্নতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আল্লাহর দ্বীনকে কায়েম ও বিজয়ী করার প্রচেষ্টা ইসলামের দৃষ্টিতে কত গুরুত্বপূর্ণ।
---------------------------- 

Post a Comment

0 Comments