Recent Tube

লেখকের লেখা পোস্টে তার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেটা কেটে নিজের মতো করে প্রচার করাটা কি ইনসাফ এর মধ্যে পড়ে? আর লেখকের নাম প্রকাশে কি রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।



 প্রশ্ন:
 লেখকের লেখা পোস্টে তার নাম উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও সেটা কেটে নিজের মতো করে প্রচার করাটা কি ইনসাফ এর মধ্যে পড়ে? আর লেখকের নাম প্রকাশে কি রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে?
 
উত্তর:
অন্যের লেখা নিজের নামে প্রচার করা অথবা লেখকের নাম কেটে তা প্রচার করা নি:সন্দেহে মূল লেখকের প্রতি বেইনসাফি, ইলমি আমানতের খেয়ানত এবং অকৃতজ্ঞতা। আইনের দৃষ্টিতেও এ কাজটি মেধাস্বত্ব চুরির অন্তর্ভুক্ত-যা বৈধ নয়। 
 
ইমাম সুয়ূতী বলেন,

 من بركة العلم وشكره عزْوُه إلى قائله

 ‘ইলমের বরকত এবং শুকরিয়া তখন হবে, যখন এটা কোথা থেকে সংকলন করা হয়েছে, তার উৎস পেশ করা হবে।’ 

  তিনি আরও বলেন, "আব্বাস বিন মুহাম্মাদ আ‌দ দূরী বলেন, "আমি আবু উবাইদকে একথা বলতে শুনেছি, ইলমের শুকরিয়া করা উচিত। তুমি যখন কারো নিকট থেকে উপকৃত হবে, তখন বলবে, আমি এটা জানতাম না, এটা আমার জ্ঞানে ছিল না। এ বিষয়ে উমুক ব্যক্তি বা উমুক কিতাব থেকে এই এই ফায়েদা লাভ করেছি.. এটা হচ্ছে ইলমের শুকরিয়া।" [আল মুযাহহার ২/২৭৩, মাকতাবা শামেলা]
 
 এ ধরণের নিন্দনীয় কাজের ক্ষেত্রে ইমাম আলবানি রহ. নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করে থাকেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 الْمُتَشَبِّعُ بِمَا لَمْ يُعْطَ كَلَابِسِ ثَوْبَيْ زُورٍ

  “মানুষ যে বস্তুর  মালিক নয়, তা নিজের বলে প্রকাশ করা, দুটি মিথ্যার চাদর পরিধানকারীর ন্যায়।” (বুখারী ও মুসলিম) [আল কালেমুত তাইয়্যেব- ইবনে তায়মিয়া, তাহকীক আলবানী ভূমিকা, পৃ: ১১]

  উলামাগণ অন্য লেখকদের বক্তব্য নকল করাকে নিন্দা করেননি, নকল করার সময় বক্তব্যটি লেখকের দিকে নেসবত না করাটাকে তিনি নিন্দা করেছেন। 
বিশেষভাবে আল্লামা নাসির উদ্দিন আলবানী রহ. বক্তব্য উদ্ধৃত করে তা লেখকের দিকে নেসবত না করার বিষয়টিকে কঠিনভাবে সমালোচনা করেছেন। [তাহকীক আল কালেমুত তাইয়্যেব, ইবনে তাইমিয়া বইয়ের তাহকীকের ভূমিকা] 

  তিনি বলেন, "ইলমের আমনত হচ্ছে, প্রত্যেকটি বক্তব্যকে মূল লেখকের দিকে নেসবত করা।" [সহীহ আবু দাউদ, ১/২২১]
 (শাইখ আবদুল্লাহ আল কাফী (হাফিযাহুল্লাহ) রচিত প্রবন্ধ থেকে নেওয়া)

 সুতরাং লেখক এর নাম কেটে নিজের নাম বসিয়ে দেওয়া কিংবা মূল লেখকের নাম সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে লেখা প্রকাশ করার এমন হীন মনোভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসা আবশ্যক।

  ইসলামি লেখার সাথে লেখকের নাম উল্লেখ করা কি রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা)?
 
  রিয়া বিষয়টি নিয়তের উপর নির্ভরশীল। কেউ যদি প্রসিদ্ধি অর্জন, প্রশংসা লাভ বা বাহবা কুড়ানোর নিয়তে এ কাজ করে তাহলে তা রিয়া (প্রদর্শনেচ্ছা) বলে গন্য হবে-যা হারাম বরং ছোট শিরক। 

 রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ قَالُوا وَمَا الشِّرْكُ الْأَصْغَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: الرِّيَاءُ، يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِذَا جُزِيَ النَّاسُ بِأَعْمَالِهِمُ اذْهَبُوا إِلَى الَّذِينَ كُنْتُمْ تُرَاءُونَ فِي الدُّنْيَا فَانْظُرُوا هَلْ تَجِدُونَ عِنْدَهُمْ جَزَاءً

"তোমাদের উপর সবচেয়ে ভয়ানক যে বিষয়ের আমি আশংকা করছি তা হল শির্ক আসগার (ছোট শির্ক)।’’ তারা বললেনঃ ছোট শির্ক কী হে আল্লাহর রাসূল?

  তিনি বললেন, রিয়া। সম্মানিত আল্লাহ যখন মানুষকে তাদের কর্মফল দান করবেন তখন বলবেন, দুনিয়ায় যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা আমল করতে তাদের কাছে যাও। দেখ, তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কি না?’’

  [জাইয়েদ (উত্তম) সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ। আরও বর্ণনা করেন, ইমাম বায়হাকি ও ইবনু আবিদ দুনিয়া]

  কিন্তু যদি নিজের হক সংরক্ষণ, লেখার দায়-দায়িত্ব গ্রহণ, আমানতদারিতা, মানুষের কাছে লেখার গ্রহণযোগ্যতার উদ্দেশ্যে লেখক নিজের নাম-পরিচয় ইত্যাদি প্রকাশ করে তাহলে তা রিয়ার মধ্যে গণ্য হবে না। বরং অজ্ঞাত ও নাম পরিচয় হীন লেখকের লেখা না পড়াই নিরাপদ। কারণ অনেক বিদআতি ও ভ্রান্ত আকিদার অনুসারী লেখক সুন্দর ও আকর্ষণীয় ভাষায় বিদআত, বাতিল আকিদা ও বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা প্রচার করে থাকে যা সাধারণ মানুষ সহজে ধরতে পারে না। তাই লেখক পরিচিতি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ-বিশেষ করে দীনী বিষয়ে।

 মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন (বিখ্যাত তাবিঈ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

إن هذا العلم دين، فانظروا عمن تأخذون دينكم

"নিশ্চয়ই এ ইলম হল, দীন। কাজেই কার কাছ থেকে তোমরা দীন গ্রহণ করছে তা যাচাই করে নাও।"

  ইবনু সীরীন রহ. হতে আরও বর্ণিত। তিনি বলেন, "এমন এক সময় ছিল যখন লোকেরা সনদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো না। কিন্তু পরে যখন ফিতনা দেখা দিল তখন লোকেরা হাদিস বর্ণনাকারীদেরকে বলতো, 

سَمُّوا لَنَا رِجَالَكُمْ فَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ السُّنَّةِ فَيُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ وَيُنْظَرُ إِلَى أَهْلِ الْبِدَعِ فَلاَ يُؤْخَذُ حَدِيثُهُمْ

 "তোমরা যাদের নিকট থেকে হাদিস গ্রহণ করেছ, আমাদের কাছে তাদের নাম বল। তারা এ কথা এ কারণে জানতে চাইত, যাতে দেখা যায় তারা আহলে সুন্নাত কিনা? যদি তারা এর অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তাদের হাদিস গ্রহণযোগ্য হবে। আর যদি দেখা যায় তারা বিদআতি তাহলে তাদের হাদিস গ্রহণ করা হবে না।" [সহীহ মুসলিম এর আল মুকাদ্দামাহ (ভূমিকা)]

  এ মর্মে আরও অনেক সতর্কতামূলক বক্তব্য রয়েছে। যদিও এগুলো হাদিস গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে কিন্তু তা মূলত দীনের সামগ্রিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে।

 তাছাড়া অনেক সময় লেখকের নাম পরিচয় জানা থাকলে লেখা বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সহজ হয় এবং কোন সংশোধনী বা সংযোজন থাকলে তাকে জানানো যায়। এতে লেখা আর সমৃদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত হয়-যা সকলের জন্য উপকারী

 অন্যের লেখা কপি করা করার বিধান:
 
প্রশ্ন: যদি কোনও বইয়ে লেখকের পক্ষ থেকে কপি করার কোনও নিষেধাজ্ঞার কথা লেখা না থাকে অথবা 'স্বত্ব সংরক্ষিত' এ ধরণের কোনও লেখা না থাকে,-যা লেখক চাইলে যুক্ত করতে পারতো-তাহলে কি তা কপি করা যাবে?

উত্তর:
কোন বই, আর্টিকেল ইত্যাদিতে 'স্বত্ব সংরক্ষিত' বা 'কপি রাইট' লেখা না থাকলে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় অংশ কপি করা জায়েজ আছে। তবে শর্ত হল, কপি কৃত লেখাটুকু কোটেশন চিহ্ন ( " - ") এর মধ্যে রেখে লেখকের নাম/পরিচয় উল্লেখ করতে হবে। অথবা কপিকৃত অংশটুকু বিশেষভাবে চিহ্নিত করতে হবে। কোনভাবেই তা নিজের লেখা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। অন্যথায় তা মেধাস্বত্ব চুরি, আমানতের খেয়ানত এবং লেখকের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ হিসেবে গণ্য হবে। চাই তা অনলাইন থেকে হোক অথবা অফলাইন থেকে হোক।

 বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ২০২১ (খসড়া):

"কপিরাইট আইন ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং চার বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী অপরাধী উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।" [BBC Bangla এর ওয়েবসাইট]
الله أعلم
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi

Post a Comment

0 Comments